কারাগারে বসেই জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে শীর্ষ হিযবুত নেতারা!-অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগ ॥ কারা কর্তৃপক্ষের অস্বীকার by গাফফার খান চৌধুরী
থেমে নেই নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের কার্যক্রম। কারাগারের মতো স্পর্শকাতর জায়গায়ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে সংগঠনটির ৩২ নেতাকর্মী। পুরো কর্মকা-ের নেতৃত্বে রয়েছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক ও সংগঠনটির অর্থ উপদেষ্টা।
কারাবন্দী নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতকারীদের ওপর তেমন কোন নজরদারি না থাকার সুযোগে এমন তৎপরতা চলছে। এসব নেতাকর্মীকে জামিনে মুক্ত করতে সংগঠন ও কারাবন্দীদের পরিবারের তরফ থেকে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যোগাযোগের চেষ্টা চলছে দেশের খ্যাতিমান আইনজীবীদের সঙ্গেও। একশ্রেণীর অসাধু কারা কর্মকর্তা কারাগারের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় নিষিদ্ধ সংগঠনটির সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও কারা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা ও সংগঠনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদসহ ৩২ সদস্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। সংগঠনের শীর্ষ ২ নেতাসহ ২২ জন রয়েছেন কারাগারটির মাধবীলতা সেলের বিভিন্ন কক্ষে। বাকি ১০ জন রয়েছেন অন্যান্য সেলে। সেলে এবং সেলের বাইরে তাঁরা সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন। সুযোগ সুবিধামতো সংগঠনের কর্মকা- চালাতে ব্যস্ত থাকেন তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতকারীদের ওপর তেমন কোন নজরদারি নেই। জঙ্গী সংগঠনের কারাবন্দী সদস্যদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি নিয়মকানুন মেনে চলার কথা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্বাধীনতার বিপক্ষের কিছু অসাধু কারা কর্মকর্তা জড়িত। এসব অসাধু কারা কর্মকর্তা কারাগারে নিষিদ্ধ সংগঠনটির তৎপরতা চালানোর সুযোগ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারাবন্দী নেতাকর্মীদের জামিনে মুক্ত করতে সংগঠন ও কারাবন্দীদের পরিবারের তরফ থেকে জোর তৎপরতা চলছে। আদালতে হাজির করার সময় আদালত প্রাঙ্গণে এঁদের সঙ্গে সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা দেখা সাক্ষাত করেন। এসব হিযবুত তাহ্রীর সদস্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যে কোন সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে পারেন। এমন আভাস মিলেছে গোয়েন্দা সূত্রে।
কারাগারের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় নিষিদ্ধ হিযবুত তাহ্রীরের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা। তাঁর পিতার নাম তাজুল ইসলাম। বাড়ি কুমিল্লা সদর জেলার পূর্ব আশকামতা গ্রামে। ২০১০ সালের ৮ জুন তাঁকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। কয়েক দফা রিমান্ড শেষে তাকে ২০১০ সালের ৭ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। তাকে কারাগারের ‘মাধবীলতা’ সেলের ৩০ নম্বর কক্ষে রাখা হয়েছে। তিনি উত্তরা থানার ১০(৩)১০ নম্বর মামলার আসামি। বন্দী নম্বর ২১৫৭৬/১০।
সংগঠনটির আরেক মাস্টারমাইন্ড এবং মুখপাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ শিক্ষক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ। তাঁকে ২০১০ সালের ১৯ মার্চ রাত ৩টার দিকে রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানাধীন গ্রীন রোড়ের ১৪০ নম্বর ৫তলা বাড়ির ৪তলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর পিতার নাম আলাউদ্দিন। বাড়ি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন মিঠানুভাওয়াল গ্রামে। তিনি উত্তরা মডেল থানার ৫০(১২)১০, ২৪ (২) ১০ ও ১০ (৩) ১০ মামলার আসামি। তাঁকে কয়েক দফা রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডে তিনি চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন নিষিদ্ধ সংগঠনটি সম্পর্কে। ২০১০ সালের ২৪ মে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। রাখা হয়েছে কারাগারের মাধবীলতা সেলের ২৭ নম্বর কক্ষে। তাঁর বন্দী নম্বর ১২৬১০/১০।
