হৃদয়ের দৃষ্টি by মাহফুজুর রহমান মানিক
নীরবতা অনেক কথা বলে। এর প্রচণ্ড এক শক্তি
আছে। অনেক সময় কথা বলে যা কাউকে বোঝানো যায় না নীরবতা তা অনায়াসে বুঝিয়ে
দেয়। সরবতার চেয়ে নীরবতা বেশি কিছু বলে কিনা জানা নেই।
দৃষ্টিহীনরা বোধহয় দৃষ্টিশক্তিসম্পন্নদের চেয়ে বেশিই দেখেন। দু'চোখ দিয়ে
যারা এই বিস্ময়কর পৃথিবী দেখতে পান না, তারা হৃদয় দিয়ে দেখেন। হৃদয়ের চোখ
দিয়ে তারা অনুভবের চেষ্টা করেন_ কী সুন্দর এই পৃথিবী! এ সুন্দরের মাঝে তারা
বাঁচতে চান। লড়াই করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান। অসহায়ত্বের বদলে তেজোদীপ্ত,
প্রেরণাদায়ী মানুষ হিসেবেই তারা আমাদের কাছে ধরা দেন। শাহীনুর ঠিক তাদেরই
একজন। কথা শুনলে বোঝা যাবে না দু'চোখে দুনিয়ার কিছুই সে দেখে না। ১৫ বছর
বয়সী মেয়েটি পড়াশোনা করে সিরাজগঞ্জের এক অজপাড়াগাঁয়ে। পঞ্চম শ্রেণী পড়ূয়া
শাহীনুর নিয়মিত স্কুলে যায়। স্কুলে তার ক্লাসে গিয়ে তাকে পাওয়া গেল একেবারে
সামনের বেঞ্চে। নিজ ইচ্ছায় পড়াশোনা করছে, ভবিষ্যতে যে কোনোভাবেই হোক তা
চালিয়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় সে। শিক্ষকরা বলছেন, প্রতিদিন ক্লাসের পড়া
পড়ে আসে শাহীনুর। চাইল্ড সাইট ফাউন্ডেশন (সিএসএফ) নামের একটি সংস্থা তাকে
ব্রেইল বই দিয়েছে। ক্লাসে প্রবেশ করলেই শিক্ষকদের বলে, আমার আগে পড়া নেন।
পড়াশোনার উৎসাহের কথা শাহীনুরের বাড়ি গিয়ে মা-বাবার কাছেও জানা গেল। ভাই
তাকে বাড়িতে পড়তে সাহায্য করে।
শাহীনুরের গল্প শেষ হয় না। তারপরও আমরা চলে যাই ফোরকানের কাছে। মানুষ তাকে ডাকে ফোরকানুল্লা বলে। একেবারে ছোট্ট ছেলেটি। ৪-৫ বছর মাত্র বয়স। শাহজাদপুরেরই এই ফোরকানের সৃজনশীলতায় যে কেউ অবাক হবেন। স্টিলের গ্গ্নাস আর বাটি দিয়ে এক অসাধারণ সুরের মূর্ছনা সৃষ্টি করতে পারে ফোরকান। দুই হাত চালনা করে তার এই মূর্ছনা যখন সবাই শুনছে, তখনই গান বেজে উঠল 'আমি পাপী অপরাধী দয়াল দয়া...'। শাহীনুর আর ফোরকানের মতো আরেক প্রতিভার দেখা মিলল। ৭-৮ বছরের শিশুটির গান শুনে বিমোহিত হই। এভাবে একের পর এক গল্প হয়ে আমাদের সামনে ধরা দেয় শাহীনুরদের বন্ধুরা। হৃদয় নাড়া দেওয়া গল্পগুলো সব শোনার সময় হয় না। তারপরও আমরা বোঝার চেষ্টা করি দৃষ্টিহীন হলেও আসলে কতটা দেখছে তারা। বৃহস্পতিবার সিএসএফের আমন্ত্রণে সাংবাদিক দলের একজন হিসেবে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর গিয়ে গল্পগুলো জানার ও দেখার সুযোগ হয়।
এসব দেখে আমরা হিসাব করি, এ রকম গল্প রচনা করে চলেছেন কতজন। সিএসএফের তথ্য থেকে জানা গেল, দেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা ৪০ হাজার। এদের মধ্যে ঠিক কতজন শাহীনুরের মতো বিদ্যালয়ে যায়, তা জানা নেই। তবে পরিসংখ্যান বলছে, এদের অধিকাংশই নানা কারণে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। বিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবন্ধীদের জন্য অবকাঠামো, শিক্ষা-সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, পরিবেশ ইত্যাদি নেই বললেই চলে। অনেক বিদ্যালয় তাদের ভর্তি করাতেই ইচ্ছুক নয়। তাদের শিক্ষার জন্য অডিও, বইসহ ব্রেইল উপকরণও নেই। এর সঙ্গে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা তো