আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যা আছে
‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইশতেহারে ২১ দফা অঙ্গীকার করেছে
আওয়ামী লীগ। গ্রামভিত্তিক উন্নয়ন তথা গ্রামে আধুনিক সুবিধার উপস্থিতি,
শিল্প উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, জলবায়ু পরিবর্তন ও
সুরক্ষা, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণসহ বিভিন্ন খাতে আগামী ৫ বছরের লক্ষ্য ও
পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে ইশতেহারে। মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির সামনে দলের নির্বাচনী
ইশতেহার তুলে ধরেন। ইশতেহারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরা হলো।
গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ: ইশতেহারে এর ১০টি সাফল্য ও অর্জনের কথা তুলে ধরে লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চেতনাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হবে এবং সংবিধান হবে রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বোচ্চ দলিল।
আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা: প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় ও সাহায্য-সহায়তা লাভের সুযোগ-সুবিধা অবারিত করা হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। সর্বজনীন মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেকোনও প্রচেষ্টা প্রতিহত করার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হবে। মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন: একটি আধুনিক, প্রযুক্তি নির্ভর, দক্ষ দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত থাকবে। নিশ্চিত করা হবে প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, ন্যায়পরায়ণতা এবং সেবাপরায়ণতা।
গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ: ইশতেহারে এর ১০টি সাফল্য ও অর্জনের কথা তুলে ধরে লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চেতনাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হবে এবং সংবিধান হবে রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বোচ্চ দলিল।
আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা: প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় ও সাহায্য-সহায়তা লাভের সুযোগ-সুবিধা অবারিত করা হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। সর্বজনীন মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেকোনও প্রচেষ্টা প্রতিহত করার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হবে। মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন: একটি আধুনিক, প্রযুক্তি নির্ভর, দক্ষ দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত থাকবে। নিশ্চিত করা হবে প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, ন্যায়পরায়ণতা এবং সেবাপরায়ণতা।
প্রশাসনের দায়িত্ব হবে নির্ধারিত নীতিমালা ও নির্বাহী
নির্দেশাবলি বাস্তবায়ন। সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা,
দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সর্বপ্রকার হয়রানির অবসান ঘটানোর কাজ
অব্যাহত থাকবে। বিশেষভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নানা স্তর কঠোরভাবে সংকুচিত
করা হবে। নিয়মানুবর্তী এবং জনগণের সেবক হিসেবে প্রশাসনকে গড়ে তোলার কাজ
অগ্রসর করে নেয়া হবে।
জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলা: আগামী পাঁচ বছরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নিয়োগ করা হবে। সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কারের কাজ আগামীতে অব্যাহত থাকবে। পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার কাজ চলমান থাকবে।
সেবা প্রদানের জন্য দ্রুত সাড়াদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যানবাহন-সরঞ্জামাদি সরবরাহ, সন্ত্রাস ও সাইবার অপরাধ দমনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, প্রয়োজনীয় ভূমি ও অবকাঠামোর সংস্থান, প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সদস্যদের কল্যাণমূলক কার্যের পরিধি বিস্তারে কৌশলগত পরিকল্পনার আলোকে বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ: দুর্নীতি দমন কমিশনকে কর্মপরিবেশ ও দক্ষতার দিক থেকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করা হবে। সেক্ষেত্রে দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় এবং প্রায়োগিক ব্যবহারে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ ও তদারকি ভবিষ্যতে আরো জোরদার করা হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ জোরদার করা হবে। ঘুষ, অনোপার্জিত আয়, কালো টাকা, চাঁদাবাজি, ঋণখেলাপি, টেন্ডারবাজি ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সামপ্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূল: ইশতেহারে লক্ষ্য ও পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- আগামীতে জঙ্গিবাদ, সামপ্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি সরকারের দৃঢ় অবস্থান থাকবে। সন্ত্রাসী-গডফাদারদের এবং তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার এবং বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখল, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ও চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।
স্থানীয় সরকার, জনগণের ক্ষমতায়ন: সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থানকে বিবেচনায় নিয়ে জেলাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা হবে। বিভিন্ন স্তরে স্থানীয় সরকারের জন্য বাজেট প্রণয়ন করা হবে। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন সুনির্দিষ্ট করা হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের উপযোগী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। নগর ও শহরে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং নগর ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও জনগণের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
সামষ্টিক অর্থনীতি : উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ থেকে স্বাধীনতার ৭০ বছর ২০৪১। বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ শাসনামলে উন্নয়নের সূচকগুলোর বিস্ময়কর অগ্রগতি এবং আপামর মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নতি গণমনে আত্মবিশ্বাস ও সাহস এমন পর্যায়ে উন্নীত করেছে যে, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশে রূপান্তর সম্ভব। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর লক্ষ্য অর্জন করতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে স্বাধীনতার ৭০ বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা, সুদূরপ্রসারী কৌশল ও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এই পরিকল্পনায় অঙ্গীকার অনুয়ায়ী ২০১৯-২৩ সময়কালের লক্ষ্যমাত্রা ও কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রাকে এমনভাবে সমন্বয় করা হবে, যাতে দেশ ধারাবাহিকভাবে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য অভিমুখে অগ্রসর হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ পালনকালে হবে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হবে ৫ হাজার ৪৭৯ ডলারেরও বেশি। এই পরিকল্পনায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সার্বিক দারিদ্র্যের হার শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।
অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ প্রকল্প (মেগা প্রজেক্ট): অবকাঠামো রূপান্তরের লক্ষ্যে বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরিকল্পনা অব্যাহত রাখা হবে। পদ্মা রেলসেতু সংযোগ এবং কক্সবাজার-দোহাজারী-রামু-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ত্বরান্বিত করা হবে। মাতারবাড়ী কয়লা বন্দর, ভোলা গ্যাস পাইপলাইন ও উপকূলীয় অঞ্চলে একটি পেট্রোকেমিক্যালস কারখানা স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
‘আমার গ্রাম, আমার শহর’: উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সমপ্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধাদি দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ্রামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আরো বাড়ানো ও নির্ভরযোগ্য করার লক্ষ্যে গ্রুপভিত্তিতে বায়োগ্যাস প্লান্ট ও সৌরশক্তি প্যানেল বসানোর উৎসাহ ও সহায়তা দেয়া হবে।
গ্রাম পর্যায়ে কৃষিযন্ত্র সেবাকেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সমপ্রসারণ করা হবে এবং এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান করা হবে। অকৃষি খাতের এসব সেবার পাশাপাশি হাল্কা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।
প্রশাসন, নীতি ও বাজেট প্রণয়ন: একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় যুবনীতি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। তরুণদের কল্যাণ ও উন্নয়ন কাজে প্রশাসনিক গতি আনতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় গঠন করা হবে পৃথক যুব বিভাগ। জাতীয় বাজেটে বাড়ানো হবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বরাদ্দ। জেন্ডার বাজেটের আলোকে প্রণয়ন করা হবে বার্ষিক যুব বাজেট। তরুণদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করার জন্য গঠন করা হবে যুব মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘যুব গবেষণা কেন্দ্র’।
শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি
স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অধিকতর বিনিয়োগ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অগ্রাধিকার পাবে। তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রসারিত করা হবে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি এই কেন্দ্রগুলোকে পর্যায়ক্রমে ‘তরুণ কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দুটি নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। ‘কর্মঠ প্রকল্প’র অধীনে ‘স্বল্প শিক্ষিত/স্বল্প দক্ষ/অদক্ষ’ শ্রেণির তরুণদের শ্রমঘন, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উপযোগী জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ‘সুদক্ষ প্রকল্প’র অধীনে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে, তা দূর করতে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চশিক্ষিত তরুণদের তথ্য সংবলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রয়োজন ও তরুণদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করার আহ্বান জানাতে পারবে। কর্মসংস্থানে কৃষি, শিল্প ও সেবার অংশ যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ৪৫ শতাংশে পরিবর্তন করা হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এছাড়া উক্ত সময়ে নতুনভাবে ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে।
