শাকিব-অপুর যেভাবে কেটেছে বিয়ের ৯ বছর by কামরুজ্জামান মিলু
ঢাকাই
চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় দুই মুখ শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। ২০০৮ সালের ১৮ই
এপ্রিল ভালোবেসে বিয়ে করেন তারা। এরই মধ্যে তারা পার করেছেন নবম
বিবাহবার্ষিকী। তাদের একটি ছেলেও আছে। ছেলের নাম আব্রাহাম খান জয়। এই
দম্পতিকে ঘিরে গত এক মাসে অনেক আলোচনা হয়েছে মিডিয়ায়। তার পরও থেকে যায়
জীবনের নানান কথা। কারণ, বিয়ে করে সংসার করার পরও দীর্ঘদিন আড়ালেই ছিলেন
তারা।
অপু ও শাকিবের বিয়ে নিয়ে এখনও ভক্ত বা পাঠকদের মনে জানার আগ্রহের কমতি নেই। কীভাবে শাকিব-অপুর পরিচয়, বন্ধুত্ব ও বিয়ে এবং বিয়ের পর কীভাবে কেটেছে গত নয়টি বছর? এসব বিষয়ে মানবজমিনের সঙ্গে জীবনের একান্ত কিছু কথা শেয়ার করেছেন অপু বিশ্বাস।
শাকিব ও অপুর পরিচয়
তখন অপু বিশ্বাস বগুড়ায় সরকারি ইয়াকুব আলী স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে নবম শ্রেণির ছাত্রী। ২০০৫ সালে আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় ‘কাল সকালে’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে সর্বপ্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এরপর শাকিব খানের বিপরীতে এফআই মানিকের ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবির জন্য প্রস্তাব পান অপু। সে সময় শাকিবকে তেমন চিনতেন না তিনি। কারণ, বাংলা ছবি তেমন দেখা হতো না তার। আর পরিবারের শাসনের কারণে সিনেমা হলে গিয়েও ছবি দেখা হয়ে ওঠেনি। অপু বলেন, যখন জানতে পারি নতুন ছবিতে আমার হিরো শাকিব খান, এটা জানার পর বাসায় সিডি ভাড়া করে এনে তার অভিনীত ‘শুভা’ ছবিটি দেখলাম। তখন আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি। প্রয়াত গুণী নির্মাতা চাষি নজরুল ইসলামের পরিচালনায় এ ছবিতে শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করেন পূর্ণিমা। এ ছবিটা দেখার পর আমার বান্ধবীরা (বৃষ্টি, সিমিম, রিক্তা) সকলে বলল, শাকিব তো বেশ ভালো অভিনয় করেন। আমার বাংলা ছবি তখন তেমন দেখা হতো না। বলিউডের শাহরুখ খানের ছবি দেখা হতো বেশি। শাহরুখ খান ছিল আমার প্রিয় নায়ক। শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম আমার দেখা এফডিসিতে। আমার মনে আছে সেই দিনটার কথা। ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ ছবির সেটে ছিলেন শাকিব। তখন পরিচালক এফআই মানিক ভাই আমার সঙ্গে শাকিবের পরিচয় করিয়ে দেন। তখন বগুড়া থেকে এসে উত্তরায় আমাদের পারিবারিক আত্মীয় রাজু ভাইয়ের বাসায় থেকে আমি ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবির কাজ শুরু করলাম। নায়করাজ রাজ্জাক আংকেলকে আমার মা খুব পছন্দ করতেন। মূলত সিনেমা করতে গেলে এই অঙ্গনের অনেকের সঙ্গে দেখা হবে, এই ভেবে অনেকটা শখের বশে কাজ শুরু করা হয় আমার।
অপুকে শাকিবের প্রথম প্রেমের প্রস্তাব
‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবির জন্য সাভারে শুটিং সেট ফেলা হয়। সেখানে কাজ করতে গিয়ে তাদের সঙ্গে আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। আর এক্ষেত্রে অপুর কথা মতো শাকিব খান এক ধাপ এগিয়ে ছিলেন। অপু বলেন, প্রথম ছবি থেকেই শাকিব আমার দিকে রোমান্টিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত। আমার মা (শেফালী বিশ্বাস) শুটিংয়ে আমার সঙ্গে সবসময়ই থাকতেন। তাই মাকে আমি বেশি দোষ দিতে চাই। কারণ, ছোটবেলা থেকে আমি গার্লস স্কুলে বান্ধবীদের সঙ্গে মিশেছি। বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না