‘এ পি জে আবদুল কালাম’ আপসহীন আদর্শবাদী by সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়
শিলংয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থীদের এক অনুষ্ঠানে গত সন্ধ্যায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় অসুস্থ্য হয়ে পড়ে যান আবদুল কালাম l ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া |
কোন
বিশেষণ এ পি জে আবদুল কালামের জন্য প্রযোজ্য? সারা ভারত তাঁকে যে নামে
ডেকে এসেছে, সেই ‘মিসাইলম্যান’, অজাতশত্রু, স্বপ্নের ফেরিওয়ালা? নাকি এর সব
কটাই? যাঁদের জন্য তিনি সারাটা জীবন শুধুই ভেবে এসেছেন, যাঁদের মনে কিছু
হওয়ার আগুনটা জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছেন, সেই ছাত্রছাত্রীদের সান্নিধ্যেই
জীবনের শেষনিশ্বাস যখন ছাড়লেন, তখন এসব কটি বিশেষণই তাঁর জন্য উপযুক্ত বলে
মনে হলো।
তিনি ভারতরত্ন হয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি হওয়ার পাঁচ বছর আগে ১৯৯৭ সালে। ২০০২ সালে রাষ্ট্রপতি হওয়ার খোঁজে গোটা বিজেপি নেতৃত্ব যখন কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত, তখনই মুলায়ম সিং যাদব এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় একই সঙ্গে আবদুল কালামের নাম প্রস্তাব করেন। কালাম তত দিনে মিসাইলম্যানের পরিচিতি পেয়ে গেছেন। ১৯৯৮ সালে অটল বিহারি বাজপেয়ির নির্দেশে পোখরান-টু করে ফেলে গোটা বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছেন। ‘অগ্নি’ ও ‘পৃথ্বী’ ক্ষেপণাস্ত্রের বহর বাড়ানোর জন্য তখন তিনি দিনরাত এক করে ফেলছেন। সেই সময়ে রাষ্ট্রপতি হওয়ার অনুরোধ প্রথমে তাঁকে বিস্মিত করেছিল। কিন্তু যখন দেখলেন, সব দল একভাবে একমনে তাঁকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত, তখন না করেননি। শার্ট ও ট্রাউজার্সের বাইরে আর কিছু তিনি তখনো পরতেন না। বাড়িতে লুঙ্গি ও ফতুয়া। রাষ্ট্রপতি হয়ে সেই প্রথম তিনি সমঝোতা করলেন পোশাকের সঙ্গে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রটোকলের জাঁতায় বিদ্ধ হয়েছেন নীরবে।
যে সমঝোতার সঙ্গে তিনি কোনো দিন আপস করেননি, তা হলো আদর্শ। তিনি আদ্যন্ত ভারতবাসী হিসেবে নিজেকে দেখতে চেয়েছেন এবং সেইভাবে জীবন যাপন করেছেন। অধিকাংশ মানুষ যখন ধর্ম, জাতিসত্তা ও দেশের মধ্যে কোনটি প্রাধান্য পাবে সেই দ্বন্দ্বে জেরবার, আবদুল কালাম তখন ছিলেন নির্ভেজাল এক ভারতবাসী। তাঁর সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্তগুলো ছিল ছাত্রছাত্রীদের সাহচর্য। ভবিষ্যৎ ভারতের এই রূপকারদের মনে তিনি জ্বালাতে চেয়েছেন প্রকৃত অর্থে বড় হওয়ার স্বপ্ন। তাঁর দুই বেস্ট সেলার উইংস অব ফায়ার ও ইগনাইটেড মাইন্ডস এই প্রজন্মের নবীনদের স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছে। মনে আছে, এক অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের তিনি বলেছিলেন, ‘ঘুমিয়ে যে স্বপ্ন মানুষ দেখে তা স্বপ্ন নয়। স্বপ্ন সেটাই, যা তোমাকে ঘুমোতে দেবে না।’
আবদুল কালামের রাজনৈতিক সংশ্রব কোনোকালেই ছিল না। সেই কারণে, রাজনীতির বাধ্যবাধকতাও ছিল না তাঁর। ফলে রাষ্ট্রপতি হয়ে রাজনীতির আলোয় কোনো সিদ্ধান্ত তিনি নেননি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাংবিধানিক আবর্তের মধ্যে নিজেকে ধরে রেখেও সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয়টি ছিল লালু প্রসাদের বিহারে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির সিদ্ধান্ত। আবদুল কালামের আপত্তিতে বাজপেয়ি সরকার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছিল।
