ভয়ঙ্কর সুন্দর by ইশরাক পারভীন খুশি
প্রথম
বৃষ্টি দেখে কি অনুভূতি হয়েছিল আমার মনে নেই। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজবার
আনন্দ ও বৃষ্টি নিয়ে প্রতিটি বাঙালীর যে আবেগ তার সবই আমার হৃদয়ে আচ্ছাদিত।
বৃষ্টির রিমঝিম বা টাপুরটুপুর শব্দ মনকে কেমন যেন আবেশে ভরিয়ে তোলে।
ঠান্ডা শীতল অনুভূতি হালকা উষ্ণতা খুঁজে ফিরে পাতলা নরম নকশি কাঁথায়, মায়ের
হাতের গরম খিচুড়ি- ডিম ভাজাতে অথবা ঝাল মুড়ির ঝালে। জানালার গ্রিলে অথবা
কাঁচের শার্সিতে ঘামের মত বিন্দু বিন্দু জল গড়িয়ে পড়ে যে রেখা টানে তা সব
বাঙালীর মনেই আঁচর কাটতে বাধ্য। কিন্তু যে গরম দেশের মানুষ, যে কোনদিনও
তুষারপাত দেখেনি তার কাছে তুষারকন্যার সৌন্দর্য কি হতে পারে তা ভাবুন তো?
গ্রীষ্মকালে লন্ডনে সন্ধ্যার সূর্য যেমন ডুবতে ডুবতে রাত নয়টা বাজিয়ে দেয়
তেমনি শীতে সন্ধ্যা ঝুপ করে দুপুর সাড়ে তিনটায় নেমে পড়ে।
এরকমই একদিন হোয়াইট চ্যপেলের ৭৯ ওলেরির একরুমের বাসায় হু হু ঠান্ডায় কাজ থেকে ফিরে গরম ঝরণার জলে গা ভিজিয়ে ঘরে এসে দেখি প্রাণ ভোমরও কাজ থেকে চলে এসেছে। এসে জানাল জানালার পরদা তুলে বাইরে দেখো কি হচ্ছে ? আমি চোখ বড় বড় করে বাইরে তাকিয়ে দেখি ওমা একি! তুষারকন্যার পদার্পন হয়েছে। কত মাত্রার ঠান্ডা পড়লে জল জমে তুষার হয়? সে মাত্রার ঠান্ডাও কি তুষারপাতের সৌন্দর্য উপভোগ করা রোধ করতে পারে? আমি খেয়াল করে দেখেছি সব সৌন্দর্যের মধ্যেই ভয়ংকর কিছু ঘাপটি মেরে বসে থাকে।
সাগরের ডেউ, পাহাড়ের উচ্চতা, জলপ্রপাতের তুমুল খরস্রোতা, সবুজ ঘন অরণ্যের নিস্তরঙ্গতা, তুষারের জমাট ঠান্ডা সবই ভয়ংকর সুন্দর । এ সৌন্দর্য একটা সীমা পর্যন্ত সুন্দর থাকে, আর সীমালঙ্ঘন হয়ে গেলে সুন্দর ভয়ংকরী হয়ে উঠে।
যাহোক তুষারের কথা বলি। তুষারপাত দেখে যত মোটা আর যত রকম গরম কাপড়চোপড় ছিল সব পড়ে বাইরে বেরিয়ে গেলাম তুষারের প্রথম সৌন্দর্য গায়ে মাখতে। ঝিরঝির নিঃশব্দ হালকা সাদা বিন্দু গায়ে মাখতে থাকলাম সেই সন্ধ্যায়। উচ্ছাসে যেন ভেসে যাচ্ছিলাম হাওয়ায়। পাগলের মত ছুটোছুটি করে তুষার স্নান করলাম জীবনে প্রথম বারের মত। একরাশ ভাল লাগা নিয়ে ঘরে ফিরলাম প্রাণ ভোমরের তাড়ায়। একদিকে ঘরে হিটিং চলছে অন্য দিকে গরম কম্বলের নীচে ঢুকে ঘুমতে গেলাম সকাল দেখবো এ প্রত্যাশায়। বৃষ্টির মত কোন টাপুরটুপুর শব্দ নেই। পৃথিবীতে যেন কোথাও কিছু ঘটছেনা, নিশব্দে যেন কি ষড়যন্ত্র চলছে চারপাশে তার কোন খবর নেই