এ দু’জনের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সংগঠনটির অর্থ উপদেষ্টা ও যুগ্ম সমন্বয়কারী কাজী মোরশেদুল হক। ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে র্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইং রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪১/৮/এ নম্বর বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে। তাঁর পিতার নাম কাজী এজাজুল হক। বাড়ি মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন বামুনখালী গ্রামে। তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মাধবীলতা সেলের ২৯ নম্বর কক্ষে রাখা হয়েছে। তাঁর বন্দী নম্বর ১২৮৮৮/১০। তিনি উত্তরা মডেল থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের করা ২৪ (২) ১০ নম্বর মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। প্রসঙ্গত, এ মামলার অন্যতম আসামি হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ ও ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মূলত এ তিনজনের নেতৃত্বেই হিযবুত তাহ্রীরের কারাবন্দী ২৯ নেতাকর্মী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাংগঠনিক তৎপরতা চালানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি দেশের যেসব কারাগারে নিষিদ্ধ সংগঠনটির নেতাকর্মী বন্দী রয়েছেন সেসব কারাগারে এ তিন নেতার নেতৃত্বেই সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হিযুবত তাহ্রীরের যে সব সদস্য সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা হচ্ছেন আবু তাহের ওরফে মাসুদ, পিতা মোসলেম মিয়া, বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানাধীন পাথের গ্রামে। মজিবুল হাসান ওরফে সাকির, পিতা মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান, বাড়ি রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া থানাধীন গজঘণ্ট গ্রামে। শেখ মুনসুর আহমেদ, পিতা শেখ আলাউদ্দিন, বাড়ি জয়পুরহাট জেলা সদরের কায়তাহার এলাকায়। আলাউদ্দিন ওরফে কামরুল, পিতা রুহুল আমিন, বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভূইয়া থানাধীন পূর্বচট্টাপুর গ্রামে। সাইদুল ইসলাম, পিতা নূর মোহাম্মদ বাবু, বাড়ি যশোর জেলা সদরের চাচড়া গ্রামে। কাজী আবিদ নূর, পিতা কাজী জহিরুল ইসলাম, বাড়ি রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন দক্ষিণ গাউছিয়া এলাকায়। রাসেল আহম্মেদ, পিতা আবুল হাশেম, বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাদপুরে। ইবনে মিজান, পিতা মফিজুল ইসলাম, বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জের লক্ষারচরে। মহিদ হাসান মোল্লা, পিতা হাফিজুর রহমান, বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানাধীন হেরত্তাপাড়ায়। মাহমুদ হাসান মোল্লা, পিতা এম সিরাজুল ইসলাম, বাড়ি সিলেট জেলার কোতোয়ালি থানাধীন কুমারপাড়ায়। আরিফ রাব্বানী, পিতা গোলাম মোস্তফা, বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানাধীন রামনাথ গ্রামে। মোহাম্মদ শিহাব, পিতা আব্দুল বাতেন, বাড়ি দৌলতপুর জেলার গোবিন্দপুর থানাধীন রাইকাটারী গ্রামে। মফিজ ইমতিয়াজ, পিতা শহীদুল্লাহ, বাড়ি চাঁদপুর জেলার করিমগঞ্জ থানাধীন করিমপুরে। মিরাজ হাওলাদার, পিতা আবুল হাশেম, বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া থানাধীন নিয়ামতপুর গ্রামে। একরামুল খায়ের, পিতা আবুল খায়ের, বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানাধীন মনতলায়। ফয়সাল, পিতা ইস্রাফিল, বাড়ি মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানা এলাকায়। ওমর ফারুক, পিতা জিয়া উদ্দিন, বাড়ি ফেনী জেলার পরশুরাম থানাধীন সত্যনগর গ্রামে। জনি, পিতা ইয়াছিন, বাড়ি ঢাকার সবুজবাগ থানাধীন মাদারটেকের খরবামপাড়ায়। হারুন অর রশিদ, পিতা মতিয়ার রহমান, বাড়ি গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে। নিষিদ্ধ সংগঠনটির এ ২২ নেতাকর্মী রয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মাধবীলতা সেলের বিভিন্ন কক্ষে।
