রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ-আগেভাগেই প্রস্তুতি নিন
দ্রব্যমূল্যের কৃত্রিম বৃদ্ধি ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে সংসদকে জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী_ রমজানের মাসাধিকাল আগেই এমন পদক্ষেপ সরকারের সদিচ্ছারই প্রমাণ, সন্দেহ নেই। গত মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকেও দেখা গেছে কাঁচা বাজার পরিদর্শন করতে।
কিন্তু বুধবার সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ভোক্তাদের কতখানি আশ্বস্ত করবে বলা কঠিন। বস্তুত গত কয়েক বছর ধরেই সাধারণ ক্রেতারা বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ভুগছে। অস্বীকার করা যাবে না যে, বেশিরভাগ পণ্যের আমদানিনির্ভর একটি দেশে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আমাদের এখানে সংকটের নেপথ্যে থাকে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি। আন্তর্জাতিক কিংবা অভ্যন্তরীণ পাইকারি পর্যায়ে যদি সামান্য দাম বাড়ে, খুচরা বাজারে তার অনুপাত কয়েকগুণ বেশি হয়ে দেখা দেয়। পাইকারি বাজারে দাম কমলেও তার ইতিবাচক প্রভাব খুচরা বাজারে কমই দেখা যায়। উৎস স্থিতিশীল থাকলেও বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির নজিরও কম নয়। বাণিজ্যমন্ত্রী দফায় দফায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন; 'ন্যায্য বাণিজ্যের' প্রতিশ্রুতিও আদায় হয়। কিন্তু সংকট কাটে না। আসন্ন রমজানে পরিস্থিতির অবনতিই আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। কারণ, জাতীয় বাজেট পাসের পর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি একটি সাধারণ রেওয়াজ। রমজানও হচ্ছে দাম বাড়ানোর মৌসুম। এবার রমজানের আগে আগেই পাস হবে ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট। দুটির ধাক্কা একসঙ্গে বাজারে লাগলে সামলানো কঠিনই হয়ে পড়বে। সেদিক থেকে গোয়েন্দা নজরদারি উত্তম প্রস্তুতি হলেও একমাত্র সমাধান হতে পারে না। রমজানে দ্রব্যমূল্য জনসাধারণের জন্য সহনীয় রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আটটি পর্যবেক্ষক দল বাজারে অভিযান পরিচালনার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাও কিন্তু নতুন নয়। এর আগের বছরগুলোতেও আমরা এ ধরনের পদক্ষেপ ব্যর্থ হতে দেখেছি। সংসদের আলোচ্য প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার তথ্য জানিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, মজুদ কি বাজারে সংকট না হওয়ার রক্ষাকবচ? এর আগেও মজুদ পর্যাপ্তই ছিল এবং তাতে করে সমাধান পাওয়া যায়নি। এটা অবশ্য ভালো খবর যে, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক সংস্থা টিসিবির সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কাউন্টার গ্যারান্টির সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বেশি আমদানি করতে পারত না। সেটা এক হাজার কোটি টাকায় উন্নয়ন নিঃসন্দেহে কাজে দেবে। টিসিবির আওতা ও জনবল বৃদ্ধির যেসব দাবি বিভিন্ন সময়ে উঠেছে, সরকার তা পূরণেও এগিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যে, ১৬ কোটি ভোক্তার দেশে আর যাই হোক রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার সামলানো যাবে না। বেসরকারি খাতকে স্বচ্ছ ও সক্রিয় করার বিকল্প নেই। কিন্তু সেটা সম্ভব না হওয়ার কারণ হিসেবে কেউ কেউ সরিষার মধ্যেই ভূত থাকার কথা বলেন। গোয়েন্দা নজরদারি কিংবা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযানের মাধ্যমে সেসব ভূত যদি শনাক্ত করতে পারা যায়, তাহলেই পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব। অন্যথায় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সদিচ্ছা মাঠ পর্যায়ে সামান্যই কাজে আসবে। আমরা বলব দু'একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে। তাহলে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে। সাধারণ ক্রেতার পকেট টার্গেট করে বাজারে যে অসাধু চক্র গড়ে উঠেছে, কেবল হুশিয়ারি ও সদুপদেশ দিয়ে তাদের নিবৃত্ত করার আশা কুহক ছাড়া কিছু নয়।
No comments