কারো। উষ্ণ নরম আরামে তলিয়ে গেলাম ঘুমের দেশে অচিরেই। সকাল হতেই জানালার পরদা সরাতেই এক অভাবনীয় দৃশ্য আমার জানালার চোখ জুড়ে। সাদা সাদা মেঘ নেমে এসেছে মাটির পৃথিবীতে, হিমশীতল সাদা না শুভ্র চাদর কে যেন বিছিয়ে দিয়েছে সারা লন্ডনে। পাতাবিহীন কঙ্কাল সার গাছগুলো একরাশ পাকা সাদা চুল নিয়ে বুড়ি গাছে পরিণত হয়েছে, ঘরের চাল, পার্কিং লটে গাড়ির বহর, রাস্তা ঘাট, কোথাও একবিন্দু ফাঁকা নেই যেখানে সাদাপরি তার ডানা মেলে রাখেনি। অদ্ভুত ভয়ঙ্কর সুন্দর।
তাড়াতাড়ি গরম কাপড়টা পড়ে আবার বের হলাম তুষারে সাঁতার কাটবো বলে। এত নরম এত কোমল এত শুভ্র! ছুটোছুটি মাখামাখি গড়াগড়ি কোনটাই বাদ গেলোনা। প্রকৃতির নতুন একটা রুপকে দেখে আমি যে শুধু দিশেহারা তা নয়। আমরা যেমন বৃষ্টি নিয়ে মাতামাতি করি তেমনি তুষার নিয়ে এরাও মাতামাতি করে। ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে ছোট বাচ্চারা তুষারের বল বানিয়ে খেলা করে, বড়রাও বাদ যায় না বাচ্চা দের মজা দিতে, স্নো ম্যান বানায় যার নাকটা গাজড়, হাতগুলো শুকনো ডাল, গলায় মাফলার আর চোখ জোড়া বোতামের। এমনকি চিৎ হয়ে শুয়ে হাত পা তুষারের মধ্য ঘসে নড়াছাড়া করতে থাকলে অ্যাঞ্জেলের যে প্রতিকৃতি তৈরি হয় তাও আশ্চর্য সুন্দর। প্রতিটি তুষার কণার যে নিজস্ব একটা আকৃতি আছে এটা দশ বছর পর চোখে পড়েছে । ক্রিসমাসের সময় এরা যখন চারদিকে সাজসজ্জা করে তখন আল্পনার মত কি যেন একটা স্নোর প্রতীক হিসেবে ঝুলিয়ে রাখে। আমি এটাকে ভাবতাম কাল্পনিক একটা রুপ। কিন্তু এই কিছুদিন আগে খুব হালকা তুষার আমার জানালার কাঁচ ঘেষাঁ গাছের পাতার ওপর পড়ছিল, তখনই লক্ষ করলাম প্রতিটি তুষারের নিজস্ব ছাঁচ আছে। তখনই বুঝলাম এরা ঐ বিন্দু তুষারকেই সাজিয়ে রাখে। ক্রিসমাসের সাথে তুষারের একটা সম্পর্ক আছে বলে এরা বিশ্বাস করে। চব্বিশে ডিসেম্বর ক্রিসমাস ইভ যেদিন তুষারপাত মানে আশীর্বাদ। হট চকলেটের মগটা হাতে নিয়ে ফায়ার প্লেসের সামনে পরিবারের সবাই বসে হলিডে পালন করে। আর ভাবে রাত তিন প্রহরে সান্তা ক্লজ স্লেজ গাড়ি নিয়ে আসবে থলে ভর্তি উপহার নিয়ে।
এরকমই একদিন হোয়াইট চ্যপেলের ৭৯ ওলেরির একরুমের বাসায় হু হু ঠান্ডায় কাজ থেকে ফিরে গরম ঝরণার জলে গা ভিজিয়ে ঘরে এসে দেখি প্রাণ ভোমরও কাজ থেকে চলে এসেছে। এসে জানাল জানালার পরদা তুলে বাইরে দেখো কি হচ্ছে ? আমি চোখ বড় বড় করে বাইরে তাকিয়ে দেখি ওমা একি! তুষারকন্যার পদার্পন হয়েছে। কত মাত্রার ঠান্ডা পড়লে জল জমে তুষার হয়? সে মাত্রার ঠান্ডাও কি তুষারপাতের সৌন্দর্য উপভোগ করা রোধ করতে পারে? আমি খেয়াল করে দেখেছি সব সৌন্দর্যের মধ্যেই ভয়ংকর কিছু ঘাপটি মেরে বসে থাকে।
