কম্পানি আইনে সংস্কারের প্রস্তাব by সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ
কম্পানি আইন সময়োপযোগী করে তোলার জন্য বাণিজ্যসচিবকে প্রধান করে সরকার ১৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। বর্তমানে যে কম্পানি আইন রয়েছে, সেটি চালু হয় ১৯৯৪ সালে। এর আগে অবশ্য ১৯১৩ সালের কম্পানি আইন দিয়ে চলছিল। করপোরেট সেক্টরে দ্রুত পরিবর্তন আসছে, নানা জটিলতা দেখা যাচ্ছে। এসব কারণে কম্পানি আইন সময়োপযোগী করে তোলা খুবই প্রয়োজন।
কমিটি প্রতিবেশী দেশের বা বিশ্বের অন্য দেশের প্রচলিত আইন পর্যালোচনা করে। এখানে স্টকহোল্ডার এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতামত নিশ্চয়ই গ্রহণ করা হবে। এখানে আমরা কিছু প্রস্তাব রাখতে চাই। কম্পানি আইন এতিম বললে বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না। কেননা ব্যাংকিং আইনের কার্যকারিতা দেখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক রয়েছে। সিকিউরিটিজ ল-এর জন্য রয়েছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন। বীমা কম্পানির দেখভালের জন্য সম্প্রতি গঠন করা হয়েছে ইনস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি। কম্পানি আইনের কোনো ধারা লঙ্ঘিত হলে তার প্রতিকার পাওয়া কঠিন। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। সেখানে যাওয়ার একটা সময় এবং প্রস্তুতির ব্যাপার রয়েছে। আর বহু ক্ষেত্রে বলা হয়েছে জয়েন্ট স্টক কম্পানির রেজিস্ট্রারের অফিসের কথা। এটি শতভাগ সরকারি অফিস। নিয়ম অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তার পদায়ন হতো। আগে ছিল উপসচিবের পদমর্যাদায়। এখন বোধ হয় যুগ্ম সচিবের মর্যাদা। নতুন কম্পানি করতে হলে নামের ছাড়পত্রের প্রয়োজন। রিটার্ন রিপোর্ট জমা নেওয়াই হলো এই অফিসের প্রধান কাজ। রিটার্ন রিপোর্ট গ্রহণ করার সময় তেমন কোনো প্রশ্ন করার অধিকার বা যোগ্যতা এই অফিসের নেই। তা ছাড়া হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি রায়ে এ ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে, রিটার্ন রিপোর্ট গ্রহণ করা এই দপ্তরের কাজ। কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না।
যদি কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো প্রশ্ন ওঠায় বা অভিযোগ দাখিল করে, তখন এই দপ্তর তদন্ত করবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, এই দপ্তরের ভাবমূর্তি সংকট রয়েছে, যা তাকে কার্যকর করে তোলায় বড় অন্তরায়। পাকিস্তানে কম্পানি আইন কার্যকর করার জন্য রয়েছে করপোরেট ল অথরিটি। ভারতে দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ কাজ করছে, যার নাম কম্পানি ল বোর্ড। নামের আর একটু সংশোধন করা হয়েছে। এখন একে বলা হয় বোর্ড অব কম্পানি ল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। ভারতের অর্থনীতি অনেক বড়। তাই কাজকর্ম ও জটিলতা অনেক বেশি। সেখানে কম্পানি অ্যাফেয়ার্স নামে মন্ত্রণালয়ের একটি পূর্ণ বিভাগ রয়েছে। আমাদের কতটুকু প্রয়োজন, তা আমাদের কর্তৃপক্ষ ঠিক করবে। তবে একটি পৃথক ও স্বশাসিত কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন, এ নিয়ে বোধ হয় দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই।
