ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কোথায় by বেলাল হোসাইন রাহাত
জাহাঙ্গীরনগর দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম দেশ-বিদেশে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হোক_ তা আমরা কখনও চাই না। কিন্তু যখন এই ক্যাম্পাস নিয়ে পত্রপত্রিকায় সম্পাদকীয় কলামে সুনামের বিপরীতে লেখা ছাপা হয় তখন আমাদের ভাবতে লজ্জা লাগে।
বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রায় ২০০ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যার অধিকাংশ দলীয় ও গোপালগঞ্জ জেলা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত। এসব বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। কিছুদিন আগেও সচেতন শিক্ষকরা তার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালের ৫ জুলাই ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি গ্রুপ ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আল-বেরুনী হলের চার তলার ছাদ থেকে পিটিয়ে ফেলে দেওয়া হয় কয়েকজনকে। ঘটনার পর ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং কেন্দ্র থেকে কমিটি বাতিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ওই সময় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে অবস্থান করে পরে তারা মাথানাড়া দিয়ে ওঠে। আস্তে আস্তে তারা পরিচয় দেয়_ আমরা ছাত্রলীগের স্বঘোষিত সভাপতি ও সেক্রেটারি। ক্যাম্পাসে এখনও নতুন শিক্ষার্থীরা জানে, তারা ছাত্রলীগের নেতা। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের ব্যানারে মিছিল-মিটিং করেও তারা জানান দেয় ছাত্রলীগের অবস্থান। এ অবস্থায় ছাত্রলীগের কেন্দ্র নিশ্চুপ থেকেছে। এখন জুবায়েরকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা যখন নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তখন তারা বলছে, তারা দুষ্কৃতকারী। আবার আমাদের উপাচার্য বলেন সবচেয়ে হাস্যকর কথা_ ছাত্রলীগ এমন কাজ করতে পারে না। উপাচার্যের কথায় মনে হয় ছাত্রলীগ যেন দুধমাখা ভাত খেতেও জানে না। যেদিন জুবায়ের হত্যার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভিসিকে দিনভর অবরুদ্ধ করে রাখে তখন ছাত্রলীগের কয়েকশ' নেতাকর্মী পুলিশের সামনে স্লোগান দিচ্ছিল_ 'ভিসি তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই।' উপাচার্যের কাছে প্রশ্ন, ওরা কারা? গত ৭ জানুয়ারি ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের প্রবেশিকা অনুষ্ঠানে আপনি বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এখন সম্পূর্ণ সন্ত্রাসমুক্ত। তার একদিন পরই জুবায়েরকে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়, আবার তারাই আপনার পক্ষে স্লোগান দেয়। সেদিন কোন যুক্তিতে আপনি ওই বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা সচেতন ছাত্রছাত্রীদের কাছে বোধগম্য নয়।
আমরা ক্যাম্পাসের সাধারণ ছাত্ররা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমাদের কোনো গ্রুপ নেই। তাহলে কি আমরা নিরাপত্তা পাব না? জুবায়ের যেদিন ক্যাম্পাসে পরীক্ষা দিতে আসবেন সেদিন প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন। প্রশাসন অনুমতি দিলেও তার নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন প্রক্টর ও নিরাপত্তাকর্মীরা। তাদের পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল হলো ক্যাম্পাস। শেষ পর্যন্ত তারা পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। কারণ প্রশাসনের কাছে এ হত্যাকাণ্ডের কোনো জবাব নেই। আমরা পত্রিকার খবরে দেখেছি জুবায়ের ভাইয়ের মৃত্যুতে তার মায়ের আহাজারি। প্রশাসন কী জবাব দেবে তার মা-বাবাকে? প্রতিটি ছেলের কাছে তার বাবা-মা অনেক স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু সেই স্বপ্ন জুবায়েরের জন্য অধরাই রয়ে গেল। প্রতিটি শিক্ষার্থীর অভিযোগ, এই ক্যাম্পাসে যত মারামারি হয়েছে তার তদন্ত কমিটি গঠন হয়। কিন্তু এর ফল কী তা আর শিক্ষার্থীরা জানে না। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা যদি হয় এমন, তাহলে সন্ত্রাসীরা স্বাভাবিকভাবে আরও অপকর্মে উদ্বুদ্ধ হবে। এ জন্য আমরা বিভিন্ন গ্রুপ নামধারী সন্ত্রাসীদের হাতে আর কোনো জুবায়েরকে হারাতে চাই না। এ জন্য প্রশাসনের প্রয়োজন প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
য় শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
No comments