রয়েছেই। এসবের মধ্যে শাহীনুরদের সংগ্রাম দেখে আমরা একটু স্বস্তি পাই। এরপরও যে তাদের সাপোর্ট দরকার, তা তার কথা থেকেই জানা গেল 'আপনারা থাকলে তো পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারব।' প্রত্যেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরই এ রকম সাপোর্ট খুব জরুরি। সরকার, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান নির্বিশেষ সবাই এগিয়ে এলে তারাও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে। নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। একটু সুযোগ পেলেই হয়তো তারা প্রমাণ করতে পারবে তাদের 'হৃদয়ের দৃষ্টি' স্বভাবিক দৃষ্টির চেয়েও অনেক শক্তিশালী।
mahfuz.manik@gmail.com
শাহীনুরের গল্প শেষ হয় না। তারপরও আমরা চলে যাই ফোরকানের কাছে। মানুষ তাকে ডাকে ফোরকানুল্লা বলে। একেবারে ছোট্ট ছেলেটি। ৪-৫ বছর মাত্র বয়স। শাহজাদপুরেরই এই ফোরকানের সৃজনশীলতায় যে কেউ অবাক হবেন। স্টিলের গ্গ্নাস আর বাটি দিয়ে এক অসাধারণ সুরের মূর্ছনা সৃষ্টি করতে পারে ফোরকান। দুই হাত চালনা করে তার এই মূর্ছনা যখন সবাই শুনছে, তখনই গান বেজে উঠল 'আমি পাপী অপরাধী দয়াল দয়া...'। শাহীনুর আর ফোরকানের মতো আরেক প্রতিভার দেখা মিলল। ৭-৮ বছরের শিশুটির গান শুনে বিমোহিত হই। এভাবে একের পর এক গল্প হয়ে আমাদের সামনে ধরা দেয় শাহীনুরদের বন্ধুরা। হৃদয় নাড়া দেওয়া গল্পগুলো সব শোনার সময় হয় না। তারপরও আমরা বোঝার চেষ্টা করি দৃষ্টিহীন হলেও আসলে কতটা দেখছে তারা। বৃহস্পতিবার সিএসএফের আমন্ত্রণে সাংবাদিক দলের একজন হিসেবে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর গিয়ে গল্পগুলো জানার ও দেখার সুযোগ হয়।
এসব দেখে আমরা হিসাব করি, এ রকম গল্প রচনা করে চলেছেন কতজন। সিএসএফের তথ্য থেকে জানা গেল, দেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা ৪০ হাজার। এদের মধ্যে ঠিক কতজন শাহীনুরের মতো বিদ্যালয়ে যায়, তা জানা নেই। তবে পরিসংখ্যান বলছে, এদের অধিকাংশই নানা কারণে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। বিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবন্ধীদের জন্য অবকাঠামো, শিক্ষা-সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, পরিবেশ ইত্যাদি নেই বললেই চলে। অনেক বিদ্যালয় তাদের ভর্তি করাতেই ইচ্ছুক নয়। তাদের শিক্ষার জন্য অডিও, বইসহ ব্রেইল উপকরণও নেই। এর সঙ্গে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা তো রয়েছেই। এসবের মধ্যে শাহীনুরদের সংগ্রাম দেখে আমরা একটু স্বস্তি পাই। এরপরও যে তাদের সাপোর্ট দরকার, তা তার কথা থেকেই জানা গেল 'আপনারা থাকলে তো পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারব।' প্রত্যেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরই এ রকম সাপোর্ট খুব জরুরি। সরকার, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান নির্বিশেষ সবাই এগিয়ে এলে তারাও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে। নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। একটু সুযোগ পেলেই হয়তো তারা প্রমাণ করতে পারবে তাদের 'হৃদয়ের দৃষ্টি' স্বভাবিক দৃষ্টির চেয়েও অনেক শক্তিশালী।
mahfuz.manik@gmail.com
No comments