‘তাঁর হাসি ছিল শিশুর মতো অমলিন’ by সমরজিৎ রায়
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম জন্ম: ১৫ অক্টোবর, ১৯৩১ l মৃত্যু: ২৭ জুলাই, ২০১৫ |
আমার
সৌভাগ্য হয়েছে একজন অসাধারণ মানুষ, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ডক্টর এ পি জে
আবদুল কালামের সঙ্গে তিনবার মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেওয়ার। ঘটনাগুলো ভারতের
রাষ্ট্রপতি ভবনের। একটু খুলেই বলি। গান্ধর্ব মহাবিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট
থাকার সুবাদে দিল্লিতে প্রায় সবগুলো সরকারি অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নেয়ার
সুযোগ হয়।
প্রতি বছর ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন ও ৩০ জানুয়ারি মৃত্যুদিবসে তাঁর সমাধিস্থল রাজঘাটে সর্বধর্ম প্রার্থনা অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, সোনিয়া গান্ধী থেকে শুরু করে সব বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ উপস্থিত থাকেন। যখন ডক্টর এ পি জে আবদুল কালাম রাষ্ট্রপতি হয়ে প্রথম এই অনুষ্ঠানে আসেন তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন সকালবেলার রাজঘাটের অনুষ্ঠানের পরপরই একই অনুষ্ঠান রাষ্ট্রপতি ভবনেও রাখবেন। শুধু তাই নয়, অনুষ্ঠানের পরে শিল্পীদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। তাঁর এমন সিদ্ধান্তে আমরা অনেক বেশি খুশি ছিলাম, এত সহজ-সরল ও বিখ্যাত একজন মানুষের সঙ্গে খুব কাছে থেকে মেশার সুযোগ পাব বলে। কথাবার্তায় মনে হয়েছে তিনি ছিলেন বেশ সংগীতপ্রিয় মানুষ। যদিওবা এ অনুষ্ঠানের জন্য আমরা কোনো পারিশ্রমিক পেতাম না তবুও যে সম্মান তিনি আমাদের শিল্পীদের দিতেন সেটা বোঝানোর মতো ভাষা আমার নেই।
অনুষ্ঠানে আমি আমার গুরুজী পদ্মশ্রী পণ্ডিত মধুপ মুদ্গলের সঙ্গে ভজন গাওয়ার জন্য যেতাম। অনুষ্ঠানের পরে আবদুল কালাম নিজে এসে মুগ্ধ হাসিতে আমাদের গানের প্রশংসা করতেন। তাঁর হাসি ছিল ঠিক ছোট্ট একটি শিশুর মতো অমলিন। এরপরে সবাইকে নিয়ে তিনি মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিতেন এবং প্রাণ খুলে কথাও বলতেন। এমনকি আমাদের সবার পরিবারের খোঁজ ও নিতেন। তিনি নিজেও নিরামিষভোজী ছিলেন এবং আমাদের সবার জন্যও ভোজনে নিরামিষই থাকত। আমার এখনো মনে আছে, দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি ভবনের একই অনুষ্ঠানের পরে আমরা সবাই যখন খাচ্ছিলাম তখন ভিড়ের মধ্যে তাঁর গায়ের সঙ্গে আমার খাবারের প্লেটের ধাক্কা লেগে যাওয়ায় খুব লজ্জিত হয়ে গেলাম। সেটা বুঝতে পেরে উনি নিজেই আশ্বস্ত করলেন যে, উনি কিছুই মনে করেননি। এরপরেও আমার চোখেমুখে উৎকণ্ঠা দেখে উনি আমার সঙ্গে সংগীত এবং আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে খেতে খেতে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলে আমাকে স্বাভাবিক করলেন, এতটাই সাধারণভাবে তিনি মিশতেন সবার সঙ্গে। সত্যি এত বড় মানুষ হয়েও এমন অমায়িক ব্যবহার আমি দেখিনি কোনো দিন। এ ছাড়াও, অসংখ্য অনুষ্ঠানে ওনার সামনে গাওয়ার সুযোগ হয়েছে যা ভারতের বিভিন্ন টিভিতে দেখানো হতো। তাঁর নিষ্পাপ চেহারা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ওনার মৃত্যুসংবাদটি শুনে বুকের ভেতরটা কেমন যেন দুমড়ে মুচড়ে উঠল। শত বছরেও এমন একজন মানুষের জন্ম হয় কী না আমার সন্দেহ।
