গ্রেনেড হামলাকে বোমা হামলা বানানোর অপচেষ্টা হয়েছিল ২১ আগস্টের বর্বরতা by শংকর কুমার দে

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৫ দিন পরে পুলিশের দেয়া গোপন প্রতিবেদনে গ্রেনেড হামলাকে বোমা হামলা আখ্যায়িত করে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলার সময় প্রহরায় থাকা ৪২২ পুলিশ সদস্যকে লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিৰেপ করার নির্দেশ দিয়ে পালাতে সাহায্য করা হয়েছে গ্রেনেড হামলাকারীদের।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে (বিরোধীদলীয় নেতা থাকাকালে) গ্রেনেড হামলার সময় নিরাপত্তা রৰায় নিয়োজিত ও গ্রেনেড হামলায় আহত ৮ পুলিশ সদস্যকে এবার পুলিশ পদক দেয়া হচ্ছে। গ্রেনেড হামলার প্র জনরোষ যাতে পল্টনের বিএনপির অফিসে এসে না পড়ে, সে জন্য পুলিশ মোতায়েনের মাধ্যমে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার তদনত্মে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। মিথ্যার আশ্রয় ও হামলাকারীদের পালাতে সাহায্য করার অভিযোগে সংশিস্নষ্ট দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরম্নদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার অভিযান চালানো হতে পারে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলার ১৫ দিন পর পুলিশ প্রতিবেদন দেয়া হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের পূর্ব বিভাগের ডিসি(ইস্ট) ওবায়দুর রহমান স্বাৰরিত পুলিশ প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয় তখন। এই প্রতিবেদনে গ্রেনেড হামলাকে অভিহিত করা হয়েছে বোমা হামলা হিসেবে। বোমায় হতাহত হয়েছে বলে গোপন প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি গ্রেনেড হামলার ৫ বছর ধরে আলোর মুখ দেখতে পায়নি।
পুলিশ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলার সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসির (ইস্ট) সার্বিক তত্ত্বাবধানে এডিসি (ইস্ট), এসি পেট্রোল (ইস্ট), এসি (মতিঝিল), ওসি মতিঝিল, পিআই পল্টন, সার্জেন্ট, সাব-ইন্সপেক্টর, ডিবি পুলিশসহ ঘটনার সময় মোতায়েন ছিল ৪২২ পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে ডিবি পুলিশের সাদা পেশাকে ৬টি টিমের ৩৬ জন মোতায়েন ছিল। মহিলা পুলিশ মোতায়েন করা হয় ২০ জন। বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলার সময় রম্নফটপ পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি। কিন্তু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে রম্নফটপ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলার সময় যে ৪২২ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল তার মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ প্রায় ২শ' পুলিশ মোতায়েন করা ছিল পল্টন, বিজয়নগর, মতিঝিল এলাকায় (পল্টনে বিএনপি অফিসের চারদিকে তখনকার মতিঝিল থানার আশপাশে, বিজয়নগর না্ইটিঙ্গেলের সামনের রাসত্মায় ও পল্টনের বিএনপি অফিস এলাকার চারদিকের রাসত্মায়)। গ্রেনেড হামলার সময় ্আওয়ামী লীগ অফিসের সামনের সমপরিমাণ বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশ মোতায়েনের মাধ্যমে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্ঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে গ্রেনেড হামলার সময়ের জনরোষ যাতে পল্টনের বিএনপি অফিসের গিয়ে না পড়ে সে জন্য আগে থেকেই পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েনের মাধ্যমে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলার সময় নিহত ও আহতদের উদ্ধার করার পরিবর্তে মোতায়েন করা পুলিশ দল বিৰুব্ধ মানুষজনের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করেছে। বিৰুব্ধ মানুষজনের ওপর দফায় দফায় টিয়ারগ্যাস নিৰেপ করা হয়েছে। পুলিশের লাঠিচার্জ ও টি্য়ারগ্যাস নিৰেপের কারণে গ্রেনেড হামলাকারীরা নিরাপদে-নির্বিঘ্নে পালাতে সাহায্য পেয়েছে। অপরদিকে গ্রেনেড হামলায় হতাহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়ার ব্যাপারে বাধার সৃষ্টি হয়েছে।
সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকে বোমা হামলা আখ্যায়িত করার ঘটনা বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। গ্রেনেড হামলার সময় বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ অফিসের সমপরিমাণ পল্টনের বিএনপি অফিসে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েনের বিষয়টি অনেক কিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে। গ্রেনেড হামলার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (বিরোধীদলীয় নেতা থাকাকালে) নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে গ্রেনেড হামলায় আহত ৮ পুলিশ সদস্যকে এবারের পুলিশ সপ্তাহে পদক দেয়া হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.