আমাদের। তাই তেমন ঘুরতে বের হতে পারতাম না আমি। কড়া শাসনে আমাকে থাকতে হয়েছে। যে কারণে কোনো ছেলেবন্ধু ছিল না আমার। বাড়ি থেকে বাইরে একা কোথাও ছাড়ত না। খুব বেশি শাসন না করলে হয়তো আমার জীবনে এত বড় ভুল হতো না। এসবের কারণে ছেলেমানুষের সঙ্গে একটা নতুনত্ব ছিল আমার কাছে। প্রথম ছবিতে একটি দৃশ্য ছিল যে, দৌড়ে এসে শাকিব খানকে জড়িয়ে ধরার। একটা সময় আমি দৌড়ে আসলেও আমি শাকিবের সামনে এসে ফ্রিজ হয়ে যেতাম। জড়িয়ে ধরতে পারতাম না। তখন পরিচালক মানিক ভাই শটটা ঘুরিয়ে দিলেন। তখন উল্টো শাকিব দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। সেই সময়ের সেই মুহূর্তটি আমার কাছে ভিন্ন রকম ছিল। অপু আরও বলেন, এরপর শাকিব আমাকে বিভিন্নভাবে বলেছে যে, আমি শাকিবের কাছে প্রথম ভালোলাগার মতো একটি মেয়ে। তার জীবনে এর আগে এমন মেয়ে আসেনি। তখন শুটিংয়ে আমি একটা ফোন ব্যবহার করতাম। তখন শুটিং বিরতিতে ইশারা করে আমার কাছে ফোন নাম্বার চাইল একদিন শাকিব। আমি টিসুতে আইভ্রু পেন্সিল দিয়ে লিখে আমার ফোন নাম্বারটা শাকিবকে দিয়েছিলাম। শাকিব এরপর প্রায়ই ফোন দিত। অনেক সময় মা ফোন ধরলে শাকিব ফোন কেটে দিত। আমি ফোন রিসিভ করলে কথা বলত, এমন ঘটনা প্রায়ই হয়েছে। নাম্বারটা দেওয়ার পর ফোনে কথা শুরু হয় আমাদের।
অপুর জন্য শাকিবের বগুড়া- শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং যাওয়া
বগুড়ায় এসএসসি পাস করার পর সিনেমা ছেড়ে ইন্ডিয়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অপু। সেখানে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কারণ, ভারতে অপুর মেজো বোন লতা সিংহ রায় থাকতেন। অপু এ প্রসঙ্গে বলেন, ইন্ডিয়াতে যাওয়ার কারণ হচ্ছে সিনেমা কন্টিনিউ করার ইচ্ছে ছিল না আমার। তখন শাকিব আমার জন্য বেশকিছু দিন বগুড়া গিয়েছিল এবং পরে আমি ইন্ডিয়া যাওয়ার পর বাই রোডে লালমনিরহাট পাটগ্রামের বুড়িমারী বর্ডার হয়ে চেংড়াবান্ধা সীমান্ত দিয়ে শিলিগুড়ি গিয়েছিল শাকিব। লতা দিদি আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছেন। শাকিব খান শিলিগুড়ি যাওয়ার পর দিদি বলল, শাকিব যেহেতু এত দূর এসেছে ঠিক আছে তুই দেখা কর। তিন দিন সেখানে একটি তিন তারকা হোটেলে ছিল শাকিব। এটা ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের কথা বলছিলেন অপু। ওই সময় শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস শুটিংয়ে না একসঙ্গে সময় কাটাতে দার্জিলিংয়ে ঘুরতে যান। আর সেখানে অপুকে দেখতেই মূলত ঢাকা থেকে আসেন শাকিব খান। অপু বিশ্বাস বলেন, সেদিন শাকিবসহ দার্জিলিং যাওয়ার সময় শেবক রাস্তায় একটা বড় কালীমন্দির আছে। সেখানে যেতে চাইলো শাকিব। কারণ, ওয়েদারটা খুবই ভালো ছিল। শাকিব জায়গার প্রেমে পড়ে যায়। আমরা তখন ওই মন্দিরে গেলাম। কেউই বাধা দেয়নি আমাদের। টিয়া কালারের একটি জ্যাকেট ও জিনস প্যান্ট পরেছিল শাকিব। মন্দিরে প্রবেশের পর পুরোহিত প্রশ্ন করলেন, আপনারা কারা ? তখন আমি উত্তরে বললাম, আমরা স্বামী ও স্ত্রী। মজা করেই আমি সেদিন বলেছিলাম। শাকিব বললো, আমি মাড়োয়ারি হিন্দু। তখন পুরোহিত বললো, তোমার স্ত্রীর কপালে সিঁদুর কোথায়। তারপর পুরোহিত শাকিবকে কপালে টিকা ও শাকিব আমার কপালে সিঁদুর দিয়ে দিল। সেই হিসেবে তখনই আমাদের বিয়ে হয়। যখন ঘুরাফেরা শেষ করে শাকিব ঢাকাতে ফিরল। আর ফেরার পথে বাসে শাকিব ফোন করে বলেছিল, সবকিছু রেখে শুধু আমার কলিজা নিয়ে বাসায় ফিরছি। একা ফিরতে খুব খারাপ লাগছে। এরপর আমার একটু একটু ভালো লাগা মনে কাজ করছিল। অপু আরও বলেন, এরপর আমি শাকিবের বিষয়ে ঢাকায় নানাভাবে