মানুষের সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট, সরকার কী করছে?- বিপন্ন কুড়িগ্রামের চর এলাকা

এক বৃদ্ধ পেটের জ্বালায় ধার চাইতে গিয়েছিলেন প্রতিবেশীর কাছে; প্রতিবেশীরও সামর্থ্য ছিল না বলে টাকার বদলে ধার দিয়েছেন বাগানের একটি বাঁশ। সেই বাঁশ কাঁধে নিয়ে ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ গণি মণ্ডল চলছেন হাটে। বিক্রি করে যদি টাকা পাওয়া যায়, তা হলে এক বেলার আহার জুটতে পারে! কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে এখন এই অবস্থা চলছে।


যার যা আছে হয় বিক্রি বা বন্ধক রেখে পরিবারের মুখে আহার জোগাতে হন্যে হয়ে ঘুরছে মানুষ। বন্যা তাদের শেষ করে দিয়েছে।
কুড়িগ্রামের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের মানুষ হাহাকার করছে। শুক্রবারের প্রথম আলোর সংবাদে এক উন্নয়নকর্মীর বরাতে জানা যাচ্ছে, ‘চরের মানুষের ভেতরটা ভেঙে গেছে। তাদের কষ্ট কেউ বুঝবে না।’ আরেক কর্মী জানিয়েছেন, ‘চরের মানুষের অবস্থা বর্ণনাতীত। আবাদ ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকার ব্যবস্থা না নিলে এলাকায় মঙ্গা অবধারিত।’ হ্যাঁ, পেছনে ফেলে আসা মঙ্গা আবারও হানা দিতে যাচ্ছে উত্তরের এই শেষ প্রান্তে। ফসল নষ্ট হয়ে গেছে, এমনকি গবাদি পশুকে খাওয়ানোর মতো ঘাসও বিরল। নতুন ফসল বোনার জন্য বীজ ও খরচেরও কোনো বন্দোবস্ত নেই। এই অবস্থায় চড়া সুদে ঋণ করা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ জমি বন্ধক রেখে বাঁচতে চাইছে। পুরুষেরা মাছের সন্ধানে ঝাঁপিয়ে পড়ছে খাল-বিল-ডোবা ও নদীতে। মাছ পেলে বিক্রি করে যদি টাকা আসে! বন্যা কেবল মানুষকে দুর্গতই করে রাখেনি, দরিদ্রকে সর্বস্বান্ত করছে। ভূমিহীনতা থেকে শুরু করে সামাজিক বিপর্যয়ও আসন্ন।
সরকার কী করছে, সেটাই প্রশ্ন। সরকারের অস্তিত্বের মানেই হচ্ছে জনগণকে রক্ষা করা। আগামী তিন মাসের জন্য খাবার সরবরাহ করতে হবে এখনই। ফসলের বীজ ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোরও বন্দোবস্ত করা জরুরি। এক ফসল মার খেয়েছে, পরের ফসলটি না হলে কেবল কৃষকেরাই বিপন্ন হবে না, দেশের খাদ্য উৎপাদনেও ঘাটতি হবে। কৃষকদের পুনর্বাসনের কর্মসূচি গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পক্ষ থেকে। যে কর্মসূচিই নেওয়া হোক, তা করতে হবে দ্রুত। এবং নিশ্চিত করতে হবে যে ত্রাণের অর্থ ও উপকরণ বিতরণে যাতে নয়ছয় করা না হয়।

No comments

Powered by Blogger.