শ্বেতহস্তী নিয়ে বিপাকে রেলওয়ে by আতিকুর রহমান
লোকসানের ভারে অনেক আগেই নুয়ে পড়েছে
রেলওয়ে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভর্তুকি। তার মধ্যে রুগ্ণ রেলওয়েকে
বেকায়দায় ফেলেছে ৬৫৪ কোটি টাকায় কেনা ডেমু নামের শ্বেতহস্তী ট্রেন।
বড়
শহরগুলোর দৈনন্দিন যাত্রীর চাপ কমানোর লক্ষ্যে এ ডেমু ট্রেন অথবা ডিজেল
ইলেকট্রিক মাল্টিপারপাস ইউনিট (Diesel Electric Multipurpose Unit) ট্রেন
চীন থেকে নিয়ে আসা হয়। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে কমিউটার ট্রেন চলাচলের
সবচেয়ে উপযোগী রুট হচ্ছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুট। কারণ, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটটি
লোকাল ট্রেনের জন্যই তৈরি। আরেকটি হলো ঢাকা-গাজীপুর। তবে উত্তরবঙ্গের সব
ট্রেনই গাজীপুর হয়ে যাতায়াত করায় কমিউটার ট্রেনের প্রয়োজন নেই।
২৪ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে ডেমু ট্রেনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই রুটের নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন, ফতুল্লা ও পাগলা স্টেশন থেকে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের দরজা ধরে ঝুলে, ট্রেনের ছাদে এবং ইঞ্জিন বগিতে করে নিজ কর্মস্থলের উদ্দেশে যাতায়াত করে। প্রতিদিন দুটি ট্রেন ১৩+১৩= ২৬ বার চলাচল করে। ৭টি বগির এই ট্রেনের ধারণক্ষমতা ৪৫০-এর কাছাকাছি হলেও অধিকাংশ সময় প্রায় এক হাজার ২০০ যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি যাতায়াত করে। কিন্তু ডেমু ট্রেনে বসে ১৪৯ জন এবং দাঁড়িয়ে ১৫১ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারে। অর্থাৎ মোট চাহিদার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ পূরণ করতে সক্ষম।
এই রুটে চলাচলকারী লোকাল ট্রেন থেকে আয় হয় নূ্যনতম ৮ হাজার ১০০ টাকা। আর নতুন ডেমু ট্রেনে দৈনিক আয় হবে মাত্র দুই হাজার ৭০০ টাকা। এতে করে আয় কমবে ৫ হাজার ৪০০ টাকা। এ হিসাবে ২০ কিলোমিটারের এ রুটে রেলের লোকসান হবে এক হাজার ৩০০ টাকা। প্রতিদিন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে হাজার হাজার যাত্রী বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত করছে। নানা অব্যবস্থাপনার মাঝেও যখন এই রুটে দিনের পর দিন যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে সময় যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা না করে কার স্বার্থে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হলো?
