এই দেশে—এই সময়ে-সাংসদের বাঁশ ও বিএনপির ইতিহাসচর্চা by সৈয়দ বদরুল আহ্সান
দেশের রাজনীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে অথবা আসছে। তবে এই ধরনের পরিবর্তন আদৌ রাজনীতিতে নতুন প্রাণ ও উদ্দীপনা সঞ্চার করছে কি না সেটা দেখার বিষয়। আবার ‘দুষ্ট লোকেরা’ এই পরিবর্তন কোনোক্রমেই ভালো চোখে দেখতে রাজি নন। এসব মানুষের ওই একই অভিযোগ—রাজনীতি কেন গণতান্ত্রিক নিয়মে প্রবাহিত হবে না? কেন বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো আমাদের দেশেও মানুষ তাদের অধিকার আদায় করে নিতে পারবে না?
ভদ্রলোকদের এই একটাই সমস্যা, তারা সব সময় জবাবদিহির কথা বলে, অধিকারের কথা বলে। অথচ তাদের চোখের সামনে যে এত গতিশীল হয়ে যাচ্ছে জীবন, এত উন্নত হচ্ছে রাজনীতি এসবের দিকে তাদের নজর নেই, কোনো আগ্রহ নেই।
এই যে দেখুন না, কত সুন্দরভাবে সেই দিন রংপুরে জাতীয় পার্টির এক সাংসদ পাঁচ শ লোকের এক কাফেলা নিয়ে এবং এদের সবার হাতে ছিল চিকন কাঁচা বাঁশ—মেডিকেল কলেজের ওপর চড়াও হলেন। তাঁর দাবি, তাঁকে এবং তাঁর সমর্থকদের বেশ কিছু কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে। আর যদি সেটা না করা হয়, তাহলে ওই বাঁশ কথা বলবে। সেটার একটি নমুনা সেদিন তিনি দেখাতেও উদ্যত হয়েছিলেন। কাজটি তিনি সুন্দরভাবে করতে যাচ্ছিলেন। কয়েকজনকে গুরুতরভাবে আহত করতে পারতেন। অনেকের মাথা ফাটিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু এই সুন্দর ভাবনা একেবারে পণ্ড হয়ে গেল ওই হাসপাতালের কর্মচারীদের কারণে। ওঁরা সবাই বেঁকে বসলেন এবং পাল্টা সাংসদ ও তাঁর সমর্থকদের মনভরে পিটুনি দিলেন। মুহূর্তের মধ্যে যে সাংসদ এত দম্ভ নিয়ে ওই স্থানে এসেছিলেন, তিনি মাটিতে শুয়ে পড়লেন—আহত অবস্থায়। দৃশ্যটি কল্পনা করুন, একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আইন ভঙ্গ করতে গিয়ে একটা উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করলেন। তার জন্যও আমাদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত। কিন্তু ওই যে বাঁশ—সেই বাঁশই তাঁর জন্য কাল হয়ে গেল।
এ দেশটাকে অদ্ভুত সুন্দর একটা রাষ্ট্রে আমরা পরিণত করেছি বিগত ৪০ বছরে। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলীয় এক সাংসদ আনন্দের সঙ্গে সোনার মুকুট মাথায় পরে নিলেন। তাঁর অতি উৎসাহী সমর্থকেরা নাকি ওটা তাঁকে উপহার হিসেবে দিয়েছিল। তা না হয় দিল—তাই বলে কি তার ওই মুকুটটা মাথায় বসিয়ে ছবি তুলতে হবে? লজ্জাবোধ বলে কিছু থাকবে না? অবশ্য লজ্জাবোধ থাকলে আমরাই বা এত আনন্দ পেতাম কী করে? আর যদি আনন্দেরই কথা বলেন, তাহলে একটু দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন সেই মিরপুর থেকে নির্বাচিত সরকারদলীয় সাংসদের দিকে, যিনি কিছুদিন আগে এক নারী সাংবাদিকের হাত থেকে মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নিলেন এবং তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করলেন। ভেবেছিলাম জাতীয় সংসদে ওই সাংসদকে তাঁর এই অভদ্র ব্যবহারের কারণে ভর্ৎসনা করা হবে। কিন্তু আমরা এতই সহনশীল একটি জাতিতে পরিণত হয়েছি যে ওই সাংসদকে আমরা কোনো শাস্তি দিলাম না। এই সেদিন তিনি যখন রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর মন্তব্য না করে পুরো ১৫ মিনিট ধরে সাংবাদিকদের একহাত নিয়ে নিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে জামায়াতেরও ষড়যন্ত্র খুঁজে বের করলেন, তখন জাতীয় সংসদের স্পিকার তাঁকে থামালেন না। কেন থামালেন না, আমাদের বোধগম্য নয়। তবে না থামিয়ে বোধকরি ভালোই করেছেন। এতে আবার প্রমাণিত হলো, আমাদের রাজনীতি এক নতুন আঙ্গিকে এগিয়ে চলেছে।
