অশান্ত বাকৃবি-এ ক্ষতির দায় কার?
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের অভ্যন্তরীণ রেষারেষির শিকার হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিক জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সর্বশেষ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবাহী বাস পোড়ানো এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ ছাত্রদের গাড়ি ভাংচুরসহ ট্রেনলাইন পোড়ানো ও ট্রেন অবরোধের ঘটনা ঘটেছে।
এতে ময়মনসিংহের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সমকালের শেষ পৃষ্ঠায় 'বাকৃবির বাস পোড়ালো বহিরাগতরা, ট্রেন লাইনে আগুন দিল শিক্ষার্থীরা' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাস পোড়ানোর প্রতিবাদে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। এটা অনেকেরই জানা যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থানীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের বিরোধে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় অছাত্ররা জড়িত হয়ে পড়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ লোকালয়ের সনি্নকটে অবস্থিত বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সময় এ ধরনের হাঙ্গামা-হুজ্জত দেখা যায়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর ব্যতিক্রম নয়। তাই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উচিত এ ধরনের বিরোধ যাতে দেখা দেওয়ামাত্রই মিটিয়ে ফেলা যায়, তার ব্যবস্থা করা। না হয় এই বিরোধ জাতীয় পর্যায়ে পর্যন্ত বিরূপ প্রভাব সষ্টি করতে পারে।এ ধরনের বিরোধে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারবাহিনী জড়িত থাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় এবং প্রয়োজনে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহযোগিতা চাওয়া উচিত। এতে সামান্য বিরোধ মাত্রাহীন হওয়ার সুযোগ রহিত হতে পারে। বুধবারের ঘটনাটির পূর্ব ঘটনা আছে। পূর্ব বিরোধের জের ধরে ৬ জুন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের স্থানীয় ছাত্র ও অছাত্র মিলিয়ে এক দল ক্যাডার বাহিনী একই সংগঠনেরই বাকৃবির এক দল অস্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালানোর পর হামলাকারীদের মধ্য থেকে এক ছাত্রকে বাকৃবি প্রশাসন এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে। এতে শাস্তি পাওয়া ছাত্রের সমর্থক ক্যাডাররা ওই শাস্তি তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীবাহী বাসটি পুড়িয়ে দেয়। এরই জের ধরে ট্রেন অবরোধ, ট্রেন লাইন পোড়ানোর মতো অনভিপ্রেত ঘটনাগুলো ঘটে। এতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকরাও ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতাজনিত ক্ষতির সম্মুখীন হলেন। বাকৃবির ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয়। এর জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে। তবে এ ধরনের স্থানীয়-অস্থানীয় বিরোধ যাতে আর জিইয়ে না থাকে তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে একযোগে কাজ করতে হবে। শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক ও ছাত্র নেতৃত্বকে অবশ্যই সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে।
No comments