আবদুল কালাম সিদ্ধান্ত গ্রহণে সব সময় প্রাধান্য দিয়েছেন বিবেক ও দেশকে। ভারতবাসীর দুর্ভাগ্য, এই ঋষিতুল্য এবং আক্ষরিক অর্থে সন্ন্যাসী অথচ পণ্ডিত ব্যক্তিকে দ্বিতীয়বারের জন্য রাষ্ট্রপতি করা হয়নি। কিন্তু তাতে কিছু আসে-যায়নি আবদুল কালামের। শিশুসুলভ হাসি নিয়ে তিনি ফিরে গেছেন তাঁর প্রিয় জগতে, যেখানে তিনি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে নবীন প্রজন্মের মনে প্রকৃত অর্থে বড় ও ভালো মানুষ হওয়ার সলতেয় আগুন ধরিয়ে দিতে চেয়েছেন।
অকৃতদার, মিষ্টভাষী, নিরামিশাষী, স্বল্পাহারি এ পি জে আবদুল কালাম জীবনের শেষ দিনেও চলে যেতে যেতে সেই কাজটিই করে গেলেন।
তিনি ভারতরত্ন হয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি হওয়ার পাঁচ বছর আগে ১৯৯৭ সালে। ২০০২ সালে রাষ্ট্রপতি হওয়ার খোঁজে গোটা বিজেপি নেতৃত্ব যখন কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত, তখনই মুলায়ম সিং যাদব এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় একই সঙ্গে আবদুল কালামের নাম প্রস্তাব করেন। কালাম তত দিনে মিসাইলম্যানের পরিচিতি পেয়ে গেছেন। ১৯৯৮ সালে অটল বিহারি বাজপেয়ির নির্দেশে পোখরান-টু করে ফেলে গোটা বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছেন। ‘অগ্নি’ ও ‘পৃথ্বী’ ক্ষেপণাস্ত্রের বহর বাড়ানোর জন্য তখন তিনি দিনরাত এক করে ফেলছেন। সেই সময়ে রাষ্ট্রপতি হওয়ার অনুরোধ প্রথমে তাঁকে বিস্মিত করেছিল। কিন্তু যখন দেখলেন, সব দল একভাবে একমনে তাঁকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত, তখন না করেননি। শার্ট ও ট্রাউজার্সের বাইরে আর কিছু তিনি তখনো পরতেন না। বাড়িতে লুঙ্গি ও ফতুয়া। রাষ্ট্রপতি হয়ে সেই প্রথম তিনি সমঝোতা করলেন পোশাকের সঙ্গে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রটোকলের জাঁতায় বিদ্ধ হয়েছেন নীরবে।
যে সমঝোতার সঙ্গে তিনি কোনো দিন আপস করেননি, তা হলো আদর্শ। তিনি আদ্যন্ত ভারতবাসী হিসেবে নিজেকে দেখতে চেয়েছেন এবং সেইভাবে জীবন যাপন করেছেন। অধিকাংশ মানুষ যখন ধর্ম, জাতিসত্তা ও দেশের মধ্যে কোনটি প্রাধান্য পাবে সেই দ্বন্দ্বে জেরবার, আবদুল কালাম তখন ছিলেন নির্ভেজাল এক ভারতবাসী। তাঁর সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্তগুলো ছিল ছাত্রছাত্রীদের সাহচর্য। ভবিষ্যৎ ভারতের এই রূপকারদের মনে তিনি জ্বালাতে চেয়েছেন প্রকৃত অর্থে বড় হওয়ার স্বপ্ন। তাঁর দুই বেস্ট সেলার উইংস অব ফায়ার ও ইগনাইটেড মাইন্ডস এই প্রজন্মের নবীনদের স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছে। মনে আছে, এক অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের তিনি বলেছিলেন, ‘ঘুমিয়ে যে স্বপ্ন মানুষ দেখে তা স্বপ্ন নয়। স্বপ্ন সেটাই, যা তোমাকে ঘুমোতে দেবে না।’
আবদুল কালামের রাজনৈতিক সংশ্রব কোনোকালেই ছিল না। সেই কারণে, রাজনীতির বাধ্যবাধকতাও ছিল না তাঁর। ফলে রাষ্ট্রপতি হয়ে রাজনীতির আলোয় কোনো সিদ্ধান্ত তিনি নেননি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাংবিধানিক আবর্তের মধ্যে নিজেকে ধরে রেখেও সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয়টি ছিল লালু প্রসাদের বিহারে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির সিদ্ধান্ত। আবদুল কালামের আপত্তিতে বাজপেয়ি সরকার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছিল।
আবদুল কালাম সিদ্ধান্ত গ্রহণে সব সময় প্রাধান্য দিয়েছেন বিবেক ও দেশকে। ভারতবাসীর দুর্ভাগ্য, এই ঋষিতুল্য এবং আক্ষরিক অর্থে সন্ন্যাসী অথচ পণ্ডিত ব্যক্তিকে দ্বিতীয়বারের জন্য রাষ্ট্রপতি করা হয়নি। কিন্তু তাতে কিছু আসে-যায়নি আবদুল কালামের। শিশুসুলভ হাসি নিয়ে তিনি ফিরে গেছেন তাঁর প্রিয় জগতে, যেখানে তিনি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে নবীন প্রজন্মের মনে প্রকৃত অর্থে বড় ও ভালো মানুষ হওয়ার সলতেয় আগুন ধরিয়ে দিতে চেয়েছেন।
অকৃতদার, মিষ্টভাষী, নিরামিশাষী, স্বল্পাহারি এ পি জে আবদুল কালাম জীবনের শেষ দিনেও চলে যেতে যেতে সেই কাজটিই করে গেলেন।
No comments