সদরে অন্দরে-ছাত্রীকে শিক্ষকের ঘুষি, অনাকাঙ্ক্ষিত by মোস্তফা হোসেইন
ছাত্রীর গায়ে ঘুষি মারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক! কেমন শিক্ষক তিনি? শিক্ষকের আগে সহকারী রেজিস্ট্রারও একই কাজ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রক্টর ও কর্মকর্তা হয়ে কিভাবে এমন কাজ করতে পারেন? দুজনই মার্জিত মানুষ গড়ার কারিগরদের কাতারে।
দুজনই হয়তো সন্তানেরও পিতা। কোনো পিতার পক্ষে কি মেয়ের গায়ে এভাবে প্রকাশ্যে হাত তোলা সম্ভব? প্রশ্নের জবাব, অবশ্যই না-বোধক। কিন্তু তার পরও আমাদের এমনই একটি সংবাদ পড়তে হলো কালের কণ্ঠের প্রথম পাতায়, ফলোআপসহ। কালের কণ্ঠের সূত্র উল্লেখসহ পরবর্তীকালে অন্যান্য প্রচারমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে এই সংবাদ। কল্পনা করা যায় এমন দৃশ্যের কথা?
অতি সাধারণ মানুষও প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়েছে এমন একটি সংবাদ পড়ার পর। সংবাদটি যদি সচিত্র না হতো, তাহলে হয়তো অনেকে বিশ্বাসই করতেন না। তাঁরা মনে করতেন, একজন শিক্ষকের পক্ষে কখনো শিক্ষার্থীর গায়ে এভাবে প্রকাশ্যে হাত তোলা সম্ভব নয়। এমন যাঁরা মনে করেন, তাঁরা ইতিবাচক চিন্তার ধারক। তাঁদের কাছে শিক্ষকতা পেশা হচ্ছে অন্য আর দশটা পেশা থেকে ভিন্নতর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে জীবন-জীবিকার কৌশল শেখার অনন্য মাধ্যম। সেখানে যাঁরা থাকেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদেরই শুধু শিক্ষা দেন না, তাঁদের আচরণ, চিন্তা-চেতনা থেকে সাধারণ মানুষও শিখতে পারে। সোজা কথা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের কাছ থেকে গোটা সমাজই অনুপ্রাণিত হয়।
শিক্ষার্থী শিক্ষকের কাছ থেকে স্নেহ পাবে, শিক্ষার্থী শিক্ষককে সম্মান জানাবে। এটাই হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু একজন বাবা, একজন শিক্ষক যখন শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলার মতো কাজটি করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষকের শিক্ষার ঘাটতিই প্রমাণ হয়ে যায়। আর সেই অসদাচরণ যখন নারীর ওপর হবে, তখন তাঁর নীতিজ্ঞান নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে। আমাদের লজ্জার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে সেই কাজটি ঘটে গেল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতি সম্প্রতি।
ঘটনাটি আকস্মিক- এমন বলা যায় না। কারণ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট নামের একটি ছাত্র সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি আদায়ের নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছিল। তাদের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যখন ঘটনা ঘটে, সেই সময় ছাত্রলীগের কর্মীদের ডেকে আনা হয়। সেটিও আকস্মিক নয়। চিন্তাভাবনা করেই ছাত্রফ্রন্টের প্রতিবাদ কর্মসূচিকে বাধা প্রদান করা হয়েছে। সেখানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট জায়গায় কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই নিষেধাজ্ঞা যদি ছাত্রদের কেউ অমান্য করে, তাহলে সেই ছাত্রদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিতে পারে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা যদি হয় উদ্দেশ্যমূলক, যদি সেই নিষেধাজ্ঞাটি হয়ে পড়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তাহলে সেই নিষেধাজ্ঞাটিই প্রশ্নবোধক হয়ে পড়ে। সেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে ক্ষেত্রে বিবেচনা করলে ওই নিষেধাজ্ঞাটি অনৈতিক হিসেবে গণ্য হতে পারে।
আবার যে মুহূর্তে ছাত্রলীগের কর্মীদের ডেকে আনা হয়, তখন বোঝা যায় এই কাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক শক্তির হাত আছে। সেই শক্তিটি যে আমাদের শিক্ষাঙ্গনের অশুভচক্রের একটি, তা-ও প্রমাণিত। স্পষ্টত বোঝা যায়, এই নির্দেশনা ছিল প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক সংগঠনকে কর্মসূচি পালনে বাধা প্রদান করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত। আর যেই প্রক্টর ছাত্রীকে ঘুষি মেরেছেন তিনি প্রক্টর হিসেবে নয়, ছাত্রলীগের পক্ষ হয়ে কাজটি করেছেন। যা একজন শিক্ষকের পক্ষে করা সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে জানা গেছে, সহকারী রেজিস্ট্রার মাসাদুল হাসানও অতীতে ছাত্রলীগের একজন নেতা ছিলেন। ফলে সহজেই বোঝা যায়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তাঁর নিজস্ব দলের হয়েই কাজটি করেছেন। স্পষ্টত প্রমাণ হয়ে যায়, প্রক্টর এবং সহকারী রেজিস্ট্রার শিক্ষক কিংবা কর্মকর্তা হিসেবে নয়, রাজনৈতিক দলের ক্যাডারের ভূমিকাই পালন করেছেন।