স্বাভাবিকভাবে ইঞ্জিন কেনার আগে দেশের আবহাওয়া, রেললাইন, মাটির গঠন সবকিছু বিবেচনা করে অর্ডার দেওয়া হয়। কিন্তু এই ডেমু ট্রেনের ক্ষেত্রে 'আগে তো আনি তারপর দেখা যাবে কী করা যায়' এই বিশ্বাসেই নিয়ে আসা হয় দ্রুতগতিসম্পন্ন এই ট্রেন, যা আমাদের দেশের জন্য উপযোগী নয় তা বুঝতে রেল বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। এই বিশাল ক্রয়ের পেছনে কী লেনদেন ছিল হয়তো জানতেও পারব না আমরা। অথচ যে টাকা দিয়ে ডেমু কিনে নিয়ে আসা হয়েছে সেই টাকায় ১০ বগিবিশিষ্ট ১০টি নতুন ট্রেন সংগ্রহ করা যেত। ২০ সেট ডিইএমইউ পরিবহন করবে ৬ হাজার যাত্রী। অথচ ১০ বগিবিশিষ্ট ১০ ট্রেনে এর দ্বিগুণ যাত্রী পরিবহন সম্ভব।
ডেমু নামের শ্বেতহস্তী ট্রেনের সঙ্গে যেসব কর্মকর্তা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ মানুষের এই গণপরিবহনটির জন্য নিতে হবে যুগোপযোগী উদ্যোগ। এতে করে গণমানুষের এই পরিবহন ব্যবস্থাটিতে পুনরায় প্রাণের সঞ্চার ঘটানো সম্ভব হবে।
য় আতিকুর রহমান :সাকরাইল, গড়পাড়া, মানিকগঞ্জ
onatiq88@yahoo.com
২৪ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে ডেমু ট্রেনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই রুটের নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন, ফতুল্লা ও পাগলা স্টেশন থেকে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের দরজা ধরে ঝুলে, ট্রেনের ছাদে এবং ইঞ্জিন বগিতে করে নিজ কর্মস্থলের উদ্দেশে যাতায়াত করে। প্রতিদিন দুটি ট্রেন ১৩+১৩= ২৬ বার চলাচল করে। ৭টি বগির এই ট্রেনের ধারণক্ষমতা ৪৫০-এর কাছাকাছি হলেও অধিকাংশ সময় প্রায় এক হাজার ২০০ যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি যাতায়াত করে। কিন্তু ডেমু ট্রেনে বসে ১৪৯ জন এবং দাঁড়িয়ে ১৫১ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারে। অর্থাৎ মোট চাহিদার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ পূরণ করতে সক্ষম।
এই রুটে চলাচলকারী লোকাল ট্রেন থেকে আয় হয় নূ্যনতম ৮ হাজার ১০০ টাকা। আর নতুন ডেমু ট্রেনে দৈনিক আয় হবে মাত্র দুই হাজার ৭০০ টাকা। এতে করে আয় কমবে ৫ হাজার ৪০০ টাকা। এ হিসাবে ২০ কিলোমিটারের এ রুটে রেলের লোকসান হবে এক হাজার ৩০০ টাকা। প্রতিদিন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে হাজার হাজার যাত্রী বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত করছে। নানা অব্যবস্থাপনার মাঝেও যখন এই রুটে দিনের পর দিন যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে সময় যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা না করে কার স্বার্থে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হলো?
স্বাভাবিকভাবে ইঞ্জিন কেনার আগে দেশের আবহাওয়া, রেললাইন, মাটির গঠন সবকিছু বিবেচনা করে অর্ডার দেওয়া হয়। কিন্তু এই ডেমু ট্রেনের ক্ষেত্রে 'আগে তো আনি তারপর দেখা যাবে কী করা যায়' এই বিশ্বাসেই নিয়ে আসা হয় দ্রুতগতিসম্পন্ন এই ট্রেন, যা আমাদের দেশের জন্য উপযোগী নয় তা বুঝতে রেল বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। এই বিশাল ক্রয়ের পেছনে কী লেনদেন ছিল হয়তো জানতেও পারব না আমরা। অথচ যে টাকা দিয়ে ডেমু কিনে নিয়ে আসা হয়েছে সেই টাকায় ১০ বগিবিশিষ্ট ১০টি নতুন ট্রেন সংগ্রহ করা যেত। ২০ সেট ডিইএমইউ পরিবহন করবে ৬ হাজার যাত্রী। অথচ ১০ বগিবিশিষ্ট ১০ ট্রেনে এর দ্বিগুণ যাত্রী পরিবহন সম্ভব।
ডেমু নামের শ্বেতহস্তী ট্রেনের সঙ্গে যেসব কর্মকর্তা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ মানুষের এই গণপরিবহনটির জন্য নিতে হবে যুগোপযোগী উদ্যোগ। এতে করে গণমানুষের এই পরিবহন ব্যবস্থাটিতে পুনরায় প্রাণের সঞ্চার ঘটানো সম্ভব হবে।
য় আতিকুর রহমান :সাকরাইল, গড়পাড়া, মানিকগঞ্জ
onatiq88@yahoo.com
No comments