ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা কমেছে by একরামুল হক ও মাসুদ মিলাদ

নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলার হার কমেছে। গত মাসে কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের আমদানি বেশি হওয়ায় বাজারে আপাতত সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে না। তবে ঋণপত্র খোলার হার কমায় দুই-আড়াই মাস পর সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা কাটছে না।


চাল ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় গম, চিনি, ভোজ্যতেল, ডালসহ বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্য আমদানিনির্ভর। এসব পণ্যের দাম নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারদর এবং আমদানি বা সরবরাহের ওপর।
বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গম, চিনি, ভোজ্যতেল, ডালসহ সাত ধরনের ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে গত অক্টোবরে ১১ কোটি ১৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮৪ ডলারের ঋণপত্র খোলেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পরের মাসে ঋণপত্র খোলা হয় আট কোটি ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৫৭০ ডলারের। ডিসেম্বরে খোলা হয় আট কোটি ৭৯ লাখ ৮৬ হাজার ৪৫২ ডলারের ঋণপত্র। জানুয়ারি মাসে ডলারের অত্যধিক সংকটের কারণে ঋণপত্র খোলার হার আরও কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ডলারের অপ্রতুলতা, ব্যাংকের তারল্যসংকটসহ নানা কারণে কয়েকটি পণ্য আমদানি কিছুটা কমে গেছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিকারকদের বেশির ভাগ চট্টগ্রামের। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঋণপত্রের হিসাবে দেখা যায়, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে চিনি আমদানির কোনো ঋণপত্র খোলা হয়নি। অক্টোবরে হয়েছে মাত্র ৭২ টনের। ডিসেম্বরে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ৩৮ হাজার ৮২৫ টন। জানুয়ারি মাসে চারটি জাহাজে এক লাখ ৪৭ টন চিনি এসেছে।
ব্যবসায়ীদের অভিমত, প্রতি মাসে চিনির চাহিদা সোয়া লাখ টন। এ হিসাবে নতুন করে ঋণপত্র খোলা না হলে চিনির সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভোজ্যতেলের মজুদও এখন কম। কাস্টম হাউসের হিসাবে দেখা গেছে, গত বুধবার কাস্টম হাউস নিয়ন্ত্রিত ভোজ্যতেলের ছয়টি সংরক্ষণাগারে ভোজ্যতেলের মজুদ রয়েছে প্রায় ৭১ হাজার ১৬২ টন। প্রতি মাসে সোয়া লাখ টনের চাহিদা হিসাব করে সাধারণভাবে দুই মাসের আপৎকালীন মজুদ থাকা উচিত বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
কাস্টম হাউসের হিসেবে দেখা যায়, গত ১৬ জানুয়ারি ছয়টি সংরক্ষণাগারে ভোজ্যতেলের মজুদ ছিল প্রায় ৫৭ হাজার টন। এস আলম, নূরজাহান গ্রুপসহ কয়েকটি কোম্পানির আমদানি করা ভোজ্যতেল গত জানুয়ারি মাসে বন্দরে এসে পৌঁছায়। তবে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ঋণপত্র খোলার হার কম, যেসব পণ্য আগামী এক মাসে বন্দরে এসে পৌঁছাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে গত নভেম্বর মাসে ২৬ হাজার ৩৬১ টন ভোজ্যতেলের ঋণপত্র খোলা হয়। আর গত ডিসেম্বরে খোলা হয় ৩৩ হাজার ৭৬০ টনের জন্য ঋণপত্র।
চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি মংলা বন্দর দিয়েও গম আমদানি হয়। খাদ্য বিভাগের হিসাবে, চলতি অর্থবছরের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি খাতে ১০ লাখ ৬২ হাজার টন গম আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময় পর্যন্ত আমদানি হয়েছিল সাড়ে ১৮ লাখ টন।
আমদানি কমে যাওয়ায় গমের মজুদও কমে গেছে। গত ৩১ জানুয়ারি সরকারের কাছে গমের মজুদ ছিল দুই লাখ ৮৭ হাজার টন। গত বছরের একই সময়ে মজুদ ছিল তিন লাখ ৪৪ হাজার টন। ব্যবসায়ীদের হিসাবে, প্রতি মাসে গমের চাহিদা আড়াই থেকে পৌনে তিন লাখ টন।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে গম আমদানির ঋণপত্রে দেখা যায়, নভেম্বরে এক লাখ ১৬ হাজার টন এবং ডিসেম্বরে এক লাখ ১০ হাজার টন গম আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়।

No comments

Powered by Blogger.