পবিত্র কোরআনের আলো-হাওয়ারি মুসলিমরা ঈসা (আ.)-এর কাছে আসমানি খাবারের আবদার জানিয়েছিল
১১১. ওয়া ইয আওহাইতু ইলাল হাওয়া-রিয়্যি-না আন আ-মিনূ বী ওয়া বিরাসূলী; ক্বা-লূ আ-মান্না ওয়াশ্হাদ্ বিআন্নানা মুছলিমূন। ১১২. ইয ক্বা-লাল হাওয়া-রিয়্যুঊনা ইয়া-ঈছাব্না মারইয়ামা হাল্ ইয়াছতাত্বীউ' রাব্বুকা আন ইয়ুনায্যিলা আ'লাইনা মা-য়িদাতাম্ মিনাচ্ছামা-য়ি; ক্বা-লাত্তাক্বুল্লা-হা ইন কুনতুম্ মু'মিনীন।
১১৩. ক্বা-লূ নুরীদু আন্না'কুলা মিনহা ওয়া তাত্বমায়িন্না ক্বুলূবুনা ওয়ানা'লামা আন ক্বাদ সাদাক্ব্তানা ওয়া নাকূনা আ'লাইহা মিনাশ্ শা-হিদীন।
[সুরা : আল মায়েদা, আয়াত : ১১১-১১৩]
অনুবাদ : ১১১. যখন আমি হওয়ারিদের (শ্বেতাঙ্গ) অন্তরে এ প্রেরণা দিয়েছিলাম যে তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসুলের প্রতি ইমান আনো। তারা বলল, হে প্রভু, আমরা তোমার ওপর ইমান আনলাম। তুমি সাক্ষ্য থেকো, আমরা তোমার অনুগত অর্থাৎ মুসলমান।
১১২. এরপর যখন এই হাওয়ারিরা বলল, হে ঈসা ইবনে মারইয়াম, আপনার প্রভু কি আকাশ থেকে খাবার সজ্জিত একটি খঞ্চা আমাদের জন্য পাঠিয়ে দিতে পারেন না? ঈসা জবাব দিলেন, তোমরা আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ হও, যদি সত্যিই মুমিন হয়ে থাকো। অর্থাৎ অবান্তর দাবি না তুলে দায়িত্বনিষ্ঠ কথা বলো।
১১৩. তারা তখন বলল, আমরা তো চাই যে আমরা সেই খঞ্চা থেকে খাবার খাব। এতে আমাদের মন পরিতৃপ্ত হবে। আর আমরা এটাও জানতে পারব যে আপনি আমাদের কাছে সত্য কথা বলেছেন, আর আমরা নিজেরাও এর ওপর সাক্ষী হব।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোতে হজরত ঈসা (আ.)-এর জামানায় হাওয়ারিদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। হাওয়ারি আসলে কারা সে ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ পাওয়া যায়। তবে হাওয়ারিরা বনিইসরাইল বংশোদ্ভূত ছিল না। কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, হাওয়ারি হলো তৎকালীন জেরুজালেমের 'ধোপা' সম্প্রদায়। আবার কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, তারা ছিল সাদা বর্ণের। হয়তো শ্বেতরোগবিশিষ্ট অথবা প্রাকৃতিকভাবে শ্বেত বর্ণের। হাওয়ারিদের ব্যাপারে কোরআন মজিদের অন্য জায়গায় আরো কিছু কথা বলা হয়েছে। সুরা আলে ইমরানের এক জায়গায় বলা হয়েছে, ঈসা মসিহ যখন বললেন, কে আছে আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্য করতে পারবে, তখন হাওয়ারিরা এগিয়ে এসে বলল, আমরা আল্লাহর পথে সাহায্য করব। এই সেই হাওয়ারিরা, যাদের ব্যাপারে এখানেও অনুরূপ কথা বলা হয়েছে। তবে এখানে তাদের ব্যাপারে আরো একটি চমৎকার তথ্য জানানো হয়েছে। হাওয়ারিরা নবী ঈসার কাছে আবদার জানিয়েছিল, আল্লাহ তায়ালা যেন তাদের কাছে সরাসরি আকাশ থেকে খাবার সাজানো দস্তরখানা পাঠান। তাদের এই অবাস্তব আবদারের জবাবে ঈসা (আ.) বলেছিলেন, তোমরা যদি সত্যিই মুমিন হয়ে থাকো তবে আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ হও। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য আকাশ থেকে খাবার সজ্জিত খঞ্চা বা দস্তরখানা পাঠাবেন_এটা আল্লাহর প্রকৃতি নয়। সুতরাং ইমানদার বান্দাদের উচিত হবে না আল্লাহর প্রকৃতিবহির্ভূত আবদার পেশ করা। হাওয়ারিদের আবদারের মর্মার্থ দুই রকম হতে পারে। প্রথমত, এর মর্মার্থ এই হতে পারে যে তাদের আবদারের উদ্দেশ্য ছিল তাদের খাদ্য লাভের একটা স্থায়ী আসমানি ব্যবস্থা যেন করা হয়। যাতে তারা অনায়াসলভ্য জীবনযাপন করতে পারে। দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে, তারা নবী ঈসা ও তাঁর প্রভুর কাছ থেকে মুজিজা বা অলৌকিক ক্ষমতা দেখতে চেয়েছিল। অর্থ যদি দ্বিতীয়টা হয়ে থাকে, তবে সেটাও ইমানদারদের জন্য শোভন নয়। কারণ ইমানদাররা আল্লাহ ও তাঁর নবীর পরীক্ষা নিতে চাইতে পারেন না। এটা দুর্বল ইমানের লক্ষণ। আর প্রথমটা যদি মর্মার্থ হয়ে থাকে, তবে সেটা নবী ঈসার অনুসারী হাওয়ারিদের নির্বুদ্ধিতা ও দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক। আকাশ থেকে খাবার আসবে আর সেই খাবার খেয়ে মানুষ পৃথিবীতে জীবনযাপন করবে_এটা আল্লাহর প্রকৃতির নিয়মানুগ নয়। আর এটা মানবজীবন বা মানব সভ্যতা বিকাশের ধারাও নয়। এটা পরনির্ভরশীলতার মনোভাব এবং আল্লাহর প্রকৃতিবিরুদ্ধ অবাস্তব আবদার।
১১৩ নম্বর আয়াতে হাওয়ারিদের আবদারের কিছু ব্যাখ্যা যা তারা নিজেরাই প্রদান করেছে, তা বর্ণনা করা হয়েছে। এই ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায়, তারা হয়তো মুজিজাই দেখতে চেয়েছিল।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
[সুরা : আল মায়েদা, আয়াত : ১১১-১১৩]
অনুবাদ : ১১১. যখন আমি হওয়ারিদের (শ্বেতাঙ্গ) অন্তরে এ প্রেরণা দিয়েছিলাম যে তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসুলের প্রতি ইমান আনো। তারা বলল, হে প্রভু, আমরা তোমার ওপর ইমান আনলাম। তুমি সাক্ষ্য থেকো, আমরা তোমার অনুগত অর্থাৎ মুসলমান।
১১২. এরপর যখন এই হাওয়ারিরা বলল, হে ঈসা ইবনে মারইয়াম, আপনার প্রভু কি আকাশ থেকে খাবার সজ্জিত একটি খঞ্চা আমাদের জন্য পাঠিয়ে দিতে পারেন না? ঈসা জবাব দিলেন, তোমরা আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ হও, যদি সত্যিই মুমিন হয়ে থাকো। অর্থাৎ অবান্তর দাবি না তুলে দায়িত্বনিষ্ঠ কথা বলো।
১১৩. তারা তখন বলল, আমরা তো চাই যে আমরা সেই খঞ্চা থেকে খাবার খাব। এতে আমাদের মন পরিতৃপ্ত হবে। আর আমরা এটাও জানতে পারব যে আপনি আমাদের কাছে সত্য কথা বলেছেন, আর আমরা নিজেরাও এর ওপর সাক্ষী হব।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোতে হজরত ঈসা (আ.)-এর জামানায় হাওয়ারিদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। হাওয়ারি আসলে কারা সে ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ পাওয়া যায়। তবে হাওয়ারিরা বনিইসরাইল বংশোদ্ভূত ছিল না। কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, হাওয়ারি হলো তৎকালীন জেরুজালেমের 'ধোপা' সম্প্রদায়। আবার কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, তারা ছিল সাদা বর্ণের। হয়তো শ্বেতরোগবিশিষ্ট অথবা প্রাকৃতিকভাবে শ্বেত বর্ণের। হাওয়ারিদের ব্যাপারে কোরআন মজিদের অন্য জায়গায় আরো কিছু কথা বলা হয়েছে। সুরা আলে ইমরানের এক জায়গায় বলা হয়েছে, ঈসা মসিহ যখন বললেন, কে আছে আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্য করতে পারবে, তখন হাওয়ারিরা এগিয়ে এসে বলল, আমরা আল্লাহর পথে সাহায্য করব। এই সেই হাওয়ারিরা, যাদের ব্যাপারে এখানেও অনুরূপ কথা বলা হয়েছে। তবে এখানে তাদের ব্যাপারে আরো একটি চমৎকার তথ্য জানানো হয়েছে। হাওয়ারিরা নবী ঈসার কাছে আবদার জানিয়েছিল, আল্লাহ তায়ালা যেন তাদের কাছে সরাসরি আকাশ থেকে খাবার সাজানো দস্তরখানা পাঠান। তাদের এই অবাস্তব আবদারের জবাবে ঈসা (আ.) বলেছিলেন, তোমরা যদি সত্যিই মুমিন হয়ে থাকো তবে আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ হও। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য আকাশ থেকে খাবার সজ্জিত খঞ্চা বা দস্তরখানা পাঠাবেন_এটা আল্লাহর প্রকৃতি নয়। সুতরাং ইমানদার বান্দাদের উচিত হবে না আল্লাহর প্রকৃতিবহির্ভূত আবদার পেশ করা। হাওয়ারিদের আবদারের মর্মার্থ দুই রকম হতে পারে। প্রথমত, এর মর্মার্থ এই হতে পারে যে তাদের আবদারের উদ্দেশ্য ছিল তাদের খাদ্য লাভের একটা স্থায়ী আসমানি ব্যবস্থা যেন করা হয়। যাতে তারা অনায়াসলভ্য জীবনযাপন করতে পারে। দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে, তারা নবী ঈসা ও তাঁর প্রভুর কাছ থেকে মুজিজা বা অলৌকিক ক্ষমতা দেখতে চেয়েছিল। অর্থ যদি দ্বিতীয়টা হয়ে থাকে, তবে সেটাও ইমানদারদের জন্য শোভন নয়। কারণ ইমানদাররা আল্লাহ ও তাঁর নবীর পরীক্ষা নিতে চাইতে পারেন না। এটা দুর্বল ইমানের লক্ষণ। আর প্রথমটা যদি মর্মার্থ হয়ে থাকে, তবে সেটা নবী ঈসার অনুসারী হাওয়ারিদের নির্বুদ্ধিতা ও দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক। আকাশ থেকে খাবার আসবে আর সেই খাবার খেয়ে মানুষ পৃথিবীতে জীবনযাপন করবে_এটা আল্লাহর প্রকৃতির নিয়মানুগ নয়। আর এটা মানবজীবন বা মানব সভ্যতা বিকাশের ধারাও নয়। এটা পরনির্ভরশীলতার মনোভাব এবং আল্লাহর প্রকৃতিবিরুদ্ধ অবাস্তব আবদার।
১১৩ নম্বর আয়াতে হাওয়ারিদের আবদারের কিছু ব্যাখ্যা যা তারা নিজেরাই প্রদান করেছে, তা বর্ণনা করা হয়েছে। এই ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায়, তারা হয়তো মুজিজাই দেখতে চেয়েছিল।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments