অন্য রকম ঈদ- পশুশুমারি
সাদির ফেসবুক স্ট্যাটাসে কেবল একটা স্মাইলি। আরতাতেইলাইক২০,কমেন্ট১১।কনগ্র্যাট্স...অভিবাদন...মারহাবার হিড়িক পড়েছে। সাদির একমাত্র ভাই এই আমিসহ যারা অন্দরের খবর অবগত, বুঝি এই একটা স্মাইলি কী জবরদস্ত! যারা না জেনেই ‘কনগ্র্যাট্স’
কপি পেস্ট করছে, তাদের বোকামি ধরা পড়ছে পরের মন্তব্যে: ‘সাদি মিয়ার...কী হইল...মুষলধারে শুভেচ্ছা কেন?’
ঘণ্টা খানেক আগে আমার ইনবক্সে সাদির ওপেন সিক্রেট তথ্য: ‘ভাইয়া, কোরবানির ঈদের পর বিয়া...ধামাইল দাও!’ ধামাইল (সিলেটি লোকনৃত্য) না পারলেও মনের হরষে ক্রিস গেইলীয় নাচ দিয়েছি বউকে নিয়ে। ভেবে অবাক হই, টি-টোয়েন্টির ইনিংসের মতো কেমন ধুমধাড়াক্কা ছুটল অনেকগুলো বছর। আমার হাত ধরে স্কুলে যাওয়া ছোট্ট ভাই এখন বিয়ে করতে যাচ্ছে। কী অবিশ্বাস্য!
আমরা দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সাদি ছোট। শৈশব থেকেই সে ডানপিটে। সারা দিন দৌড়ঝাপ, যেন চঞ্চল ঘাসফড়িং আর রং পেনসিলে আঁকিবুঁকি। আমরা তখন শহরে বাংলোমতো একটা বাড়িতে ভাড়া থাকি। ঈদ এলেই বাড়ির সদর দরজায় সাদির আঁকা ছবি। রোজার ঈদে কোলাকুলির দৃশ্য। ঈদুল আজহায় আঁকত গরু-ছাগলের ছবি। এই গৃহপালিত জন্তুদের প্রতি তার আগ্রহের সীমা নেই। তখন গ্রামের বাড়িতে আমাদের কোরবানির পশু জবাই দেওয়া হতো। এ নিয়ে সাদির আফসোসের অন্ত ছিল না। নতুন জামার পাশাপাশি প্রতি ঈদুল আজহায় তার দাবি: বাসার জন্যও যেন একটা আস্ত গরু কেনা হয়। পাড়ার ঘরে ঘরে যেত পশু জরিপে। কাগজ এনে আম্মাকে দিয়ে টালিখাতার মতো বানাত। প্রচ্ছদে আঁকত যথারীতি কোনো চতুষ্পদ, পাশে লেখা ‘কোরবানির গরু-ছাগলের হিসাব’। ভেতরের পাতাগুলোতে রুল করে কলাম টানা। তাদের শিরোনাম অনেকটা এ রকম: ক্রেতার নাম, বাসা নং, গরুর সংখ্যা, গায়ের রং ও দাম, ছাগলের সংখ্যা, গায়ের রং ও দাম, মতামত ইত্যাদি। যার পশু সবচেয়ে দামি ও বড়সড় তার কপালে জুটত সাদির ‘চ্যাম্পিয়ন’-এর খেতাব! হাসতে হাসতে আমরা গড়াগড়ি খাই আরকি!
সাদির কপাল খুলল আরও কয়েক বছর পর। সিদ্ধান্ত হয় এবার বাসায় কোরবানি দেওয়া হবে। সাদির উল্লাস দেখে কে! ঈদের এক সপ্তাহ আগেই তার ব্যস্ততা। খাওয়াদাওয়া, ঘুম হারাম। উঠান পরিষ্কার করে গরুর আস্তানা বানাল। ঘাস, ঘর, চাটাই সব জমা করতে থাকল। নির্দিষ্ট দিনে জালাল ভাইকে নিয়ে সাদি ছুটল গরু কিনতে। জালাল ভাই আমাদের পরিবারের বিশ্বস্ত কর্মচারী। বললেন, ২০-২৫ মাইল দূরে খুব ভালো একটা হাট আছে। গিয়ে দেখা গেল, কিসের হাট, কিসের কি, চারপাশে শুধু ঘরবাড়ি। জালাল ভাই কাচুমাচু হয়ে বললেন, সংগ্রামের আগে একবার আসছিলাম তো...! যা-ই হোক, অনেক ঘেমে-নেয়ে সাদি কোরবানির গরু কিনে ফিরল। গরুর গলায় কাগজের মালা। আর সাদির মুখে বিশ্বজয়ীর হাসি।
পাঁচ বছর হলো সাদি ইংল্যান্ডে লেখাপড়া করছে। তার অনুপস্থিতি এখানে খুব বেশি টের পাই। বিশেষ করে, ঈদগুলো কেমন নিরামিষ। খুব মিস করি তখন ছোট্ট ভাইটাকে। অধীর হয়ে আছি আবার কবে আমরা একসঙ্গে ঈদ করব।
প্রিয় সহোদর যখন নীড় বাঁধতে যাচ্ছে, আমার আনন্দ মানছে না কোনো সেন্সর বা সম্পাদনা।
মোহাম্মদ নাহিদ রহমান
ফরদাহ খাঁ পুল, সিলেট।
ঘণ্টা খানেক আগে আমার ইনবক্সে সাদির ওপেন সিক্রেট তথ্য: ‘ভাইয়া, কোরবানির ঈদের পর বিয়া...ধামাইল দাও!’ ধামাইল (সিলেটি লোকনৃত্য) না পারলেও মনের হরষে ক্রিস গেইলীয় নাচ দিয়েছি বউকে নিয়ে। ভেবে অবাক হই, টি-টোয়েন্টির ইনিংসের মতো কেমন ধুমধাড়াক্কা ছুটল অনেকগুলো বছর। আমার হাত ধরে স্কুলে যাওয়া ছোট্ট ভাই এখন বিয়ে করতে যাচ্ছে। কী অবিশ্বাস্য!
