মেয়ের অভিযোগ, ‘প্রশাসনের লোকেরা’ ধরে নিয়ে গেছে- এক বছরেও খোঁজ মেলেনি নূর হাজি ও তাঁর জামাতার by নজরুল ইসলাম
‘প্রশাসনের লোক পরিচয়ে বাবা ও স্বামীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার এক বছর পার হতে চলল। তাঁরা বেঁচে আছেন, না মারা গেছেন, তা-ও জানি না। লাশ পেলে মনকে কিছুটা হলেও বুঝ দিতে পারতাম।’ প্রথম আলোকে কথাগুলো বলেছেন নিখোঁজ নূর মোহাম্মদ হাজির (৭৫) বড় মেয়ে স্বপ্না আক্তার।
গত বছরের ১৯ অক্টোবর থেকে তাঁর বাবা নিখোঁজ। নূর হাজি ঢাকা মহানগরের ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি, যিনি পুলিশের খাতায় রাজধানীর অন্যতম বড় মাদক ব্যবসায়ী। নিখোঁজ হন ঢাকার সাভার উপজেলার কাতলাপুরের পালপাড়ার বাড়ি থেকে। এর দেড় মাস পর ৩ ডিসেম্বর আগারগাঁও থেকে নিখোঁজ হন স্বপ্নার স্বামী আবদুল মান্নান ও মান্নানের বন্ধু ইকবাল। মান্নান যে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিলেন, সেটি পরে পুলিশ আগারগাঁও বিএনপি বাজার বস্তি থেকে উদ্ধার করে।
নূর হাজি নিখোঁজের ঘটনায় সাভার থানায় এবং মান্নানদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্বপ্না আক্তার। তিনি জানান, জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয়ে তাঁদের ধরে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্বপ্না আক্তার অভিযোগ করেন, তাঁর বাবা ও স্বামীকে ‘র্যাব’ লেখা গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁরা সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজেছেন। থানা ও র্যাব কার্যালয়েও গেছেন। কিন্তু সন্ধান পাননি। অপহরণের মামলা করেননি কেন—জানতে চাইলে স্বপ্না বলেন, ‘নিশ্চিত না হয়ে কার বিরুদ্ধে মামলা করব? এখনো অপেক্ষা করছি, যদি তাঁরা ফিরে আসেন। আর যদি না আসেন, এর বিচারের ভার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিছি।’
স্বপ্না বলেন, তাঁদের খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা নেই। তাঁরা যদি বেঁচে না থাকেন, তবে অন্তত লাশ দুটি পরিবারকে দেওয়া হোক।
জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, তদন্তে নূর হাজির নিখোঁজের বিষয়ে ‘প্রশাসনের লোকের’ সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। পরিবারকে এ বিষয়ে মামলা করার পরামর্শ দিলেও তাঁরা করেননি।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এম সোহায়েল প্রথম আলোকে বলেন, নূর হাজি, মান্নান ও ইকবাল সম্পর্কে র্যাবের কাছে কোনো তথ্য নেই। নিখোঁজ হওয়ার পর এ ঘটনা পুলিশ তদন্ত করেছে। তাঁদের র্যাব লেখা গাড়িতে তোলা হয়েছে—পরিবারের এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ থাকলে র্যাবের বিরুদ্ধে তাঁঁরা মামলা করেন না কেন?
পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত বছর হজের সময় নূর হাজিকে আরাফাতের ময়দানে দেখেছেন একজন পুলিশ পরিদর্শক। তবে গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তার মতে, নূর হাজি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে থাকতে পারেন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. ইমাম হোসেন জানান, নূর হাজি সাভার থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। যদিও তাঁর সম্পত্তি ও বাসাবাড়ি আগারগাঁওয়ে। মান্নান ও তাঁর বন্ধু নিখোঁজ হন আগারগাঁও থেকে। তবে তাঁরা বেঁচে আছেন, না মারা গেছেন—সে বিষয়ে পুলিশের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
নূর হাজির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ: থানা ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, ১৯৯৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত খুন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বাড়ি দখল ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে নূর হাজির বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, শেরেবাংলা নগর ও মিরপুর থানায় প্রায় দেড় ডজন মামলা হয়। ২০০৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর আগারগাঁও থেকে নূর হাজি ও তাঁর ছোট ছেলে মামুনুর রশীদকে দুটি বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব। গত বছরের ১৪ জানুয়ারি পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বায়তুন নূর জামে মসজিদের সামনে খুন হন ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক। তদন্তে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নূর হাজির সম্পৃক্ততা পান। অবশ্য এই হত্যাকাণ্ডের আগে ৮ জানুয়ারি আগারগাঁও বিএনপি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে গুলিবিদ্ধ হন নূর হাজি। ডিবি ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, তদন্তে পাওয়া গেছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ফজলুল হককে ফাঁসাতে তিনি গুলিবিদ্ধ হওয়ার নাটক সাজিয়েছিলেন।
ফজলু হত্যা মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা তৎকালীন ডিবির জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সোলাইমান সম্প্রতি জানান, নূর হাজির নাতি জসিমউদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, নূর হাজির পরিকল্পনায় ফজলু খুন হন। এর পর নূর হাজিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান এবং আগারগাঁওয়ের একটি মেয়েকে বিয়ে করে সাভারের পালপাড়ার নিজ বাড়িতে বসবাস শুরু করেন।
