আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক-অবাধ বিপণন আইনশৃঙ্খলার জন্যই হুমকি

দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে নতুন হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও কিছু না কিছু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু এর ওপর এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের যেসব বাহিনীর হাতে, সেসব বাহিনীর পোশাক পরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটনের খবরও পত্রপত্রিকায় আসছে। এমনকি এই পোশাক পরে গ্রেপ্তারের নামে মানুষ অপহরণ করে হত্যাও করা হয়েছে।


আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই পোশাকই এখন বাহিনীগুলোর সুনামের জন্য নতুন এক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, বাজারে হঠাৎ করে নতুন এক ফ্যাশন চালু ছিল। তরুণদের দেখা যেত সেনাবাহিনীর পোশাকের রঙের প্যান্ট পরতে। পরে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ ঘোষণা দিয়ে সেই পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রায় একই ধরনের পোশাক এখন বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। বিশেষ করে বিভিন্ন সিকিউরিটি কম্পানি তাদের কর্মীদের জন্য নিজস্ব পোশাক সরবরাহ করে, যা অনেকটা সামরিক পোশাকের মতোই। এ ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানেরও নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে। এই নিরাপত্তা কর্মীদেরও সামরিক বা পুলিশ বাহিনীর পোশাকের রঙের পোশাক সরবরাহ করা হয় ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে। পোশাকের এই চাহিদার কারণেই এখন বাজারে নিরাপত্তা কর্মীদের পোশাক বিক্রি করতে আগ্রহী হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এসব পোশাক তাই এখন সহজলভ্য হয়ে গেছে। এ ছাড়া এমনিতেই পুলিশের পোশাক ও ব্যবহার্য দ্রব্যাদির জন্য পরিচিত বাজার পলওয়েল মার্কেটে সহজেই মেলে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক, জুতা ও বিভিন্ন ধরনের ব্যাজ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকের এই সহজলভ্যতার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য বাজার থেকে পোশাক সংগ্রহ করে। কিন্তু সেই পোশাক যে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকের মতোই হয়ে যাচ্ছে এবং এই পোশাক ব্যবহার করা যে ঠিক নয়, সেটা এই প্রতিষ্ঠানগুলো উপলব্ধি করতে পারে না। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকের এই সহজলভ্যতা দুষ্কৃতকারীদের এ জাতীয় পোশাক গায়ে চড়িয়ে দুষ্কর্ম চালানোর ব্যাপারে উৎসাহিত করছে। দুষ্কৃতকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক সহজেই সংগ্রহ করে সেই পোশাক ব্যবহার করছে তাদের নানা অপকর্মে। এ কারণেই দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরে অনেক অপকর্ম ঘটানো হয়েছে এবং হচ্ছে। এতে আরো অবনতি হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ব্যাপারে সচেতন। র‌্যাবের পোশাকে বেশ কিছু অঘটন সংঘটিত হওয়ার পর, এই বাহিনীর পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি কম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি সিকিউরিটি কম্পানিকে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরে অপকর্ম থেমে নেই।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্বীকৃত পোশাক যত্রতত্র বেচাকেনা দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। তার পরও তা বেচাকেনা হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে তা আরো কঠোর করতে হবে। তা না হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকের এই সহজলভ্যতা ও অবাধ বিপণন আইনশৃঙ্খলার জন্যই হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে এবং আরো দেবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তিও তাতে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.