হিযবুত তাহ্রীরের বাকি ১০ নেতাকর্মী রয়েছেন অন্যান্য সেলে। এঁরা হচ্ছেন মনিরুল ইসলাম, পিতা হাজুল ইসলাম, বাড়ি কুমিল্লা জেলার হোমনা থানাধীন দৌলতপুরে। হাবিবুর রহমান, পিতা দেলোয়ার হোসেন, বাড়ি চাঁদপুর জেলা সদরের রালদিয়া এলাকায়। রাশেদ খান, পিতা সাইদুল হক, বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর জেলার উত্তরনামাপুরে। মাকসুদুর রহমান, পিতা মোজাম্মেল হোসেন, বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানাধীন সাইটভাঙ্গায়। ফয়সাল লস্কর, পিতা ইস্রাফিল লস্কর, বাড়ি মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানাধীন সত্যব্রতী গ্রামে। ইশরাক আলম, পিতা আব্দুস ছালাম, বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানাধীন নগরভৌকান্দি এলাকায়। নাজমুল হক সুজন, পিতা নবিউল হক, বাড়ি কক্সবাজার জেলা সদরের মংলাপাড়াপেচার দ্বীপে। মাহাদী হাসান ওরফে ফয়সাল, পিতা নজরুল ইসলাম. বাড়ি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানাধীন সাতপাইবা গ্রামে। মাহমুদুল ইসলাম, পিতা আরিফ হোসেন, বাড়ি বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ থানাধীন চাঁদপুর গ্রামে। অপরজন হচ্ছেন মোহাম্মদ সজল, পিতা শরিফ উদ্দিন, বাড়ি রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন ৩০ নম্বর গজমহলে।
এ ব্যাপারে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আশরাফুল ইসলাম খান জনকণ্ঠকে বলেন, কারাবন্দী হিযবুত তাহ্রীরের সদস্যসংখ্যা কম। দিন দিন তা আরও কমে যাচ্ছে। তবে দেশের ৬৭ কারাগারে কতজন হিযবুত তাহ্রীর নেতাকর্মী বন্দী রয়েছেন তা তিনি সুনির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত নন। ইতোমধ্যেই অনেক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গীকে গাজীপুর জেলার কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি জেলে পাঠানো হয়েছে। কারাবন্দী হিযবুত তাহ্রীর নেতাকর্মীদের কারাগারে কোন প্রকার সাংগঠনিক তৎপরতা চালানোর তথ্য তাঁদের কাছে নেই। কারাবন্দী হিযবুত তাহ্রীরসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর তাদের জোর নজরদারি অব্যাহত আছে। প্রয়োজনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৫৩ সালে পূর্ব জেরুজালেমের সাবেক বিচারক তাকিউদ্দিন আল-নাবানী হিযবুত তাহ্রীর গঠন করেন। পরবর্তীতে জেরুজালেমের প্রধান মুফতি শেখ হাজী আমিন আল হোসাইনীর উগ্র মতবাদে প্রভাবিত হয়ে বিশ্বে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেন। ২০০২ সালে ডেনমার্কে ইহুদী দেখামাত্র হত্যার ঘোষণা দান, ২০০৩ সালে তেলআবিবে এক মদের দোকানে বোমা হামলা চালিয়ে ৩ জনকে হত্যা, ২০০৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর উজবেকিস্তানের মার্কিন ও ইসরাইলী দূতাবাসে আত্মঘাতী বোমা হামলা, ২০০৪ সালে তাজিকিস্তানের তাসখন্দ এলাকায় বোমা হামলা করে ৪৭ জনকে হত্যার জন্য হিযবুত তাহ্রীরকে দায়ী করা হয়। এমনকি আল কায়েদা, তালেবান ও বৈশ্বিক জিহাদের জন্য কর্মী সংগ্রহের কাজের সঙ্গে হিযবুত তাহ্রীর জড়িত বলে আন্তর্জাতিকভাবে অভিযোগ রয়েছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে। ২০০৮ সালে পাকিস্তানে হিযবুত তাহ্রীরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়।
২০০২ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশে সংগঠনটির প্রাথমিক তৎপরতা শুরু হয়। এ লক্ষ্যে ওই বছরই বাংলাদেশে বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত একটি এনজিওর উত্তরার একটি কার্যালয়ে হিযবুত তাহ্রীরের ১৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। ২০০৩ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশে দলটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দেয়া হয়। এক মাস পর মার্চ থেকেই সংগঠনটি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে সংগঠনটি আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা এবং দেশের সব নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গীদের একত্রিত করতেই দলটি নতুন করে গঠন করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার তরফ থেকে সরকারের কাছে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২৪ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিযবুত তাহ্রীরের কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা ও সংগঠনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদসহ ৩২ সদস্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। সংগঠনের শীর্ষ ২ নেতাসহ ২২ জন রয়েছেন কারাগারটির মাধবীলতা সেলের বিভিন্ন কক্ষে। বাকি ১০ জন রয়েছেন অন্যান্য সেলে। সেলে এবং সেলের বাইরে তাঁরা সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন। সুযোগ সুবিধামতো সংগঠনের কর্মকা- চালাতে ব্যস্ত থাকেন তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতকারীদের ওপর তেমন কোন নজরদারি নেই। জঙ্গী সংগঠনের কারাবন্দী সদস্যদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি নিয়মকানুন মেনে চলার কথা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্বাধীনতার বিপক্ষের কিছু অসাধু কারা কর্মকর্তা জড়িত। এসব অসাধু কারা কর্মকর্তা কারাগারে নিষিদ্ধ সংগঠনটির তৎপরতা চালানোর সুযোগ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারাবন্দী নেতাকর্মীদের জামিনে মুক্ত করতে সংগঠন ও কারাবন্দীদের পরিবারের তরফ থেকে জোর তৎপরতা চলছে। আদালতে হাজির করার সময় আদালত প্রাঙ্গণে এঁদের সঙ্গে সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা দেখা সাক্ষাত করেন। এসব হিযবুত তাহ্রীর সদস্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যে কোন সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে পারেন। এমন আভাস মিলেছে গোয়েন্দা সূত্রে।
কারাগারের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় নিষিদ্ধ হিযবুত তাহ্রীরের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা। তাঁর পিতার নাম তাজুল ইসলাম। বাড়ি কুমিল্লা সদর জেলার পূর্ব আশকামতা গ্রামে। ২০১০ সালের ৮ জুন তাঁকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। কয়েক দফা রিমান্ড শেষে তাকে ২০১০ সালের ৭ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। তাকে কারাগারের ‘মাধবীলতা’ সেলের ৩০ নম্বর কক্ষে রাখা হয়েছে। তিনি উত্তরা থানার ১০(৩)১০ নম্বর মামলার আসামি। বন্দী নম্বর ২১৫৭৬/১০।
সংগঠনটির আরেক মাস্টারমাইন্ড এবং মুখপাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ শিক্ষক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ। তাঁকে ২০১০ সালের ১৯ মার্চ রাত ৩টার দিকে রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানাধীন গ্রীন রোড়ের ১৪০ নম্বর ৫তলা বাড়ির ৪তলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর পিতার নাম আলাউদ্দিন। বাড়ি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন মিঠানুভাওয়াল গ্রামে। তিনি উত্তরা মডেল থানার ৫০(১২)১০, ২৪ (২) ১০ ও ১০ (৩) ১০ মামলার আসামি। তাঁকে কয়েক দফা রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডে তিনি চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন নিষিদ্ধ সংগঠনটি সম্পর্কে। ২০১০ সালের ২৪ মে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। রাখা হয়েছে কারাগারের মাধবীলতা সেলের ২৭ নম্বর কক্ষে। তাঁর বন্দী নম্বর ১২৬১০/১০।
এ দু’জনের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সংগঠনটির অর্থ উপদেষ্টা ও যুগ্ম সমন্বয়কারী কাজী মোরশেদুল হক। ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে র্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইং রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪১/৮/এ নম্বর বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে। তাঁর পিতার নাম কাজী এজাজুল হক। বাড়ি মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন বামুনখালী গ্রামে। তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মাধবীলতা সেলের ২৯ নম্বর কক্ষে রাখা হয়েছে। তাঁর বন্দী নম্বর ১২৮৮৮/১০। তিনি উত্তরা মডেল থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের করা ২৪ (২) ১০ নম্বর মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। প্রসঙ্গত, এ মামলার অন্যতম আসামি হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ ও ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মূলত এ তিনজনের নেতৃত্বেই হিযবুত তাহ্রীরের কারাবন্দী ২৯ নেতাকর্মী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাংগঠনিক তৎপরতা চালানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি দেশের যেসব কারাগারে নিষিদ্ধ সংগঠনটির নেতাকর্মী বন্দী রয়েছেন সেসব কারাগারে এ তিন নেতার নেতৃত্বেই সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হিযুবত তাহ্রীরের যে সব সদস্য সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা হচ্ছেন আবু তাহের ওরফে মাসুদ, পিতা মোসলেম মিয়া, বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানাধীন পাথের গ্রামে। মজিবুল হাসান ওরফে সাকির, পিতা মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান, বাড়ি রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া থানাধীন গজঘণ্ট গ্রামে। শেখ মুনসুর আহমেদ, পিতা শেখ আলাউদ্দিন, বাড়ি জয়পুরহাট জেলা সদরের কায়তাহার এলাকায়। আলাউদ্দিন ওরফে কামরুল, পিতা রুহুল আমিন, বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভূইয়া থানাধীন পূর্বচট্টাপুর গ্রামে। সাইদুল ইসলাম, পিতা নূর মোহাম্মদ বাবু, বাড়ি যশোর জেলা সদরের চাচড়া গ্রামে। কাজী আবিদ নূর, পিতা কাজী জহিরুল ইসলাম, বাড়ি রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন দক্ষিণ গাউছিয়া এলাকায়। রাসেল আহম্মেদ, পিতা আবুল হাশেম, বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাদপুরে। ইবনে মিজান, পিতা মফিজুল ইসলাম, বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জের লক্ষারচরে। মহিদ হাসান মোল্লা, পিতা হাফিজুর রহমান, বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানাধীন হেরত্তাপাড়ায়। মাহমুদ হাসান মোল্লা, পিতা এম সিরাজুল ইসলাম, বাড়ি সিলেট জেলার কোতোয়ালি থানাধীন কুমারপাড়ায়। আরিফ রাব্বানী, পিতা গোলাম মোস্তফা, বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানাধীন রামনাথ গ্রামে। মোহাম্মদ শিহাব, পিতা আব্দুল বাতেন, বাড়ি দৌলতপুর জেলার গোবিন্দপুর থানাধীন রাইকাটারী গ্রামে। মফিজ ইমতিয়াজ, পিতা শহীদুল্লাহ, বাড়ি চাঁদপুর জেলার করিমগঞ্জ থানাধীন করিমপুরে। মিরাজ হাওলাদার, পিতা আবুল হাশেম, বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া থানাধীন নিয়ামতপুর গ্রামে। একরামুল খায়ের, পিতা আবুল খায়ের, বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানাধীন মনতলায়। ফয়সাল, পিতা ইস্রাফিল, বাড়ি মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানা এলাকায়। ওমর ফারুক, পিতা জিয়া উদ্দিন, বাড়ি ফেনী জেলার পরশুরাম থানাধীন সত্যনগর গ্রামে। জনি, পিতা ইয়াছিন, বাড়ি ঢাকার সবুজবাগ থানাধীন মাদারটেকের খরবামপাড়ায়। হারুন অর রশিদ, পিতা মতিয়ার রহমান, বাড়ি গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে। নিষিদ্ধ সংগঠনটির এ ২২ নেতাকর্মী রয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মাধবীলতা সেলের বিভিন্ন কক্ষে।