নারীর ক্ষমতায়ন: ২০২০ সাল নাগাদ উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষায় নারী-পুরুষ শিক্ষার্থীর অনুপাত বর্তমানের ৭০ থেকে ১০০ শতাংশে বৃদ্ধি করা হবে। প্রশাসন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে নারীর অধিক সংখ্যায় নিয়োগের নীতি আরো বৃদ্ধি করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে তাদের জন্য আলাদা ব্যাংকিং সুবিধা, ঋণ সুবিধা, কারিগরি সুবিধা ও সুপারিশসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ‘জয়িতা’ ফাউন্ডেশন সম্প্রসারণের মাধ্যমে নারীদের সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ সম্প্রসারণ করা হবে। নারীদের পুরুষের সমান মজুরির নিশ্চয়তা দেয়া এবং গ্রামীণ নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও সকল ক্ষেত্রে নারীদের কর্মপরিবেশ উন্নত করা হবে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।
দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস: বর্তমানে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ৪ কোটি ৯২ লাখ লোক বিভিন্ন প্রকার আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছে; আগামী পাঁচ বছরে এই খাতে বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হবে। দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি ও ভবঘুরেপনা সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করা হবে। দারিদ্র্যসীমা ও চরম দারিদ্র্যের হার যথক্রমে ১২.৩ ও ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে দরিদ্র জনসংখ্যা ২.২ কোটির নিচে নামানো হবে। প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজনের নিয়মিত রোজগার নিশ্চিত করে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য হাসিল করা হবে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের মাধ্যমে পল্লি জনপদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হবে। পিকেএসএফ-এর ৮ মিলিয়ন ঋণ গ্রহীতার মধ্যে ৯১ শতাংশ নারী। সকল ক্ষুদ্র ঋণে নারীদের অগ্রাধিকার প্রদান অব্যাহত রাখা হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিধি আরো বৃদ্ধি করে সবার জন্য বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
বৈষম্য হ্রাস: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- বৈষম্য দূরীকরণে গৃহীত পরিকল্পনা ও কর্মসূচির পরিধি অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করে জোরদার করা হবে।
কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি : খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে নিশ্চয়তা: সবার জন্য পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্যের জোগান দেয়ার লক্ষ্যে দ্রুত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সফল ধারা অব্যাহত রাখা হবে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সময়মতো মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণের ওপর ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। কৃষিতে শ্রমিক সংকট লাঘবের জন্য সহজে ব্যবহার্য ও টেকসই কৃষি যন্ত্রপাতি সুলভে সহজপ্রাপ্য করা হবে। সহজ শর্তে সময়মতো কৃষি ঋণ, বিশেষ করে বর্গাচাষিদের জন্য জামানতবিহীন কৃষি ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। মহিলা কৃষকদের জন্য গৃহাঙ্গন ও মাঠে ফসল চাষের জন্য কৃষি ঋণ আরো সহজপ্রাপ্য করা হবে। খাদ্যশস্যের পাশাপাশি আলু, শাক-সবজি, তৈলবীজ, মসলা, নানা জাতীয় ফলমূল, ফুল, লতাপাতা-গুল্ম, ঔষধি ও ফসল উৎপাদনে বর্তমানে প্রদত্ত সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে। এ লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করা হবে। স্থানীয় পর্যায়ে কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন, ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষি পণ্যের দক্ষ সাপ্লাই চেন/ভ্যালু চেইন গড়ে তোলা হবে। সে-সঙ্গে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। কৃষি গবেষণায় বাজেট বরাদ্দ ইতিমধ্যে বাড়ানো হয়েছে এবং কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করা হবে। বিশেষ করে জীবপ্রযুক্তি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ন্যানো প্রযুক্তি, সংরক্ষণশীল ও সুনির্দিষ্ট কৃষি, হাইব্রিডাইজেশন, জিএম ফুড ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ইতিমধ্যে পাট ও ইলিশ মাছের জেনম আবিষ্কারের ফলাফলকে অধিকতর উৎপাদনশীল ও লাভজনক প্রযুক্তি উদ্ভাবনে উৎসাহ ও সহযোগিতা দেয়া হবে। উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় অবকাঠামো, কৃষক সংগঠন (এফএফএস), বিপণন সংগঠন, সমবায় সমিতি ও কৃষি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করা হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ: ২০২৩-এর মধ্যে হাঁস-মুরগির সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রাণী খাদ্য, গবাদিপশুর ঔষধপত্র ও চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস ও সহজপ্রাপ্য করার ওপর জোর দেয়া হবে। সে-সঙ্গে এগুলোর জন্য যাতে ভালো দাম পাওয়া যায়, তার জন্য বাজার-ব্যবস্থা ও বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধার আরো উন্নয়ন করা হবে।
ছোট ও মাঝারি আকারের দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামার প্রতিষ্ঠা এবং মৎস্য চাষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনমতো ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতি-সহায়তা বৃদ্ধি করে তা অব্যাহত রাখা হবে। পুকুরে মাছ চাষ ও যেখানে সম্ভব ধানক্ষেতে মাছ চাষের আরো প্রসারের জন্য উন্নত জাতের পোনা, খাবার, রোগব্যাধির চিকিৎসা, পুঁজিসংস্থান ও সুলভে বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান অব্যাহত রাখা হবে। মৎস্য খাতের উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণার ব্যাপক মানোন্নয়ন, কৃষকদের সম্পৃক্ত করে মাছ চাষের ব্যবস্থাপনাগত উন্নতি সাধন ও ধৃত মাছের অপচয় ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সার্বিক কৃষি খাতে প্রাণিসম্পদ উপখাতের অবদান ১৪.৩১ শতাংশ। এটাকে আরো বৃদ্ধি করা হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি: ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং প্রায় ২৩,০০০ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে সকলের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে প্রায় ৫ লাখ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
মহেশখালী ও মাতারবাড়ী অঞ্চলে একটি এবং পায়রাতে একটি করে ‘এনার্জি হাব’ গড়ে তোলা হবে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন আরো একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের কাজ শেষ হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে মোট ৫,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমপরিমাণ এলএনজি সরবরাহ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের অধিকতর কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। জ্বালানি সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে ভারতের শিলিগুড়ি টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ৩০৫ কিলোমিটার পাইপলাইন, গভীর সমুদ্র থেকে চট্টগ্রামে তেল আনার লক্ষ্যে পাইপ লাইনসহ ইতিপূর্বে গৃহীত অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে রিফাইনারি প্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। দেশের কয়লা সম্পদের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
শিল্প উন্নয়ন: রপ্তানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে পাটজাত পণ্যের রপ্তানিতে আর্থিক প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হবে। শিল্পায়নের প্রবৃদ্ধি অর্জনে সম্পদ ও উপাদান হিসেবে প্রযুক্তির উদ্ভাবনে দেশীয় গবেষণাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে গবেষণায় ব্যয় বৃদ্ধি করা হবে। শিল্প স্থাপনের বাধা বিশেষত, ভূমি ব্যবস্থাপনার জটিলতা দূর করা হবে। দেশে যেসব পণ্য উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে সেসব ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত প্রতিরক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেয়া হবে। কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতকে বিশেষ গুরুত্বসহকারে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, চামড়া, খেলনা, জুয়েলারি, আসবাবপত্র, পর্যটন- এসব খাত এই কর্মসূচির সুবিধা পাবে। ঔষধ শিল্প ও ঔষধের কাঁচামাল প্রস্তুতকারী অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট শিল্পকে উৎসাহ দেয়া হবে। ডব্লিউটিও অনুন্নত দেশের জন্য এপিআই শিল্পকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত বিবিধ রেয়াত দিয়েছে, যার সুফল গ্রহণের জন্য গৃহীত নীতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। পিপিপি আইন ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো সংস্কার করা হবে। বিডা (বিআইডিএ)-কে অধিকতর কার্যক্ষম করা হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো আনুমানিক অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করবে এবং প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করবে।
পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে সিঙ্গাপুরের আদলে শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। জেলা শহর ও মফস্বল শহরে স্থানীয় কাঁচামালভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের গুচ্ছ শিল্পাঞ্চল (ক্লাস্টার ইন্ডাস্ট্রি) গড়ে তোলা হবে। সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পকে গ্রামভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি গুচ্ছশিল্প কাঠামোর সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে বগি ও কোচ উৎপাদন করার উদ্যোগ নেয়া হবে। বিভাগীয় শহরে আইটি শিল্প পার্ক স্থাপন এবং এসব শিল্প পার্কে আগামী পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। শিল্পের ভিত্তি মজবুত এবং আধুনিকায়নে ভারী ও মৌলিক শিল্প স্থাপনে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, যাকে কেন্দ্র করে শিল্পনগরী গড়ে উঠবে। জ্ঞানসমৃদ্ধ সমাজে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পকে উৎসাহিত করা হবে।
শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করা হবে। নারী শ্রমিকদের জন্য চার মাসের বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। গার্মেন্ট শ্রমিকসহ সকল শ্রমিক, হতদরিদ্র এবং গ্রামীণ ভূমিহীন ক্ষেতমজুরদের জন্য বিশেষ বিবেচনায় নানা পদক্ষেপের সঙ্গে রেশনিংসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রবাসী কল্যাণ: বিভিন্ন দেশে আরো বেশিসংখ্যক প্রশিক্ষিত কর্মী প্রেরণের এবং তাদের শ্রমলব্ধ অর্থের আয়বর্ধক এবং লাভজনক বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণ সম্পর্কিত নীতি-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখা হবে। বিদেশে যাওয়ার সময় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হতে নমনীয় শর্তে ও সুদে এবং দেশে ফেরার পর স্থায়ী কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান সুনিশ্চিত করা হবে।
শিক্ষা: শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ও তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষা পাঠক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে- শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুসন্ধিৎসা, জ্ঞান আহরণ এবং দেশ ও জাতির অবিকৃত সত্য ইতিহাস জানার অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করা। শিক্ষার মান উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। ভাষা জ্ঞান ও গণিত জ্ঞানের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ভাষা ও গণিত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে নিরক্ষরতার অভিশাপমুক্ত করা হবে। প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। গত এক দশকে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ২০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ঝরে পড়ার হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। স্কুল ফিডিং সকল গ্রামে, আধা মফস্বল শহরে এবং শহরের নিম্নবিত্তের স্কুলসমূহে পর্যায়ক্রমে সার্বজনীন করা হবে।
প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগের একমাত্র মানদণ্ড হবে মেধা, যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকল সর্বতোভাবে বন্ধ করার জন্য গৃহীত ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহিত ও সহায়তা প্রদান করা হবে। এজন্য বাজেট বৃদ্ধি করা হবে। সকল জেলায় অন্তত একটি প্রাইভেট বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।
মাদরাসা শিক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে কর্মজীবনের প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদানের জন্য কারিকুলাম যুগোপযোগী করা হবে। নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় সকল বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। আধুনিক শিক্ষা-ব্যবস্থায়ও তাদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা হবে। সকল দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা পর্যন্ত সব স্তরের বই ছাপানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। প্রতিবন্ধীদেরও মানবসম্পদে পরিণত করা হবে।
শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা কল্যাণমুখী ও যুগোপযোগী উদ্যোগ সত্ত্বেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের বেতন গ্রেডসহ শিক্ষাখাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে বৈষম্য এখনো রয়ে গেছে, আগামী মেয়াদে তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ: দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা প্রাপ্তি উন্নত করা হবে। এক বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের ওপরে সবাইকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হবে। সকল বিভাগীয় শহরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হার্ট, ক্যানসার ও কিডনি চিকিৎসা-ব্যবস্থা চালু করা হবে।
প্রতিটি বিভাগীয় শহরে অন্তত ১০০ শয্যার স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যানসার ও কিডনি চিকিৎসা-ব্যবস্থা চালু করা হবে। সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং হাসপাতালগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রচলন করে স্বাস্থ্যসেবা-ব্যবস্থাকে আরো নির্ভুল ও জনবান্ধব করা হবে। অনলাইনে দেশ-বিদেশ থেকে বিশেষায়িত চিকিৎসকের সেবা পাওয়া যাবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর ভবনসহ সব সুবিধা পর্যায়ক্রমে আধুনিকীকরণ করা হবে। আয়ুর্বেদী, ইউনানী, দেশজ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও শিক্ষা-ব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং আধুনিকায়ন অব্যাহত রাখা হবে। গ্রামাঞ্চলের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি, সেবার মান বৃদ্ধি এবং উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে।
যোগাযোগ: মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ১৬,৩৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৯.২৪ কিলোমিটার বিস্তৃত ঢাকা পূর্ব-পশ্চিম এলিভেটেড হাইওয়ে নির্মাণ করা হবে। ঢাকাকে ঘিরে একটি এলিভেটেড রিংরোড এবং ইস্টার্ন বাইপাস নির্মাণেরও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে এবং এক্সপ্রেস রেলওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে যাতে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যায় সেজন্য বুলেট ট্রেন (দ্রুতগামী ট্রেন) চালু করা হবে। ক্রমে বুলেট ট্রেন সিলেট, রাজশাহী, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, খুলনা এবং কলকাতা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল বিমানবন্দরকে উন্নত করা হবে। ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ, নতুন রাডার স্থাপন ও জেট ফুয়েল সরবরাহ করার জন্য পাইপলাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হবে। কক্সবাজারে প্রতিষ্ঠা করা হবে সুপিরিয়র বিমান অবতরণে সক্ষম দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দর। বাগেরহাটে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত সম্পাদন করা হবে। ইতিমধ্যে ‘নিরাপদ সড়ক আইন-২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইনটি প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্ঘটনা ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আগামীতে সময়ের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নতুন ধারা পরিবর্তন-পরিবর্ধনের মাধ্যমে এটাকে আরো যুগোপযোগী ও কার্যকর করা হবে। নিরাপদ সড়কের জন্য লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করা, ফিটনেসবিহীন গাড়িকে পারমিট না দেয়া, চালকদের লাইসেন্স প্রদানে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা, সড়ক ও মহাসড়কগুলোকে ক্রমে সিসিটিভি-র আওতায় আনা এবং জনসাধারণকে সচেতন করা প্রভৃতি ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হবে। বেসরকারি বিমান পরিবহনকে আরো উৎসাহিত করা হবে। স্বল্প খরচে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের চলমান প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
রাজধানী ঢাকার জনপরিবহন সমস্যার সমাধান ও যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যে পাতাল রেল, মেট্রোরেল অথবা সার্কুলার রেলপথ এবং রাজধানীতে নাব্য ও প্রশস্ত নৌপথ নির্মাণ করা হবে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে উন্নত করে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যাতে আমাদের সীমান্তবর্তী ভারতের ৭টি প্রদেশ এবং নেপাল ও ভুটান এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে, বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল এবং বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক জোটের যোগাযোগ-ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।
নৌপথ ও বন্দর: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে-ব্যাপক খননের পরিকল্পনা হিসেবে আগামী মেয়াদে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হবে। আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোর সংযোগ স্থাপন করার মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি সুগম করা হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাণিজ্যকে সহজতর করার লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে নৌপথ বাণিজ্য আরো বাড়িয়ে একে নেপাল-ভুটান পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বে-টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে বন্দরের সক্ষমতা ৪ গুণ বৃদ্ধি পাবে। ঢাকার চারপাশের ৪টি নদী এবং খালগুলোকে দূষণ ও দখলমুক্ত করে খননের মাধ্যমে নাব্য ফিরিয়ে এনে নদীতীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির মাধ্যমে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি: ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ফাইভ-জি চালু করা হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, বিগ ডাটা, ব্লক চেইন, আইওটি-সহ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো হবে। ই-পাসপোর্ট এবং ই-ভিসা চালু করা হবে। শিক্ষাকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আর্থিক খাতের লেনদেনকে ডিজিটাল করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তির সফটওয়্যার, সেবা ও ডিজিটাল যন্ত্রের রপ্তানি ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এবং সাবমেরিন ক্যাবল-৩ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। সামরিক বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়ানো হবে। ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যবহারের মূল্য যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে।
সমুদ্র বিজয়: ব্লু-ইকোনমি-উন্নয়নের দিগন্ত উন্মোচন: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- আওয়ামী লীগ সরকার ইতিমধ্যে ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্রসম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আগামী মেয়াদে এই পরিকল্পনা অন্যতম অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়িত করা হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- বিশ্ব উষ্ণায়নের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ এলাকা থেকে মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সেই প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করার লক্ষ্যে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড’-এ বরাদ্দ আরো বাড়ানো হবে। উৎপাদনশীল বনের আয়তন ২০১৫ সালের ১৩.১৪ হতে ২০ শতাংশে উন্নীতকরণ, ঢাকা ও অন্যান্য বড় নগরে বায়ুর মান উন্নয়ন এবং বিশুদ্ধ বায়ু আইন প্রণয়ন করা; শিল্প বর্জ্যের শূন্য নির্গমন/নিক্ষেপণ প্রবর্ধন করা; জলাভূমি সংরক্ষণ আইন মেনে বিভিন্ন নগরের জলাভূমি পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা করা; উপকূল রেখাব্যাপী ৫০০ মিটার চওড়া স্থায়ী সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে। সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও লবণাক্ততা রোধ ও সুন্দরবনসহ অববাহিকা অঞ্চলের মিঠা পানি প্রাপ্তির লক্ষ্যে গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। দেশের বিস্তীর্ণ হাওর ও ভাটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। উন্নয়ন কার্যক্রমের সকল ক্ষেত্রে সবুজ প্রবৃদ্ধি কৌশল গ্রহণ করা হবে।
শিশু কল্যাণ: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- শিশুশ্রম বন্ধ করার লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সুদৃঢ় সামাজিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বৃত্তি ও নানাবিধ কর্মকাণ্ড উন্নত ও প্রসারিত করা হবে। শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার, প্রলোভন বা জোর করে জড়িত করা হবে না। শিশু নির্যাতন বিশেষ করে কন্যাশিশুদের প্রতি বৈষম্য, নির্যাতন বন্ধ ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। পথশিশুদের পুনর্বাসন ও নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশুদের জন্য শিশুসদন প্রতিষ্ঠা এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা উন্নত ও প্রসারিত করা হবে।
প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ কল্যাণ: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক) শিশুদের সুস্বাস্থ্য, শিক্ষা, মর্যাদা ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা হবে। প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, চলাফেরা, যোগাযোগ, চিকিৎসা সহজ করা এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রবীণ কল্যাণ: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- সামাজিক ‘নিরাপত্তা-বেষ্টনী কার্যক্রম-এ প্রবীণদের অন্তর্ভুক্তির বর্তমান সংখ্যা ও সহায়তার পরিমাণ সম্প্রসারণে বাস্তবতার আলোকে পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রবীণদের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রে আয় সৃষ্টিকারী কার্যক্রম গ্রহণ, প্রবীণদের বিষয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পাঠ্যবই-এ আলাদা অধ্যায় সংযোজন, যানবাহন এবং আবাসিক স্থাপনাগুলোতে প্রবীণদের জন্য আসন/পরিসর নির্ধারণ, তৃণমূল পর্যায়ে প্রবীণদের জেরিয়াট্রিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ এবং হাসপাতাল, বিমানবন্দর, বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে ওঠা-নামার ব্যবস্থা প্রবীণবান্ধব করে গড়ে তোলা হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- স্বাধীনতার স্বপ্ন ও মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং তাদের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, বিশেষত দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি, বার্ধক্যকালীন ভরণ-পোষণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ গৃহীত অন্যান্য ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। দেশের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা, ইতিহাস বিকৃতি রোধ এবং প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিতকরণ, শহিদদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।
সংস্কৃতি: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- বাঙালি সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশে আওয়ামী লীগ সরকারের অনুসৃত নীতি ও কর্মপরিকল্পনা অব্যাহত থাকবে। বাংলা ভাষা সাহিত্য, চারু ও কারুকলা, সংগীত, যাত্রা, নাটক, চলচ্চিত্র এবং সৃজনশীল প্রকাশনাসহ শিল্পের সব শাখার ক্রমাগত উৎকর্ষ সাধন ও চর্চার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো হবে।
ক্রীড়া: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- বিশ্ব ক্রিকেটে বর্তমানে বাংলাদেশের গৌরব জাগানো অবস্থান আরো সুদৃঢ় করার সঙ্গে সঙ্গে ফুটবল হকিসহ অন্যান্য খেলা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে। ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ সুবিধার
সম্প্রসারণে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে খেলাধুলা ও শরীর চর্চাকে শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায়: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- অর্পিত সম্পত্তি সংশোধনী আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে। সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জমি, জলাধার ও বন এলাকায় অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ভূমি কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। অনগ্রসর ও অনুন্নত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত ও চা-বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা এবং সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে। সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল প্রকার আইন ও অন্যান্য অন্যায় ব্যবস্থার অবসান করা হবে। ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অধিকারের স্বীকৃতি এবং তাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনধারার স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ ও তাদের সুষম উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- সাংবাদিকদের জন্য ফ্ল্যাট প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রস্তাবিত ২১তলা ভবন নির্মাণে সহায়তা প্রদান করা হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিকাশের ফলে এর অপব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে এক শ্রেণির মানুষ সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। গুজব শনাক্ত ও সত্য তথ্য প্রচারের মধ্যদিয়ে গুজব নিরসনে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা হবে। জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন গঠন করে সকল গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা রোধ ও জনগণের সত্য তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতায় সমৃদ্ধ সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যম উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করা হবে। তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে অধিকতর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চর্চায় সাংবাদিকদের উৎসাহিত করা এবং এ-বিষয়ে প্রয়োজনীয় ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন বিতরণে বৈষম্যমূলক নীতি, দলীয়করণ বন্ধ এবং সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে তার বিকাশে সহায়তা প্রদান করা হবে। গণমাধ্যমবান্ধব আইন করা হবে। সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কোনো আইনের অপপ্রয়োগ হবে না। পেশাদার সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য প্রচলিত উদ্যোগের পাশাপাশি নতুন উদ্যোগ নেয়া হবে।
প্রতিরক্ষা: নিরাপত্তা সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা সুরক্ষা: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী আধুনিকায়নের চলমান প্রক্রিয়া যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বতোভাবে অব্যাহত থাকবে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভ্যন্তরীণ স্বশাসন, শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা সমুন্নত রাখা হবে। জ্যেষ্ঠতা, মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করা হবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের শিক্ষা, চিকিৎসা, আবাসন ও অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধাসহ গৃহীত বহুমুখী কল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অধিকতর অংশগ্রহণের সুযোগ সমুন্নত রাখা ও বৃদ্ধি করার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কল্যাণের জন্য চলমান কাজ চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে।
পররাষ্ট্র: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- আন্তর্জাতিক যে কোনো বিরোধ শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। ভারতের সঙ্গে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন এবং দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। ভারত-ভুটান-নেপালের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও অভিন্ন নদীর অববাহিকাভিত্তিক যৌথ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডে জঙ্গিবাদ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো শক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় টাস্কফোর্স গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা হবে। রাশিয়া, চীন এবং আশিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক আরো জোরদার করা হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও কানাডাসহ উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক আরো জোরদার ও ব্যাপক বিস্তৃত করা হবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ বিশ্বের মুসলিম দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক এবং উন্নয়ন ও সহযোগিতা আরো জোরদার করা হবে।
এদেশগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন প্রভৃতি বিষয়ে বাংলাদেশের জোরালো ভূমিকা থাকবে। মুসলিম উম্মাহর সংহতি এবং ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) কাঠামোয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সহযোগিতা আরো জোরদার করা হবে। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি করা হবে। অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর এলাকার সঙ্গে অধিকতর যোগাযোগ ও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
