পবিত্র কোরআনের আলো-ঈসা তো তাঁকে বা তাঁর মাকে উপাস্য বানানোর কথা বলেননি

১১৪. ক্বা-লা ঈছাব্নু মারইয়ামা আল্লাহুম্মা রাব্বানা আনযিল আ'লাইনা মা-য়িদাতাম্ মিনাচ্ছামা-য়ি তাকূনু লানা ঈদাল্ লিআওয়্যালীনা ওয়া আ-খিরিনা ওয়া আয়াতাম্ মিনকা; ওয়ার্যুক্বনা ওয়া আনতা খাইরুর্ রা-যিক্বীন। ১১৫. ক্বা-লাল্লা-হু ইন্নী মুনায্যিলুহা আ'লাইকুম; ফামাইঁয়াকফুর বা'দু মিনকুম ফাইন্নী উআ'য্যিবুহূ আ'যা-বাল্ লা-উআ'য্যিবুহূ আহাদাম্ মিনাল আ'লামীন।


১১৬. ওয়া ইয ক্বা-লাল্লা-হু ইয়া-ঈছাব্না মারইয়ামা আআনতা ক্বুলতা লিননাছিত্তাখিযূনী ওয়া উম্মিয়া ইলাহাইনি মিন দূনিল্লাহি; ক্বা-লা ছুবহানাকা মা ইয়াকূনু লী আন আক্বূলা মা লাইছা লী বিহাক্কিন; ইন কুনতু ক্বুলতুহূ ফাক্বাদ আ'লিমতাহূ; তা'লামু মা ফী নাফছী ওয়ালা আ'লামু মা ফী নাফছিকা; ইন্নাকা আনতা আ'ল্লা-মুল গুইউব। [সুরা : আল মায়েদা, আয়াত : ১১৪-১১৬]
অনুবাদ : ১১৪. মরিয়মপুত্র ঈসা বললেন, হে আল্লাহ, হে আমাদের প্রভু, তুমি আমাদের জন্য আকাশ থেকে খাবার সজ্জিত একটি খাঞ্চা পাঠাও। এটি হবে আমাদের জন্য, আমাদের প্রথম প্রজন্ম ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তোমার কাছ থেকে আসা একটি আনন্দোৎসব। আর এটি তোমার একটি নিদর্শনও হবে। (হে প্রভু) তুমি আমাদের রিজিক দান করো, তুমিই তো উত্তম রিজিকদাতা।
১১৫. আল্লাহ তায়ালা বললেন, হ্যাঁ, আমি তোমাদের ওপর তা পাঠাচ্ছি, তবে এর পরও যদি তোমাদের কেউ আমার অবাধ্য হয়, তবে তাকে আমি এমন কঠিন শাস্তি দেব, যা আমি সৃষ্টিকুলের আর কাউকেই দিইনি।
১১৬. যখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে মরিয়মপুত্র ঈসা, আপনি কি কখনো লোকদের বলেছিলেন যে তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে দুজন ইলাহ বা প্রভু বানিয়ে নাও? এ কথার জবাবে তিনি বলবেন, (হে আল্লাহ) সমগ্র পবিত্রতা তোমার জন্য, এমন কোনো কথা আমার পক্ষে শোভা পেত না, যে কথা বলার কোনো অধিকারই আমার ছিল না। যদি আমি তাদের এমন কোনো কথা বলতামই, তবে তুমি তো অবশ্যই তা জানতে; নিশ্চয়ই তুমি তো জানো আমার মনে যা কিছু আছে। কিন্তু আমি তো জানি না তোমার মনে কী আছে। সব বিমূর্ত জগৎ সম্পর্কে তুমি ভালোভাবে অবগত আছ।
ব্যাখ্যা : ১১৪ ও ১১৫ নম্বর আয়াত দুটি পূর্ববর্তী আয়াতের ধারাবাহিকতায় নাজিল হয়েছে। হজরত ঈসা (আ.) তাঁর অনুসারী হাওয়ারিদের অনুরোধে তাদের সেই আবদারের কথাটাই প্রার্থনার মাধ্যমে জানিয়েছিলেন। কথিত আছে, হজরত ঈসা (আ.) হাওয়ারিদের বললেন, আল্লাহর জন্য ৩০টি রোজা পালন করে তাঁর কাছে যা ইচ্ছা চাইতে পারো। তিনি সে ডাকে সাড়া দেবেন। তারা আল্লাহর নামে ৩০টি রোজা রাখল এবং বলল, আমরা আল্লাহর জন্য রোজা রেখেছি, তাঁর কাজ করেছি, আমাদের খাবার দিতে প্রার্থনা করুন। সুতরাং হজরত ঈসা (আ.) আল্লাহর কাছে মিনতি সহকারে প্রার্থনা জানালেন। এটাই এ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। ১১৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা খাবারসজ্জিত খাঞ্চা তাদের কাছে পাঠানোর ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে শর্ত এই হলো, এর পরও যদি তাদের কেউ আল্লাহর অবাধ্য বা কাফির হয়, তবে তাদের এমন শাস্তি দেওয়া হবে, যা সৃষ্টিকুলের আর কাউকে দেওয়া হয়নি।
১১৬ নম্বর আয়াতে উত্থাপিত হয়েছে খ্রিস্টান সমাজের বিভ্রান্তির সেই গুরুতর প্রশ্নটি, যেখানে তারা ঈসা মাসীহকে এবং তাঁর মা মরিয়মকে আল্লাহর সঙ্গে দুই শরিক বানিয়ে নেয়। এখানে রুহানি জগতে ঈসাকে আল্লাহর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলছেন, হে ঈসা! আপনি কি আপনার লোকদের বলেছিলেন যে তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার মাকে উপাস্য বানাও? তখন ঈসা বলছেন, হে প্রভু! তুমি পবিত্র। তোমার পবিত্রতার দোহাই, আমার পক্ষে সে রকম বলা শোভনীয় নয় এবং সে রকম বলার কোনো অধিকারও আমার নেই। আমি যদি এ রকম বলতাম, তবে তুমি তো তা জানতে অবশ্যই। আমার মনে যা কিছু আছে তা তুমি জানো। আর তোমার মনে যা কিছু আছে তা আমি জানি না। এই আয়াতটির মূল তাৎপর্য হচ্ছে খ্রিস্টানদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের অপনোদন করা। খ্রিস্টান জাতি যিশু ও মাতা মরিয়মের ওপর ঐশী ক্ষমতা আরোপ করে থাকে। গির্জায় লিটানি নামক প্রার্থনা পদ্ধতিতে স্বর্গীয় ক্ষমতার অধিকারিণী হিসেবে মরিয়মের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। রোমীয় গির্জার ক্যাটেফিজম পদ্ধতিতে মরিয়মকে ঈশ্বর-মাতা বলে ধর্মমত পোষণ ও প্রচার করা হয়। এভাবেই নবী ঈসার মূল শিক্ষাকে বিকৃত করে খ্রিস্টান সমাজ তাঁকে এবং তাঁর মা মরিয়মকে আল্লাহর সঙ্গে শরিক বানিয়ে ফেলে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.