বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি-খাদ্য নিরাপত্তাই মুখ্য

বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের বাজার ফের ২০০৭-০৮ সালের মতো চড়া হতে পারে, এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। জুলাই মাসে গম ও সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধিকে তারা এর লক্ষণ হিসেবেই দেখছেন। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং পূর্ব ইউরোপের একটি অংশে খরার কারণে উৎপাদন কমে যাওয়া।


এ পরিস্থিতিতে খাদ্য আমদানিকারক দেশগুলোতে উদ্বেগ সৃষ্টি স্বাভাবিক। বাংলাদেশে এর কী প্রভাব পড়বে, এ প্রশ্ন যাদের তাদের জন্য উত্তর রয়েছে শনিবার সমকালের একটি সংবাদে, যার শিরোনাম ছিল_ 'আটা-ময়দার দাম বাড়ছে'। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বাজারে চাহিদা বাড়েনি, সরবরাহও স্বাভাবিক। অথচ দাম বাড়ছে আটা-ময়দার। ভোজ্যতেল, ডাল, ডিমের দামও বাড়ছে। লবণের দাম কমানোর জন্য সরকার আমদানির সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। মাছের বাজারেও নেই ইলিশ রফতানি বন্ধ রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব। রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের দাম মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছিল। দেশবাসীর জন্য এটি ছিল স্বস্তির কারণ এবং তারা সরকারকে এ জন্য সাধুবাদও দিয়েছে। সময়মতো পণ্য আমদানি এবং দেশের সর্বত্র এসব পণ্য সুষ্ঠুভাবে সরবরাহের পাশাপাশি বাজারের অস্বাভাবিক আচরণ রোধে ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের তৎপরতা ছিল এর মূলে। কিন্তু বিশ্ববাজারে যদি এক মাসের ব্যবধানে গমের দাম ২৫ শতাংশ এবং সয়াবিনের দাম ১৭ শতাংশ বেড়ে যায় তাহলে দেশের বাজার কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে? এ ক্ষেত্রে চালের বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা বাংলাদেশের জন্য খুবই স্বস্তির খবর। পর পর কয়েকটি মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় ৩০ লাখ টনের মতো চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে এবং এর ফলে বাজার রয়েছে এমনকি নিম্নবিত্ত জনসাধারণেরও আওতার মধ্যে। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছে ধান-চালের পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় সরকার ৮-১০ লাখ টন চাল রফতানির কথাও ভেবেছিল। তবে খাদ্যশস্যের বিশ্ববাজার অস্থির হতে পারে, বিশ্বব্যাংকের এমন সতর্কবার্তা থাকায় আপাতত এ উদ্যোগ স্থগিত রাখা হয়েছে। এ ধরনের নমনীয়তাই সরকারের দিক থেকে কাম্য। আমন মৌসুমেও যদি ধানের বাম্পার ফলন মেলে, কেবল সে পরিস্থিতিতেই রফতানির বিষয়টি না হয় বিবেচনা করা যাবে। আমাদের বাজারের বৈশিষ্ট্যও কিন্তু বিবেচনায় রাখা চাই। বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, বিশ্ববাজারে যে হারে দাম বাড়ে, দেশের বাজারে বৃদ্ধি ঘটে তার চেয়ে বেশি হারে। এমনকি বাজার নিয়ন্ত্রণে রেখে ক্রেতাদের কিছুটা সুবিধা দিতে শুল্ক-কর হ্রাসসহ সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে তার সুফলও যায় অসাধু ব্যবসায়ীদের ঘরে। বিশ্বব্যাপী সয়াবিন-গমের দাম বেড়েছে এবং আরও বাড়তে পারে, এমন সংবাদে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা স্থিতিশীল চালের বাজারে কারসাজি শুরু করলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। আর এখানেই সরকারের দিক থেকে চাই সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নজরদারি। আমাদের চালের বাজার দেশি সূত্রের জোগানের ওপরেই নির্ভরশীল। এ বাজার অবশ্যই স্থিতিশীল রাখতে হবে। ডাল-তেল-লবণের মতো নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দামও যাতে নানা অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিতে না পারে সেজন্য রমজান মাসের মতোই সরকার ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ সতর্ক থাকুন। বিশ্ববাজার থেকে যেসব পণ্য আমদানি করে আমরা অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করি তার দাম পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হয়তো সম্ভব হবে না। কিন্তু আন্তরিক উদ্যোগ থাকলে বাজারে ফটকা ব্যবসায়ীদের দাপট-দৌরাত্ম্য অবশ্যই সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এটাই অভিজ্ঞতা। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপগুলোও সময়মতো গ্রহণ করা চাই।
 

No comments

Powered by Blogger.