এই নতুনত্ব লক্ষ করা যাবে যদি কয়েক দিন আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের মন্তব্য স্মরণ করি। তিনি সুন্দর বাংলায়, সুন্দর উচ্চারণসহকারে কথা বলেন। তাঁর মতো যদি সব মানুষ শুদ্ধ বাংলায় কথা বলত, আমাদের আনন্দের সীমা থাকত না। সুন্দর ভাষায়ও যে ইতিহাস পালটে দেওয়া যায়, তার প্রমাণ এই ভদ্রলোক আমাদের সবার সামনে উপস্থাপন করেছেন। আমি, আপনি যে সত্যটা কোনো দিন জানলাম না, উপলব্ধি করলাম না, সেই সত্য কিন্তু তিনি জানেন। এবং সেটা কী? জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন এই ভেবে যে, আপনি এত দিন কত অজ্ঞ ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নাকি আওয়ামী লীগই হত্যা করেছে। চমৎকার আবিষ্কার। তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে ফারুক-রশিদ ও অন্যান্য খুনি আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন? বিএনপির এই নেতার কথা মেনে নিলে আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে কারাগারে জাতীয় চার নেতাকেও ওই আওয়ামী লীগের লোকেরাই হত্যা করেছে। তিনি বলেছেন, জিয়া হত্যার পেছনেও আওয়ামী লীগের হাত ছিল। আমাদের তো জানা ছিল না যে জেনারেল এম এ মঞ্জুর আওয়ামী লীগের সদস্যও ছিলেন। আরও মজার ব্যাপার আছে। ১৯৮২ সালে যখন জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করলেন, সে ক্ষেত্রেও নাকি আওয়ামী লীগ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। এখন তো এরশাদ সাহেবকে প্রশ্ন করতে হয়, তাঁকে শেখ হাসিনা কী ধরনের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে তিনি এত আনন্দের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করলেন।
রাজনীতি সুন্দর হয়ে উঠছে। একদিন হয়তো এও শুনতে পাব যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তান বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যার নীলনকশা আওয়ামী লীগই তৈরি করে দিয়েছিল। এমনও হতে পারে যে অদূর ভবিষ্যতে কেউ হয়তো রচনাই লিখে ফেলবেন মুক্তিযুদ্ধে বিএনপির ভূমিকা সম্পর্কে! অবাক হওয়ার কিছু নয়। কিন্তু সেটাই আবার বলি কী করে। এই সেদিন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলে দিলেন যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ নাকি বিশ্বে চীনের স্থান দখল করে নেবে। আমরা কি তাঁর এই কথা শুনে কাঁদব না পুলোকিত বোধ করব? তিনি কেন আমাদের এভাবে আনন্দ দিতে চাইলেন? এটা একধরনের সার্টিফিকেট প্রদান করার মতো। আমরা কি রাষ্ট্রদূতের কাছে এই সার্টিফিকেট চেয়েছি? আসল কথা কি জানেন? নিজেদের আমরা এমন ছোট করে ফেলেছি যে আজকাল নির্দ্বিধায় ও খোলামেলাভাবে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা আমাদের দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজ নিয়ে মন্তব্য করে থাকেন। আমাদের সাংবাদিকেরা আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে ওই বিদেশিদের কাছে জানতে চান বাংলাদেশ সম্বন্ধে তাঁদের মতামত। যখন কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূত সকালের নাশতায় আমাদের রাজনীতিবিদদের নিমন্ত্রণ করেন, তখন কে কার আগে ওই স্থানে পৌঁছবেন এবং কে ওই রাষ্ট্রদূতের কাছে গিয়ে বসতে পারবেন, এ নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা হয়।
একটু ভেবে দেখুন। এই বাংলাদেশেই বঙ্গবন্ধু আমাদের বলে গেছেন, কী করে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে হয়, কথা বলতে হয়। এই বাংলাদেশেই তাজউদ্দীন আহমদের মতো একজন বড় মাপের নেতা ছিলেন, যিনি গোটা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে আমাদের আলোর পথে নিয়ে এলেন। আজ এই বাংলাদেশ রয়েছে আতঙ্কে। পরিবারতন্ত্র আমাদের ধরাশায়ী করে ফেলেছে। যারা রাজনীতি বুঝে না, তারা সাংসদ হয়ে যাচ্ছে। নবনির্বাচিত মেয়র তাঁর গাড়ি থেকে নেমে এক ব্যক্তিকে মারধর করছেন। সেনাবাহিনীকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া অনর্গল কথা বলে চলেছেন। সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ বাংলাদেশি নাগরিকের ওপর নির্যাতন চালায় আর আমাদের মন্ত্রী বলেন, এ বিষয় নিয়ে রাষ্ট্র চিন্তিত নয়। কেন নয়? বেগম জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে বলেন। তাঁর সুরেই হাতেগোনা কিছু লোক জাতিকে হুমকি প্রদান করেছে এই মর্মে যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হলে ভবিষ্যতে তাদের ভাষায়, এই দেশের ভারতীয় দালালদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এই মানুষগুলো তো পাকিস্তানের দোসরদের দালাল হয়ে কথা বলছে। রাষ্ট্র এদের ঔদ্ধত্যের বিষয়ে নীরব কেন?
অনেক কথা হয়ে গেল। আরও অনেক কথা আছে। সেগুলো না হয় আরেক দিন হবে।
সৈয়দ বদরুল আহ্সান: সাংবাদিক।
এই যে দেখুন না, কত সুন্দরভাবে সেই দিন রংপুরে জাতীয় পার্টির এক সাংসদ পাঁচ শ লোকের এক কাফেলা নিয়ে এবং এদের সবার হাতে ছিল চিকন কাঁচা বাঁশ—মেডিকেল কলেজের ওপর চড়াও হলেন। তাঁর দাবি, তাঁকে এবং তাঁর সমর্থকদের বেশ কিছু কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে। আর যদি সেটা না করা হয়, তাহলে ওই বাঁশ কথা বলবে। সেটার একটি নমুনা সেদিন তিনি দেখাতেও উদ্যত হয়েছিলেন। কাজটি তিনি সুন্দরভাবে করতে যাচ্ছিলেন। কয়েকজনকে গুরুতরভাবে আহত করতে পারতেন। অনেকের মাথা ফাটিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু এই সুন্দর ভাবনা একেবারে পণ্ড হয়ে গেল ওই হাসপাতালের কর্মচারীদের কারণে। ওঁরা সবাই বেঁকে বসলেন এবং পাল্টা সাংসদ ও তাঁর সমর্থকদের মনভরে পিটুনি দিলেন। মুহূর্তের মধ্যে যে সাংসদ এত দম্ভ নিয়ে ওই স্থানে এসেছিলেন, তিনি মাটিতে শুয়ে পড়লেন—আহত অবস্থায়। দৃশ্যটি কল্পনা করুন, একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আইন ভঙ্গ করতে গিয়ে একটা উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করলেন। তার জন্যও আমাদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত। কিন্তু ওই যে বাঁশ—সেই বাঁশই তাঁর জন্য কাল হয়ে গেল।