রোহিঙ্গা সংকট: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে নিরাপদ সম্মানজনক ও স্থায়ীভাবে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে সফলভাবে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি সম্পন্ন করেছে। রোহিঙ্গাদের স্থায়ী প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করেছে।
এনজিও: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বশাসিতভাবে তাদের নিজস্ব বিধিমোতাবেক পরিচালিত হবে। দারিদ্র্য বিমোচন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান বিষয়ে নিজস্ব বিধি ও রীতি অনুযায়ী কাজ করার অধিকার অব্যাহত রাখা হবে। সরকার বিধিবদ্ধ এনজিও প্রতিষ্ঠানের অর্জন বা ব্যর্থতা মূল্যায়ন করবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান/বিভাগ স্থানীয় সরকারের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছামূলক সমন্বয় জোরদার করা হবে। অর্থায়নকারী অন্যান্য এনজিও-র সকল কার্যক্রম ও আয়-ব্যয়ের হিসাব স্বচ্ছ এবং স্থানীয় জনগণ ও সরকারি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এনজিও সংস্থা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে বাণিজ্যিক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলে অথবা শিল্প ও বাণিজ্যে ভূমিকা রাখতে গেলে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় পড়বে এবং এনজিও হিসেবে কোনো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাবে না। তাদের লভ্যাংশের যে অংশ জনসেবায় ব্যয় হবে সেক্ষেত্রে কর রেয়াতির ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলা: আগামী পাঁচ বছরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নিয়োগ করা হবে। সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কারের কাজ আগামীতে অব্যাহত থাকবে। পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার কাজ চলমান থাকবে।
সেবা প্রদানের জন্য দ্রুত সাড়াদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যানবাহন-সরঞ্জামাদি সরবরাহ, সন্ত্রাস ও সাইবার অপরাধ দমনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, প্রয়োজনীয় ভূমি ও অবকাঠামোর সংস্থান, প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সদস্যদের কল্যাণমূলক কার্যের পরিধি বিস্তারে কৌশলগত পরিকল্পনার আলোকে বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ: দুর্নীতি দমন কমিশনকে কর্মপরিবেশ ও দক্ষতার দিক থেকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করা হবে। সেক্ষেত্রে দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় এবং প্রায়োগিক ব্যবহারে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ ও তদারকি ভবিষ্যতে আরো জোরদার করা হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ জোরদার করা হবে। ঘুষ, অনোপার্জিত আয়, কালো টাকা, চাঁদাবাজি, ঋণখেলাপি, টেন্ডারবাজি ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সামপ্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূল: ইশতেহারে লক্ষ্য ও পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- আগামীতে জঙ্গিবাদ, সামপ্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি সরকারের দৃঢ় অবস্থান থাকবে। সন্ত্রাসী-গডফাদারদের এবং তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার এবং বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখল, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ও চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।
স্থানীয় সরকার, জনগণের ক্ষমতায়ন: সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থানকে বিবেচনায় নিয়ে জেলাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা হবে। বিভিন্ন স্তরে স্থানীয় সরকারের জন্য বাজেট প্রণয়ন করা হবে। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন সুনির্দিষ্ট করা হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের উপযোগী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। নগর ও শহরে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং নগর ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও জনগণের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
সামষ্টিক অর্থনীতি : উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ থেকে স্বাধীনতার ৭০ বছর ২০৪১। বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ শাসনামলে উন্নয়নের সূচকগুলোর বিস্ময়কর অগ্রগতি এবং আপামর মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নতি গণমনে আত্মবিশ্বাস ও সাহস এমন পর্যায়ে উন্নীত করেছে যে, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশে রূপান্তর সম্ভব। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর লক্ষ্য অর্জন করতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে স্বাধীনতার ৭০ বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা, সুদূরপ্রসারী কৌশল ও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এই পরিকল্পনায় অঙ্গীকার অনুয়ায়ী ২০১৯-২৩ সময়কালের লক্ষ্যমাত্রা ও কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রাকে এমনভাবে সমন্বয় করা হবে, যাতে দেশ ধারাবাহিকভাবে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য অভিমুখে অগ্রসর হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ পালনকালে হবে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হবে ৫ হাজার ৪৭৯ ডলারেরও বেশি। এই পরিকল্পনায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সার্বিক দারিদ্র্যের হার শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।
অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ প্রকল্প (মেগা প্রজেক্ট): অবকাঠামো রূপান্তরের লক্ষ্যে বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরিকল্পনা অব্যাহত রাখা হবে। পদ্মা রেলসেতু সংযোগ এবং কক্সবাজার-দোহাজারী-রামু-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ত্বরান্বিত করা হবে। মাতারবাড়ী কয়লা বন্দর, ভোলা গ্যাস পাইপলাইন ও উপকূলীয় অঞ্চলে একটি পেট্রোকেমিক্যালস কারখানা স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
‘আমার গ্রাম, আমার শহর’: উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সমপ্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধাদি দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ্রামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আরো বাড়ানো ও নির্ভরযোগ্য করার লক্ষ্যে গ্রুপভিত্তিতে বায়োগ্যাস প্লান্ট ও সৌরশক্তি প্যানেল বসানোর উৎসাহ ও সহায়তা দেয়া হবে।
গ্রাম পর্যায়ে কৃষিযন্ত্র সেবাকেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সমপ্রসারণ করা হবে এবং এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান করা হবে। অকৃষি খাতের এসব সেবার পাশাপাশি হাল্কা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।
প্রশাসন, নীতি ও বাজেট প্রণয়ন: একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় যুবনীতি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। তরুণদের কল্যাণ ও উন্নয়ন কাজে প্রশাসনিক গতি আনতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় গঠন করা হবে পৃথক যুব বিভাগ। জাতীয় বাজেটে বাড়ানো হবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বরাদ্দ। জেন্ডার বাজেটের আলোকে প্রণয়ন করা হবে বার্ষিক যুব বাজেট। তরুণদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করার জন্য গঠন করা হবে যুব মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘যুব গবেষণা কেন্দ্র’।
শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি
স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অধিকতর বিনিয়োগ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অগ্রাধিকার পাবে। তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রসারিত করা হবে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি এই কেন্দ্রগুলোকে পর্যায়ক্রমে ‘তরুণ কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দুটি নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। ‘কর্মঠ প্রকল্প’র অধীনে ‘স্বল্প শিক্ষিত/স্বল্প দক্ষ/অদক্ষ’ শ্রেণির তরুণদের শ্রমঘন, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উপযোগী জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ‘সুদক্ষ প্রকল্প’র অধীনে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে, তা দূর করতে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চশিক্ষিত তরুণদের তথ্য সংবলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রয়োজন ও তরুণদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করার আহ্বান জানাতে পারবে। কর্মসংস্থানে কৃষি, শিল্প ও সেবার অংশ যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ৪৫ শতাংশে পরিবর্তন করা হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এছাড়া উক্ত সময়ে নতুনভাবে ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে।
নারীর ক্ষমতায়ন: ২০২০ সাল নাগাদ উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষায় নারী-পুরুষ শিক্ষার্থীর অনুপাত বর্তমানের ৭০ থেকে ১০০ শতাংশে বৃদ্ধি করা হবে। প্রশাসন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে নারীর অধিক সংখ্যায় নিয়োগের নীতি আরো বৃদ্ধি করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে তাদের জন্য আলাদা ব্যাংকিং সুবিধা, ঋণ সুবিধা, কারিগরি সুবিধা ও সুপারিশসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ‘জয়িতা’ ফাউন্ডেশন সম্প্রসারণের মাধ্যমে নারীদের সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ সম্প্রসারণ করা হবে। নারীদের পুরুষের সমান মজুরির নিশ্চয়তা দেয়া এবং গ্রামীণ নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও সকল ক্ষেত্রে নারীদের কর্মপরিবেশ উন্নত করা হবে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।
দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস: বর্তমানে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ৪ কোটি ৯২ লাখ লোক বিভিন্ন প্রকার আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছে; আগামী পাঁচ বছরে এই খাতে বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হবে। দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি ও ভবঘুরেপনা সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করা হবে। দারিদ্র্যসীমা ও চরম দারিদ্র্যের হার যথক্রমে ১২.৩ ও ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে দরিদ্র জনসংখ্যা ২.২ কোটির নিচে নামানো হবে। প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজনের নিয়মিত রোজগার নিশ্চিত করে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য হাসিল করা হবে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের মাধ্যমে পল্লি জনপদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হবে। পিকেএসএফ-এর ৮ মিলিয়ন ঋণ গ্রহীতার মধ্যে ৯১ শতাংশ নারী। সকল ক্ষুদ্র ঋণে নারীদের অগ্রাধিকার প্রদান অব্যাহত রাখা হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিধি আরো বৃদ্ধি করে সবার জন্য বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
বৈষম্য হ্রাস: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- বৈষম্য দূরীকরণে গৃহীত পরিকল্পনা ও কর্মসূচির পরিধি অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করে জোরদার করা হবে।
কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি : খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে নিশ্চয়তা: সবার জন্য পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্যের জোগান দেয়ার লক্ষ্যে দ্রুত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সফল ধারা অব্যাহত রাখা হবে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সময়মতো মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণের ওপর ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। কৃষিতে শ্রমিক সংকট লাঘবের জন্য সহজে ব্যবহার্য ও টেকসই কৃষি যন্ত্রপাতি সুলভে সহজপ্রাপ্য করা হবে। সহজ শর্তে সময়মতো কৃষি ঋণ, বিশেষ করে বর্গাচাষিদের জন্য জামানতবিহীন কৃষি ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। মহিলা কৃষকদের জন্য গৃহাঙ্গন ও মাঠে ফসল চাষের জন্য কৃষি ঋণ আরো সহজপ্রাপ্য করা হবে। খাদ্যশস্যের পাশাপাশি আলু, শাক-সবজি, তৈলবীজ, মসলা, নানা জাতীয় ফলমূল, ফুল, লতাপাতা-গুল্ম, ঔষধি ও ফসল উৎপাদনে বর্তমানে প্রদত্ত সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে। এ লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করা হবে। স্থানীয় পর্যায়ে কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন, ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষি পণ্যের দক্ষ সাপ্লাই চেন/ভ্যালু চেইন গড়ে তোলা হবে। সে-সঙ্গে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। কৃষি গবেষণায় বাজেট বরাদ্দ ইতিমধ্যে বাড়ানো হয়েছে এবং কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করা হবে। বিশেষ করে জীবপ্রযুক্তি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ন্যানো প্রযুক্তি, সংরক্ষণশীল ও সুনির্দিষ্ট কৃষি, হাইব্রিডাইজেশন, জিএম ফুড ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ইতিমধ্যে পাট ও ইলিশ মাছের জেনম আবিষ্কারের ফলাফলকে অধিকতর উৎপাদনশীল ও লাভজনক প্রযুক্তি উদ্ভাবনে উৎসাহ ও সহযোগিতা দেয়া হবে। উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় অবকাঠামো, কৃষক সংগঠন (এফএফএস), বিপণন সংগঠন, সমবায় সমিতি ও কৃষি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করা হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ: ২০২৩-এর মধ্যে হাঁস-মুরগির সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রাণী খাদ্য, গবাদিপশুর ঔষধপত্র ও চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস ও সহজপ্রাপ্য করার ওপর জোর দেয়া হবে। সে-সঙ্গে এগুলোর জন্য যাতে ভালো দাম পাওয়া যায়, তার জন্য বাজার-ব্যবস্থা ও বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধার আরো উন্নয়ন করা হবে।
ছোট ও মাঝারি আকারের দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামার প্রতিষ্ঠা এবং মৎস্য চাষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনমতো ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতি-সহায়তা বৃদ্ধি করে তা অব্যাহত রাখা হবে। পুকুরে মাছ চাষ ও যেখানে সম্ভব ধানক্ষেতে মাছ চাষের আরো প্রসারের জন্য উন্নত জাতের পোনা, খাবার, রোগব্যাধির চিকিৎসা, পুঁজিসংস্থান ও সুলভে বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান অব্যাহত রাখা হবে। মৎস্য খাতের উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণার ব্যাপক মানোন্নয়ন, কৃষকদের সম্পৃক্ত করে মাছ চাষের ব্যবস্থাপনাগত উন্নতি সাধন ও ধৃত মাছের অপচয় ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সার্বিক কৃষি খাতে প্রাণিসম্পদ উপখাতের অবদান ১৪.৩১ শতাংশ। এটাকে আরো বৃদ্ধি করা হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি: ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং প্রায় ২৩,০০০ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে সকলের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে প্রায় ৫ লাখ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
মহেশখালী ও মাতারবাড়ী অঞ্চলে একটি এবং পায়রাতে একটি করে ‘এনার্জি হাব’ গড়ে তোলা হবে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন আরো একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের কাজ শেষ হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে মোট ৫,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমপরিমাণ এলএনজি সরবরাহ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের অধিকতর কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। জ্বালানি সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে ভারতের শিলিগুড়ি টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ৩০৫ কিলোমিটার পাইপলাইন, গভীর সমুদ্র থেকে চট্টগ্রামে তেল আনার লক্ষ্যে পাইপ লাইনসহ ইতিপূর্বে গৃহীত অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে রিফাইনারি প্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। দেশের কয়লা সম্পদের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
শিল্প উন্নয়ন: রপ্তানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে পাটজাত পণ্যের রপ্তানিতে আর্থিক প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হবে। শিল্পায়নের প্রবৃদ্ধি অর্জনে সম্পদ ও উপাদান হিসেবে প্রযুক্তির উদ্ভাবনে দেশীয় গবেষণাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে গবেষণায় ব্যয় বৃদ্ধি করা হবে। শিল্প স্থাপনের বাধা বিশেষত, ভূমি ব্যবস্থাপনার জটিলতা দূর করা হবে। দেশে যেসব পণ্য উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে সেসব ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত প্রতিরক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেয়া হবে। কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতকে বিশেষ গুরুত্বসহকারে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, চামড়া, খেলনা, জুয়েলারি, আসবাবপত্র, পর্যটন- এসব খাত এই কর্মসূচির সুবিধা পাবে। ঔষধ শিল্প ও ঔষধের কাঁচামাল প্রস্তুতকারী অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট শিল্পকে উৎসাহ দেয়া হবে। ডব্লিউটিও অনুন্নত দেশের জন্য এপিআই শিল্পকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত বিবিধ রেয়াত দিয়েছে, যার সুফল গ্রহণের জন্য গৃহীত নীতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। পিপিপি আইন ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো সংস্কার করা হবে। বিডা (বিআইডিএ)-কে অধিকতর কার্যক্ষম করা হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো আনুমানিক অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করবে এবং প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করবে।
পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে সিঙ্গাপুরের আদলে শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। জেলা শহর ও মফস্বল শহরে স্থানীয় কাঁচামালভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের গুচ্ছ শিল্পাঞ্চল (ক্লাস্টার ইন্ডাস্ট্রি) গড়ে তোলা হবে। সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পকে গ্রামভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি গুচ্ছশিল্প কাঠামোর সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে বগি ও কোচ উৎপাদন করার উদ্যোগ নেয়া হবে। বিভাগীয় শহরে আইটি শিল্প পার্ক স্থাপন এবং এসব শিল্প পার্কে আগামী পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। শিল্পের ভিত্তি মজবুত এবং আধুনিকায়নে ভারী ও মৌলিক শিল্প স্থাপনে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, যাকে কেন্দ্র করে শিল্পনগরী গড়ে উঠবে। জ্ঞানসমৃদ্ধ সমাজে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পকে উৎসাহিত করা হবে।
শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করা হবে। নারী শ্রমিকদের জন্য চার মাসের বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। গার্মেন্ট শ্রমিকসহ সকল শ্রমিক, হতদরিদ্র এবং গ্রামীণ ভূমিহীন ক্ষেতমজুরদের জন্য বিশেষ বিবেচনায় নানা পদক্ষেপের সঙ্গে রেশনিংসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রবাসী কল্যাণ: বিভিন্ন দেশে আরো বেশিসংখ্যক প্রশিক্ষিত কর্মী প্রেরণের এবং তাদের শ্রমলব্ধ অর্থের আয়বর্ধক এবং লাভজনক বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণ সম্পর্কিত নীতি-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখা হবে। বিদেশে যাওয়ার সময় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হতে নমনীয় শর্তে ও সুদে এবং দেশে ফেরার পর স্থায়ী কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান সুনিশ্চিত করা হবে।