আমরা দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সাদি ছোট। শৈশব থেকেই সে ডানপিটে। সারা দিন দৌড়ঝাপ, যেন চঞ্চল ঘাসফড়িং আর রং পেনসিলে আঁকিবুঁকি। আমরা তখন শহরে বাংলোমতো একটা বাড়িতে ভাড়া থাকি। ঈদ এলেই বাড়ির সদর দরজায় সাদির আঁকা ছবি। রোজার ঈদে কোলাকুলির দৃশ্য। ঈদুল আজহায় আঁকত গরু-ছাগলের ছবি। এই গৃহপালিত জন্তুদের প্রতি তার আগ্রহের সীমা নেই। তখন গ্রামের বাড়িতে আমাদের কোরবানির পশু জবাই দেওয়া হতো। এ নিয়ে সাদির আফসোসের অন্ত ছিল না। নতুন জামার পাশাপাশি প্রতি ঈদুল আজহায় তার দাবি: বাসার জন্যও যেন একটা আস্ত গরু কেনা হয়। পাড়ার ঘরে ঘরে যেত পশু জরিপে। কাগজ এনে আম্মাকে দিয়ে টালিখাতার মতো বানাত। প্রচ্ছদে আঁকত যথারীতি কোনো চতুষ্পদ, পাশে লেখা ‘কোরবানির গরু-ছাগলের হিসাব’। ভেতরের পাতাগুলোতে রুল করে কলাম টানা। তাদের শিরোনাম অনেকটা এ রকম: ক্রেতার নাম, বাসা নং, গরুর সংখ্যা, গায়ের রং ও দাম, ছাগলের সংখ্যা, গায়ের রং ও দাম, মতামত ইত্যাদি। যার পশু সবচেয়ে দামি ও বড়সড় তার কপালে জুটত সাদির ‘চ্যাম্পিয়ন’-এর খেতাব! হাসতে হাসতে আমরা গড়াগড়ি খাই আরকি!
সাদির কপাল খুলল আরও কয়েক বছর পর। সিদ্ধান্ত হয় এবার বাসায় কোরবানি দেওয়া হবে। সাদির উল্লাস দেখে কে! ঈদের এক সপ্তাহ আগেই তার ব্যস্ততা। খাওয়াদাওয়া, ঘুম হারাম। উঠান পরিষ্কার করে গরুর আস্তানা বানাল। ঘাস, ঘর, চাটাই সব জমা করতে থাকল। নির্দিষ্ট দিনে জালাল ভাইকে নিয়ে সাদি ছুটল গরু কিনতে। জালাল ভাই আমাদের পরিবারের বিশ্বস্ত কর্মচারী। বললেন, ২০-২৫ মাইল দূরে খুব ভালো একটা হাট আছে। গিয়ে দেখা গেল, কিসের হাট, কিসের কি, চারপাশে শুধু ঘরবাড়ি। জালাল ভাই কাচুমাচু হয়ে বললেন, সংগ্রামের আগে একবার আসছিলাম তো...! যা-ই হোক, অনেক ঘেমে-নেয়ে সাদি কোরবানির গরু কিনে ফিরল। গরুর গলায় কাগজের মালা। আর সাদির মুখে বিশ্বজয়ীর হাসি।
পাঁচ বছর হলো সাদি ইংল্যান্ডে লেখাপড়া করছে। তার অনুপস্থিতি এখানে খুব বেশি টের পাই। বিশেষ করে, ঈদগুলো কেমন নিরামিষ। খুব মিস করি তখন ছোট্ট ভাইটাকে। অধীর হয়ে আছি আবার কবে আমরা একসঙ্গে ঈদ করব।
প্রিয় সহোদর যখন নীড় বাঁধতে যাচ্ছে, আমার আনন্দ মানছে না কোনো সেন্সর বা সম্পাদনা।
মোহাম্মদ নাহিদ রহমান
ফরদাহ খাঁ পুল, সিলেট।
No comments