পত্রিকায় লিখে কি লাভ, আমাকে তো আর কেউ দেখতে আসে নাঃ অলি আহাদ
আমার কথা পত্রিকায় লিখে কি লাভ হবে, আমাকে তো আর কেউ দেখতে আসে না! যৌবন থাকতে কেউ খোঁজ নেয়নি আর এখনতো যাওয়ার সময়। আবেগতাড়িত হয়ে কথাগুলো বলেছিলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাত দলের প্রধান জননেতা, সাংবাদিক, ভাষা সৈনিক অলি আহাদ।
তিনি এলিফ্যান্ট রোড়ের বাসায় ফোকাস বাংলা নিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছিলেন।
স্বাধীনতার পুরস্কারপ্রাপ্ত বীরযোদ্ধা অলি আহাদ ওই প্রতিবেদককে কাছে পেয়ে দেশ-জাতি-রাজনীতি নিয়ে তার অসমাপ্ত স্বপ্নের কথা, অকৃতজ্ঞ মানুষের কথা বলেছিলেন। তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, “সরকার দূরে থাক, আমার সতীর্থরাও তো কেউ দেখতে আসে না। আসবেইবা কেন? আমাকে দিয়ে আর কি হবে, ভাষা আন্দোলনতো শেষ, আমাকে তো আর দরকার নেই।’
একজন অকুতোভয় নির্লোভ মানুষ হিসেবে পরিচিত সত্য সন্ধানী এই প্রতিবাদী পুরুষ ১৯২৮ সালে ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার ইসলামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৭-৪৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ২৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন সম্পর্কিত আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে অলি আহদকে চার বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। ৫৮ বছর পর ২০০৬ সালের ২০ মার্চ তার বাহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ড শাখা অনুযায়ী অলি আহাদ ১৯৫০ সালে বিকম পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তার লেখা 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫' বইয়ে এ সম্পর্কিত বিষয়ে তিনি উল্লেখও করেছেন।
অলি আহাদ দীর্ঘশ্বাস তুলে বলেন, “পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেও জীবনে কোনো কিছু পাইনি। কিন্ত যারা পাশই করেনি তারা আজ সুনামের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত।”
ভাষা আন্দোলনের সিপাহসালার অলি আহাদের একমাত্র মেয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা আর স্ত্রী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (এশিয়া মহাদেশের একমাত্র মহিলা মহাপরিচালক) অধ্যাপিকা রাশিদা বেগমকে নিয়েই এখন অলি আহাদের সময় কাটে। সত্যের প্রয়োজনে যিনি নিজের বিরুদ্ধে কথা বলতেও কখনো এতটুকু চিন্তা করেননি। ইতিহাসের সেই উজ্জল পুরুষটি বার্ধক্যে অচল-অক্ষম হয়ে এখন নিজের নীতি নৈতিকতাকেই বার বার ধিক্কার দিচ্ছেন। বয়ে বেড়াচ্ছেন শ্রবণ ও স্মৃতিশক্তিহীণ এক মানব দেহ।
অধ্যাপিকা রাশিদা বেগম বলেন, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য! ইতিহাসের এই কালজয়ী মানুষটির নিজের কোনো বাসস্থানই নেই। তার বাবা (অলি আহাদের শ্বশুর) গণিতবিদ মরহুম মো. শাহাব উদ্দিনের দেয়া বাড়ি ও রাশিদা বেগমের চাকরির পাওয়া টাকার আয় দিয়েই সংসার চলে তাদের। বিয়ের ৩৩ বছর পরও সেই অতীত স্মৃতিগুলো অলি আহাদকে কাঁদিয়ে বেড়াতে দেখে আসছেন এখনো। কারণ একটাই স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত এই বীর সৈনিক বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে জীবনের শেষ প্রান্তে চলে যাওয়ার পরও রাষ্ট্র কিংবা কোনো ব্যক্তি আজো তার কোনো খবরই নেয়নি। পাননি কোনো সরকারি অনুদান।
চিরবিদ্রোহী পুরুষটি এখন অসহায় গৃহবন্দী। ডাক্তাররা বলছেন, তাকে বাঁচাতে জরুরি কিছু চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যা, চোখের সমস্যা, পায়ের সমস্যা, প্রস্টেট এলার্জ, পড়ে গিয়ে কোমর-হাঁটু পর্যন্ত অপারেশন অচল করে দিয়েছে এক সময়ের সুঠাম দেহের অধিকারী এই ভাষা সৈনিককে। ২০০৪ সালে পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় ভাঙ্গার পর মূলত তিনি পুরোটাই ভেঙে পড়েন। তখন হাসপাতালে অনেক সতির্থ, তৎকালীন সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ লোকজন তাকে দেখতে গেলেও সরকারি বেসরকারি দান অনুদান কিছুই তিনি পাননি।