প্রক্টর সাফাই গেয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি ওই ছাত্রীকে 'সোনার কন্যা' বলে অভিহিত করেছেন। এটা টিটকারি কি না বোঝা যাচ্ছে না। কারণ তিনি যে টিটকারিসুলভ কথা বলতে পারেন, তা বোঝা যায় ঘুষি মারার কথা অস্বীকার করার মাধ্যমে। ছবিতে স্পষ্ট দেখা যায়, হাতের মাসল পর্যন্ত ফুলে গেছে শক্তি প্রয়োগের চিহ্ন হিসেবে। আর তিনি বলে দিলেন, তিনি নাকি 'সোনার মেয়ে'টিকে ধাক্কা দিয়েছিলেন। যদি প্রশ্ন করা হয়, তিনি কোন কারণে ছাত্রীটির কাছাকাছি গিয়েছিলেন, তখন কী জবাব দেবেন তিনি?
প্রক্টরকে শোকজ করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে আসল তথ্য বের করার জন্য। শিক্ষামন্ত্রী অসুস্থ অবস্থায় তাঁর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন; যেমনি রাজশাহীতে সোনার ছেলেদের কাণ্ড, ঢাকায় প্রতিপক্ষকে পেটানোর কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করা ছাড়া আর কী করতে পারবেন? অতীতের উদাহরণ সামনে এনে দায়িত্বসহ বলা যায়, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হয়তো উপাচার্যের টেবিলে যাবে। সেই প্রতিবেদন হয়তো সেখান থেকে আলমারিতে স্থান পাবে। তদন্তকারীদের কাছ থেকেও সঠিক তদন্ত কি আশা করা যায়? ইতিমধ্যে তার আলামতও দেখা গেছে। উপাচার্য মহোদয় অভিযুক্তদের নির্দোষ বলে বক্তব্য দিয়েছেন। তদন্তের আগেই যেখানে নির্দোষ বলা হয়, সেখানে তদন্ত প্রতিবেদনে কি আসবে তা কি বুঝতে অসুবিধা হয়? তদন্ত সঠিক হবে বলে মনে করা যায় না। কারণ তদন্ত যেমন হবে অভিযুক্তদের পক্ষের কারো মাধ্যমে, তেমনি শাস্তি দিতে হলেও দেবে সিন্ডিকেট। প্রশ্ন হচ্ছে, সিন্ডিকেট কি সরকারি দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে? এমন প্রমাণ এ পর্যন্ত খুবই কম আছে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, সিন্ডিকেট কী ব্যবস্থা নেয় সেই সময় পর্যন্ত। সুতরাং যে ৯ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের যদি কঠিন শাস্তি দেওয়া হয় তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। (ইতিমধ্যে উচ্চ আদালত নির্দেশ প্রদান করেছেন ৯ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার জন্য)।
ময়মনসিংহের এ ঘটনাকে কাকতালীয় কোনো ঘটনা বলার সুযোগ নেই। কারণ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সারা দেশেই এমন কাজ করছে। আবার শিক্ষকদের মধ্যেও এমন কাণ্ড ঘটানোর উদাহরণও একমাত্র এটি নয়। শিক্ষাসচিবের বক্তব্য থেকে জানা যায়, এই ঘটনার কিছুদিন আগে ঢাকার দুই মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকও শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করেছেন। এবং তাঁদের ঢাকার বাইরে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। যে শিক্ষক মুখের আগে হাত চালান, সেই শিক্ষক কি রাজধানী থেকে বাইরে গিয়ে স্বভাব বদলাতে পারবেন? যাঁরা এমন করে, তাঁদের দলীয় আনুগত্যের শক্তি থাকে। সেই শক্তিই শিক্ষকতার পেশাকে কালিমা লেপন করে দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
তাই আজকে শিক্ষায়তনে যে পরিবেশ বিরাজ করছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সবার আগে দরকার শিক্ষায়তনকে দলীয় রাজনীতিমুক্ত করা। দলীয় আনুগত্যের বাইরে গিয়ে যখন শিক্ষক শিক্ষাদানে মনোনিবেশ করবেন, তখন এ ধরনের অস্বাভাবিক কাজ করার প্রবণতা বন্ধ হবে। ময়মনসিংহের এ ঘটনাই যেন শেষ ঘটনা হয় সেই প্রত্যাশা করছি।
লেখক : সাংবাদিক
mhussain_71@yahoo.com