কিছু খোঁজখবর নিয়ে সম্পর্ক থেকে পিছিয়ে গেলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি অন্য হিরোর বিপরীতে কাজ করব। আমি তখন হিরো মান্না ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম শাকিবের সঙ্গে আমার ভালোবাসাটা এ পর্যন্তই থাক। বিয়ে পর্যন্ত গড়াক এটা চাইনি। রাজ্জাক আংকেলের একটা প্রোডাকশনেও কাজ করার জন্য কথা হলো। তখন আমি ভেবেছি, শাকিবের সঙ্গে ছবি না করলে তো শাকিব আমার কাছ থেকে এমনিতেই দূরে সরে যাবে। শাকিবকে তখন বলেছিলাম, যা হওয়ার হয়েছে। ভালো বন্ধুত্ব আছে, সেটাই থাক আমাদের। এরপর ঢাকায় এসে আবার কাজ শুরু করলাম। কিন্তু শাকিবের খুব কাছের প্রযোজক ও প্রোডাকশন ম্যানেজার মামুনুজ্জামান মামুন ভাই আমার বাসায় এসে প্রায়ই শাকিবের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশংসা করতেন। কখনও খাসির মাংস, মাছ, পোলাও বিভিন্ন কিছু নিয়ে আসতেন। তিনি এসে বলতেন, শাকিব আপনাকে কতটা পছন্দ করেন, তা আপনি জানেন না। ইন্ডিয়া থেকে আসার পর থেকে শুধুই আপনার কথা বলছে। এরপর আস্তে আস্তে আমি শাকিবের প্রতি দুর্বল হলাম। পরে বগুড়ায় সরকারি মুজিবর রহমান মহিলা কলেজে পড়া শেষ করলাম। আর ছবিতে কাজ কন্টিনিউ করা শুরু হলো আমার। ছবিও হিট করা শুরু করল। ঢাকায় একেবারে চলে আসলাম। ব্যস্ততা বাড়ল আমার।
সম্পর্ক ও বিয়ে
জাকির হোসেন রাজুর ‘মনে প্রাণে আছো তুমি’ ছবিতে কাজ করতে গিয়ে আবারও শাকিব অপু এক হয়। এ ছবি করতে গিয়ে আবার ফোনে কথা বলা শুরু হয় শাকিব ও অপুর। সম্পর্ক সামনে এগুতো থাকলো। এরপর আবারও দ্বিতীয়বারের মতো শাকিবের প্রতি দুর্বলতা কাজ করা শুরু করলো অপু বিশ্বাসের। অপু বলেন, তখন শাকিব খান হ্যারিয়ার গাড়ি ব্যবহার করত। তখন আশুলিয়ার প্রিয়াঙ্কায় পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের ‘কথা দাও সাথী হবে’ ছবির শুটিং চলছিল। একদিন গাড়িতে মামুন ভাই, শাকিব ও আমি ছিলাম। হঠাৎ শাকিব মামুন ভাইকে একটা জায়গায় নামিয়ে দিয়ে আমার সঙ্গে গাড়িতে কথা বলা শুরু করল। ওই ছবির শুটিং চলা অবস্থাতেই শাকিব বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তখন মিরপুর শাহ আলী মাজার রোডের একটি বাসায় থাকতাম আমি। শাকিব আমাকে সেদিন বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর আমি শাকিবকে বললাম, এটা সিনেমা না আমার জীবন। স্বামী হিসেবে স্ত্রীকে যেসব মর্যাদা দেয়া উচিত সেগুলো আমি পাব কি-না সেটা জানতে চাই। তখন আমার সব কথা মেনে নিয়েছিল শাকিব। এরপর দুজনের সিদ্ধান্তে বিয়ে হয় আমাদের। ২০০৮ সালের ১৮ই এপ্রিল শুক্রবার বিয়ে হয় আমাদের। মামুন ফরিদপুরে শাকিবের বাড়ির কাছ থেকে মজিবুর রহমান নামের এক কাজী সাহেবকে নিয়ে আসে এবং আমরা বিয়ে করি। বিয়ের পুরো বিষয়টি তখন কেবল আমার মেজ বোন লতা ও শাকিবের চাচাতো ভাই মনির জানতেন। এরপরের গল্পটা সবার জানা।
শাকিবের বাড়িতে অপু
বিয়ের পর শাকিবের বাসায় বেশিরভাগ সময় থাকতেন অপু বিশ্বাস। তবে অনেকটা লুকোচুরি করে থাকতে হয়েছে তাদের। তাই মাঝে মাঝে শুটিং শেষে অপু নিজের বাসায়ও চলে যেতেন। আবার কখনও গভীর রাতে শাকিবের গুলশানের দুইয়ের বাসায় উঠতেন এবং ভোরবেলা নিজের গুলশান নিকেতনের বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে শুটিংয়ে বেরিয়ে পরতেন। অপু বলেন, বিয়ের পর গুলশান দুইয়ে শাকিবের বাসায় উঠলাম আমি। তবে দুজনেই শুটিং থাকার কারণে বেশ ব্যস্ততায় সংসার কাটে আমাদের। এরপর জানলাম, মনি নামে শাকিবের একটা ছোট বোন আছে। পরিবারের অজান্তে অন্য জায়গায় মনি বিয়ে করার কারণে শাকিব মনির সঙ্গে রাগ করে সাত বছর ধরে কথা বলতো না। পরে আমি শাকিবকে বুঝিয়ে মনিকে আমার বাসায় নিয়ে আসলাম। ভাইবোনকে এক করে দিয়েছি। যে কারণে শাকিবের বাসায় এখন মনি থাকেন। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সংসার করতে হয়েছে আমাকে। শাকিবের বাসায় আমার শ্বশুর (আব্দুর রব)-শাশুড়ি (রিজিয়া বেগম) থাকতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় শাকিবের পরিবার আমাকে কেনো পছন্দ করে না, সেটা আমি জানি না। এটা আমার কাছে খুবই কষ্টের। বিয়ের পর শাকিবের জন্য প্রথম রান্না কি ছিল জানতে চাইলে অপু বলেন, আমি শাকিবের জন্য বিয়ের পর প্রথম খিচুড়ি রান্না করেছিলাম। আমার হাতে ডেজার্ট আইটেম খেতে পছন্দ করে শাকিব। পোলাও, মম, ছানার মিষ্টি, বিরিয়ানি-এই ধরনের রিচ ফুড খেতে খুব পছন্দ করে শাকিব। এছাড়া প্রায়ই বগুড়া থেকে দই এনে শাকিবকে খাওয়াতাম। একবার শুটিং করতে ব্যাংককে গিয়ে শাকিব আমাকে ট্রিট দিলো। একটা জাপানিজ রেস্টুরেন্ট ছিল যেখানে খাবারগুলো ঘুরতো চারপাশে। আর নিজের পছন্দমত কাঁচা খাবার রান্না করে খাওয়া যেত। এভাবেই খাবারগুলো রাখা ছিল। ওখানের চিংড়ি টেম্পুরা আমাকে খাওয়াইছে শাকিব। এটা আমার খুব পছন্দের ছিল। ‘নাম্বার ওয়ান শাকিব খান’ ছবির শুটিংয়ে ব্যাংককে প্রথমে সিজলারে খাওয়ানোর পর ওই জাপানিজ রেস্তরাঁয় আমাকে খাওয়ায় শাকিব। এরপর যতবার আমাদের ব্যাংককে যাওয়া হয়েছে ততবার সেই রেস্তরাঁয় খাওয়া হয়েছে আমাদের। শুটিংয়ের বাইরে একবার ফুকেটের ফি ফি আইল্যান্ডে ঘুরতে গিয়েছিলাম আমি ও শাকিব। শুটিংয়ের বাইরে দুজনের তেমন ছবি ওঠানো হতো না। এর কারণ জানতে চাইলে অপু বিশ্বাস বলেন, আমি জানি না। অনেকে শুনলে হইতো বিশ্বাস করবে না যে, আমাদের বিয়ের ছবিটিও ওঠানো হয়নি। আর যেখানে আমরা ঘুরতে যাইতাম শাকিব ছবি ওঠাতে পছন্দ করতো না। তবে ফুকেটের ফি ফি আইল্যান্ডে ঘুরতে গিয়ে সবশেষ আমরা একটি ছবি তুলেছিলাম। তাছাড়া আমরা এত জায়গায় ঘুরেছি দুজনের তেমন কোনো ছবি নেই। পছন্দের মানুষকে উপহার দেয়ার বেলায় প্রথম ছিলেন অপু। সেই বিষয়ে তিনি বলেন, আমি শাকিবকে পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পোশাক পছন্দ করে কিনে দিতাম, অনেক পোশাক উপহারও দিয়েছি। আর শাকিবও আমাকে গলার হীরের মালাসহ বেশকিছু উপহার দিয়েছে।
শাকিব-অপুর সংসার
শাকিবের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে কলকাতার একটি হাসপাতালে নিজে বন্ডে সাইন দেয়ার পর সিজার হয় অপুর। ২০১৬ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর শাকিব ও অপুর ঘরে ছেলে সন্তান আব্রাহাম খান জয় আসে। তারপরও শাকিব এ খবর অপুকে গোপন রাখতে বলেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, দুজনের ক্যারিয়ারের স্বার্থে সন্তান ও বিয়ের কথা গোপন রাখার কথা বলেছিল শাকিব। তবে আমি অনেকদিন লুকোচুরি সংসার করেছি। অপেক্ষাও করেছি অনেকবার। এরপর আর দেরি করতে চাইনি। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে টিভি লাইভে গিয়ে বিয়ে ও সন্তানের বিষয়টি ক্লিয়ার করি। একটানা এই কথাগুলো বলেন অপু বিশ্বাস। বর্তমানে শাকিব বিভিন্ন সিনেমার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আর এবারের ঈদে অপু ও শাকিব অভিনীত একটি ছবি মুক্তি পাবে। বুলবুল বিশ্বাস পরিচালিত এ ছবির নাম ‘রাজনীতি’। এ ছবি মুক্তি পাবার পর আবারও নতুন উদ্যমে কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অপু। আর শরীরের ওজন কমানোর জন্য বনানীর একটি ব্যায়ামাগারে নিয়মিত সময়ও দিচ্ছেন। তবে সকলের প্রত্যাশা শাকিব ও অপু আবারও এক ছাদের নিচে সংসার করবেন। সুখে থাকবেন। কারণ তাদের ঘরে এখন ফুটফুটে সন্তান আব্রাহাম খান জয়। শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের জীবনে পেছনে ফেলা আসা বা সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে সব জটিলতার অবসান হোক এটাই প্রত্যাশা সবার।