এ দেশটাকে অদ্ভুত সুন্দর একটা রাষ্ট্রে আমরা পরিণত করেছি বিগত ৪০ বছরে। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলীয় এক সাংসদ আনন্দের সঙ্গে সোনার মুকুট মাথায় পরে নিলেন। তাঁর অতি উৎসাহী সমর্থকেরা নাকি ওটা তাঁকে উপহার হিসেবে দিয়েছিল। তা না হয় দিল—তাই বলে কি তার ওই মুকুটটা মাথায় বসিয়ে ছবি তুলতে হবে? লজ্জাবোধ বলে কিছু থাকবে না? অবশ্য লজ্জাবোধ থাকলে আমরাই বা এত আনন্দ পেতাম কী করে? আর যদি আনন্দেরই কথা বলেন, তাহলে একটু দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন সেই মিরপুর থেকে নির্বাচিত সরকারদলীয় সাংসদের দিকে, যিনি কিছুদিন আগে এক নারী সাংবাদিকের হাত থেকে মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নিলেন এবং তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করলেন। ভেবেছিলাম জাতীয় সংসদে ওই সাংসদকে তাঁর এই অভদ্র ব্যবহারের কারণে ভর্ৎসনা করা হবে। কিন্তু আমরা এতই সহনশীল একটি জাতিতে পরিণত হয়েছি যে ওই সাংসদকে আমরা কোনো শাস্তি দিলাম না। এই সেদিন তিনি যখন রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর মন্তব্য না করে পুরো ১৫ মিনিট ধরে সাংবাদিকদের একহাত নিয়ে নিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে জামায়াতেরও ষড়যন্ত্র খুঁজে বের করলেন, তখন জাতীয় সংসদের স্পিকার তাঁকে থামালেন না। কেন থামালেন না, আমাদের বোধগম্য নয়। তবে না থামিয়ে বোধকরি ভালোই করেছেন। এতে আবার প্রমাণিত হলো, আমাদের রাজনীতি এক নতুন আঙ্গিকে এগিয়ে চলেছে।
এই নতুনত্ব লক্ষ করা যাবে যদি কয়েক দিন আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের মন্তব্য স্মরণ করি। তিনি সুন্দর বাংলায়, সুন্দর উচ্চারণসহকারে কথা বলেন। তাঁর মতো যদি সব মানুষ শুদ্ধ বাংলায় কথা বলত, আমাদের আনন্দের সীমা থাকত না। সুন্দর ভাষায়ও যে ইতিহাস পালটে দেওয়া যায়, তার প্রমাণ এই ভদ্রলোক আমাদের সবার সামনে উপস্থাপন করেছেন। আমি, আপনি যে সত্যটা কোনো দিন জানলাম না, উপলব্ধি করলাম না, সেই সত্য কিন্তু তিনি জানেন। এবং সেটা কী? জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন এই ভেবে যে, আপনি এত দিন কত অজ্ঞ ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নাকি আওয়ামী লীগই হত্যা করেছে। চমৎকার আবিষ্কার। তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে ফারুক-রশিদ ও অন্যান্য খুনি আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন? বিএনপির এই নেতার কথা মেনে নিলে আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে কারাগারে জাতীয় চার নেতাকেও ওই আওয়ামী লীগের লোকেরাই হত্যা করেছে। তিনি বলেছেন, জিয়া হত্যার পেছনেও আওয়ামী লীগের হাত ছিল। আমাদের তো জানা ছিল না যে জেনারেল এম এ মঞ্জুর আওয়ামী লীগের সদস্যও ছিলেন। আরও মজার ব্যাপার আছে। ১৯৮২ সালে যখন জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করলেন, সে ক্ষেত্রেও নাকি আওয়ামী লীগ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। এখন তো এরশাদ সাহেবকে প্রশ্ন করতে হয়, তাঁকে শেখ হাসিনা কী ধরনের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে তিনি এত আনন্দের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করলেন।