আমাদের বর্তমান কম্পানি আইনে দুই ধরনের কম্পানির কথা বলা রয়েছে_প্রাইভেট লিমিটেড ও পাবলিক লিমিটেড কম্পানি। দায়ের সীমাবদ্ধতা, শেয়ারের সংখ্যা বা গ্যারান্টি দ্বারা এটা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এক ধরনের কম্পানির নিবন্ধন নিচ্ছে সরকার। এর শতভাগ শেয়ারের মালিকানা সরকারের। পাবলিক লিমিটেড কম্পানি হলেও পাবলিককে কোনো শেয়ার দেয়নি। কবে দেবে তার ঠিক নেই। আর শেয়ার ছাড়তে হবে এমন কোনো কথা নেই। ভারতে এ ধরনের কম্পানি রয়েছে, যে কারণে ভারতের কম্পানি আইনে সরকারি কম্পানি নামে এক শ্রেণীর কম্পানির উল্লেখ রয়েছে। অন্য পাবলিক লিমিটেড কম্পানির ওপর যেসব ধারা প্রযোজ্য, তার কিছু থেকে একে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে আবার অন্যের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে না, এমন কিছু বিধান রয়েছে সরকারি কম্পানির জন্য। এ বিষয়টি নিয়ে বোধ হয় আমাদের চিন্তাভাবনা করার এবং ব্যবস্থা গ্রহণের সময় এসেছে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলে যে কম্পানি রসাতলে যাবে, এমন মনে করার কারণ নেই। ভারতে অতি বৃহৎ কয়েকটি কম্পানি রয়েছে, যা অত্যন্ত দক্ষতা ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। মুনাফা অর্জিত হচ্ছে। জনতার আস্থা অর্জন করেছে। প্রথম সারির ৯টি কম্পানিকে বলা হয় নবরত্ন। অবশ্য আমরা আমাদের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেব। এখানে স্মৃতিচারণা হিসেবে একটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। ঢাকা ভেজিটেবল অয়েল নামের একটি সরকারি কম্পানি ছিল। সরকার এটি প্রতিষ্ঠা করেনি। পরিত্যক্ত হিসেবে পেয়েছিল। পণ্যের খুবই চাহিদা ছিল। আর এ পণ্যের চাহিদা বাড়া ছাড়া কমার কথা আসে না।
১৯৮৭ সালে এর আংশিক শেয়ার বাজারে ছাড়া হয়। শেয়ারবাজারে এর শেয়ার ব্লুচিপ হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তী সময়ে কম্পানিটি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হলো। এখন একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। কম্পানির প্রচুর জমি ছিল। যিনি নিয়েছেন, তাঁর কাছে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা বেশি লাভজনক মনে হয়েছে। আর কোনো মন্তব্য করার প্রয়োজন আছে কি?
আরেকটি বিষয় নতুন কম্পানি আইনে অন্তর্ভুক্ত করার বিবেচনায় আসা উচিত। তা হলো রাজনৈতিক চাঁদা। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে করপোরেট সামাজিক দায়িত্ব কথাটা হালে বাংলাদেশে তথা বিশ্বে গুরুত্ব পেয়েছে। তবে নতুন কথা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মোটরগাড়ি প্রস্তুতকারক বোর্ড এবং ভারতের টাটা_এরা কম্পানির শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দেওয়ার বিষয়টি প্রকট হতে পারে। বিশেষ করে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা বেশি মাত্রায় প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে ব্যক্তিবিশেষের জন্য একটি কম্পানি বাধ্য করা হতে পারে অধিক পরিমাণে, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। ভারতের কম্পানি আইনে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে চাঁদা প্রদান প্রসঙ্গে। বলা হয়েছে, সরকারি কম্পানি এবং যেসব