সূত্র- মানবজমিন ঈদ আনন্দ ২০১৭
অপু ও শাকিবের বিয়ে নিয়ে এখনও ভক্ত বা পাঠকদের মনে জানার আগ্রহের কমতি নেই। কীভাবে শাকিব-অপুর পরিচয়, বন্ধুত্ব ও বিয়ে এবং বিয়ের পর কীভাবে কেটেছে গত নয়টি বছর? এসব বিষয়ে মানবজমিনের সঙ্গে জীবনের একান্ত কিছু কথা শেয়ার করেছেন অপু বিশ্বাস।
শাকিব ও অপুর পরিচয়
তখন অপু বিশ্বাস বগুড়ায় সরকারি ইয়াকুব আলী স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে নবম শ্রেণির ছাত্রী। ২০০৫ সালে আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় ‘কাল সকালে’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে সর্বপ্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এরপর শাকিব খানের বিপরীতে এফআই মানিকের ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবির জন্য প্রস্তাব পান অপু। সে সময় শাকিবকে তেমন চিনতেন না তিনি। কারণ, বাংলা ছবি তেমন দেখা হতো না তার। আর পরিবারের শাসনের কারণে সিনেমা হলে গিয়েও ছবি দেখা হয়ে ওঠেনি। অপু বলেন, যখন জানতে পারি নতুন ছবিতে আমার হিরো শাকিব খান, এটা জানার পর বাসায় সিডি ভাড়া করে এনে তার অভিনীত ‘শুভা’ ছবিটি দেখলাম। তখন আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি। প্রয়াত গুণী নির্মাতা চাষি নজরুল ইসলামের পরিচালনায় এ ছবিতে শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করেন পূর্ণিমা। এ ছবিটা দেখার পর আমার বান্ধবীরা (বৃষ্টি, সিমিম, রিক্তা) সকলে বলল, শাকিব তো বেশ ভালো অভিনয় করেন। আমার বাংলা ছবি তখন তেমন দেখা হতো না। বলিউডের শাহরুখ খানের ছবি দেখা হতো বেশি। শাহরুখ খান ছিল আমার প্রিয় নায়ক। শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম আমার দেখা এফডিসিতে। আমার মনে আছে সেই দিনটার কথা। ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ ছবির সেটে ছিলেন শাকিব। তখন পরিচালক এফআই মানিক ভাই আমার সঙ্গে শাকিবের পরিচয় করিয়ে দেন। তখন বগুড়া থেকে এসে উত্তরায় আমাদের পারিবারিক আত্মীয় রাজু ভাইয়ের বাসায় থেকে আমি ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবির কাজ শুরু করলাম। নায়করাজ রাজ্জাক আংকেলকে আমার মা খুব পছন্দ করতেন। মূলত সিনেমা করতে গেলে এই অঙ্গনের অনেকের সঙ্গে দেখা হবে, এই ভেবে অনেকটা শখের বশে কাজ শুরু করা হয় আমার।
অপুকে শাকিবের প্রথম প্রেমের প্রস্তাব
‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবির জন্য সাভারে শুটিং সেট ফেলা হয়। সেখানে কাজ করতে গিয়ে তাদের সঙ্গে আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। আর এক্ষেত্রে অপুর কথা মতো শাকিব খান এক ধাপ এগিয়ে ছিলেন। অপু বলেন, প্রথম ছবি থেকেই শাকিব আমার দিকে রোমান্টিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত। আমার মা (শেফালী বিশ্বাস) শুটিংয়ে আমার সঙ্গে সবসময়ই থাকতেন। তাই মাকে আমি বেশি দোষ দিতে চাই। কারণ, ছোটবেলা থেকে আমি গার্লস স্কুলে বান্ধবীদের সঙ্গে মিশেছি। বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না আমাদের। তাই তেমন ঘুরতে বের হতে পারতাম না আমি। কড়া শাসনে আমাকে থাকতে হয়েছে। যে কারণে কোনো ছেলেবন্ধু ছিল না আমার। বাড়ি থেকে বাইরে একা কোথাও ছাড়ত না। খুব বেশি শাসন না করলে হয়তো আমার জীবনে এত বড় ভুল হতো না। এসবের কারণে ছেলেমানুষের সঙ্গে একটা