আনন্দের মহাউৎসব-কোরবানির অর্থ যেন হালকা না হয় by অধ্যাপক মাহফুজা খানম

কোরবানী ধর্মের অনুশাসন । এর সঙ্গে সামাজিকতাও আছে। আমি মূলত এ দিকটা বেশি গুরুত্ব দেই। বিশেষ করে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, গরিব-দুঃখী মানুষের মধ্যে মাংস বিলানোর মধ্য দিয়ে সামাজিক একটা সম্পর্ক হয়। এটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।


ফলে ঈদের দিনটি আমার কাছে আনন্দের দিন বটে।
ঈদের আগের রাতে কিছু কিছু রান্না করে রাখেন মাহফুজা খানম। স্বামী-ছেলেরা সেমাই খেয়ে নামাজ পড়তে যান। ফলে প্রস্তুতি আগে থেকেই থাকে। নামাজের পর বাসার সবাইকে- যারা সব সময় তাদের সহযোগিতা করছে যেমন ড্রাইভার, পিয়ন, দারোয়ান, গার্ড (পুলিশের সদস্য), ঘরের আয়া-বুয়া সবাইকে নিজের হাতে খাবার দেন। তারপর শুরু হয় কোরবানির কাজ। কাটাকাটি শেষ হলে মাংস ভাগের বিষয়টি নিজে তদারকি করেন। রীতি অনুযায়ী মাংস তিন ভাগ করা হয়। তবে মাংস বিলানোর ক্ষেত্রে যারা কোরবানি দেননি, যারা কোরবানি দিতে পারে, না তাদেরই প্রাধান্য দেন। নিজের ঘরে মাংস রাখেন খুবই কম। বললেন, অনেক আগে যারা আমার বাড়িতে কাজ করেছে। তারাও আসে মাংস নিতে, এটা আমার খুব ভালো লাগে। ৩টার মধ্যে সব কাজ শেষ করে ফেলেন।
কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়িটা একেবারে পছন্দ করেন না তিনি । বললেন, অনেকে লাখ টাকা দিয়ে কোরবানি দেয়। চার-পাঁচটা গরু কোরবানি দেয়। একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা! ধর্ম তো এটা বলে না। একটা কোরবানি দিয়ে বাকি টাকা দিয়ে অনায়াসে চার পাঁচটা পরিবারকে দাঁড় করানো যায়। কাউকে গরু কিনে দেওয়া যায়, কাউকে একটা রিকশা কিনে দেওয়া যায়। আমি হলে তাই করতাম। আমি ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বেশ কিছু ছেলে-মেয়েকে পড়াই, তাদের দিতাম। আরেকটি বিষয় নিয়েও খুব ভাবেন তিনি। একদিনে কী পরিমাণ পশু শেষ হয়ে যায়। বললেন ,আমাদের মতো করে কোন মুসলিম দেশ কোরবানি দেয় না। কোরবানি অর্থ প্রিয় জিনিস আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা । সে বিষয়টি মেনে নির্দিষ্ট জায়গায় অনেকে মিলে কোরবানি দেয়। ইসলাম সবচেয়ে আধুনিক ধর্ম। সময়ের বির্বতনে সমাজ- সংসারের জন্য ভালো-মন্দ বিবেচনা করার কথা ইসলামই বলে। ধর্ম বিষয়ে যারা জ্ঞানী গুণী ব্যক্তি তারা বিষয়গুলো বোঝাতে পারেন। দুঃখজনক হচ্ছে, তারা তা করেন না।
ধর্মের দুটি দিক আছে_ আধ্যাত্মিক এবং জাগতিক। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, তুমি যদি কোনো মানুষের প্রতি অন্যায় কর, ইহজগতে যদি সে মাফ না করে তাহলে স্বয়ং অল্লাহ তাকে মাফ করতে পারবেন না। কত বড় কথা। মানুষের প্রতি ভালোবাসার কত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আমাদের ধর্মে। ভালো মানুষ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ আমরা ভালো হওয়ার চেষ্টা করি না। দুর্নীতি অন্যায়, অপরাধ বেড়েই চলেছে আমাদের সমাজে। আগে ভালো মনুষ হতে হবে তারপর তো ভালো মুসলমান হব। হ


বাড়াবাড়ি একদম পছন্দ নয়
রাণী হামিদ আন্তর্জাতিক দাবাড়ূ
কোরবানির ঈদটা একটু বেশিই উপভোগ করেন তিনি। সারা বছর মাংস খাওয়ার অপেক্ষায় থাকে দরিদ্র মানুষরা। এমন কিছু মানুষের মধ্যে মাংস বিলাতে পেরে মানসিক শান্তি পান রাণী হামিদ। আর এ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন দিনের প্রায় পুরো সময়। ভাগ-বাটোয়ারার বিষয়টি নিজেই তদারকি করেন। বললেন ঈদের দিনটি এখনও আমার কাছে খুব আনন্দের। আগে এক রকম আনন্দ ছিল এখন অন্যরকম। নাতি-নাতনিদের নিয়ে আনন্দের মাত্রাটা এখন যেন বেশিই মনে হয়; বললেন তিনি। কিছু রান্না নিজ হাতে করেন, যেগুলো পরিবারের সবাই খেতে পছন্দ করে। ঈদে উপহার দিতেও পছন্দ করেন রাণী হামিদ। তবে বাড়াবাড়ি একেবার পছন্দ না তার। বললেন, দামি পোশাক কেনা একবারে পছন্দ করি না আমি। এটা অপচয়। অনেক টাকা দিয়ে কোরবানি কিংবা দুই-তিনটা গরু কোরবানি দেওয়া উচিত না বলেই মনে করি। এতে কোরবানির আসল উদ্দেশ্য নষ্ট হয়। বরং যাদের এত টাকার কোরবানি দেওয়ার ক্ষমতা আছে_ তারা বাড়তি টাকা দিয়ে গরিব কোনো পরিবারকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। ইসলাম ধর্ম এ কথাই বলে। ধর্মের অপব্যাখ্যা চলছে বেশি আমাদের দেশে। ধর্মের নামে অনেক ক্ষেত্রে আমরা বাড়াবাড়ি করি। এটা একেবারে উচিত নয়। হ
 

No comments

Powered by Blogger.