রাজনীতি সুন্দর হয়ে উঠছে। একদিন হয়তো এও শুনতে পাব যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তান বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যার নীলনকশা আওয়ামী লীগই তৈরি করে দিয়েছিল। এমনও হতে পারে যে অদূর ভবিষ্যতে কেউ হয়তো রচনাই লিখে ফেলবেন মুক্তিযুদ্ধে বিএনপির ভূমিকা সম্পর্কে! অবাক হওয়ার কিছু নয়। কিন্তু সেটাই আবার বলি কী করে। এই সেদিন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলে দিলেন যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ নাকি বিশ্বে চীনের স্থান দখল করে নেবে। আমরা কি তাঁর এই কথা শুনে কাঁদব না পুলোকিত বোধ করব? তিনি কেন আমাদের এভাবে আনন্দ দিতে চাইলেন? এটা একধরনের সার্টিফিকেট প্রদান করার মতো। আমরা কি রাষ্ট্রদূতের কাছে এই সার্টিফিকেট চেয়েছি? আসল কথা কি জানেন? নিজেদের আমরা এমন ছোট করে ফেলেছি যে আজকাল নির্দ্বিধায় ও খোলামেলাভাবে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা আমাদের দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজ নিয়ে মন্তব্য করে থাকেন। আমাদের সাংবাদিকেরা আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে ওই বিদেশিদের কাছে জানতে চান বাংলাদেশ সম্বন্ধে তাঁদের মতামত। যখন কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূত সকালের নাশতায় আমাদের রাজনীতিবিদদের নিমন্ত্রণ করেন, তখন কে কার আগে ওই স্থানে পৌঁছবেন এবং কে ওই রাষ্ট্রদূতের কাছে গিয়ে বসতে পারবেন, এ নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা হয়।
একটু ভেবে দেখুন। এই বাংলাদেশেই বঙ্গবন্ধু আমাদের বলে গেছেন, কী করে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে হয়, কথা বলতে হয়। এই বাংলাদেশেই তাজউদ্দীন আহমদের মতো একজন বড় মাপের নেতা ছিলেন, যিনি গোটা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে আমাদের আলোর পথে নিয়ে এলেন। আজ এই বাংলাদেশ রয়েছে আতঙ্কে। পরিবারতন্ত্র আমাদের ধরাশায়ী করে ফেলেছে। যারা রাজনীতি বুঝে না, তারা সাংসদ হয়ে যাচ্ছে। নবনির্বাচিত মেয়র তাঁর গাড়ি থেকে নেমে এক ব্যক্তিকে মারধর করছেন। সেনাবাহিনীকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া অনর্গল কথা বলে চলেছেন। সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ বাংলাদেশি নাগরিকের ওপর নির্যাতন চালায় আর আমাদের মন্ত্রী বলেন, এ বিষয় নিয়ে রাষ্ট্র চিন্তিত নয়। কেন নয়? বেগম জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে বলেন। তাঁর সুরেই হাতেগোনা কিছু লোক জাতিকে হুমকি প্রদান করেছে এই মর্মে যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হলে ভবিষ্যতে তাদের ভাষায়, এই দেশের ভারতীয় দালালদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এই মানুষগুলো তো পাকিস্তানের দোসরদের দালাল হয়ে কথা বলছে। রাষ্ট্র এদের ঔদ্ধত্যের বিষয়ে নীরব কেন?
অনেক কথা হয়ে গেল। আরও অনেক কথা আছে। সেগুলো না হয় আরেক দিন হবে।
সৈয়দ বদরুল আহ্সান: সাংবাদিক।
No comments