ঠিক মতো কানে না শুনলেও স্ত্রী অধ্যাপক রাশিদা বেগমের সাহায্য নিয়ে অলি আহাদ বলেন, ভাষার মাস এলেই ভাষা সৈনিকের নাম আসে, আর এ মাস চলে গেলে আর কেউ ভুলেও মুখে আনে না। যাদের জন্য মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করেছি, সেই বাঙালীরাতো আমাদের ছিনিয়ে আনা ভাষায় কথা বলছে সেই আমার সান্তনা।
২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর অসুস্থ হয়ে শেষবার শমরিতা হাসপাতালে সাতদিন চিকিৎসা নেন। সেই থেকে আর হাসপাতালে যাওয়া হয়নি। কিন্তু নির্লোভ এই মানুষটির আজ চিকিৎসার সামর্থ নেই। টাকার অভাবে তিনি নিজের জরুরি চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারছেন না। পায়ে সমস্যা থাকায় সারাদিন বাসায় ডান কাত হয়ে শুয়ে অসহায়ভাবে অতীত রোমন্থন করেই দিন কাটছে তার।
২০০৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিদ্রোহী একুশ উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ‘ভাষা আন্দোলন ও অলি আহাদ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ভাষা আন্দোলনের নিয়ামক ও পুরোধা ব্যক্তিত্বরা ক্ষোভ প্রকাশ করে নির্লোভ, সত্যসন্ধানী, চির প্রতিবাদী এবং বাংলাদেশের নানা রাজনৈতিক ইতিহাসের অনিবার্য চরিত্র অলি আহাদকে রাষ্ট্রীয়ভাবে চিকিৎসার দাবি জানান। কিন্তু সেই দাবি আজো পূরণ হয়নি। এ নিয়ে আক্ষেপ নেই অলি আহাদের।
তিনি বলেন, যাবার সময় হয়েছে, এবার চলে গেলেই সবাই বেঁচে যায়। আরতো ভাষা আন্দোলনের দরকার নেই। তাহলে অলি আহাদরা থেকে কি হবে?
অলি আহাদ বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি তার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা। বাংলা ভাষার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জন, জীবনে এর চেয়ে বড় ঘটনা আর কি হতে পারে। এখন তার বড় চাওয়া ব্যারিস্টার পাস করা একমাত্র মেয়ে রুমিন ফারহানা যেন সুনামের সঙ্গে বড় হয়। দেশের নানা রাজনৈতিক ইতিহাসের এমন এক উজ্জল নক্ষত্র ৮২ বছর বয়সের মানুষটি আজ চিকিৎসার অভাবে এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় শয্যাশায়ী অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। সৌজন্যে: ফোকাস বাংলা
একজন অকুতোভয় নির্লোভ মানুষ হিসেবে পরিচিত সত্য সন্ধানী এই প্রতিবাদী পুরুষ ১৯২৮ সালে ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার ইসলামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৭-৪৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ২৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন সম্পর্কিত আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে অলি আহদকে চার বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। ৫৮ বছর পর ২০০৬ সালের ২০ মার্চ তার বাহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ড শাখা অনুযায়ী অলি আহাদ ১৯৫০ সালে বিকম পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তার লেখা 'জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫' বইয়ে এ সম্পর্কিত বিষয়ে তিনি উল্লেখও করেছেন।
অলি আহাদ দীর্ঘশ্বাস তুলে বলেন, “পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেও জীবনে কোনো কিছু পাইনি। কিন্ত যারা পাশই করেনি তারা আজ সুনামের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত।”
ভাষা আন্দোলনের সিপাহসালার অলি আহাদের একমাত্র মেয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা আর স্ত্রী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (এশিয়া মহাদেশের একমাত্র মহিলা মহাপরিচালক) অধ্যাপিকা রাশিদা বেগমকে নিয়েই এখন অলি আহাদের সময় কাটে। সত্যের প্রয়োজনে যিনি নিজের বিরুদ্ধে কথা বলতেও কখনো এতটুকু চিন্তা করেননি। ইতিহাসের সেই উজ্জল পুরুষটি বার্ধক্যে অচল-অক্ষম হয়ে এখন নিজের নীতি নৈতিকতাকেই বার বার ধিক্কার দিচ্ছেন। বয়ে বেড়াচ্ছেন শ্রবণ ও স্মৃতিশক্তিহীণ এক মানব দেহ।
