বুয়েটে অচলাবস্থা-পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করুন

সেরাদের মধ্যেও সেরা_ এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবেই বুয়েট বা বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমহলে স্বীকৃতি। এমন একটি মর্যাদার প্রতিষ্ঠানে মাসের পর মাস অস্থিরতা বিরাজ করা নজিরবিহীন শুধু নয়, দুর্ভাগ্যজনকও।


উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল বুধবার তাদের চলমান কর্মসূচি দু'দিনের জন্য স্থগিত রাখায় সরকারের তরফে সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সহজ হবে আমরা মনে করি। ইতিমধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর বিলম্বের অবকাশ নেই। এ ক্ষেত্রে নূ্যনতম পদক্ষেপ যে উপাচার্য এসএম নজরুল ইসলাম এবং সহ-উপাচার্য হাবিবুর রহমানের পদ থেকে সরে যাওয়া, তা নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ আদৌ রয়েছে বলে মনে হয় না। স্পষ্টতই তারা ক্যাম্পাসের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠের আস্থা হারিয়েছেন। বুয়েট রয়েছে একদিকে এবং তারা আরেকদিকে। এ অবস্থায় তাদের পক্ষে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার নৈতিক কিংবা অন্য কোনো যুক্তি নেই। তারা সরে না গেলে ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরবে না, এটা নিশ্চিত।
অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা_ এ প্রবাদ বাক্য এ প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে পুরোপুরি খেটে যায়। অথচ এই বুয়েটেই সিনিয়র-জুনিয়র প্রায় সব শিক্ষক এবং বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু স্থানীয় পর্যায়ে নয়, জাতীয় পর্যায়েও প্রযুক্তি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা দেখা দিলে সবাই ভরসা করে_ এ প্রতিষ্ঠান থেকে নিশ্চয়ই মিলবে সমাধান সূত্র। অন্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন দল-মতের ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে যে ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা চলে, বুয়েটে তেমনটি দেখা যায় না। এখানে পরিস্থিতি কেন এভাবে অগি্নগর্ভ হয়ে উঠল সেটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাই গভীর বিবেচনায় নেবেন, এটাই প্রত্যাশিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকার পরিস্থিতি সম্পর্কে উদাসীন ছিল, সেটা বলা যাবে না। অচলাবস্থা নিরসনে তারা বুয়েট সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনদের নিয়ে সোমবার একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় মিলিত হন। সভার সুপারিশের ভিত্তিতে চ্যান্সেলর ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী আলোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন, এমনটিই ঠিক হয়। কিন্তু সভা শেষ হতে না হতেই শিক্ষক সমিতি সরকারকে উপাচার্যের অপসারণের জন্য সময়সীমা বেঁধে আলটিমেটাম প্রদান করলে নতুন জটিলতা তৈরি হয়। প্রকৃতপক্ষেই এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তার মন্ত্রণালয় দক্ষতা ও সুচারুরূপে পরিচালনা করে আসছেন। তিনি কথা বলেন যুক্তি দিয়ে এবং স্বল্পবাক হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। শিক্ষক সমিতির আলটিমেটাম তাকে ক্ষুব্ধ করতেই পারে। আন্দোলনকারীদের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কেও তা সরকারকে ভুল বার্তা দিতে পারে। তবে শিক্ষক সমিতি তাদের অবস্থান থেকে সরে আসায় এখন সরকারের পক্ষে পদক্ষেপ গ্রহণ সহজ হয়ে গেছে বলেই আমরা মনে করি। কোনো পক্ষই যেন আবেগ দ্বারা পরিচালিত না হন, জেদ কিংবা অনমনীয় মনোভাবেরও দরকার নেই। বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানকে ঐতিহ্যের ধারায় চলতে দিতে প্রত্যেকে তার নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবে, এটাই কাম্য। এ ক্ষেত্রে সরকারকে একটু বেশিই পদক্ষেপ ফেলতে হবে। কারণ যে কোনো বড় প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থার চূড়ান্ত দায় তাদের ওপরেই বর্তায়। এটাও মনে রাখতে হবে যে, শুধু বুয়েট নয়, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগরসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা চলছে এবং সেটা সবারই উদ্বেগের কারণ। এ ক্ষেত্রেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করব।
 

No comments

Powered by Blogger.