কম্পানির বয়স পাবলিক লিমিটেড কম্পানি হিসেবে তিন বছর হয়নি, তারা কোনো রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিতে পারবে না। অন্য কম্পানি চাঁদা দিতে পারবে, তবে তার পরিমাণ নিট মুনাফার ৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। অবশ্য আমাদের সরকার তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে হয়তো। ১৯৯৪ সালের পর আরো একটি খসড়া কম্পানি আইন তৈরি করা হয়েছে। নিশ্চয়ই সেটার কপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এটি গ্রহণ করা হবে না দেখে নতুন কমিটি করা হয়েছে। যে কমিটি ওই খসড়া তৈরি করেছিল, তার বেশির ভাগ সদস্য ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। সে সময় অর্থ ও বাণিজ্য_দুই মন্ত্রী ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএ)। ওই খসড়ায় এই পেশায় প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। খসড়া পড়ে মনে হয়েছে, সিএদের কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রাখা হয়েছিল খসড়া প্রণয়নের সময়। এদিকে ১৯৯৪ সালে যখন কম্পানি আইন জারি করা হয়, তখনো এই পেশার প্রভাব খুব বেশি ছিল। সেটা প্রতিফলিত হয়েছে অ্যাকাউন্টস বিষয়ে তথ্য প্রদান প্রসঙ্গে। এত খুঁটিনাটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে, যা অনেকটা বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। বার্ষিক হিসাবের স্বচ্ছতার জন্য যতটা প্রয়োজন ততটাই উল্লেখ থাকতে হবে। এবারের কমিটি বেশ ব্যাপকভিত্তিক। প্রত্যাশা যে বৃহত্তর আঙ্গিকে প্রতিটি বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরো একটি বিষয়ের উল্লেখ করা প্রয়োজন। কম্পানি আইনে রয়েছে, কোনো পরিচালকের যদি একটানা তিন মাসের বেশি দেশের বাইরে থাকতে হয়, তাহলে বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে একজন বিকল্প পরিচালক দিতে পারেন। কিন্তু কত দিন তার কোনো উল্লেখ নেই। এই সুযোগ নিয়ে স্থায়ীভাবে বিদেশে রয়েছেন, অথচ দেশে একজন বিকল্প পরিচালক রেখে নিজের অবস্থান জানাচ্ছেন, আমি একটি কম্পানির সচিবের দায়িত্ব পালনকালে তাঁকে কোনো বোর্ড সভায় দেখিনি। তিন বছর ওই কম্পানির সচিব ছিলেন। এই তিন বছর একটানা বিকল্প পরিচালক দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। পরিচালকের পদটি তো অলংকার নয়। বোর্ডের সভায় উপস্থিত থেকে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন এবং কম্পানির উন্নতিকল্পে অবদান রাখার কথা।
নতুন যে কমিটি করা হয়েছে, তাকে বোধ হয় ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ বা খসড়া চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে। আমরা একটু আতঙ্কিত, কেননা কোনো কমিটি বেশ কয়েকবার সময় না নিয়ে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে না। এই বিষয়টি অর্থাৎ কম্পানি আইন সময়োপযোগী করে তোলার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তির প্রভূত উন্নতি হয়েছে। ওয়েবসাইটে সব তথ্য পাওয়া যায়। আশা করি, কমিটির সদস্যরা দ্রুত অর্থাৎ যথাসময়ে কাজটি চূড়ান্ত করবেন।
লেখক : সাবেক ইপিএস, শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও কলামিস্ট
যদি কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো প্রশ্ন ওঠায় বা অভিযোগ দাখিল করে, তখন এই দপ্তর তদন্ত করবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, এই দপ্তরের ভাবমূর্তি সংকট রয়েছে, যা তাকে কার্যকর করে তোলায় বড় অন্তরায়। পাকিস্তানে কম্পানি আইন কার্যকর করার জন্য রয়েছে করপোরেট ল অথরিটি। ভারতে দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ কাজ করছে, যার নাম কম্পানি ল বোর্ড। নামের আর একটু সংশোধন করা হয়েছে। এখন একে বলা হয় বোর্ড অব কম্পানি ল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। ভারতের অর্থনীতি অনেক বড়। তাই কাজকর্ম ও জটিলতা অনেক বেশি। সেখানে কম্পানি অ্যাফেয়ার্স নামে মন্ত্রণালয়ের একটি পূর্ণ বিভাগ রয়েছে। আমাদের কতটুকু প্রয়োজন, তা আমাদের কর্তৃপক্ষ ঠিক করবে। তবে একটি পৃথক ও স্বশাসিত কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন, এ নিয়ে বোধ হয় দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই।
আমাদের বর্তমান কম্পানি আইনে দুই ধরনের কম্পানির কথা বলা রয়েছে_প্রাইভেট লিমিটেড ও পাবলিক লিমিটেড কম্পানি। দায়ের সীমাবদ্ধতা, শেয়ারের সংখ্যা বা গ্যারান্টি দ্বারা এটা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এক ধরনের কম্পানির নিবন্ধন নিচ্ছে সরকার। এর শতভাগ শেয়ারের মালিকানা সরকারের। পাবলিক লিমিটেড কম্পানি হলেও পাবলিককে কোনো শেয়ার দেয়নি। কবে দেবে তার ঠিক নেই। আর শেয়ার ছাড়তে হবে এমন কোনো কথা নেই। ভারতে এ ধরনের কম্পানি রয়েছে, যে কারণে ভারতের কম্পানি আইনে সরকারি কম্পানি নামে এক শ্রেণীর কম্পানির উল্লেখ রয়েছে। অন্য পাবলিক লিমিটেড কম্পানির ওপর যেসব ধারা প্রযোজ্য, তার কিছু থেকে একে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে আবার অন্যের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে না, এমন কিছু বিধান রয়েছে সরকারি কম্পানির জন্য। এ বিষয়টি নিয়ে বোধ হয় আমাদের চিন্তাভাবনা করার এবং ব্যবস্থা গ্রহণের সময় এসেছে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলে যে কম্পানি রসাতলে যাবে, এমন মনে করার কারণ নেই। ভারতে অতি বৃহৎ কয়েকটি কম্পানি রয়েছে, যা অত্যন্ত দক্ষতা ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। মুনাফা অর্জিত হচ্ছে। জনতার আস্থা অর্জন করেছে। প্রথম সারির ৯টি কম্পানিকে বলা হয় নবরত্ন। অবশ্য আমরা আমাদের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেব। এখানে স্মৃতিচারণা হিসেবে একটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। ঢাকা ভেজিটেবল অয়েল নামের একটি সরকারি কম্পানি ছিল। সরকার এটি প্রতিষ্ঠা করেনি। পরিত্যক্ত হিসেবে পেয়েছিল। পণ্যের খুবই চাহিদা ছিল। আর এ পণ্যের চাহিদা বাড়া ছাড়া কমার কথা আসে না।
১৯৮৭ সালে এর আংশিক শেয়ার বাজারে ছাড়া হয়। শেয়ারবাজারে এর শেয়ার ব্লুচিপ হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তী সময়ে কম্পানিটি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হলো। এখন একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। কম্পানির প্রচুর জমি ছিল। যিনি নিয়েছেন, তাঁর কাছে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা বেশি লাভজনক মনে হয়েছে। আর কোনো মন্তব্য করার প্রয়োজন আছে কি?
আরেকটি বিষয় নতুন কম্পানি আইনে অন্তর্ভুক্ত করার বিবেচনায় আসা উচিত। তা হলো রাজনৈতিক চাঁদা। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে করপোরেট সামাজিক দায়িত্ব কথাটা হালে বাংলাদেশে তথা বিশ্বে গুরুত্ব পেয়েছে। তবে নতুন কথা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মোটরগাড়ি প্রস্তুতকারক বোর্ড এবং ভারতের টাটা_এরা কম্পানির শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দেওয়ার বিষয়টি প্রকট হতে পারে। বিশেষ করে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা বেশি মাত্রায় প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে ব্যক্তিবিশেষের জন্য একটি কম্পানি বাধ্য করা হতে পারে অধিক পরিমাণে, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। ভারতের কম্পানি আইনে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে চাঁদা প্রদান প্রসঙ্গে। বলা হয়েছে, সরকারি কম্পানি এবং যেসব কম্পানির বয়স পাবলিক লিমিটেড কম্পানি হিসেবে তিন বছর হয়নি, তারা কোনো রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিতে পারবে না। অন্য কম্পানি চাঁদা দিতে পারবে, তবে তার পরিমাণ নিট মুনাফার ৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। অবশ্য আমাদের সরকার তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে হয়তো। ১৯৯৪ সালের পর আরো একটি খসড়া কম্পানি আইন তৈরি করা হয়েছে। নিশ্চয়ই সেটার কপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এটি গ্রহণ করা হবে না দেখে নতুন কমিটি করা হয়েছে। যে কমিটি ওই খসড়া তৈরি করেছিল, তার বেশির ভাগ সদস্য ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। সে সময় অর্থ ও বাণিজ্য_দুই মন্ত্রী ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএ)। ওই খসড়ায় এই পেশায় প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। খসড়া পড়ে মনে হয়েছে, সিএদের কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রাখা হয়েছিল খসড়া প্রণয়নের সময়। এদিকে ১৯৯৪ সালে যখন কম্পানি আইন জারি করা হয়, তখনো এই পেশার প্রভাব খুব বেশি ছিল। সেটা প্রতিফলিত হয়েছে অ্যাকাউন্টস বিষয়ে তথ্য প্রদান প্রসঙ্গে। এত খুঁটিনাটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে, যা অনেকটা বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। বার্ষিক হিসাবের স্বচ্ছতার জন্য যতটা প্রয়োজন ততটাই উল্লেখ থাকতে হবে। এবারের কমিটি বেশ ব্যাপকভিত্তিক। প্রত্যাশা যে বৃহত্তর আঙ্গিকে প্রতিটি বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরো একটি বিষয়ের উল্লেখ করা প্রয়োজন। কম্পানি আইনে রয়েছে, কোনো পরিচালকের যদি একটানা তিন মাসের বেশি দেশের বাইরে থাকতে হয়, তাহলে বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে একজন বিকল্প পরিচালক দিতে পারেন। কিন্তু কত দিন তার কোনো উল্লেখ নেই। এই সুযোগ নিয়ে স্থায়ীভাবে বিদেশে রয়েছেন, অথচ দেশে একজন বিকল্প পরিচালক রেখে নিজের অবস্থান জানাচ্ছেন, আমি একটি কম্পানির সচিবের দায়িত্ব পালনকালে তাঁকে কোনো বোর্ড সভায় দেখিনি। তিন বছর ওই কম্পানির সচিব ছিলেন। এই তিন বছর একটানা বিকল্প পরিচালক দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। পরিচালকের পদটি তো অলংকার নয়। বোর্ডের সভায় উপস্থিত থেকে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন এবং কম্পানির উন্নতিকল্পে অবদান রাখার কথা।
নতুন যে কমিটি করা হয়েছে, তাকে বোধ হয় ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ বা খসড়া চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে। আমরা একটু আতঙ্কিত, কেননা কোনো কমিটি বেশ কয়েকবার সময় না নিয়ে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে না। এই বিষয়টি অর্থাৎ কম্পানি আইন সময়োপযোগী করে তোলার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তির প্রভূত উন্নতি হয়েছে। ওয়েবসাইটে সব তথ্য পাওয়া যায়। আশা করি, কমিটির সদস্যরা দ্রুত অর্থাৎ যথাসময়ে কাজটি চূড়ান্ত করবেন।
লেখক : সাবেক ইপিএস, শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও কলামিস্ট
No comments