সাগরের ডেউ, পাহাড়ের উচ্চতা, জলপ্রপাতের তুমুল খরস্রোতা, সবুজ ঘন অরণ্যের নিস্তরঙ্গতা, তুষারের জমাট ঠান্ডা সবই ভয়ংকর সুন্দর । এ সৌন্দর্য একটা সীমা পর্যন্ত সুন্দর থাকে, আর সীমালঙ্ঘন হয়ে গেলে সুন্দর ভয়ংকরী হয়ে উঠে।
যাহোক তুষারের কথা বলি। তুষারপাত দেখে যত মোটা আর যত রকম গরম কাপড়চোপড় ছিল সব পড়ে বাইরে বেরিয়ে গেলাম তুষারের প্রথম সৌন্দর্য গায়ে মাখতে। ঝিরঝির নিঃশব্দ হালকা সাদা বিন্দু গায়ে মাখতে থাকলাম সেই সন্ধ্যায়। উচ্ছাসে যেন ভেসে যাচ্ছিলাম হাওয়ায়। পাগলের মত ছুটোছুটি করে তুষার স্নান করলাম জীবনে প্রথম বারের মত। একরাশ ভাল লাগা নিয়ে ঘরে ফিরলাম প্রাণ ভোমরের তাড়ায়। একদিকে ঘরে হিটিং চলছে অন্য দিকে গরম কম্বলের নীচে ঢুকে ঘুমতে গেলাম সকাল দেখবো এ প্রত্যাশায়। বৃষ্টির মত কোন টাপুরটুপুর শব্দ নেই। পৃথিবীতে যেন কোথাও কিছু ঘটছেনা, নিশব্দে যেন কি ষড়যন্ত্র চলছে চারপাশে তার কোন খবর নেই কারো। উষ্ণ নরম আরামে তলিয়ে গেলাম ঘুমের দেশে অচিরেই। সকাল হতেই জানালার পরদা সরাতেই এক অভাবনীয় দৃশ্য আমার জানালার চোখ জুড়ে। সাদা সাদা মেঘ নেমে এসেছে মাটির পৃথিবীতে, হিমশীতল সাদা না শুভ্র চাদর কে যেন বিছিয়ে দিয়েছে সারা লন্ডনে। পাতাবিহীন কঙ্কাল সার গাছগুলো একরাশ পাকা সাদা চুল নিয়ে বুড়ি গাছে পরিণত হয়েছে, ঘরের চাল, পার্কিং লটে গাড়ির বহর, রাস্তা ঘাট, কোথাও একবিন্দু ফাঁকা নেই যেখানে সাদাপরি তার ডানা মেলে রাখেনি। অদ্ভুত ভয়ঙ্কর সুন্দর।
তাড়াতাড়ি গরম কাপড়টা পড়ে আবার বের হলাম তুষারে সাঁতার কাটবো বলে। এত নরম এত কোমল এত শুভ্র! ছুটোছুটি মাখামাখি গড়াগড়ি কোনটাই বাদ গেলোনা। প্রকৃতির নতুন একটা রুপকে দেখে আমি যে শুধু দিশেহারা তা নয়। আমরা যেমন বৃষ্টি নিয়ে মাতামাতি করি তেমনি তুষার নিয়ে এরাও মাতামাতি করে। ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে ছোট বাচ্চারা তুষারের বল বানিয়ে খেলা করে, বড়রাও বাদ যায় না বাচ্চা দের মজা দিতে, স্নো ম্যান বানায় যার নাকটা গাজড়, হাতগুলো শুকনো ডাল, গলায় মাফলার আর চোখ জোড়া বোতামের। এমনকি চিৎ হয়ে শুয়ে হাত পা তুষারের মধ্য ঘসে নড়াছাড়া করতে থাকলে অ্যাঞ্জেলের যে প্রতিকৃতি তৈরি হয় তাও আশ্চর্য সুন্দর। প্রতিটি তুষার কণার যে নিজস্ব