সিটি করপোরেশন নির্বাচন গাজীপুরে জয় পেতে মরিয়া আ.লীগ by শরিফুল হাসান ও মাসুদ রানা
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রধান
দুই প্রার্থীকে ছাড়িয়ে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু এখন জাহাঙ্গীর আলম।
আওয়ামী লীগ বলছে, জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে দলের মূল প্রার্থী
আজমত উল্লা খানকে সমর্থন দিয়েছেন।
তবে জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, কৌশলগত কারণে তিনি এলাকায় নেই। তবে নির্বাচনী আইনের কারণে ব্যালটে তাঁর প্রতীক থাকছে।
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজমত উল্লা খান। তাঁর প্রতীক দোয়াত-কলম। আর জাহাঙ্গীর সম্মিলিত নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর প্রতীক আনারস। বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নানের প্রতীক টেলিভিশন। আজমত উল্লা এবং এম এ মান্নান গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে প্রচারণা চালালেও ভোটারদের মধ্যে আলোচনা ছিল জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে। অভিযোগ আছে, তাঁকে নির্বাচন থেকে জোর করে সরিয়ে দিয়েছে সরকারি দল। তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, নির্বাচন করার ইচ্ছা থাকলেও প্রশাসনের ভয়ে তিনি এলাকায় আসছেন না, গণমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলছেন না। এমনকি তিনি কোথায় আছেন, তা-ও কাউকে জানাচ্ছেন না।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগ যেকোনো মূল্যে গাজীপুরের নির্বাচনে জয়ী হতে চায়। আর সে কারণেই তারা এখানে একক প্রার্থীর পক্ষে। কিন্তু দলের নির্দেশ না মেনে জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে অনড় থাকেন। নির্বাচন কমিশন তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করলেও আদালতে গিয়ে প্রতীক পান। জাহাঙ্গীরের অনড় অবস্থানের কারণে তাঁকে অনেকটা জোর করেই নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ। শুধু তা-ই নয়, নির্বাচনের মাঠে থাকলে সমস্যা হবে—এমন হুমকিও তাঁকে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এখন এমন যে, জাহাঙ্গীর যে দলের রাজনীতি করতেন, সেই আওয়ামী লীগই তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রু। ফলে ভয়ে তিনি কোনো কথাই বলতে চাইছেন না। এমনকি তিন দিন ধরে গাজীপুরে আসছেন না তিনি।
ক্ষমতাসীন দল ও আজমত উল্লার জয়ের পথেও এখন সবচেয়ে বড় বাধা জাহাঙ্গীর। কারণ, নির্ধারিত সময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় ব্যালটে জাহাঙ্গীরের ‘আনারস’ প্রতীক ঠিকই থাকবে। আর এই সুযোগটাই নিতে চাইছেন তাঁর সমর্থকেরা। জাহাঙ্গীরকে নির্বাচন থেকে জোর করে সরিয়ে দেওয়ার কারণে ক্ষুব্ধ কর্মীরা আজমত উল্লার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চাইছেন। আজমত আর জাহাঙ্গীরের এই দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত সুবিধা পেতে পারেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নান।
জাহাঙ্গীর এত গুরুত্বপূর্ণ কেন: গাজীপুরের নির্বাচনে হঠাৎ করে কেন জাহাঙ্গীর এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন—এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, ছাত্রলীগের সাবেক এই কেন্দ্রীয় নেতা ২০০৯ সালের নির্বাচনে গাজীপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। যেকোনো সংকটে এলাকার ও দলের লোকজন তাঁর কাছে গিয়ে সমাধান পেতেন। ফলে গত চার বছরে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ঝুট কাপড়ের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের কারণে তিনি দ্রুত সম্পদশালী হয়ে ওঠেন। নানা জায়গায় টাকা খরচ করতে থাকেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে থেকে এলাকার উন্নয়নকাজের সুযোগ না থাকলেও নিজের আয় থেকেই তিনি গাজীপুরে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ করেন। সর্বশেষ গাজীপুর সিটি করপোরেশন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে অনেকগুলো কর্মসূচি পালন করেছেন তিনি। টাকা আর দলে জনপ্রিয়তা—এ দুইয়ের কারণে তাঁর বিশাল কর্মী বাহিনী গড়ে ওঠে। এসব সম্বল করেই সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হন জাহাঙ্গীর আলম।