নতুনত্ব ছিল আমার কাছে। প্রথম ছবিতে একটি দৃশ্য ছিল যে, দৌড়ে এসে শাকিব খানকে জড়িয়ে ধরার। একটা সময় আমি দৌড়ে আসলেও আমি শাকিবের সামনে এসে ফ্রিজ হয়ে যেতাম। জড়িয়ে ধরতে পারতাম না। তখন পরিচালক মানিক ভাই শটটা ঘুরিয়ে দিলেন। তখন উল্টো শাকিব দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। সেই সময়ের সেই মুহূর্তটি আমার কাছে ভিন্ন রকম ছিল। অপু আরও বলেন, এরপর শাকিব আমাকে বিভিন্নভাবে বলেছে যে, আমি শাকিবের কাছে প্রথম ভালোলাগার মতো একটি মেয়ে। তার জীবনে এর আগে এমন মেয়ে আসেনি। তখন শুটিংয়ে আমি একটা ফোন ব্যবহার করতাম। তখন শুটিং বিরতিতে ইশারা করে আমার কাছে ফোন নাম্বার চাইল একদিন শাকিব। আমি টিসুতে আইভ্রু পেন্সিল দিয়ে লিখে আমার ফোন নাম্বারটা শাকিবকে দিয়েছিলাম। শাকিব এরপর প্রায়ই ফোন দিত। অনেক সময় মা ফোন ধরলে শাকিব ফোন কেটে দিত। আমি ফোন রিসিভ করলে কথা বলত, এমন ঘটনা প্রায়ই হয়েছে। নাম্বারটা দেওয়ার পর ফোনে কথা শুরু হয় আমাদের।
অপুর জন্য শাকিবের বগুড়া- শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং যাওয়া
বগুড়ায় এসএসসি পাস করার পর সিনেমা ছেড়ে ইন্ডিয়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অপু। সেখানে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কারণ, ভারতে অপুর মেজো বোন লতা সিংহ রায় থাকতেন। অপু এ প্রসঙ্গে বলেন, ইন্ডিয়াতে যাওয়ার কারণ হচ্ছে সিনেমা কন্টিনিউ করার ইচ্ছে ছিল না আমার। তখন শাকিব আমার জন্য বেশকিছু দিন বগুড়া গিয়েছিল এবং পরে আমি ইন্ডিয়া যাওয়ার পর বাই রোডে লালমনিরহাট পাটগ্রামের বুড়িমারী বর্ডার হয়ে চেংড়াবান্ধা সীমান্ত দিয়ে শিলিগুড়ি গিয়েছিল শাকিব। লতা দিদি আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছেন। শাকিব খান শিলিগুড়ি যাওয়ার পর দিদি বলল, শাকিব যেহেতু এত দূর এসেছে ঠিক আছে তুই দেখা কর। তিন দিন সেখানে একটি তিন তারকা হোটেলে ছিল শাকিব। এটা ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের কথা বলছিলেন অপু। ওই সময় শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস শুটিংয়ে না একসঙ্গে সময় কাটাতে দার্জিলিংয়ে ঘুরতে যান। আর সেখানে অপুকে দেখতেই মূলত ঢাকা থেকে আসেন শাকিব খান। অপু বিশ্বাস বলেন, সেদিন শাকিবসহ দার্জিলিং যাওয়ার সময় শেবক রাস্তায় একটা বড় কালীমন্দির আছে। সেখানে যেতে চাইলো শাকিব। কারণ, ওয়েদারটা খুবই ভালো ছিল। শাকিব জায়গার প্রেমে পড়ে যায়। আমরা তখন ওই মন্দিরে গেলাম। কেউই বাধা দেয়নি আমাদের। টিয়া কালারের একটি জ্যাকেট ও জিনস প্যান্ট পরেছিল শাকিব। মন্দিরে প্রবেশের পর পুরোহিত প্রশ্ন করলেন, আপনারা কারা ? তখন আমি উত্তরে বললাম, আমরা স্বামী ও স্ত্রী। মজা করেই আমি সেদিন বলেছিলাম। শাকিব বললো, আমি মাড়োয়ারি হিন্দু। তখন পুরোহিত বললো, তোমার স্ত্রীর কপালে সিঁদুর কোথায়। তারপর পুরোহিত শাকিবকে কপালে টিকা ও শাকিব আমার কপালে সিঁদুর দিয়ে দিল। সেই হিসেবে তখনই আমাদের বিয়ে হয়। যখন ঘুরাফেরা শেষ করে শাকিব ঢাকাতে ফিরল। আর ফেরার পথে বাসে শাকিব ফোন করে বলেছিল, সবকিছু রেখে শুধু আমার কলিজা নিয়ে বাসায় ফিরছি। একা ফিরতে খুব খারাপ লাগছে। এরপর আমার একটু একটু ভালো লাগা মনে কাজ করছিল। অপু আরও বলেন, এরপর আমি শাকিবের বিষয়ে ঢাকায় নানাভাবে কিছু খোঁজখবর নিয়ে সম্পর্ক থেকে পিছিয়ে গেলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি অন্য হিরোর বিপরীতে কাজ করব। আমি তখন হিরো মান্না ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম শাকিবের সঙ্গে আমার ভালোবাসাটা এ পর্যন্তই থাক। বিয়ে