একটা আকৃতি আছে এটা দশ বছর পর চোখে পড়েছে । ক্রিসমাসের সময় এরা যখন চারদিকে সাজসজ্জা করে তখন আল্পনার মত কি যেন একটা স্নোর প্রতীক হিসেবে ঝুলিয়ে রাখে। আমি এটাকে ভাবতাম কাল্পনিক একটা রুপ। কিন্তু এই কিছুদিন আগে খুব হালকা তুষার আমার জানালার কাঁচ ঘেষাঁ গাছের পাতার ওপর পড়ছিল, তখনই লক্ষ করলাম প্রতিটি তুষারের নিজস্ব ছাঁচ আছে। তখনই বুঝলাম এরা ঐ বিন্দু তুষারকেই সাজিয়ে রাখে। ক্রিসমাসের সাথে তুষারের একটা সম্পর্ক আছে বলে এরা বিশ্বাস করে। চব্বিশে ডিসেম্বর ক্রিসমাস ইভ যেদিন তুষারপাত মানে আশীর্বাদ। হট চকলেটের মগটা হাতে নিয়ে ফায়ার প্লেসের সামনে পরিবারের সবাই বসে হলিডে পালন করে। আর ভাবে রাত তিন প্রহরে সান্তা ক্লজ স্লেজ গাড়ি নিয়ে আসবে থলে ভর্তি উপহার নিয়ে।
তুষারপাতের সৌন্দর্য প্রথম দিনই ভাল তারপর তুষার জমাট বেঁধে বরফে রুপান্তর হলে তা বেজায় বিপদজ্জনক চলাফেরা করতে। পিচ্ছিল বরফের ওপর একবার পা পিছলিয়ে পড়লে আর রক্ষা নেই কোমড়ের হাড় আর আস্ত থাকবেনা। তবে কি, যে দেশের যে আচার তা না ঘটলে সেটার একটা বিরুপ প্রভাব প্রকৃতির ওপর পড়ে। আর তাই ঐরকম তুষার পাতে অনেক অনেক অনাকাঙ্খিত রোগ বালায় পোকামাকর বিনাশ হয়ে মানুষের উপকারই করে।
শীত শুরুর আগে গাছের পাতা হলুদ লাল নানা বর্ণের বর্ণিল হয়ে প্রকৃতি এখানে অপরুপ সুন্দর হয়ে ওঠে। এই সিজনটাকে এখানে ফল বলে। ঝরে পড়বার আগে গাছের পাতাগুলো যেন ঝলসে উঠে। তারপর একটা দুটো করে সব পাতা ঝরে হয়ে যায় কঙ্কাল সার। কেমন এক ভৌতিক রুপ নিয়ে গাছগুলো দীর্ঘ ঘুমে হারিয়ে যায়। এরকম এক সময়েই গিয়েছিলাম রিজেন্ট পার্কে। অবশ্য লন্ডনের প্রতিটি এলাকাতেই আছে ছোটখাট পার্ক। যেখানে বাচ্চারা খেলবে, মানুষ হাঁটবে নয়তো শুধুমাত্র বসে মিস্টি হাওয়ায় উপভোগ করবে প্রকৃতি। এই ফাঁকে বলে রাখি লন্ডন শহরে অসংখ্য কবুতর আর হাঁস দেখতে পাওয়া যায় সব সময়। এরা রানীর সম্পত্তি , এদের খাবার আসে রানীর তরফ থেকে। এদের ধরা মারা তো যাবেইনা উপরোন্ত উলটা-পালটা খাবারও দেয়া যাবেনা পাছে ওরা রোগাক্রান্ত হয়।
রিজেন্ট পার্ক খুব সুন্দর, বিশেষত ফল সিজনে দেখবার মত জায়গা। এটি লন্ডনের আটটি রয়াল পার্কের মধ্যে অন্যতম একটি রয়াল পার্ক যা ১৯৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে গঠিত আর যাকে বলা হয় জুয়েল অফ দি ক্রাউন। আমি আর আমার সজ্ঞী আমরা ছবি তুলে মেমোরি কার্ড ভরে ফেললাম অথচ তারপরও মনে হল সৌন্দর্য কিছুই ক্যমেরা বন্দি করা