প্রার্থিতা নিয়ে যা হলো: অন্যদিকে শুরু থেকেই গাজীপুরে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন আজমত উল্লা। কিন্তু দলের সমর্থন পাবেন না বুঝতে পেরেও জাহাঙ্গীর নির্বাচন করতে মরিয়া ছিলেন। সে কারণেই ২ জুন গাজীপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর ৬ জুন তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু তাঁর পদত্যাগপত্র-সম্পর্কিত কাগজপত্র পাওয়া যায়নি বলে ১০ জুন যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিনে মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পরদিনই বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করেন তিনি। ১৩ জুন সেই আপিলও খারিজ হয়ে যায়। এরপর হাইকোর্টে ছোটেন। ১৬ জুন আদালত তাঁর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে প্রতীক বরাদ্দের নির্দেশ দেন। ১৮ জুন লটারির মাধ্যমে আনারস প্রতীক পান তিনি। এই প্রতীক আজমত উল্লার পছন্দ ছিল।
গাজীপুর পৌর আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, প্রতীক বরাদ্দের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জাহাঙ্গীরের পোস্টারে ছেয়ে যায় গাজীপুর। বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে প্রচারণায় নামেন তিনি। কিন্তু গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টঙ্গীতে প্রচারণা চালানোর সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদারের নেতৃত্বে একটি দল এসে তাঁকে অনেকটা জোর করেই ঢাকায় নিয়ে যায়। রাতে সংসদ ভবনে তাঁর সঙ্গে তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বৈঠকে জাহাঙ্গীরকে নির্বাচন থেকে সরে আসতে বলেন। এর বদলে আজমত উল্লা খানকে জয়ী করে আনার জন্য কাজ করতে বলেন।
বাড়ির সামনে কর্মীদের ভিড়: ওই বৈঠকের পরই গাজীপুরে খবর ছড়িয়ে পড়ে, জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে ওই রাতের পর থেকে গত তিন দিনে জাহাঙ্গীরকে এলাকায় দেখা যায়নি। গতকাল শহরের বাসনসড়ক এলাকায় তাঁর ভাড়া বাসায় গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। শত শত নেতা-কর্মীকে বাড়ির সামনে দেখা যায়। গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার কানাইয়া গিয়েও নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখা যায়। তবে জাহাঙ্গীরের দেখা মেলেনি।
সেখানে কথা হয় জাহাঙ্গীরের কর্মী শ্রমিকনেতা সৈয়দ আবদুল জলিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এলাকায় জাহাঙ্গীর না থাকলেও ব্যালটে তাঁর আনারস থাকবে, তাই আমরা আনারসেই ভোট দেব।’ ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জাহাঙ্গীরকে চাই, তিনি মিডিয়ার সামনে এসে বললে তবেই বিশ্বাস করব, তিনি সরে গেছেন। নইলে আমরা তাঁর পক্ষেই আছি।’
তিন দিন ধরে জাহাঙ্গীরের দুটো মুঠোফোনই বন্ধ। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা বলেছেন, জাহাঙ্গীর শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে চান। কিন্তু দল থেকে তাঁকে বলে দেওয়া হয়েছে, গাজীপুরে গেলে আজমত উল্লার পক্ষেই প্রচারণা চালাতে হবে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো বিতর্কিত মন্তব্য না করার জন্য তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরকে সেদিন গাজীপুর থেকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন, জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার বলেন, ‘এ নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। জাহাঙ্গীর স্বেচ্ছায় আমাদের সঙ্গে এসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, আজমত উল্লাকে জয়ী করতে পারলে তিনি বড় পুরস্কার পাবেন। আপনারা কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁকে আজমত উল্লার পক্ষে মাঠে পাবেন।’
আজমত উল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে তাঁর বিশাল কর্মী বাহিনী রয়েছে। সেই কর্মী বাহিনী নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। আমাদের জয় হবেই।’
জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত গাজীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াজ উদ্দিন মিয়া বলেন, ‘সর্বশেষ গত বুধবার রাত একটার দিকে তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। জাহাঙ্গীর বলেছেন, তিনি খুব কষ্টে আছেন।’
বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নানের মত, নির্বাচন থেকে জাহাঙ্গীরকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি অন্যায়। তাঁকে নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়া উচিত।
