জনদুর্ভোগ মোকাবেলা-কথায় সংযম থাকুক, কাজে দক্ষতা
নন্দঘোষ সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ করার কিছু নেই_ জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এই মন্তব্য এমন দিনে করা হয়েছে, মিরপুরের ছোট্ট শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহার করুণ মৃত্যুর খবর যেদিন অগণিত মানুষকে অশ্রুসিক্ত না করে পারেনি। দুর্ঘটনা বলে-কয়ে আসে না_ এটা প্রবাদবাক্য।
কিন্তু অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই না করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে বের না করা, দক্ষ ও অভিজ্ঞ চালকের হাতে স্টিয়ারিং দেওয়া_ এসব হচ্ছে সড়কে গাড়ি নামানোর আবশ্যকীয় শর্ত। বাংলাদেশের সড়কপথ নিরাপদ নয়_ এটা স্বীকৃত। দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় যানবাহন ভাংচুর হয়। প্রতিবাদ হয়। সব ক্ষেত্রেই যে জনতার আচরণ সঙ্গত, সেটা হয়তো বলা যাবে না। কিন্তু প্রতিবাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা শুধু যুক্তিহীন নয়, নির্বুদ্ধিতাও বটে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে যে মন্ত্রী প্রতিবাদের এই অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছেন তিনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র। জনগণের অধিকার সংরক্ষণে ষাট দশকেরও বেশি সময় সক্রিয় থাকা একটি দলের অন্যতম শীর্ষ নেতার এ ধরনের মন্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত। এটা আশার কথা যে, সরকারদলীয় সংসদ সদস্য তারানা হালিম মন্ত্রীর বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, অবহেলার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। চাইলে কিংবা সতর্ক হলে সড়কের অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। তারানা হালিমের এ বক্তব্যে ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনার কারণে উদ্বিগ্ন দেশবাসীর মনের কথাই প্রতিফলিত হয়েছে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী কথাবার্তায় সংযমী হিসেবে পরিচিত। তিনি কেন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে লাগামহীন মন্তব্য করলেন, তা বোধগম্য নয়। সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের অবিবেচনাপ্রসূত বিভিন্ন মন্তব্যে দেশবাসী ক্ষুব্ধ। তিনি অযোগ্য-অদক্ষ চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে ট্রেড ইউনিয়নের সংকীর্ণ স্বার্থকেই বড় করে দেখেছেন। বিআরটিএর ওপর তার অন্যায্য চাপ সৃষ্টির ঘটনাও সরকারের জন্য বিব্রতকর। চালকের শিক্ষার দৌড় পথের 'গরু-ছাগল চেনা' পর্যন্ত হলেই চলে_ তার এ মন্তব্য তো এখন উপহাসের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সম্ভবত বাক সংযমে তার বিশ্বাস নেই। সরকারের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কেও বোধকরি একই কথা বলা যায়। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমস্যায় তারা দ্রুতই খেই হারিয়ে ফেলেন। নিজেদের দায়দায়িত্ব এড়িয়ে খুঁজতে থাকেন 'নন্দ ঘোষ'। মন্ত্রিসভার প্রবীণতম সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও তা থেকে মুক্ত নন বলেই দেশবাসীর ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের চাপে শুধু দরিদ্র ও নিম্নবিত্তরা নয়, মধ্যবিত্তদেরও বড় কষ্ট। শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন শুধু পুুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীদের জন্য নয়, সার্বিক অর্থনীতির জন্যও উদ্বেগের। বিষয়টিকে 'রাবিশ' বলা অর্থহীন, সংকটের জন্য গণমাধ্যম কিংবা সুশীল সমাজকে দায়ী করার মধ্যেও প্রজ্ঞার পরিচয় মেলে না। এর পরিবর্তে দেশবাসী দেখতে চায় কাজ। সমস্যার সমাধানে ব্রতী হতে হবে সরকারকে। এ জন্য চাই আন্তরিকতা ও দক্ষতা। এর পরিবর্তে অনুচিত ও উল্টাপাল্টা কথা বলতে থাকলে তাতে জনগণের ক্ষোভকেই উস্কে দেওয়া হয় এবং এর পরিণতি গণতান্ত্রিক সমাজে ভালো হয় না।
No comments