শিক্ষা: শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ও তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষা পাঠক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে- শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুসন্ধিৎসা, জ্ঞান আহরণ এবং দেশ ও জাতির অবিকৃত সত্য ইতিহাস জানার অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করা। শিক্ষার মান উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। ভাষা জ্ঞান ও গণিত জ্ঞানের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ভাষা ও গণিত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে নিরক্ষরতার অভিশাপমুক্ত করা হবে। প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। গত এক দশকে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ২০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ঝরে পড়ার হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। স্কুল ফিডিং সকল গ্রামে, আধা মফস্বল শহরে এবং শহরের নিম্নবিত্তের স্কুলসমূহে পর্যায়ক্রমে সার্বজনীন করা হবে।
প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগের একমাত্র মানদণ্ড হবে মেধা, যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকল সর্বতোভাবে বন্ধ করার জন্য গৃহীত ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহিত ও সহায়তা প্রদান করা হবে। এজন্য বাজেট বৃদ্ধি করা হবে। সকল জেলায় অন্তত একটি প্রাইভেট বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।
মাদরাসা শিক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে কর্মজীবনের প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদানের জন্য কারিকুলাম যুগোপযোগী করা হবে। নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় সকল বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। আধুনিক শিক্ষা-ব্যবস্থায়ও তাদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা হবে। সকল দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা পর্যন্ত সব স্তরের বই ছাপানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। প্রতিবন্ধীদেরও মানবসম্পদে পরিণত করা হবে।
শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা কল্যাণমুখী ও যুগোপযোগী উদ্যোগ সত্ত্বেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের বেতন গ্রেডসহ শিক্ষাখাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে বৈষম্য এখনো রয়ে গেছে, আগামী মেয়াদে তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ: দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা প্রাপ্তি উন্নত করা হবে। এক বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের ওপরে সবাইকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হবে। সকল বিভাগীয় শহরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হার্ট, ক্যানসার ও কিডনি চিকিৎসা-ব্যবস্থা চালু করা হবে।
প্রতিটি বিভাগীয় শহরে অন্তত ১০০ শয্যার স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যানসার ও কিডনি চিকিৎসা-ব্যবস্থা চালু করা হবে। সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং হাসপাতালগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রচলন করে স্বাস্থ্যসেবা-ব্যবস্থাকে আরো নির্ভুল ও জনবান্ধব করা হবে। অনলাইনে দেশ-বিদেশ থেকে বিশেষায়িত চিকিৎসকের সেবা পাওয়া যাবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর ভবনসহ সব সুবিধা পর্যায়ক্রমে আধুনিকীকরণ করা হবে। আয়ুর্বেদী, ইউনানী, দেশজ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও শিক্ষা-ব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং আধুনিকায়ন অব্যাহত রাখা হবে। গ্রামাঞ্চলের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি, সেবার মান বৃদ্ধি এবং উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে।
যোগাযোগ: মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ১৬,৩৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৯.২৪ কিলোমিটার বিস্তৃত ঢাকা পূর্ব-পশ্চিম এলিভেটেড হাইওয়ে নির্মাণ করা হবে। ঢাকাকে ঘিরে একটি এলিভেটেড রিংরোড এবং ইস্টার্ন বাইপাস নির্মাণেরও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে এবং এক্সপ্রেস রেলওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে যাতে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যায় সেজন্য বুলেট ট্রেন (দ্রুতগামী ট্রেন) চালু করা হবে। ক্রমে বুলেট ট্রেন সিলেট, রাজশাহী, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, খুলনা এবং কলকাতা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল বিমানবন্দরকে উন্নত করা হবে। ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ, নতুন রাডার স্থাপন ও জেট ফুয়েল সরবরাহ করার জন্য পাইপলাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হবে। কক্সবাজারে প্রতিষ্ঠা করা হবে সুপিরিয়র বিমান অবতরণে সক্ষম দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দর। বাগেরহাটে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত সম্পাদন করা হবে। ইতিমধ্যে ‘নিরাপদ সড়ক আইন-২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইনটি প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্ঘটনা ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আগামীতে সময়ের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নতুন ধারা পরিবর্তন-পরিবর্ধনের মাধ্যমে এটাকে আরো যুগোপযোগী ও কার্যকর করা হবে। নিরাপদ সড়কের জন্য লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করা, ফিটনেসবিহীন গাড়িকে পারমিট না দেয়া, চালকদের লাইসেন্স প্রদানে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা, সড়ক ও মহাসড়কগুলোকে ক্রমে সিসিটিভি-র আওতায় আনা এবং জনসাধারণকে সচেতন করা প্রভৃতি ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হবে। বেসরকারি বিমান পরিবহনকে আরো উৎসাহিত করা হবে। স্বল্প খরচে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের চলমান প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
রাজধানী ঢাকার জনপরিবহন সমস্যার সমাধান ও যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যে পাতাল রেল, মেট্রোরেল অথবা সার্কুলার রেলপথ এবং রাজধানীতে নাব্য ও প্রশস্ত নৌপথ নির্মাণ করা হবে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে উন্নত করে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যাতে আমাদের সীমান্তবর্তী ভারতের ৭টি প্রদেশ এবং নেপাল ও ভুটান এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে, বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল এবং বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক জোটের যোগাযোগ-ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।
নৌপথ ও বন্দর: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে-ব্যাপক খননের পরিকল্পনা হিসেবে আগামী মেয়াদে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হবে। আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোর সংযোগ স্থাপন করার মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি সুগম করা হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাণিজ্যকে সহজতর করার লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে নৌপথ বাণিজ্য আরো বাড়িয়ে একে নেপাল-ভুটান পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বে-টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে বন্দরের সক্ষমতা ৪ গুণ বৃদ্ধি পাবে। ঢাকার চারপাশের ৪টি নদী এবং খালগুলোকে দূষণ ও দখলমুক্ত করে খননের মাধ্যমে নাব্য ফিরিয়ে এনে নদীতীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির মাধ্যমে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি: ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ফাইভ-জি চালু করা হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, বিগ ডাটা, ব্লক চেইন, আইওটি-সহ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো হবে। ই-পাসপোর্ট এবং ই-ভিসা চালু করা হবে। শিক্ষাকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আর্থিক খাতের লেনদেনকে ডিজিটাল করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তির সফটওয়্যার, সেবা ও ডিজিটাল যন্ত্রের রপ্তানি ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এবং সাবমেরিন ক্যাবল-৩ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। সামরিক বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়ানো হবে। ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যবহারের মূল্য যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে।
সমুদ্র বিজয়: ব্লু-ইকোনমি-উন্নয়নের দিগন্ত উন্মোচন: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- আওয়ামী লীগ সরকার ইতিমধ্যে ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্রসম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আগামী মেয়াদে এই পরিকল্পনা অন্যতম অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়িত করা হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- বিশ্ব উষ্ণায়নের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ এলাকা থেকে মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সেই প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করার লক্ষ্যে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড’-এ বরাদ্দ আরো বাড়ানো হবে। উৎপাদনশীল বনের আয়তন ২০১৫ সালের ১৩.১৪ হতে ২০ শতাংশে উন্নীতকরণ, ঢাকা ও অন্যান্য বড় নগরে বায়ুর মান উন্নয়ন এবং বিশুদ্ধ বায়ু আইন প্রণয়ন করা; শিল্প বর্জ্যের শূন্য নির্গমন/নিক্ষেপণ প্রবর্ধন করা; জলাভূমি সংরক্ষণ আইন মেনে বিভিন্ন নগরের জলাভূমি পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা করা; উপকূল রেখাব্যাপী ৫০০ মিটার চওড়া স্থায়ী সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে। সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও লবণাক্ততা রোধ ও সুন্দরবনসহ অববাহিকা অঞ্চলের মিঠা পানি প্রাপ্তির লক্ষ্যে গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। দেশের বিস্তীর্ণ হাওর ও ভাটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। উন্নয়ন কার্যক্রমের সকল ক্ষেত্রে সবুজ প্রবৃদ্ধি কৌশল গ্রহণ করা হবে।
শিশু কল্যাণ: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- শিশুশ্রম বন্ধ করার লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সুদৃঢ় সামাজিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বৃত্তি ও নানাবিধ কর্মকাণ্ড উন্নত ও প্রসারিত করা হবে। শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার, প্রলোভন বা জোর করে জড়িত করা হবে না। শিশু নির্যাতন বিশেষ করে কন্যাশিশুদের প্রতি বৈষম্য, নির্যাতন বন্ধ ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। পথশিশুদের পুনর্বাসন ও নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশুদের জন্য শিশুসদন প্রতিষ্ঠা এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা উন্নত ও প্রসারিত করা হবে।