অতি সাধারণ মানুষও প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়েছে এমন একটি সংবাদ পড়ার পর। সংবাদটি যদি সচিত্র না হতো, তাহলে হয়তো অনেকে বিশ্বাসই করতেন না। তাঁরা মনে করতেন, একজন শিক্ষকের পক্ষে কখনো শিক্ষার্থীর গায়ে এভাবে প্রকাশ্যে হাত তোলা সম্ভব নয়। এমন যাঁরা মনে করেন, তাঁরা ইতিবাচক চিন্তার ধারক। তাঁদের কাছে শিক্ষকতা পেশা হচ্ছে অন্য আর দশটা পেশা থেকে ভিন্নতর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে জীবন-জীবিকার কৌশল শেখার অনন্য মাধ্যম। সেখানে যাঁরা থাকেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদেরই শুধু শিক্ষা দেন না, তাঁদের আচরণ, চিন্তা-চেতনা থেকে সাধারণ মানুষও শিখতে পারে। সোজা কথা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের কাছ থেকে গোটা সমাজই অনুপ্রাণিত হয়।
শিক্ষার্থী শিক্ষকের কাছ থেকে স্নেহ পাবে, শিক্ষার্থী শিক্ষককে সম্মান জানাবে। এটাই হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু একজন বাবা, একজন শিক্ষক যখন শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলার মতো কাজটি করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষকের শিক্ষার ঘাটতিই প্রমাণ হয়ে যায়। আর সেই অসদাচরণ যখন নারীর ওপর হবে, তখন তাঁর নীতিজ্ঞান নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে। আমাদের লজ্জার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে সেই কাজটি ঘটে গেল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতি সম্প্রতি।
ঘটনাটি আকস্মিক- এমন বলা যায় না। কারণ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট নামের একটি ছাত্র সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি আদায়ের নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছিল। তাদের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যখন ঘটনা ঘটে, সেই সময় ছাত্রলীগের কর্মীদের ডেকে আনা হয়। সেটিও আকস্মিক নয়। চিন্তাভাবনা করেই ছাত্রফ্রন্টের প্রতিবাদ কর্মসূচিকে বাধা প্রদান করা হয়েছে। সেখানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট জায়গায় কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই নিষেধাজ্ঞা যদি ছাত্রদের কেউ অমান্য করে, তাহলে সেই ছাত্রদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিতে পারে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা যদি হয় উদ্দেশ্যমূলক, যদি সেই নিষেধাজ্ঞাটি হয়ে পড়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তাহলে সেই নিষেধাজ্ঞাটিই প্রশ্নবোধক হয়ে পড়ে। সেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে ক্ষেত্রে বিবেচনা করলে ওই নিষেধাজ্ঞাটি অনৈতিক হিসেবে গণ্য হতে পারে।
আবার যে মুহূর্তে ছাত্রলীগের কর্মীদের ডেকে আনা হয়, তখন বোঝা যায় এই কাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক শক্তির হাত আছে। সেই শক্তিটি যে আমাদের শিক্ষাঙ্গনের অশুভচক্রের একটি, তা-ও প্রমাণিত। স্পষ্টত বোঝা যায়, এই নির্দেশনা ছিল প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক সংগঠনকে কর্মসূচি পালনে বাধা প্রদান করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত। আর যেই প্রক্টর ছাত্রীকে ঘুষি মেরেছেন তিনি প্রক্টর হিসেবে নয়, ছাত্রলীগের পক্ষ হয়ে কাজটি করেছেন। যা একজন শিক্ষকের পক্ষে করা সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে জানা গেছে, সহকারী রেজিস্ট্রার মাসাদুল হাসানও অতীতে ছাত্রলীগের একজন নেতা ছিলেন। ফলে সহজেই বোঝা যায়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তাঁর নিজস্ব দলের হয়েই কাজটি করেছেন। স্পষ্টত প্রমাণ হয়ে যায়, প্রক্টর এবং সহকারী রেজিস্ট্রার শিক্ষক কিংবা কর্মকর্তা হিসেবে নয়, রাজনৈতিক দলের ক্যাডারের ভূমিকাই পালন করেছেন।
প্রক্টর সাফাই গেয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি ওই ছাত্রীকে 'সোনার কন্যা' বলে অভিহিত করেছেন। এটা টিটকারি কি না বোঝা যাচ্ছে না। কারণ তিনি যে টিটকারিসুলভ কথা বলতে পারেন, তা বোঝা যায় ঘুষি মারার কথা অস্বীকার করার মাধ্যমে। ছবিতে স্পষ্ট দেখা যায়, হাতের মাসল পর্যন্ত ফুলে গেছে শক্তি প্রয়োগের চিহ্ন হিসেবে। আর তিনি বলে দিলেন, তিনি নাকি 'সোনার মেয়ে'টিকে ধাক্কা দিয়েছিলেন। যদি প্রশ্ন করা হয়, তিনি কোন কারণে ছাত্রীটির কাছাকাছি গিয়েছিলেন, তখন কী জবাব দেবেন তিনি?
প্রক্টরকে শোকজ করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে আসল তথ্য বের করার জন্য। শিক্ষামন্ত্রী অসুস্থ অবস্থায় তাঁর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন; যেমনি রাজশাহীতে সোনার ছেলেদের কাণ্ড, ঢাকায় প্রতিপক্ষকে পেটানোর কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করা ছাড়া আর কী করতে পারবেন? অতীতের উদাহরণ সামনে এনে দায়িত্বসহ বলা যায়, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হয়তো উপাচার্যের টেবিলে যাবে। সেই প্রতিবেদন হয়তো সেখান থেকে আলমারিতে স্থান পাবে। তদন্তকারীদের কাছ থেকেও সঠিক তদন্ত কি আশা করা যায়? ইতিমধ্যে তার আলামতও দেখা গেছে। উপাচার্য মহোদয় অভিযুক্তদের নির্দোষ বলে বক্তব্য দিয়েছেন। তদন্তের আগেই যেখানে নির্দোষ বলা হয়, সেখানে তদন্ত প্রতিবেদনে কি আসবে তা কি বুঝতে অসুবিধা হয়? তদন্ত সঠিক হবে বলে মনে করা যায় না। কারণ তদন্ত যেমন হবে অভিযুক্তদের পক্ষের কারো মাধ্যমে, তেমনি শাস্তি দিতে হলেও দেবে সিন্ডিকেট। প্রশ্ন হচ্ছে, সিন্ডিকেট কি সরকারি দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে? এমন প্রমাণ এ পর্যন্ত খুবই কম আছে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, সিন্ডিকেট কী ব্যবস্থা নেয় সেই সময় পর্যন্ত। সুতরাং যে ৯ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের যদি কঠিন শাস্তি দেওয়া হয় তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। (ইতিমধ্যে উচ্চ আদালত নির্দেশ প্রদান করেছেন ৯ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার জন্য)।
ময়মনসিংহের এ ঘটনাকে কাকতালীয় কোনো ঘটনা বলার সুযোগ নেই। কারণ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সারা দেশেই এমন কাজ করছে। আবার শিক্ষকদের মধ্যেও এমন কাণ্ড ঘটানোর উদাহরণও একমাত্র এটি নয়। শিক্ষাসচিবের বক্তব্য থেকে জানা যায়, এই ঘটনার কিছুদিন আগে ঢাকার দুই মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকও শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করেছেন। এবং তাঁদের ঢাকার বাইরে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। যে শিক্ষক মুখের আগে হাত চালান, সেই শিক্ষক কি রাজধানী থেকে বাইরে গিয়ে স্বভাব বদলাতে পারবেন? যাঁরা এমন করে, তাঁদের দলীয় আনুগত্যের শক্তি থাকে। সেই শক্তিই শিক্ষকতার পেশাকে কালিমা লেপন করে দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
তাই আজকে শিক্ষায়তনে যে পরিবেশ বিরাজ করছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সবার আগে দরকার শিক্ষায়তনকে দলীয় রাজনীতিমুক্ত করা। দলীয় আনুগত্যের বাইরে গিয়ে যখন শিক্ষক শিক্ষাদানে মনোনিবেশ করবেন, তখন এ ধরনের অস্বাভাবিক কাজ করার প্রবণতা বন্ধ হবে। ময়মনসিংহের এ ঘটনাই যেন শেষ ঘটনা হয় সেই প্রত্যাশা করছি।
লেখক : সাংবাদিক
mhussain_71@yahoo.com
No comments