পর্যন্ত গড়াক এটা চাইনি। রাজ্জাক আংকেলের একটা প্রোডাকশনেও কাজ করার জন্য কথা হলো। তখন আমি ভেবেছি, শাকিবের সঙ্গে ছবি না করলে তো শাকিব আমার কাছ থেকে এমনিতেই দূরে সরে যাবে। শাকিবকে তখন বলেছিলাম, যা হওয়ার হয়েছে। ভালো বন্ধুত্ব আছে, সেটাই থাক আমাদের। এরপর ঢাকায় এসে আবার কাজ শুরু করলাম। কিন্তু শাকিবের খুব কাছের প্রযোজক ও প্রোডাকশন ম্যানেজার মামুনুজ্জামান মামুন ভাই আমার বাসায় এসে প্রায়ই শাকিবের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশংসা করতেন। কখনও খাসির মাংস, মাছ, পোলাও বিভিন্ন কিছু নিয়ে আসতেন। তিনি এসে বলতেন, শাকিব আপনাকে কতটা পছন্দ করেন, তা আপনি জানেন না। ইন্ডিয়া থেকে আসার পর থেকে শুধুই আপনার কথা বলছে। এরপর আস্তে আস্তে আমি শাকিবের প্রতি দুর্বল হলাম। পরে বগুড়ায় সরকারি মুজিবর রহমান মহিলা কলেজে পড়া শেষ করলাম। আর ছবিতে কাজ কন্টিনিউ করা শুরু হলো আমার। ছবিও হিট করা শুরু করল। ঢাকায় একেবারে চলে আসলাম। ব্যস্ততা বাড়ল আমার।
সম্পর্ক ও বিয়ে
জাকির হোসেন রাজুর ‘মনে প্রাণে আছো তুমি’ ছবিতে কাজ করতে গিয়ে আবারও শাকিব অপু এক হয়। এ ছবি করতে গিয়ে আবার ফোনে কথা বলা শুরু হয় শাকিব ও অপুর। সম্পর্ক সামনে এগুতো থাকলো। এরপর আবারও দ্বিতীয়বারের মতো শাকিবের প্রতি দুর্বলতা কাজ করা শুরু করলো অপু বিশ্বাসের। অপু বলেন, তখন শাকিব খান হ্যারিয়ার গাড়ি ব্যবহার করত। তখন আশুলিয়ার প্রিয়াঙ্কায় পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের ‘কথা দাও সাথী হবে’ ছবির শুটিং চলছিল। একদিন গাড়িতে মামুন ভাই, শাকিব ও আমি ছিলাম। হঠাৎ শাকিব মামুন ভাইকে একটা জায়গায় নামিয়ে দিয়ে আমার সঙ্গে গাড়িতে কথা বলা শুরু করল। ওই ছবির শুটিং চলা অবস্থাতেই শাকিব বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তখন মিরপুর শাহ আলী মাজার রোডের একটি বাসায় থাকতাম আমি। শাকিব আমাকে সেদিন বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর আমি শাকিবকে বললাম, এটা সিনেমা না আমার জীবন। স্বামী হিসেবে স্ত্রীকে যেসব মর্যাদা দেয়া উচিত সেগুলো আমি পাব কি-না সেটা জানতে চাই। তখন আমার সব কথা মেনে নিয়েছিল শাকিব। এরপর দুজনের সিদ্ধান্তে বিয়ে হয় আমাদের। ২০০৮ সালের ১৮ই এপ্রিল শুক্রবার বিয়ে হয় আমাদের। মামুন ফরিদপুরে শাকিবের বাড়ির কাছ থেকে মজিবুর রহমান নামের এক কাজী সাহেবকে নিয়ে আসে এবং আমরা বিয়ে করি। বিয়ের পুরো বিষয়টি তখন কেবল আমার মেজ বোন লতা ও শাকিবের চাচাতো ভাই মনির জানতেন। এরপরের গল্পটা সবার জানা।
শাকিবের বাড়িতে অপু
বিয়ের পর শাকিবের বাসায় বেশিরভাগ সময় থাকতেন অপু বিশ্বাস। তবে অনেকটা লুকোচুরি করে থাকতে হয়েছে তাদের। তাই মাঝে মাঝে শুটিং শেষে অপু নিজের বাসায়ও চলে যেতেন। আবার কখনও গভীর রাতে শাকিবের গুলশানের দুইয়ের বাসায় উঠতেন এবং ভোরবেলা নিজের গুলশান নিকেতনের বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে শুটিংয়ে বেরিয়ে পরতেন। অপু বলেন, বিয়ের পর গুলশান দুইয়ে শাকিবের বাসায় উঠলাম আমি। তবে দুজনেই শুটিং থাকার কারণে বেশ ব্যস্ততায় সংসার কাটে আমাদের। এরপর জানলাম, মনি নামে শাকিবের একটা ছোট বোন আছে। পরিবারের অজান্তে অন্য জায়গায় মনি বিয়ে করার কারণে শাকিব মনির সঙ্গে রাগ করে সাত বছর ধরে কথা বলতো না। পরে আমি শাকিবকে বুঝিয়ে মনিকে আমার বাসায় নিয়ে আসলাম। ভাইবোনকে এক করে দিয়েছি। যে কারণে শাকিবের বাসায় এখন মনি থাকেন। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সংসার করতে হয়েছে আমাকে। শাকিবের বাসায় আমার শ্বশুর (আব্দুর রব)-শাশুড়ি (রিজিয়া বেগম) থাকতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় শাকিবের পরিবার আমাকে কেনো পছন্দ করে না, সেটা আমি জানি না। এটা আমার কাছে খুবই কষ্টের। বিয়ের পর শাকিবের জন্য প্রথম রান্না কি ছিল জানতে চাইলে অপু বলেন, আমি শাকিবের জন্য বিয়ের পর প্রথম খিচুড়ি রান্না করেছিলাম। আমার হাতে ডেজার্ট আইটেম খেতে পছন্দ করে শাকিব। পোলাও, মম, ছানার মিষ্টি, বিরিয়ানি-এই ধরনের রিচ ফুড খেতে খুব পছন্দ করে শাকিব। এছাড়া প্রায়ই বগুড়া থেকে দই এনে শাকিবকে খাওয়াতাম। একবার শুটিং করতে ব্যাংককে গিয়ে শাকিব আমাকে ট্রিট দিলো। একটা জাপানিজ রেস্টুরেন্ট ছিল যেখানে খাবারগুলো ঘুরতো চারপাশে। আর নিজের পছন্দমত কাঁচা খাবার রান্না করে খাওয়া যেত। এভাবেই খাবারগুলো রাখা ছিল। ওখানের চিংড়ি টেম্পুরা আমাকে খাওয়াইছে শাকিব। এটা আমার খুব পছন্দের ছিল। ‘নাম্বার ওয়ান শাকিব খান’ ছবির শুটিংয়ে ব্যাংককে প্রথমে সিজলারে খাওয়ানোর পর ওই জাপানিজ রেস্তরাঁয় আমাকে খাওয়ায় শাকিব। এরপর যতবার আমাদের ব্যাংককে যাওয়া হয়েছে ততবার সেই রেস্তরাঁয় খাওয়া হয়েছে আমাদের। শুটিংয়ের বাইরে একবার ফুকেটের ফি ফি আইল্যান্ডে ঘুরতে গিয়েছিলাম আমি ও শাকিব। শুটিংয়ের বাইরে দুজনের তেমন ছবি ওঠানো হতো না। এর কারণ জানতে চাইলে অপু বিশ্বাস বলেন, আমি জানি না। অনেকে শুনলে হইতো বিশ্বাস করবে না যে, আমাদের বিয়ের ছবিটিও ওঠানো হয়নি। আর যেখানে আমরা ঘুরতে যাইতাম শাকিব ছবি ওঠাতে পছন্দ করতো না। তবে ফুকেটের ফি ফি আইল্যান্ডে ঘুরতে গিয়ে সবশেষ আমরা একটি ছবি তুলেছিলাম। তাছাড়া আমরা এত জায়গায় ঘুরেছি দুজনের তেমন কোনো ছবি নেই। পছন্দের মানুষকে উপহার দেয়ার বেলায় প্রথম ছিলেন অপু। সেই বিষয়ে তিনি বলেন, আমি শাকিবকে পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পোশাক পছন্দ করে কিনে দিতাম, অনেক পোশাক উপহারও দিয়েছি। আর শাকিবও আমাকে গলার হীরের মালাসহ বেশকিছু উপহার দিয়েছে।
শাকিব-অপুর সংসার
শাকিবের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে কলকাতার একটি হাসপাতালে নিজে বন্ডে সাইন দেয়ার পর সিজার হয় অপুর। ২০১৬ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর শাকিব ও অপুর ঘরে ছেলে সন্তান আব্রাহাম খান জয় আসে। তারপরও শাকিব এ খবর অপুকে গোপন রাখতে বলেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, দুজনের ক্যারিয়ারের স্বার্থে সন্তান ও বিয়ের কথা গোপন রাখার কথা বলেছিল শাকিব। তবে আমি অনেকদিন লুকোচুরি সংসার করেছি। অপেক্ষাও করেছি অনেকবার। এরপর আর দেরি করতে চাইনি। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে টিভি লাইভে গিয়ে বিয়ে ও সন্তানের বিষয়টি ক্লিয়ার করি। একটানা এই কথাগুলো বলেন অপু বিশ্বাস। বর্তমানে শাকিব বিভিন্ন সিনেমার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আর এবারের ঈদে অপু ও শাকিব অভিনীত একটি ছবি মুক্তি পাবে। বুলবুল বিশ্বাস পরিচালিত এ ছবির নাম ‘রাজনীতি’। এ ছবি মুক্তি পাবার পর আবারও নতুন উদ্যমে কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অপু। আর শরীরের ওজন কমানোর জন্য বনানীর একটি ব্যায়ামাগারে নিয়মিত সময়ও দিচ্ছেন। তবে সকলের প্রত্যাশা শাকিব ও অপু আবারও এক ছাদের নিচে সংসার করবেন। সুখে থাকবেন। কারণ তাদের ঘরে এখন ফুটফুটে সন্তান আব্রাহাম খান জয়। শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের জীবনে পেছনে ফেলা আসা বা সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে সব জটিলতার অবসান হোক এটাই প্রত্যাশা সবার।
সূত্র- মানবজমিন ঈদ আনন্দ ২০১৭
No comments