পবিত্র কোরআনের আলো-মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে যে মাটি বিচিত্র যৌগ পদার্থ

সুরা আল আন'আম (মক্কায় অবতীর্ণ) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ১. আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী খালাক্বাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বা ওয়া জাআ'লায্ যুলুমা-তি ওয়া ন্নূর; ছুম্মাল্লাযীনা কাফারূ বিরাবি্বহিম ইয়া'দিলূন। ২. হুয়াল্লাযী খালাক্বাকুম্ মিন ত্বীনিন ছুম্মা ক্বাদ্বা- আজালা-; ওয়া আজাল্লুম্ মুছাম্মান ই'নদাহূ ছুম্মা আনতুম তামতারূন।


৩. ওয়া হুওয়াল্লা-হু ফিচ্ছামা-ওয়া-তি ওয়া ফিল আরদ্বি; ইয়া'লামু ছির্রাকুম ওয়াজাহরাকুম ওয়া ইয়া'লামু মা-তাকছিবূন।
৪. ওয়ামা- তা'তীহিম্ মিন্ আ-য়াতিম্ মিন আ-য়া-তি রাবি্বহিম ইল্লা কা-নূ আ'নহা মু'রিদ্বীন। [সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ১-৪]
অনুবাদ
১. সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তিনি অন্ধকারের ঘনঘটা ও আলো সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে, তারা তার সমকক্ষও দাঁড় করায়।
২. তিনি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি জীবনের মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। আবার তাঁর কাছে মৃত্যুর জন্যও একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে। এর পরও তোমরা সন্দেহে ঘুরপাক খাও।
৩. তিনি সেই আল্লাহ, যিনি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে বর্তমান। তিনি তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়গুলো জানেন। তিনি জানেন তোমরা পাপ-পুণ্য কে কতটুকু অর্জন করেছ।
৪. তাদের প্রভুর কাছ থেকে যত নিদর্শন তাদের কাছে এসেছে, সব ব্যাপারেই তারা এদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
ব্যাখ্যা
আন'আম শব্দের অর্থ গবাদি পশু। সুরাটি মক্কি সুরাগুলোর অন্তর্ভুক্ত। অধিকাংশ বর্ণনাকারীর মতে সুরাটির সম্পূর্ণ অংশ একসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। এ সুরার বিষয়বস্তু আগের সুরাগুলোর বিষয়বস্তু থেকে কিছুটা ভিন্নমাত্রায় প্রবেশ করতে দেখা যায়। আগের সুরাগুলোতে মক্কার পৌত্তলিক কোরাইশ এবং মদিনার ইহুদিদের ধর্মবিশ্বাস খণ্ডন করা এবং প্রধানত এই দুটি সম্প্রদায়ের সঙ্গে বোঝাপড়া করার বিষয় আলোচিত হয়েছে। এই সুরায় অকোরাইশি ও অইসরায়েলি ধর্মগুলোর ভ্রান্তি খণ্ডন প্রসঙ্গ বর্ণিত হয়েছে। প্রথমেই জরথুস্ট্রীয় ধর্মের দ্বৈতবাদী বিশ্বাসকে খণ্ডন করা হয়েছে। অর্থাৎ কল্যাণ ও অকল্যাণের খোদা যে আলাদা অস্তিত্ব নয়; বরং এ দুটো একই আল্লাহর সৃষ্টি। কোরআন এ দ্বৈতবাদী বিশ্বাসকে খণ্ডন করেছে। কল্যাণ ও অকল্যাণ, আলো ও আঁধার, সুখ ও দুঃখ এদের একটি অপরটি ছাড়া অসম্পূর্ণ। এ জন্য এ দুটি আলাদা খোদা কর্তৃক সৃষ্ট হতে পারে না। আলো ও অন্ধকার সেই একই আল্লাহর সৃষ্টি, যিনি বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। এই বিশ্বজগৎ সৃষ্টির মূল সত্য হচ্ছে, সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর একত্ববাদকে সাব্যস্ত করে। অর্থাৎ স্রষ্টা এক।
সুরার ২ নম্বর আয়াতে মানুষ সৃষ্টির মূল রহস্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হচ্ছে। মানুষকে আল্লাহ তায়ালা মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীতে জীবন ধারণকারী সব জীবকেই আল্লাহ তায়ালা মাটি থেকেই সৃষ্টি করেছেন। তবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে। সৃষ্টিকর্তার যত্ন ও ভালোবাসায় মানুষ সিক্ত। মাটি থেকে সৃষ্টি করা সত্ত্বেও আল্লাহ তায়ালা মানুষকে দিয়েছেন এই পৃথিবীর সব কিছুর ওপর কর্তৃত্ব। তবে মানুষ মরণশীল এবং তার জীবনকাল অত্যন্ত সীমিত। এই বিশ্বজগৎ এবং জীবন ও মৃত্যুর এই যে বাস্তবতা, এটা গভীরভাবে উপলব্ধি করে মানুষের উচিত, নিজের কর্তব্যের প্রতি সচেতন হওয়া। কিন্তু এর পরও মানুষ নানা সন্দেহের দোলাচলে ঘুরপাক খাচ্ছে।
৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহর পরিচয় জ্ঞাপন করা হয়েছে এবং ৪ নম্বর আয়াতে বিভ্রান্ত মানুষের প্রকৃতি বর্ণনা করা হয়েছে। বিভ্রান্ত মানুষ সত্যকে বুঝতে চায় না, সত্যের পথে আসতে চায় না। বিভ্রান্তিকর ধর্মবিশ্বাসী, মুশরিক ও লোকায়ত ধর্মাচারী দেব-দেবী পুজারীদের লক্ষ করেই এখানে বলা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী


No comments

Powered by Blogger.