পুলিশ জানায়, নূর হাজির বড় ছেলে বাঘা অতিরিক্ত মাদক সেবনের কারণে ১৯৯৬ সালে মারা যান। ছোট ছেলে মামুন ২০০৮ সালে কোরবানির পশুর হাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন। আরেক ছেলে মিন্টু ২০০৫ সালে দুটি হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যান।
নূর হাজি নিখোঁজের ঘটনায় সাভার থানায় এবং মান্নানদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্বপ্না আক্তার। তিনি জানান, জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয়ে তাঁদের ধরে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্বপ্না আক্তার অভিযোগ করেন, তাঁর বাবা ও স্বামীকে ‘র্যাব’ লেখা গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁরা সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজেছেন। থানা ও র্যাব কার্যালয়েও গেছেন। কিন্তু সন্ধান পাননি। অপহরণের মামলা করেননি কেন—জানতে চাইলে স্বপ্না বলেন, ‘নিশ্চিত না হয়ে কার বিরুদ্ধে মামলা করব? এখনো অপেক্ষা করছি, যদি তাঁরা ফিরে আসেন। আর যদি না আসেন, এর বিচারের ভার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিছি।’
স্বপ্না বলেন, তাঁদের খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা নেই। তাঁরা যদি বেঁচে না থাকেন, তবে অন্তত লাশ দুটি পরিবারকে দেওয়া হোক।
জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, তদন্তে নূর হাজির নিখোঁজের বিষয়ে ‘প্রশাসনের লোকের’ সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। পরিবারকে এ বিষয়ে মামলা করার পরামর্শ দিলেও তাঁরা করেননি।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এম সোহায়েল প্রথম আলোকে বলেন, নূর হাজি, মান্নান ও ইকবাল সম্পর্কে র্যাবের কাছে কোনো তথ্য নেই। নিখোঁজ হওয়ার পর এ ঘটনা পুলিশ তদন্ত করেছে। তাঁদের র্যাব লেখা গাড়িতে তোলা হয়েছে—পরিবারের এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ থাকলে র্যাবের বিরুদ্ধে তাঁঁরা মামলা করেন না কেন?
পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত বছর হজের সময় নূর হাজিকে আরাফাতের ময়দানে দেখেছেন একজন পুলিশ পরিদর্শক। তবে গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তার মতে, নূর হাজি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে থাকতে পারেন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. ইমাম হোসেন জানান, নূর হাজি সাভার থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। যদিও তাঁর সম্পত্তি ও বাসাবাড়ি আগারগাঁওয়ে। মান্নান ও তাঁর বন্ধু নিখোঁজ হন আগারগাঁও থেকে। তবে তাঁরা বেঁচে আছেন, না মারা গেছেন—সে বিষয়ে পুলিশের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
নূর হাজির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ: থানা ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, ১৯৯৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত খুন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বাড়ি দখল ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে নূর হাজির বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, শেরেবাংলা নগর ও মিরপুর থানায় প্রায় দেড় ডজন মামলা হয়। ২০০৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর আগারগাঁও থেকে নূর হাজি ও তাঁর ছোট ছেলে মামুনুর রশীদকে দুটি বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব। গত বছরের ১৪ জানুয়ারি পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বায়তুন নূর জামে মসজিদের সামনে খুন হন ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক। তদন্তে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নূর হাজির সম্পৃক্ততা পান। অবশ্য এই হত্যাকাণ্ডের আগে ৮ জানুয়ারি আগারগাঁও বিএনপি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে গুলিবিদ্ধ হন নূর হাজি। ডিবি ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, তদন্তে পাওয়া গেছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ফজলুল হককে ফাঁসাতে তিনি গুলিবিদ্ধ হওয়ার নাটক সাজিয়েছিলেন।
ফজলু হত্যা মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা তৎকালীন ডিবির জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সোলাইমান সম্প্রতি জানান, নূর হাজির নাতি জসিমউদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, নূর হাজির পরিকল্পনায় ফজলু খুন হন। এর পর নূর হাজিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান এবং আগারগাঁওয়ের একটি মেয়েকে বিয়ে করে সাভারের পালপাড়ার নিজ বাড়িতে বসবাস শুরু করেন।
পুলিশ জানায়, নূর হাজির বড় ছেলে বাঘা অতিরিক্ত মাদক সেবনের কারণে ১৯৯৬ সালে মারা যান। ছোট ছেলে মামুন ২০০৮ সালে কোরবানির পশুর হাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন। আরেক ছেলে মিন্টু ২০০৫ সালে দুটি হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যান।
No comments