'আ. লীগের' খাস লোক পরিচয়ে দাপট দেখান ডিসি ফয়েজ

এরশাদ সরকার আমলে নিয়োগ পাওয়া এবং বর্তমানে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক পদে কর্মরত ফয়েজ আহম্মদ আওয়ামী লীগের খাস লোক হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিতি পেয়েছেন। গত জুনে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনার পর ডিসিদের ভূমিকা নিয়ে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখা হলেও তাঁর কর্মকাণ্ডের বিষয়ে


কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ওই সময় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রেখেছিলেন জাসদ নেতা মাঈনুদ্দিন খান বাদল এমপি এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. ফজলুল আজিম। আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতার সমর্থন থাকায় ফয়েজ আহম্মদকে পদোন্নতি দেওয়ার পাঁচ মাস পরও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের পদ থেকে অন্যত্র পদায়ন করা হয়নি বলে জানা গেছে। অথচ গত ফেব্রুয়ারি মাসেই তিনি যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন।
জানা গেছে, এরশাদ সরকার আমলে সরকারি চাকরি শুরু করেছিলেন চট্টগ্রামের বর্তমান জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মদ। আওয়ামী লীগের প্রতি আনুগত্য থাকায় ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর তৎকালীন বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসেনের পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৯ সালে বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই বছরের ২৭ এপ্রিল তিনি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান। রাজবাড়ীতে মাত্র এক বছর দায়িত্ব পালনের পর গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক পদে যোগ দেন তিনি। আর চট্টগ্রামে এসেই তিনি স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় নিজেকে আওয়ামী লীগের প্রতি বিশেষ আনুগত্যশীল হিসেবে পরিচিতি গড়ে তোলেন।
পটুয়াখালী উপজেলা সদরের বাসিন্দা এবং ফয়েজ আহম্মদের এক নিকটাত্মীয় পরিচয় প্রকাশ হবে না শর্তে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, 'মূলত তৎকালীন বস্ত্র প্রতিমন্ত্রীর পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ই তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন।' তিনি আরো বলেন, 'ডিসি ফয়েজ আহম্মদের চাচাতো ভাই দেলোয়ার হোসেন মোল্লা পটুয়াখালীর কমলাপুর ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।'
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট এই কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড বিষয়ে গত ২৭ জুন জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে প্রশ্ন তুলেছিলেন জাসদ নেতা ও সাংসদ মাঈনুদ্দিন খান বাদল। ওই সময় চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে প্রাণহানির পর জেলা প্রশাসকের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, 'জলাবদ্ধতার কারণে গত কয়েক দিন ধরে চট্টগ্রাম পানির নিচে তলিয়ে আছে। জলাবদ্ধ জনগণ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দুর্যোগের কারণে এ পর্যন্ত ৭৯ জন লোক মারা গেছে। অথচ দুর্গত এলাকায় এখনো কোনো ত্রাণ সাহায্য পৌঁছায়নি। এমনকি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পক্ষ থেকে জনপ্রতিনিধিদের কোনো কিছু অবহিত করা হয়নি।' তিনি বলেন, 'ডিসিরা নিজেদের কী মনে করেন? তাঁরা কখন সাহায্য পাঠাবেন?' এরপর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. ফজলুল আজিম ফ্লোর নিয়ে বলেছিলেন, 'চট্টগ্রামের বেশির ভাগ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অথচ ডিসিরা লাট সাহেবের মতো বসে আছেন।'
এসব বিষয়ে জানার জন্য কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে উদ্দেশ বলে বলেছিলেন, 'আপনি লিখে দেন, টেলিফোনে জেলা প্রশাসককে পাওয়া যায়নি।'
সংশোধনী
গতকাল কালের কণ্ঠের প্রথম পাতায় প্রকাশিত 'চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই খননকাজ শুরু, ডিসির ভাষ্য, লেখেন আমি নেই' শীর্ষক সংবাদের একাংশে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের নাম আবুল ফয়েজ ছাপা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাঁর নাম ফয়েজ আহম্মদ। অনিচ্ছাকৃত এ ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

No comments

Powered by Blogger.