রকস্টার রণবীর...

কাপুর পরিবারের ছেলে হওয়ায় বলা চলে অভিনেতা হয়েই জন্মেছিলেন তিনি। বাবা ঋষি কাপুর এবং দাদা রাজ কাপুর দু’জনেই বলিউডের এককালের পর্দা কাঁপানো অভিনেতা। কিন্তু রণবীর সমালোচকরাও একথা স্বীকার করেন যে, শুধু পরিবারের তকমা গায়ে লাগিয়ে অভিনেতা হতে আসেননি তিনি। প্রস্তুতি ছিল পুরোপুরি।


পড়াশোনা করেছেন নিউইয়র্কের লি স্টাসবার্গ থিয়েটার এ্যান্ড ফিল্ম ইনস্টিটিউটে। পরিচালনা দিয়ে শুরু করেছেন কর্মজীবন। ‘ব্লাক’ ছবিতে সঞ্জয়লীলা বনশালীর সহকারী হয়ে কাজ করেছেন। সেটা ২০০৫ সালে। তবে সেলুলয়েডের রঙ্গীন ফিতায় আবদ্ধ হয়েছিলেন আরও পরে। ২০০৭ সালে বনশালীর চলচ্চিত্র সাওয়ারিয়াতে প্রথম অভিনয় করেন রণবীর। দু’একটা প্রশংসা বাণী আর ফিল্মফেয়ার সেরা নবাগত পুরস্কার ছাড়া কিছুই জোটেনি। বক্স অফিসে ‘সাওয়ারিয়া’ নামটি যোগ হয় ফ্লপের তালিকায়। ২০০৯ ছিল রণবীরের ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। কঙ্কনা সেনের বিপরীতে ‘ওয়েক আপ সিড’ ছবিতে বখাটে কলেজ ছাত্র চরিত্রে অভিনয় দিয়ে ব্যবসায়িক সফলতা কুড়ান। পরের বছর মুুক্তি পায় ‘আজব প্রেম কি গজব কাহানি।’ সে বছর হিটের তালিকায় থাকা এ ছবিটির মাধ্যমে প্রথম হাত ধরেছিলেন ক্যাটরিনা কাইফের।
রকস্টারের পর আরও একটা ভিন্ন ঘরানার ছবি দিয়ে বক্স অফিস মাত করতে চেয়েছিলেন রণবীর কাপুর। কিন্তু খুব দ্রুত তা হচ্ছে না। ‘বারফি’ মুক্তি পেতে আরও প্রায় বছরখানেক লেগে যাবে। ২০১২ সালেই ছবিটি রিলিজ হওয়ার কথা থাকলেও বিশেষ কারণ দেখিয়ে তা ২০১৩ সালে পিছিয়ে দিয়েছে প্রযোজনা কর্তৃপক্ষ। এতে ‘রকস্টার’ এবং ‘বারফি’র মধ্যে গ্যাপটা মনে হয় একটু বেশিই হয়ে গেল। অবশ্য তাতে মোটেই মন খারাপ করেননি ‘চকলেট বয়’ রণবীর। রকস্টার নিয়ে পুরো ইন্ডিয়ার মাতামাতিটা বসে বসে ভালই উপভোগ করছেন। দিন দিন নামের পাশে যোগ হওয়া হরেক বিশেষণ আর পুরস্কারের দীর্ঘ লিস্টের ভারি বোঝা কিভাবে একা বইবেন সেই চিন্তায়ই ঘুমাচ্ছেন অঘোরে! বারফি’র বিলম্ব নিয়ে রণবীরের খোশ মেজাজের কারণ অবশ্য আরও একটা আছে। ‘বিলম্ব’ শব্দটিকে বড় ভালবেসে ফেলেছেন রণবীর। তার এ ভালবাসার সূচনা যখন ‘আজব প্রেম কি গজব কাহানি’ দীর্ঘ দুই বছর প্রতীক্ষার পর মুক্তি পায় তখন থেকেই। এ ছবিটিই রণকে ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে দিয়েছে। তার ‘রকস্টার’ হওয়ার পেছনে এটি ছিল বেশ শক্ত একটা ধাপ। ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা সমালোচনা পুরস্কারটাও ঘরে এসেছিল এ ছবির কল্যাণে। পরের বছর ২০১০ সালে তুমুল আলোচিত ‘রাজনীতি’ নিয়েও একই বেকায়দায় পড়েন রণবীর। মুক্তি দেয়ার জন্য সব আটঘাট বাঁধা হলেও পরিচালক প্রকাশ ঝা তা পিছিয়ে দেন ছয় মাস। বহু তারকা সমন্বিত এ ছবিটি রণবীরকে ‘আজব প্রেম কি গজব কাহানি’র চাইতেও একটু বেশি সফলতা এনে দেয়। ছবি মুক্তির বিলম্ব নিয়ে তাই কোন অভিযোগ নেই রণবীরের।
মাত্র পাঁচ বছরের অভিনয় জীবনে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা এখনও দশের সীমা অতিক্রম করেনি। মিডিয়াতে অবস্থানটা কম সময়ের হলেও ব্যক্তিগত রসায়ন কিন্তু মোটেই কম নয়। দীপিকা পাডুকোনের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা এবং খুব অল্প সময়ে তা ভাঙ্গন নিয়ে লিখতে গিয়ে বিনোদন বিট করা সাংবাদিকরা দিস্তা দিস্তা কাগজ খরচ করেছেন। পরবর্তীতে ক্যাটরিনা কাইফকে নিয়েও একই সন্দেহ জলটাকে শুধুই ঘোলা করেছে। তবে সেই ঘোলা জলে মাছ শিকারের সুযোগটা কিন্তু মোটেই হাত ছাড়া করেননি রণবীর। প্রত্যেকটা ছবিতে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন। সর্বশেষ মুভির কল্যাণে তিনি এখন ‘রকস্টার’। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘বারফি’ তার জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জিং। এখানে রণ নির্বাক। সমালোচকরা মনে করছেন, বোবা-বধির এ চরিত্রটির মাধ্যমে দর্শকরা চ্যাপলিন এবং রাজ কাপুরকে দেখতে পাবেন। সমালোচকদের ধারণা সত্যি হলে রণবীর পৌঁছে যাবেন আরও উঁচুতে। তবে সে উচ্চতাটা যত বেশি হোক না কেন, নিজের ভাল লাগার প্রতি একটু বেশি ভালবাসা তার সব সময়। সম্প্রতি এনডিটিভি’র এক সাক্ষাতকারে রণ জানালেন, যে কোন ধরনের খেলা তিনি খুব পছন্দ করেন। তবে ক্যারিয়ারের ব্যস্ততার কারণে খেলাধুলা করতে না পারলেও স্পোর্টস নিয়ে নির্মিত কোন ছবিতে অভিনয় করতে চান তিনি। আমির খানের ‘লগান’ এর পরে স্পোর্টস নিয়ে কোন মুভি তেমন ব্যবসায়িক সফলতা দেখাতে পারেনি। তাছাড়া খান পরিবারের এ্যাকশন মুভির ভিড়ে সেটি কতটা স্থান করে নিতে পারবে সেটি ভাবার বিষয়। তবে রণবীর সব সময়ই আশাবাদী। ‘বারফি’ ছাড়াও রণবীরের ‘ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’, ‘বেশরম’, এবং ‘বোম্বাই ভ্যালভেট’ রিলিজের কথা রয়েছে ২০১৩ সালে। সব নিয়েই তার প্রত্যাশা প্রায় সমান সমান। এখন শুধুই রণবীরের প্রত্যাশার আগুনে ঘি ঢালার অপেক্ষা।
খায়রুল বাসার নির্ঝর

No comments

Powered by Blogger.