হিযবুত তাহ্রীরের বাকি ১০ নেতাকর্মী রয়েছেন অন্যান্য সেলে। এঁরা হচ্ছেন মনিরুল ইসলাম, পিতা হাজুল ইসলাম, বাড়ি কুমিল্লা জেলার হোমনা থানাধীন দৌলতপুরে। হাবিবুর রহমান, পিতা দেলোয়ার হোসেন, বাড়ি চাঁদপুর জেলা সদরের রালদিয়া এলাকায়। রাশেদ খান, পিতা সাইদুল হক, বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর জেলার উত্তরনামাপুরে। মাকসুদুর রহমান, পিতা মোজাম্মেল হোসেন, বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানাধীন সাইটভাঙ্গায়। ফয়সাল লস্কর, পিতা ইস্রাফিল লস্কর, বাড়ি মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানাধীন সত্যব্রতী গ্রামে। ইশরাক আলম, পিতা আব্দুস ছালাম, বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানাধীন নগরভৌকান্দি এলাকায়। নাজমুল হক সুজন, পিতা নবিউল হক, বাড়ি কক্সবাজার জেলা সদরের মংলাপাড়াপেচার দ্বীপে। মাহাদী হাসান ওরফে ফয়সাল, পিতা নজরুল ইসলাম. বাড়ি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানাধীন সাতপাইবা গ্রামে। মাহমুদুল ইসলাম, পিতা আরিফ হোসেন, বাড়ি বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ থানাধীন চাঁদপুর গ্রামে। অপরজন হচ্ছেন মোহাম্মদ সজল, পিতা শরিফ উদ্দিন, বাড়ি রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন ৩০ নম্বর গজমহলে।
এ ব্যাপারে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আশরাফুল ইসলাম খান জনকণ্ঠকে বলেন, কারাবন্দী হিযবুত তাহ্রীরের সদস্যসংখ্যা কম। দিন দিন তা আরও কমে যাচ্ছে। তবে দেশের ৬৭ কারাগারে কতজন হিযবুত তাহ্রীর নেতাকর্মী বন্দী রয়েছেন তা তিনি সুনির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত নন। ইতোমধ্যেই অনেক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গীকে গাজীপুর জেলার কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি জেলে পাঠানো হয়েছে। কারাবন্দী হিযবুত তাহ্রীর নেতাকর্মীদের কারাগারে কোন প্রকার সাংগঠনিক তৎপরতা চালানোর তথ্য তাঁদের কাছে নেই। কারাবন্দী হিযবুত তাহ্রীরসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর তাদের জোর নজরদারি অব্যাহত আছে। প্রয়োজনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৫৩ সালে পূর্ব জেরুজালেমের সাবেক বিচারক তাকিউদ্দিন আল-নাবানী হিযবুত তাহ্রীর গঠন করেন। পরবর্তীতে জেরুজালেমের প্রধান মুফতি শেখ হাজী আমিন আল হোসাইনীর উগ্র মতবাদে প্রভাবিত হয়ে বিশ্বে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেন। ২০০২ সালে ডেনমার্কে ইহুদী দেখামাত্র হত্যার ঘোষণা দান, ২০০৩ সালে তেলআবিবে এক মদের দোকানে বোমা হামলা চালিয়ে ৩ জনকে হত্যা, ২০০৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর উজবেকিস্তানের মার্কিন ও ইসরাইলী দূতাবাসে আত্মঘাতী বোমা হামলা, ২০০৪ সালে তাজিকিস্তানের তাসখন্দ এলাকায় বোমা হামলা করে ৪৭ জনকে হত্যার জন্য হিযবুত তাহ্রীরকে দায়ী করা হয়। এমনকি আল কায়েদা, তালেবান ও বৈশ্বিক জিহাদের জন্য কর্মী সংগ্রহের কাজের সঙ্গে হিযবুত তাহ্রীর জড়িত বলে আন্তর্জাতিকভাবে অভিযোগ রয়েছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে। ২০০৮ সালে পাকিস্তানে হিযবুত তাহ্রীরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়।
২০০২ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশে সংগঠনটির প্রাথমিক তৎপরতা শুরু হয়। এ লক্ষ্যে ওই বছরই বাংলাদেশে বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত একটি এনজিওর উত্তরার একটি কার্যালয়ে হিযবুত তাহ্রীরের ১৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। ২০০৩ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশে দলটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দেয়া হয়। এক মাস পর মার্চ থেকেই সংগঠনটি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে সংগঠনটি আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা এবং দেশের সব নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গীদের একত্রিত করতেই দলটি নতুন করে গঠন করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার তরফ থেকে সরকারের কাছে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২৪ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিযবুত তাহ্রীরের কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
No comments