জাহাঙ্গীর কোথায় জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জাহাঙ্গীর লিখিত দিয়েছেন যে, স্বেচ্ছায় তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে তাঁর মন খারাপ। কয়েক দিন সময় নিয়েছেন। তবে খুব শিগগিরই তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় নামবেন। আর তিনি নিজে নামলে তাঁর প্রতীক থাকলেও কোনো সমস্যা হবে না।’
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজমত উল্লা খান। তাঁর প্রতীক দোয়াত-কলম। আর জাহাঙ্গীর সম্মিলিত নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর প্রতীক আনারস। বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নানের প্রতীক টেলিভিশন। আজমত উল্লা এবং এম এ মান্নান গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে প্রচারণা চালালেও ভোটারদের মধ্যে আলোচনা ছিল জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে। অভিযোগ আছে, তাঁকে নির্বাচন থেকে জোর করে সরিয়ে দিয়েছে সরকারি দল। তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, নির্বাচন করার ইচ্ছা থাকলেও প্রশাসনের ভয়ে তিনি এলাকায় আসছেন না, গণমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলছেন না। এমনকি তিনি কোথায় আছেন, তা-ও কাউকে জানাচ্ছেন না।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগ যেকোনো মূল্যে গাজীপুরের নির্বাচনে জয়ী হতে চায়। আর সে কারণেই তারা এখানে একক প্রার্থীর পক্ষে। কিন্তু দলের নির্দেশ না মেনে জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে অনড় থাকেন। নির্বাচন কমিশন তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করলেও আদালতে গিয়ে প্রতীক পান। জাহাঙ্গীরের অনড় অবস্থানের কারণে তাঁকে অনেকটা জোর করেই নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ। শুধু তা-ই নয়, নির্বাচনের মাঠে থাকলে সমস্যা হবে—এমন হুমকিও তাঁকে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এখন এমন যে, জাহাঙ্গীর যে দলের রাজনীতি করতেন, সেই আওয়ামী লীগই তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রু। ফলে ভয়ে তিনি কোনো কথাই বলতে চাইছেন না। এমনকি তিন দিন ধরে গাজীপুরে আসছেন না তিনি।
ক্ষমতাসীন দল ও আজমত উল্লার জয়ের পথেও এখন সবচেয়ে বড় বাধা জাহাঙ্গীর। কারণ, নির্ধারিত সময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় ব্যালটে জাহাঙ্গীরের ‘আনারস’ প্রতীক ঠিকই থাকবে। আর এই সুযোগটাই নিতে চাইছেন তাঁর সমর্থকেরা। জাহাঙ্গীরকে নির্বাচন থেকে জোর করে সরিয়ে দেওয়ার কারণে ক্ষুব্ধ কর্মীরা আজমত উল্লার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চাইছেন। আজমত আর জাহাঙ্গীরের এই দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত সুবিধা পেতে পারেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নান।
জাহাঙ্গীর এত গুরুত্বপূর্ণ কেন: গাজীপুরের নির্বাচনে হঠাৎ করে কেন জাহাঙ্গীর এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন—এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, ছাত্রলীগের সাবেক এই কেন্দ্রীয় নেতা ২০০৯ সালের নির্বাচনে গাজীপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। যেকোনো সংকটে এলাকার ও দলের লোকজন তাঁর কাছে গিয়ে সমাধান পেতেন। ফলে গত চার বছরে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ঝুট কাপড়ের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের কারণে তিনি দ্রুত সম্পদশালী হয়ে ওঠেন। নানা জায়গায় টাকা খরচ করতে থাকেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে থেকে এলাকার উন্নয়নকাজের সুযোগ না থাকলেও নিজের আয় থেকেই তিনি গাজীপুরে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ করেন। সর্বশেষ গাজীপুর সিটি করপোরেশন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে অনেকগুলো কর্মসূচি পালন করেছেন তিনি। টাকা আর দলে জনপ্রিয়তা—এ দুইয়ের কারণে তাঁর বিশাল কর্মী বাহিনী গড়ে ওঠে। এসব সম্বল করেই সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হন জাহাঙ্গীর আলম।
প্রার্থিতা নিয়ে যা হলো: অন্যদিকে শুরু থেকেই গাজীপুরে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন আজমত উল্লা। কিন্তু দলের সমর্থন পাবেন না বুঝতে পেরেও জাহাঙ্গীর নির্বাচন করতে মরিয়া ছিলেন। সে কারণেই ২ জুন গাজীপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর ৬ জুন তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু তাঁর পদত্যাগপত্র-সম্পর্কিত কাগজপত্র পাওয়া যায়নি বলে ১০ জুন যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিনে মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পরদিনই বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করেন তিনি। ১৩ জুন সেই আপিলও খারিজ হয়ে যায়। এরপর হাইকোর্টে ছোটেন। ১৬ জুন আদালত তাঁর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে প্রতীক বরাদ্দের নির্দেশ দেন। ১৮ জুন লটারির মাধ্যমে আনারস প্রতীক পান তিনি। এই প্রতীক আজমত উল্লার পছন্দ ছিল।