অধ্যাপিকা রাশিদা বেগম বলেন, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য! ইতিহাসের এই কালজয়ী মানুষটির নিজের কোনো বাসস্থানই নেই। তার বাবা (অলি আহাদের শ্বশুর) গণিতবিদ মরহুম মো. শাহাব উদ্দিনের দেয়া বাড়ি ও রাশিদা বেগমের চাকরির পাওয়া টাকার আয় দিয়েই সংসার চলে তাদের। বিয়ের ৩৩ বছর পরও সেই অতীত স্মৃতিগুলো অলি আহাদকে কাঁদিয়ে বেড়াতে দেখে আসছেন এখনো। কারণ একটাই স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত এই বীর সৈনিক বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে জীবনের শেষ প্রান্তে চলে যাওয়ার পরও রাষ্ট্র কিংবা কোনো ব্যক্তি আজো তার কোনো খবরই নেয়নি। পাননি কোনো সরকারি অনুদান।
চিরবিদ্রোহী পুরুষটি এখন অসহায় গৃহবন্দী। ডাক্তাররা বলছেন, তাকে বাঁচাতে জরুরি কিছু চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যা, চোখের সমস্যা, পায়ের সমস্যা, প্রস্টেট এলার্জ, পড়ে গিয়ে কোমর-হাঁটু পর্যন্ত অপারেশন অচল করে দিয়েছে এক সময়ের সুঠাম দেহের অধিকারী এই ভাষা সৈনিককে। ২০০৪ সালে পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় ভাঙ্গার পর মূলত তিনি পুরোটাই ভেঙে পড়েন। তখন হাসপাতালে অনেক সতির্থ, তৎকালীন সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ লোকজন তাকে দেখতে গেলেও সরকারি বেসরকারি দান অনুদান কিছুই তিনি পাননি।
ঠিক মতো কানে না শুনলেও স্ত্রী অধ্যাপক রাশিদা বেগমের সাহায্য নিয়ে অলি আহাদ বলেন, ভাষার মাস এলেই ভাষা সৈনিকের নাম আসে, আর এ মাস চলে গেলে আর কেউ ভুলেও মুখে আনে না। যাদের জন্য মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করেছি, সেই বাঙালীরাতো আমাদের ছিনিয়ে আনা ভাষায় কথা বলছে সেই আমার সান্তনা।
২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর অসুস্থ হয়ে শেষবার শমরিতা হাসপাতালে সাতদিন চিকিৎসা নেন। সেই থেকে আর হাসপাতালে যাওয়া হয়নি। কিন্তু নির্লোভ এই মানুষটির আজ চিকিৎসার সামর্থ নেই। টাকার অভাবে তিনি নিজের জরুরি চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারছেন না। পায়ে সমস্যা থাকায় সারাদিন বাসায় ডান কাত হয়ে শুয়ে অসহায়ভাবে অতীত রোমন্থন করেই দিন কাটছে তার।
২০০৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিদ্রোহী একুশ উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ‘ভাষা আন্দোলন ও অলি আহাদ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ভাষা আন্দোলনের নিয়ামক ও পুরোধা ব্যক্তিত্বরা ক্ষোভ প্রকাশ করে নির্লোভ, সত্যসন্ধানী, চির প্রতিবাদী এবং বাংলাদেশের নানা রাজনৈতিক ইতিহাসের অনিবার্য চরিত্র অলি আহাদকে রাষ্ট্রীয়ভাবে চিকিৎসার দাবি জানান। কিন্তু সেই দাবি আজো পূরণ হয়নি। এ নিয়ে আক্ষেপ নেই অলি আহাদের।
তিনি বলেন, যাবার সময় হয়েছে, এবার চলে গেলেই সবাই বেঁচে যায়। আরতো ভাষা আন্দোলনের দরকার নেই। তাহলে অলি আহাদরা থেকে কি হবে?
অলি আহাদ বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি তার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা। বাংলা ভাষার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জন, জীবনে এর চেয়ে বড় ঘটনা আর কি হতে পারে। এখন তার বড় চাওয়া ব্যারিস্টার পাস করা একমাত্র মেয়ে রুমিন ফারহানা যেন সুনামের সঙ্গে বড় হয়। দেশের নানা রাজনৈতিক ইতিহাসের এমন এক উজ্জল নক্ষত্র ৮২ বছর বয়সের মানুষটি আজ চিকিৎসার অভাবে এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় শয্যাশায়ী অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। সৌজন্যে: ফোকাস বাংলা
No comments