লেখক: সংগীত শিক্ষক, গান্ধর্ব মহাবিদ্যালয়, নয়াদিল্লি
প্রতি বছর ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন ও ৩০ জানুয়ারি মৃত্যুদিবসে তাঁর সমাধিস্থল রাজঘাটে সর্বধর্ম প্রার্থনা অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, সোনিয়া গান্ধী থেকে শুরু করে সব বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ উপস্থিত থাকেন। যখন ডক্টর এ পি জে আবদুল কালাম রাষ্ট্রপতি হয়ে প্রথম এই অনুষ্ঠানে আসেন তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন সকালবেলার রাজঘাটের অনুষ্ঠানের পরপরই একই অনুষ্ঠান রাষ্ট্রপতি ভবনেও রাখবেন। শুধু তাই নয়, অনুষ্ঠানের পরে শিল্পীদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। তাঁর এমন সিদ্ধান্তে আমরা অনেক বেশি খুশি ছিলাম, এত সহজ-সরল ও বিখ্যাত একজন মানুষের সঙ্গে খুব কাছে থেকে মেশার সুযোগ পাব বলে। কথাবার্তায় মনে হয়েছে তিনি ছিলেন বেশ সংগীতপ্রিয় মানুষ। যদিওবা এ অনুষ্ঠানের জন্য আমরা কোনো পারিশ্রমিক পেতাম না তবুও যে সম্মান তিনি আমাদের শিল্পীদের দিতেন সেটা বোঝানোর মতো ভাষা আমার নেই।
অনুষ্ঠানে আমি আমার গুরুজী পদ্মশ্রী পণ্ডিত মধুপ মুদ্গলের সঙ্গে ভজন গাওয়ার জন্য যেতাম। অনুষ্ঠানের পরে আবদুল কালাম নিজে এসে মুগ্ধ হাসিতে আমাদের গানের প্রশংসা করতেন। তাঁর হাসি ছিল ঠিক ছোট্ট একটি শিশুর মতো অমলিন। এরপরে সবাইকে নিয়ে তিনি মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিতেন এবং প্রাণ খুলে কথাও বলতেন। এমনকি আমাদের সবার পরিবারের খোঁজ ও নিতেন। তিনি নিজেও নিরামিষভোজী ছিলেন এবং আমাদের সবার জন্যও ভোজনে নিরামিষই থাকত। আমার এখনো মনে আছে, দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি ভবনের একই অনুষ্ঠানের পরে আমরা সবাই যখন খাচ্ছিলাম তখন ভিড়ের মধ্যে তাঁর গায়ের সঙ্গে আমার খাবারের প্লেটের ধাক্কা লেগে যাওয়ায় খুব লজ্জিত হয়ে গেলাম। সেটা বুঝতে পেরে উনি নিজেই আশ্বস্ত করলেন যে, উনি কিছুই মনে করেননি। এরপরেও আমার চোখেমুখে উৎকণ্ঠা দেখে উনি আমার সঙ্গে সংগীত এবং আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে খেতে খেতে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলে আমাকে স্বাভাবিক করলেন, এতটাই সাধারণভাবে তিনি মিশতেন সবার সঙ্গে। সত্যি এত বড় মানুষ হয়েও এমন অমায়িক ব্যবহার আমি দেখিনি কোনো দিন। এ ছাড়াও, অসংখ্য অনুষ্ঠানে ওনার সামনে গাওয়ার সুযোগ হয়েছে যা ভারতের বিভিন্ন টিভিতে দেখানো হতো। তাঁর নিষ্পাপ চেহারা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ওনার মৃত্যুসংবাদটি শুনে বুকের ভেতরটা কেমন যেন দুমড়ে মুচড়ে উঠল। শত বছরেও এমন একজন মানুষের জন্ম হয় কী না আমার সন্দেহ।
লেখক: সংগীত শিক্ষক, গান্ধর্ব মহাবিদ্যালয়, নয়াদিল্লি
No comments