গাজীপুর পৌর আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, প্রতীক বরাদ্দের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জাহাঙ্গীরের পোস্টারে ছেয়ে যায় গাজীপুর। বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে প্রচারণায় নামেন তিনি। কিন্তু গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টঙ্গীতে প্রচারণা চালানোর সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদারের নেতৃত্বে একটি দল এসে তাঁকে অনেকটা জোর করেই ঢাকায় নিয়ে যায়। রাতে সংসদ ভবনে তাঁর সঙ্গে তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বৈঠকে জাহাঙ্গীরকে নির্বাচন থেকে সরে আসতে বলেন। এর বদলে আজমত উল্লা খানকে জয়ী করে আনার জন্য কাজ করতে বলেন।
বাড়ির সামনে কর্মীদের ভিড়: ওই বৈঠকের পরই গাজীপুরে খবর ছড়িয়ে পড়ে, জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে ওই রাতের পর থেকে গত তিন দিনে জাহাঙ্গীরকে এলাকায় দেখা যায়নি। গতকাল শহরের বাসনসড়ক এলাকায় তাঁর ভাড়া বাসায় গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। শত শত নেতা-কর্মীকে বাড়ির সামনে দেখা যায়। গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার কানাইয়া গিয়েও নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখা যায়। তবে জাহাঙ্গীরের দেখা মেলেনি।
সেখানে কথা হয় জাহাঙ্গীরের কর্মী শ্রমিকনেতা সৈয়দ আবদুল জলিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এলাকায় জাহাঙ্গীর না থাকলেও ব্যালটে তাঁর আনারস থাকবে, তাই আমরা আনারসেই ভোট দেব।’ ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জাহাঙ্গীরকে চাই, তিনি মিডিয়ার সামনে এসে বললে তবেই বিশ্বাস করব, তিনি সরে গেছেন। নইলে আমরা তাঁর পক্ষেই আছি।’
তিন দিন ধরে জাহাঙ্গীরের দুটো মুঠোফোনই বন্ধ। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা বলেছেন, জাহাঙ্গীর শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে চান। কিন্তু দল থেকে তাঁকে বলে দেওয়া হয়েছে, গাজীপুরে গেলে আজমত উল্লার পক্ষেই প্রচারণা চালাতে হবে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো বিতর্কিত মন্তব্য না করার জন্য তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরকে সেদিন গাজীপুর থেকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন, জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার বলেন, ‘এ নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। জাহাঙ্গীর স্বেচ্ছায় আমাদের সঙ্গে এসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, আজমত উল্লাকে জয়ী করতে পারলে তিনি বড় পুরস্কার পাবেন। আপনারা কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁকে আজমত উল্লার পক্ষে মাঠে পাবেন।’
আজমত উল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে তাঁর বিশাল কর্মী বাহিনী রয়েছে। সেই কর্মী বাহিনী নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। আমাদের জয় হবেই।’
জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত গাজীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াজ উদ্দিন মিয়া বলেন, ‘সর্বশেষ গত বুধবার রাত একটার দিকে তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। জাহাঙ্গীর বলেছেন, তিনি খুব কষ্টে আছেন।’
বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নানের মত, নির্বাচন থেকে জাহাঙ্গীরকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি অন্যায়। তাঁকে নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়া উচিত।
জাহাঙ্গীর কোথায় জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জাহাঙ্গীর লিখিত দিয়েছেন যে, স্বেচ্ছায় তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে তাঁর মন খারাপ। কয়েক দিন সময় নিয়েছেন। তবে খুব শিগগিরই তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় নামবেন। আর তিনি নিজে নামলে তাঁর প্রতীক থাকলেও কোনো সমস্যা হবে না।’
No comments