গেলোনা। শুধু রিজেন্ট পার্ক নয় হাইড পার্কও রয়াল পার্ক। ৩৫০ একর জায়গা নিয়ে এটা তৈরি, এখানে স্পিকার কর্ণার নামে একটা জায়গা আছে যেখানে সর্ববৃহত মার্চ ও প্রোটেস্ট হয়ে থাকে। রিজেন্ট পার্ক যেমন ফুলের গাছে ঝরণা আর প্লে ডাউন্ড, লেক ইত্যাদি দিয়ে সাজানো গোছানো, অন্যদিকে হাইড পার্ক বড় বড় গাছের সমারোহে ভরা, বড় লেক, খেলবার জায়গা তো আছেই সেই সাথে এখানে নানা কনসার্টও অনুষ্ঠিত হয়।
শীতের শুরুতে যেমন পাতা ঝরার আগে প্রকৃতি অপরুপ ধারণ করে তেমন শীত শেষ হতে না হতেই গাছগুলো ঘুম থেকে জেগে উঠবার জন্য তরিঘরি শুরু করে দেয়। কেন বলছি এ কথা? কারণ শীত একটু কমতে না কমতেই ঋতু পরিবর্তনের হাওয়া গাছেদের গায়ে লাগতেই গাছগুলো কুড়ি মেলে দেয়, পাতা আসার আগেই গাছগুলো সাদা গোলাপি নানা ফুলে আপাদমস্তক ঢেকে ফেলে। আসলে গাছ নয় বৃক্ষ বললে বুঝতে সুবিধা হয়। বৃক্ষগুলি ফুলে ফুলে এত মেতে উঠে যা দেখবার মত দৃশ্য । এরকমই একদিন স্প্রিং-এর শুরুতে বাসা থেকে কাজে যাবার জন্য বের হয়েছি। বাসা থেকে ওভার গ্রাউন্ড স্যাডওয়েল ডিএলআর ইস্টিশনে যেতে বেশ কিছুটা পথ হাঁটতে হয়। হাঁটার এ পথ জুড়ে গোলাপি সাদা ফুলের পাপঁড়ি বিছিয়ে থাকে। রাস্তার দুধারে ফুলে ঢাকা বৃক্ষরাজি আর রাস্তার কিনার ফুলের পাপড়িতে বিছানো কার্পেটের মত পথ ধরে হাঁটতে মন্দ লাগেনা। শুধু বাতাসে মিশে থাকা ফুলের রেণু নাকের ভেতর সুঁড়সুড়ি আর চোখের কোণে কড়কড়ে অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। একদিন সেই পথে এক হোমলেস বৃদ্ধ দেখি রাস্তা পার হতে গিয়ে পথের মাঝে এক অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। আমিও রাস্তা পার হতে গিয়ে দেখি ওর কেডসের ফিতা খুলে পায়ে বেঁধে হাঁটতে অসুবিধা তৈরি করছে। একটু অসহায় ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকাতেই বুঝলাম ওর সাহায্য দরকার। লাল টুকটুকে মুখ, মুখ ভর্তি সাদা দাঁড়ি, ছলছলে চোখ কিছুটা দিকভ্রান্ত। বললাম রাস্তাটা পার হই চল তারপর আমি ফিতাটা লাগিয়ে দেব। রাস্তা পার হয়ে ওর জুতার ফিতেটা ঠিক করে বেঁধে দিতেই খুব খুশি হয়ে গেল বৃদ্ধ, বলে উঠল গড ব্লেস ইউ। মনটা কিছুটা ভাল আর কিছুটা খারাপ লাগা নিয়ে নিজের পথে পা বাড়ালাম। এরকম কত হোমলেস মানুষও এখানে আছে কেউ ভাগ্যের দোষে কেউ ইচ্ছাকৃত। ভাল লাগল এজন্য যে সামান্য জুতোর ফিতে লাগিয়ে দিয়েও মনে হল কারো জন্য কিছু একটা করা হল।
লেখক: টেক্সাস (যুক্তরাষ্ট্র) প্রবাসী
No comments