ফেয়ার প্রাইস কার্ড-অসাধু ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

এ দেশে যেকোনো সরকারি প্রকল্প মানেই কিছুসংখ্যক ক্ষমতাবান লোভাতুর মানুষের উদরপূর্তির পাঁয়তারা, বিদ্যমান বাস্তবতা এ সাক্ষ্যই বহন করে। ২১ আগস্ট 'ডিলারের কবজায় গরিবের কার্ড' শিরোনামে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সেই চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে। এ রকম কাণ্ডকীর্তি এ দেশে নতুন কিছু না হলেও মহাজোট সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল অন্য রকম।


নিম্ন-আয়ের মানুষ যাতে নায্য মূল্যে চাল-গম কিনতে পারে, সে লক্ষ্যে সরকার তাদের জন্য যে ফেয়ার প্রাইস কার্ড দিয়েছিল, সেই কার্ড চলে গেছে ডিলারের কবজায়। গরিব মানুষকে নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে ডিলাররা অধিকাংশ কার্ডই হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সন্দেহ নেই, অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুতর এবং এর যথাযথ প্রতিকার অবশ্যই দরকার। ওই প্রতিবেদনেই প্রকাশ, খাদ্যমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক অভিযোগ তাঁর জানা নেই বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি এটাও বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনটি মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধানক্রমে প্রকাশ হয়েছে। ফেয়ার প্রাইস বা রেশন কার্ড_যে নামেই পদ্ধতিটিকে শনাক্ত করা হোক না কেন, এর ব্যবস্থাপনাগত পদ্ধতি নিয়ে আগেই শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল।
অসাধু ডিলার বা সংশ্লিষ্টরা এর সুযোগ নেবে_এমন সতর্ক বার্তাও অভিজ্ঞ মহল থেকে দেওয়া হয়েছিল। গরিবদের খাদ্য নিয়ে নয়ছয় আগেও হয়েছে এবং গরিবের অধিকারে থাবা বসানোর জন্য একটি মহল সব সময়ই ওত পেতে থাকে। অতীতে এই কার্ড নিয়ে নানা রকম কেলেঙ্কারি হওয়ায় তা বন্ধ করার জন্য সেনাবাহিনী নামাতে হয়েছিল। ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে গরিবদের ন্যায্য মূল্যে চাল-গম কেনার পথ প্রশস্ত করার সরকারের ভাবনাটি ইতিবাচক হলেও অসাধু মহলের কারণে উপকারভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এ অভিযোগও আছে যে উপকারভোগী বাছাই থেকে শুরু করে ডিলার নিয়োগ, গুদাম থেকে খাদ্যশস্য উত্তোলন ও বিতরণ পর্যন্ত স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। যদি গোড়ায় গলদ রেখে এমন কর্মসূচি চালু করা হয়, তবে তা ভেস্তে যাবে_এটিই তো স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রেও হয়েছে তা-ই। সম্প্রতি এই কার্ডের অপব্যবহার ঠেকাতে কার্ডধারীর ছবি লাগানোর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কিন্তু যে পথে বা মাধ্যমে এ কাজটি সম্পন্ন করার সরকারি নির্দেশ জারি হয়েছে, তাও ভুল সিদ্ধান্ত বলে আমরা মনে করি। কার্ডে ছবি সংযোজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডিলারদেরই। যাদের বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ রয়েছে, তাদের দিয়ে আবার অপব্যবহার ঠেকানোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বিস্ময়কর।
স্বল্প ও সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠীর উপকার যদি নিশ্চিত করতে হয়, তাহলে সর্বাগ্রে অসাধু ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে কার্ডধারীদের সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়াও দরকার। কার্ডের অপব্যবহার ঠেকাতে তাদের সচেতন না হওয়ার বিকল্প নেই। ডিলারদের অসৎ কাজের সঙ্গে খাদ্য বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশের অভিযোগও উঠেছে। এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনিয়ম কিংবা পক্ষপাত করা হয়েছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে আরো জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। পুরো প্রক্রিয়াটিকে ঢেলে সাজাতে হবে। দরিদ্রদের অধিকার নিশ্চিত করার দায় সংশ্লিষ্ট সবার।

No comments

Powered by Blogger.