প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ কল্যাণ: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক) শিশুদের সুস্বাস্থ্য, শিক্ষা, মর্যাদা ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা হবে। প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, চলাফেরা, যোগাযোগ, চিকিৎসা সহজ করা এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রবীণ কল্যাণ: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- সামাজিক ‘নিরাপত্তা-বেষ্টনী কার্যক্রম-এ প্রবীণদের অন্তর্ভুক্তির বর্তমান সংখ্যা ও সহায়তার পরিমাণ সম্প্রসারণে বাস্তবতার আলোকে পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রবীণদের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রে আয় সৃষ্টিকারী কার্যক্রম গ্রহণ, প্রবীণদের বিষয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পাঠ্যবই-এ আলাদা অধ্যায় সংযোজন, যানবাহন এবং আবাসিক স্থাপনাগুলোতে প্রবীণদের জন্য আসন/পরিসর নির্ধারণ, তৃণমূল পর্যায়ে প্রবীণদের জেরিয়াট্রিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ এবং হাসপাতাল, বিমানবন্দর, বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে ওঠা-নামার ব্যবস্থা প্রবীণবান্ধব করে গড়ে তোলা হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- স্বাধীনতার স্বপ্ন ও মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং তাদের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, বিশেষত দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি, বার্ধক্যকালীন ভরণ-পোষণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ গৃহীত অন্যান্য ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। দেশের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা, ইতিহাস বিকৃতি রোধ এবং প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিতকরণ, শহিদদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।
সংস্কৃতি: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- বাঙালি সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশে আওয়ামী লীগ সরকারের অনুসৃত নীতি ও কর্মপরিকল্পনা অব্যাহত থাকবে। বাংলা ভাষা সাহিত্য, চারু ও কারুকলা, সংগীত, যাত্রা, নাটক, চলচ্চিত্র এবং সৃজনশীল প্রকাশনাসহ শিল্পের সব শাখার ক্রমাগত উৎকর্ষ সাধন ও চর্চার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো হবে।
ক্রীড়া: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- বিশ্ব ক্রিকেটে বর্তমানে বাংলাদেশের গৌরব জাগানো অবস্থান আরো সুদৃঢ় করার সঙ্গে সঙ্গে ফুটবল হকিসহ অন্যান্য খেলা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে। ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ সুবিধার
সম্প্রসারণে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে খেলাধুলা ও শরীর চর্চাকে শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায়: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- অর্পিত সম্পত্তি সংশোধনী আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে। সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জমি, জলাধার ও বন এলাকায় অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ভূমি কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। অনগ্রসর ও অনুন্নত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত ও চা-বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা এবং সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে। সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল প্রকার আইন ও অন্যান্য অন্যায় ব্যবস্থার অবসান করা হবে। ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অধিকারের স্বীকৃতি এবং তাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনধারার স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ ও তাদের সুষম উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- সাংবাদিকদের জন্য ফ্ল্যাট প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রস্তাবিত ২১তলা ভবন নির্মাণে সহায়তা প্রদান করা হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিকাশের ফলে এর অপব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে এক শ্রেণির মানুষ সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। গুজব শনাক্ত ও সত্য তথ্য প্রচারের মধ্যদিয়ে গুজব নিরসনে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা হবে। জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন গঠন করে সকল গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা রোধ ও জনগণের সত্য তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতায় সমৃদ্ধ সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যম উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করা হবে। তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে অধিকতর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চর্চায় সাংবাদিকদের উৎসাহিত করা এবং এ-বিষয়ে প্রয়োজনীয় ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন বিতরণে বৈষম্যমূলক নীতি, দলীয়করণ বন্ধ এবং সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে তার বিকাশে সহায়তা প্রদান করা হবে। গণমাধ্যমবান্ধব আইন করা হবে। সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কোনো আইনের অপপ্রয়োগ হবে না। পেশাদার সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য প্রচলিত উদ্যোগের পাশাপাশি নতুন উদ্যোগ নেয়া হবে।
প্রতিরক্ষা: নিরাপত্তা সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা সুরক্ষা: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী আধুনিকায়নের চলমান প্রক্রিয়া যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বতোভাবে অব্যাহত থাকবে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভ্যন্তরীণ স্বশাসন, শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা সমুন্নত রাখা হবে। জ্যেষ্ঠতা, মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করা হবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের শিক্ষা, চিকিৎসা, আবাসন ও অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধাসহ গৃহীত বহুমুখী কল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অধিকতর অংশগ্রহণের সুযোগ সমুন্নত রাখা ও বৃদ্ধি করার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কল্যাণের জন্য চলমান কাজ চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে।
পররাষ্ট্র: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- আন্তর্জাতিক যে কোনো বিরোধ শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। ভারতের সঙ্গে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন এবং দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। ভারত-ভুটান-নেপালের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও অভিন্ন নদীর অববাহিকাভিত্তিক যৌথ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডে জঙ্গিবাদ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো শক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় টাস্কফোর্স গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা হবে। রাশিয়া, চীন এবং আশিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক আরো জোরদার করা হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও কানাডাসহ উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক আরো জোরদার ও ব্যাপক বিস্তৃত করা হবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ বিশ্বের মুসলিম দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক এবং উন্নয়ন ও সহযোগিতা আরো জোরদার করা হবে।
এদেশগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন প্রভৃতি বিষয়ে বাংলাদেশের জোরালো ভূমিকা থাকবে। মুসলিম উম্মাহর সংহতি এবং ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) কাঠামোয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সহযোগিতা আরো জোরদার করা হবে। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি করা হবে। অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর এলাকার সঙ্গে অধিকতর যোগাযোগ ও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
রোহিঙ্গা সংকট: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে নিরাপদ সম্মানজনক ও স্থায়ীভাবে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে সফলভাবে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি সম্পন্ন করেছে। রোহিঙ্গাদের স্থায়ী প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করেছে।
এনজিও: ইশতেহারে এর লক্ষ্য পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়েছে- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বশাসিতভাবে তাদের নিজস্ব বিধিমোতাবেক পরিচালিত হবে। দারিদ্র্য বিমোচন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান বিষয়ে নিজস্ব বিধি ও রীতি অনুযায়ী কাজ করার অধিকার অব্যাহত রাখা হবে। সরকার বিধিবদ্ধ এনজিও প্রতিষ্ঠানের অর্জন বা ব্যর্থতা মূল্যায়ন করবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান/বিভাগ স্থানীয় সরকারের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছামূলক সমন্বয় জোরদার করা হবে। অর্থায়নকারী অন্যান্য এনজিও-র সকল কার্যক্রম ও আয়-ব্যয়ের হিসাব স্বচ্ছ এবং স্থানীয় জনগণ ও সরকারি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এনজিও সংস্থা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে বাণিজ্যিক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলে অথবা শিল্প ও বাণিজ্যে ভূমিকা রাখতে গেলে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় পড়বে এবং এনজিও হিসেবে কোনো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাবে না। তাদের লভ্যাংশের যে অংশ জনসেবায় ব্যয় হবে সেক্ষেত্রে কর রেয়াতির ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments