রাজনীতি : প্রতিযোগিতা থাকুক কিন্তু বৈরিতা নয় by এমাজউদ্দীন আহমদ

শান্তিপূর্ণ জীবন কে না চায়? আমি চাই। আপনি চান। সেও চায় শান্তিতে জীবন কাটাতে। ঘরে শান্তি চাই। গ্রাম-মহল্লায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। সর্বোপরি দেশে চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। চাই বৃহত্তর আঞ্চলিক পরিসরে, এমনকি বিশ্বময় শান্তির সুখদ হাওয়া সবাই চায় গায়ে লাগাতে। কিন্তু চাইলেই কি শান্তি আপনাআপনি ধরা দেবে?


একজন গ্রিক দার্শনিক 'ইউটোপিয়া' বা স্বপ্নরাজ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছিলেন : 'স্বপ্নরাজ্য এমন এক স্থান, যেখানে মাছেরা নিজে ধরা দিয়ে, নিজেদের দেহে তেল-মরিচ-মসলা মাখিয়ে, নিজেরা সেঁকে-পুড়ে খাদ্য হিসেবে নিজেদের পরিবেশন করে।'
এ ধরনের ঘটনা স্বপ্নেই ঘটে। ঘটে শুধু কল্পনায়। বাস্তবতা সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন। শান্তি কোনো পরিবারেই হোক আর গ্রাম-মহল্লায় হোক, আর দেশেই হোক- বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক নিয়মে অঝোরে ঝরবে না আকাশ থেকে। শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে হবে অনেক কাঠ-খড় জ্বালিয়ে। একবার তেমন পরিবেশ তৈরি করতে তাকে সংরক্ষণ করতে হয় সার্বক্ষণিক উদ্যোগের মাধ্যমে। একটু অমনোযোগী হলে অশান্তি মাথা উঁচু করবে সদম্ভে, চারদিকে হাত-পা ছড়িয়ে। হেনরি নেভিনশন কিভাবে স্বাধীনতা রক্ষা করতে হয় তা কবিত্ব করে বলেছেন : 'প্রেমের মতো স্বাধীনতাকেও আমাদের প্রত্যেক দিন জয় করতে হবে। প্রত্যেকবার বিজয়ের পর যখন আমরা মনে করি যুদ্ধ শেষ হয়েছে, সুতরাং নিশ্চেষ্ট থাকতে পারি, তখন যেমন যুদ্ধে হারতে বসি, তেমনি স্বাধীনতাকেও আমাদের হারাতে হয়। স্বাধীনতার সংগ্রাম কোনো দিন শেষ হয় না এবং এর যুদ্ধক্ষেত্র কোনো দিন নীরব থাকে না।' শান্তিপূর্ণ জীবনের সংগ্রামও ঠিক তেমনি। শান্তি রক্ষার লক্ষ্যে এই মনোভাব যে এ ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটলে প্রতিবাদ হতে পারে, এমনকি প্রতিরোধের ঝড় উঠতে পারে, তার চেয়ে বেশি কার্যকর অন্য কিছু হতে পারে না।
শান্তিপূর্ণ জীবনের প্রধান শর্ত হলো, রাষ্ট্রের শক্তিশালী ভূমিকা এবং এই ভূমিকার প্রতিফলন ঘটে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংরক্ষণে, ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষণে, জাতীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিকীকরণে, নাগরিকদের অধিকারের নিশ্চয়তা বিধানে এবং নিরপেক্ষভাবে ন্যায়নীতির প্রতিষ্ঠাকরণে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি বা শিল্পের অগ্রগতি সাধন রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের মৌলিক অংশ নয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজীকরণ অথবা সাংস্কৃতিক বিকাশে রাষ্ট্রের ভূমিকাও অনেকটা বাড়তি। অনেকটা ঐচ্ছিক। রাষ্ট্রের কাছ থেকে জনগণ চায় শুধু জীবনের নিরাপত্তা। চায় সম্পদের নিরাপত্তা আর চায় শান্তিপূর্ণ জীবনের নিশ্চয়তা। রাষ্ট্রের জন্মের দিকে দৃষ্টি দিন, দেখবেন এসবের জন্যই সাধারণ মানুষ রাষ্ট্র সৃষ্টিকে অভিনন্দিত করেছে সেই অতীতে, দূর অতীতে। ব্রিটেনের খ্যাতনামা দার্শনিক টমাস হবস্ প্রাক-রাষ্ট্রীয় সামাজিক অবস্থাকে 'প্রকৃতির রাজ্য' বলে চিহ্নিত করেছেন। সেখানে কোনো শৃঙ্খলা ছিল না। ছিল না সভ্যতা ও শান্তিপূর্ণ জীবনের কোনো উপাদান। ছিল শুধু 'প্রতিনিয়ত দুর্বিপাকে মৃত্যুর ভয় এবং আশঙ্কা'। ফলে সেই প্রকৃতির রাজ্যে জীবন ছিল নিঃসঙ্গ, দরিদ্র, নোংরা, পাশব এবং সংক্ষিপ্ত। রাষ্ট্রের জন্ম হলো গণসম্মতির ভিত্তিতে। তৈরি হলো সরকার, কিছু সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির অঙ্গীকার মাথায় নিয়ে। সুনির্দিষ্ট হলো রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা। রাজনৈতিক নেতৃত্বের অন্তর্ভুক্ত যারা ক্ষমতাসীন এবং যারা ক্ষমতা দখলে আগ্রহী, তাদের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হলো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় ভূখণ্ডে বসবাসকারী নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা, তাদের স্বাতন্ত্র্য ও সম্পদের নিশ্চয়তা বিধান প্রভৃতি। এই লক্ষ্যেই তৈরি হয় সুশাসন এবং সুশাসনের ভিত্তি ছিল আইনের রাজত্ব। এভাবে আইন হয়ে ওঠে জাতীয় এবং জননিরাপত্তার অমোঘ অস্ত্র। হতে হবে প্রতিষ্ঠিত বা আইনের রাজত্ব, আইন সবাইকে মানতে হবে। চূড়ান্ত পর্বে সুশাসনই স্বশাসনের মহত্তম ক্ষেত্র রচনা করবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের বড় দায়িত্ব তাই হবে আইনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা, অন্য কিছু নয়। আগ বাড়িয়ে তারা সব কিছুতে হাত দিতে গেলেই হয়ে উঠবে বিপজ্জনক। ঐতিহাসিক উইল রজার্স সত্যিই বলেছেন : 'কিছু না করার জন্য সরকারকে দোষারোপ করা আমাদের উচিত নয়। যখন কিছু করতে চায়, তখনই সরকার বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।' রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিপজ্জনক হয়ে ওঠে দুটি কারণে : এক. ক্ষমতার শীর্ষস্থানে অবস্থানকারী নেতারা সব সময় ন্যায়নীতি অনুসরণে সক্ষম নন। দুই. যে কর্মকর্তাদের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতৃত্ব তার দায়িত্ব পালনে প্রবৃত্ত হয়, সেই কর্মকর্তারা হয় নেতৃত্বকে ঠকিয়ে, না হয় জনগণের ওপর অত্যাচার করে বড়লোক হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের এই অপব্যবহার সম্পর্কে চিন্তাবিদ ও দার্শনিকরা মানব সভ্যতার আদিপর্ব থেকেই সজ্ঞাত বিধান দিয়ে এসেছেন। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিক সভ্যতার উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক প্লেটো তাঁর রিপাবলিকে (আদর্শ রাষ্ট্রে) বিধান দিয়েছিলেন যে দার্শনিক-রাজার না থাকবে কোনো পরিবার এবং থাকবে না কোনো ব্যক্তিগত সম্পদ। পরিবার না থাকলে আত্মীয়স্বজন বা সন্তান-সন্ততিদের প্রতি তার কোনো সময় দুর্বলতা জন্মাবে না। কোনো ব্যক্তিগত সম্পদে অধিকার না থাকলে রাষ্ট্রীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহারে তিনি আপনাআপনি উদ্বুদ্ধ হবেন। রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের দুর্নীতি সম্পর্কে প্রায় দুই হাজার বছর আগের লেখা কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের বিভিন্ন অধ্যায়ে উলি্লখিত হয়েছে চলি্লশ ধরনের লুণ্ঠনপ্রক্রিয়া। অর্থশাস্ত্রের এক স্থানে লিখিত হয়েছে : 'পানিতে বিচরণরত মাছ কখন পানি পান করছে তা জানা যেমন অসম্ভব, তেমনি অসম্ভব কখন কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় তহবিল তছরূপ করছে তা নির্ণয় করা।' প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র বাস্তবতার আলো দেখেনি কোনো দিন। বিভিন্ন দেশে রাজা হয়েছেন এবং থেকেছেন দীর্ঘদিন, কিন্তু কোথাও সেই প্লেটোর দার্শনিক রাজার দেখা মেলেনি। ব্যক্তিগত সম্পদবঞ্চিত এবং পরিবারহীন রাজার কথা আমরা তত্ত্ব হিসেবে আলোচনা করে চলব আরো কয়েক হাজার বছর, কিন্তু সেই দার্শনিক রাজার সন্ধান নাও পেতে পারি। অন্যদিকে কৌটিল্যের মতো ব্যক্তিও সব জেনেশুনে সরকারি কর্মকর্তাবিহীন শাসনব্যবস্থা উদ্ভাবনে সক্ষম হননি। ফলে দুর্নীতির গতিধারা বন্ধের কোনো সুযোগ ঘটেনি। রাষ্ট্রীয় জীবনে অধিকাংশ অসংগতি, এমনকি আইনশৃঙ্খলার অস্বাভাবিক অবস্থাও প্রকারান্তরে জড়িত রয়েছে দুর্নীতির শত ছিদ্রের সঙ্গেই। সমষ্টিগত পর্যায়ে অশান্তির মূলও এই দুর্নীতির বিষবৃক্ষটি। এটিকে উপড়ে ফেলা সম্ভব নয়। সম্ভব এর ব্যাপ্তি ও গভীরতাকে হ্রাস করে কোনোরকমে সহনশীল পর্যায়ে নামিয়ে আনা। কিভাবে এ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে? এ প্রশ্নের সহজ কোনো উত্তর নেই। সম্ভবত এর কোনো উত্তর হয় না। তাই যেসব জনপদে সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ, সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে এ সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে। এসব জনপদে তিনটি উপাদান চোখে পড়ে।
এক. ভারসাম্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থা। দুই. উদারনৈতিক নেতৃত্ব। তিন. অধিকার সচেতন এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সজ্ঞাত জনসমষ্টি। রাজনীতি সব সময় ক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কেউ কেউ ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন। শাসন করছেন। আর অধিকাংশই শাসিত। ক্ষমতার প্রান্তসীমায় গ্রহীতার পর্যায়ে রয়েছেন। ক্ষমতার কিন্তু নিজস্ব এক ধরনের বিষক্রিয়া রয়েছে এবং চূড়ান্ত ক্ষমতার বিষক্রিয়া মারাত্মক। লর্ড অ্যাক্টন সত্যিই লিখেছেন : 'ক্ষমতা দুর্নীতির জনক এবং সর্বোচ্চ ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত সর্বোচ্চ দুর্নীতি।' অন্যদিকে রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য প্রয়োজন হয় ক্ষমতার। যুগে যুগে রাষ্ট্রচিন্তাবিদরা মানব চরিত্র বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, সুশাসনের অন্যতম উপাদান হলো প্রয়োজনে ক্ষমতার প্রয়োগ। জেরেমি টেইলর বলেছেন, 'একদল নেকড়ে বাঘ বরং চুপ করে থাকবে, কিন্তু জোর করে তাদের শান্ত করার কেউ না থাকলে কিছুসংখ্যক মানুষ কখনো চুপ করে থাকবে না।' অন্য কথায়, শাসন বা সুশাসনের জন্য ক্ষমতা অপরিহার্য, কিন্তু এর সীমারেখা রয়েছে। সরকারের বা সরকারের প্রধানের কতটুকু ক্ষমতা থাকবে, এ ক্ষমতার সীমারেখা কী, এ ক্ষমতার প্রয়োগ কিভাবে হবে, কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, সীমারেখা কিভাবে নির্ধারিত হবে, প্রয়োগকারী সীমা অতিক্রম করলে কী হবে- এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান থাকতে হবে দেশের মৌলিক আইনে বা সংবিধানে। থাকতে হবে সুপরিকল্পিত চেক অ্যান্ড ব্যালান্স, যে ব্যবস্থায় কোনো নিয়ন্ত্রণরেখা সুনির্দিষ্ট হয়নি এবং যে ব্যবস্থায় কোনো সাম্যাবস্থা সৃষ্টি হয়নি, সে ব্যবস্থায় গণতন্ত্র অচল। অর্থহীন জনগণের অধিকার। সুশাসন অকার্যকর। স্বশাসনের দাবি কল্পকথার মতো। এসব জনপদে সমাজজীবনে শান্তির ললিত বাণী কখনো উচ্চারিত হয় না। কিন্তু এও উল্লেখযোগ্য, রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার বিন্যাস এমন হওয়া উচিত যে শাসন ক্ষমতার প্রাচুর্যের সঙ্গে শাসনকারীর দায়িত্বশীলতার সমন্বয় সাধিত হয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতার সঙ্গে স্বচ্ছতা এবং ক্ষমতা প্রয়োগের সঙ্গে জবাবদিহিতার সমন্বয় সাধিত হয়েছে। যে সমাজে ব্যক্তিপ্রাধান্যের পরিবর্তে আইনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ক্ষমতা প্রয়োগকারীদের ব্যক্তিগত আধিপত্য সীমিত হয়েছে, সেই সমাজে শান্তিপূর্ণ জীবনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে।
রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সুবিন্যস্ত ক্ষমতা প্রয়োগকারী রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রকৃতি হতে হবে উদারনৈতিক, সংকীর্ণমনা নয়। রাজনৈতিক নেতানেত্রীর ব্যক্তিত্ব হতে হবে সৃজনমুখী, কর্তৃত্বব্যঞ্জক নয়। হতে হবে সংবেদনশীল, কঠোর নয়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে জনগণের আমানত হিসেবে গণ্য করতে শিখতে হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিজেদের প্রভাব, বৈভব বা প্রতিপত্তি অর্জনের মাধ্যম হতে পারে না। কোথাও কোনো পর্যায়ে কোনো বিচ্যুতি ঘটলে তখনই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিত্যাগ করার মানসিকতা তাদের অর্জন করতে হবে। নিজেদের আইনের শাসনের অধীনে স্থাপন করে আত্মম্ভরিতার সব বাতায়ন বন্ধ করতে হবে। তাদের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চর্চা করে পারস্পরিক সহযোগিতার মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হতে হবে। সহিষ্ণুতার পাঠ গ্রহণ করতে হবে। রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতার স্থান রয়েছে, নেই কিন্তু বৈরিতার কোনো স্থান। রাজনীতির প্রতিটি স্তরে রাজনৈতিক নেতানেত্রীর রুচিশীলতা ও পরিশীলিত মানসিকতার প্রতিফলন হলো গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিপূর্ণ রূপ। প্রতিপক্ষ থাকবে, কিন্তু থাকবে না শত্রু। রাজনীতির ভাষা হবে শালীন এবং শোভন।
প্রতিবাদমুখর জনসমষ্টি হলো সমাজে শান্তিপূর্ণ জীবন গঠন ও সংরক্ষণের শ্রেষ্ঠতম মাধ্যম। সমাজে অপরাধ থাকবে, থাকবে দুর্নীতিও। থাকবে অসহিষ্ণুতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। সুষ্ঠু রাজনীতি কখনো বা ক্ষমতার রাজনীতিতে রূপান্তরিত হতে পারে। প্রতিবাদমুখর জনসমষ্টিই পারে এ সব কিছুকে সহনশীল পর্যায়ে নামিয়ে আনতে। সহনশীল পর্যায়ে নামিয়ে আনা কিন্তু সহজ নয়। এর প্রক্রিয়াও অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু যে জনপদের জনগণ এই কঠিন প্রক্রিয়াকে সহজ করার দায়িত্ব গ্রহণে ব্যর্থ হবে, তাদের জন্য স্বাধীনতা যেমন এক সোনার হরিণ, শান্তিপূর্ণ জীবনের আস্বাদও তেমনি এক রঙিন স্বপ্ন। এ লক্ষ্যে অর্থপূর্ণ প্রতিবাদ যেমন মূল্যবান, যুক্তিপূর্ণ প্রতিরোধও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। এরই মধ্য দিয়ে বিশ্বে অর্থপূর্ণ হয়েছে সুশাসন। অর্থপূর্ণ হয়েছে স্বশাসনও। জনগণই শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সুরম্য অট্টালিকার কারিগর। জনগণই এর প্রধানতম নিয়ামক। জনগণই সব ক্ষমতার মালিক। সমাজে শান্তিপূর্ণ জীবনের কারিগরও সাধারণ মানুষ। সব সংগ্রামে তারাই জয়ী হয়েছে। ইতিহাসের এই শিক্ষা আমাদের অঙ্গীকার হোক।
লেখক : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী

No comments

Powered by Blogger.