নতুন মাদকের জন্য অপেক্ষা! by আবদুল কাইয়ুম
আজকাল খবরের কাগজ খুললে মাদকজনিত খবর ও এ কারণে কোনো না কোনো মৃত্যুর খবর বিরল নয়। যে তরুণ সমাজের ওপর ভর করে বাংলাদেশ একদিন শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তোলার প্রত্যাশা করছে, মাদকাসক্তের কারণে সে আশা-ভরসা এখন হুমকির সম্মুখীন। কেন এই সর্বনাশা মাদকের পেছনে তরুণরা পঙ্গপালের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে?
মাদকের অপব্যবহারজনিত ক্ষতিকর দিকের শেষ নেই। আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত হওয়া, পরিবার-পরিজনকে অভাব-অনটনে ফেলা, বন্ধু-বান্ধবের কাছে ধার নেওয়া, চুরি, রাহাজানির প্রবণতা, দুঃখী মানুষে পরিণত হওয়া ইত্যাদি আর্থিক ক্ষতির দিকগুলো এই মরণ নেশার কারণেই হয়ে থাকে। মাদকে আসক্ত হয়ে অনেকেই জীবনের উন্নতির আশা একেবারেই ছেড়ে দেয়। এ ছাড়াও কর্মোদ্যোগ হ্রাস, পারিবারিক অশান্তি, অপরাধপূর্ণ আচরণ এবং সমাজে অপাঙ্ক্তেয় হওয়াও এই মাদকের কারণ। মাদক সেবনে একজন সুস্থ মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের পথেঘাটে উত্ত্যক্তকারীদের অধিকাংশই তরুণ মাদকসেবী। ইদানীংকালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধির পেছনেও রয়েছে এই মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার। মাদক সেবনের পর যানচালকরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে নিজেরাই যেমন অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে, তেমনি তাদের কারণেই অকালে ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য নিরপরাধ তাজা প্রাণ। এভাবে চলতে থাকলে এ জাতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা অনিশ্চিত।
কিন্তু একথা সত্য যে, কোনো সামাজিক সমস্যাই সমাধানের অযোগ্য নয়। অপরাধী যেমন অপরাধস্থলে তার অপরাধের চিহ্ন রেখে যায়, তেমনি সমস্যার মধ্যেই নিহিত থাকে সমাধানের উপকরণ ও নির্দেশনা। পাঠ্যপুস্তকে মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রবন্ধ রাখার ব্যবস্থা, ১৯৯০ সালে প্রণীত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, জনমত ও গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রচার, সভা-সমিতি ও সেমিনারের আয়োজন করে বিপথগামী মাদকসেবীদের মাদক পরিহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বেআইনি মাদকদ্রব্যের ব্যবসা এবং পাচার বন্ধ করার জন্য পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান বন্ধ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত নেশা উৎপাদনকারী ওষুধ বিক্রির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং সীমান্ত পাহারা জোরদার করে মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে পারলে মাদক সেবন অনেকাংশে হ্রাস পেত।
লক্ষণীয়, বাংলাদেশে এক এক সময় এক এক ধরনের 'মাদক' নেশার রাজ্যের নেতৃত্ব দিয়েছে। যেমন '৭৪ থেকে '৭৯ সাল পর্যন্ত গাঁজা, '৮১ থেকে '৮৩ সাল পর্যন্ত মদ, '৮৩ থেকে '৮৫ সাল পর্যন্ত মৃত সঞ্জীবনী শূরা, '৮৫ সালে সিডাক্সিন, প্যাথেডিন, '৮৬ থেকে '৯০ সাল পর্যন্ত হেরোইন এবং '৯০ থেকে '৯২ সাল পর্যন্ত ফেনসিডিল ছিল মাদকসেবীদের কাছে প্রিয় নেশা। বর্তমানে বাংলাদেশে ফেনসিডিল ও হেরোইনসহ ইয়াবা ট্যাবলেটের একচেটিয়া বাজার চলছে। আজকাল তরুণ মাদকসেবীদের কাছে 'ডাইল' নামে পরিচিত ফেনসিডিল ও 'জঙ্গল' নামে পরিচিত গাঁজা খুবই প্রিয়। এখনই যদি মাদককে নির্মূল করা না যায় তবে নতুন সহস্রাব্দে হয়তো অন্য কিছু এ জনপদকে মাতিয়ে তুলবে। আমরা কি সে পর্যন্ত অপেক্ষা করব?
য় প্রভাষক, রৌমারী ডিগ্রি কলেজ, কুড়িগ্রাম
maqrow65@gmail.com
স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের পথেঘাটে উত্ত্যক্তকারীদের অধিকাংশই তরুণ মাদকসেবী। ইদানীংকালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধির পেছনেও রয়েছে এই মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার। মাদক সেবনের পর যানচালকরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে নিজেরাই যেমন অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে, তেমনি তাদের কারণেই অকালে ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য নিরপরাধ তাজা প্রাণ। এভাবে চলতে থাকলে এ জাতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা অনিশ্চিত।
কিন্তু একথা সত্য যে, কোনো সামাজিক সমস্যাই সমাধানের অযোগ্য নয়। অপরাধী যেমন অপরাধস্থলে তার অপরাধের চিহ্ন রেখে যায়, তেমনি সমস্যার মধ্যেই নিহিত থাকে সমাধানের উপকরণ ও নির্দেশনা। পাঠ্যপুস্তকে মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রবন্ধ রাখার ব্যবস্থা, ১৯৯০ সালে প্রণীত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, জনমত ও গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রচার, সভা-সমিতি ও সেমিনারের আয়োজন করে বিপথগামী মাদকসেবীদের মাদক পরিহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বেআইনি মাদকদ্রব্যের ব্যবসা এবং পাচার বন্ধ করার জন্য পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান বন্ধ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত নেশা উৎপাদনকারী ওষুধ বিক্রির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং সীমান্ত পাহারা জোরদার করে মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে পারলে মাদক সেবন অনেকাংশে হ্রাস পেত।
লক্ষণীয়, বাংলাদেশে এক এক সময় এক এক ধরনের 'মাদক' নেশার রাজ্যের নেতৃত্ব দিয়েছে। যেমন '৭৪ থেকে '৭৯ সাল পর্যন্ত গাঁজা, '৮১ থেকে '৮৩ সাল পর্যন্ত মদ, '৮৩ থেকে '৮৫ সাল পর্যন্ত মৃত সঞ্জীবনী শূরা, '৮৫ সালে সিডাক্সিন, প্যাথেডিন, '৮৬ থেকে '৯০ সাল পর্যন্ত হেরোইন এবং '৯০ থেকে '৯২ সাল পর্যন্ত ফেনসিডিল ছিল মাদকসেবীদের কাছে প্রিয় নেশা। বর্তমানে বাংলাদেশে ফেনসিডিল ও হেরোইনসহ ইয়াবা ট্যাবলেটের একচেটিয়া বাজার চলছে। আজকাল তরুণ মাদকসেবীদের কাছে 'ডাইল' নামে পরিচিত ফেনসিডিল ও 'জঙ্গল' নামে পরিচিত গাঁজা খুবই প্রিয়। এখনই যদি মাদককে নির্মূল করা না যায় তবে নতুন সহস্রাব্দে হয়তো অন্য কিছু এ জনপদকে মাতিয়ে তুলবে। আমরা কি সে পর্যন্ত অপেক্ষা করব?
য় প্রভাষক, রৌমারী ডিগ্রি কলেজ, কুড়িগ্রাম
maqrow65@gmail.com
No comments