একটি ‘ওয়েক-আপ কল’ by মুহম্মদ শফিকুর রহমান
ক’দিন আগে এলাকায় গিয়ে শুনলাম বিএনপিদলীয়
স্থানীয় এমপি হারুনুর রশীদ সংসদে বলেছেন, তিনি এলাকায় যেতে পারেন না। তাঁর
অভিযোগের তীরটি আওয়ামী লীগের দিকে।
যেন আওয়ামী লীগের
স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাঁর পথে কাঁটা বিছিয়ে রেখেছেন, পা রাখলে রক্তাক্ত
হবেন। আমার মনে হয় তাঁর কথার জবাব দেয়া দরকার; নইলে কথাটি যত ভিত্তিহীনই
হোক, যত মিথ্যাই হোক, বিটিভিতে লাইভ টেলিকাস্ট হয়েছেÑ মানুষ বিভ্রান্ত হতে
পারে। জবাবটি আমারই দেয়া দরকার। কেননা, বিগত নির্বাচনে আমি এ আসনে
(ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর-৪) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। যদিও আমাকে হারানো হয়েছে। যে লোকটি নির্বাচনের
প্রাক্কালে কাফনের কাপড় পরে অনশন করেও মনোনয়ন অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিলেন, সে-ই
তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে এবং হারুনের ধানের শীর্ষের পক্ষে ভোট
কিনে আমাকে হারিয়ে দেয়। আমাকে হারিয়ে দিয়েছে বলা যাবে না, বলতে হবে নিজেকে
শত্রুর কাছে সঁপে দিয়েছে। অবশ্য বিএনপি-জামায়াত তার কাছে শত্রু কিনা তাও
ভাববার বিষয়।
ঢাকায় ফিরে শুনলাম ৪টি সিটি কর্পোরেশনেই আমাদের প্রার্থী হেরে গেছেন। ভোটের ব্যবধানও কম নয়। যদিও ৪ জনের একজনও হারার কথা ছিল না। গত ৫ বছরে তাঁরা যত কাজ করেছেন, বিএনপির কোন মেয়র তাঁদের কাছেও দাঁড়াতে পারবেন না। এর যথাযথ মূল্যায়ন হলে তাঁরা হারতেন না। তবু তাঁরা হেরেছেন এটাই সত্যি, এটাই বাস্তবতা এবং এই বাস্তবতা আওয়ামী লীগের জন্যে ‘ওয়েক-আপ কল’ অর্থাৎ ঘুম থেকে জাগানিয়া ঘণ্টাধ্বনি বলে আমি মনে করি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার ‘ওয়েক-আপ কল’। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথমেই যে কাজগুলো করতে হবে তা হলো: যেখানে-যেখানে ঝিমানো সংগঠন রয়েছে সেখানে-সেখানে ধাক্কা মেরে জাগাতে হবে। যে যে জায়গা ভাঙ্গাচোরা সেখানে মেরামত করতে হবে। কোমর ভাঙ্গা হলে অস্ত্রোপচার করে সারিয়ে তুলতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা এবং পবিত্র ধর্মের অপব্যবহারের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশপ্রেম, গণতন্ত্র হারতে পারে না। একাত্তরের পরাজিত সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে আমরা পরাজিত হতে পারি না।
এমপি হারুন ফরিদগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্পর্কে যে অভিযোগ তুলেছেন তা নির্জলা মিথ্যা, যা বিএনপি রাজনীতির মৌলিক চরিত্র। এই দলের মাথা থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত যত নেতা-কর্মী-সমর্থক সবই অবলীলায় মিথ্যে বলতে অভ্যস্ত। এরা যখন ক্ষমতায় যায় তখন আওয়ামী লীগ, সমর্থক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা চালাবে; তাদের দোকানপাট, পুকুর-জলা, গোয়াল-ক্ষেত-খামার লুট করবে, আবার তারাই থানায় গিয়ে মামলা করবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। তবে হ্যাঁ, বিগত নির্বাচনে ফরিদগঞ্জে বিএনপি জিতলেও বা হারুন এমপি হলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট থাকায় এবং আমাদের সজাগ থাকার কারণে এমপির সন্ত্রাসী বাহিনী আওয়ামী লীগ ও হিন্দুদের ওপর হামলা, নির্যাতন করার সাহস পায়নি। তবে তার দলীয় প্রতিপক্ষের ওপরও হামলা কম চালায়নি। একবার তো হারুনের সন্ত্রাসী বাহিনী ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মঞ্জিল হোসেনকে লাঠি দিয়ে, রড দিয়ে পেটাতে পেটাতে তার অফিসে আত্মরক্ষার জন্যে গেলে সেখানেও পেটাতে থাকে। মেয়র মঞ্জিল প্রাণ বাঁচাতে অফিসের ছাদে উঠলে সেখান থেকে তাকে নিচে ফেলে দেয়া হয়। মেয়রের দুই পা-ই টুকরো টুকরো হয়ে যায়। প্রায় এক বছর চিকিৎসার পর তিনি এখন চলাফেরা করতে পারেন।
এমপি হারুন তো এলাকায় যানই না, কালে কস্মিনে কখনো গেলে আগে-পিছে পুলিশ নিয়ে তবেই পথে বেরোন। এর পেছনের কাহিনী হলো বিগত নির্বাচনের আগে ফরিদগঞ্জে বিএনপি মনোনয়ন প্রার্থী ছিলেন তিনজনÑ হারুনুর রশীদ, আবদুল হান্নান ও মোতাহার হোসেন পাটোয়ারী। তিনজনই ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য। চাঁদপুর ডিসি অফিসে মনোনয়ন বাছাইয়ের সময় হারুনের মনোনয়ন ত্রুটির কারণে রিটার্নিং অফিসার (ডিসি) বাতিল করে দেন। সবাই ভেবেছে অপর সিরিয়াস প্রার্থী আবদুল হান্নানের মানোনয়নপত্র টিকে যাবে, কিন্তু দলীয় নমিনেশনের চিঠি হারুনুর রশীদের নামে দেয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অফিস থেকে হারুনকে বিএনপির বৈধ নমিনি ঘোষণা করা হয়, এটি একটি রহস্য। মোতাহার প্রথম থেকে সরে দাঁড়ায় এবং হান্নানের পক্ষে নেয়। সেই থেকে একদিকে হারুন এমপি অপরদিকে হান্নান-মোতাহার-মঞ্জিল এই দুইভাগে বিভক্ত-বিএনপি নিজেদের মধ্যে কোন্দল অব্যাহত রাখে। মেয়র মঞ্জিলও মার খাওয়ার আগে হারুনকে বহুদিন ‘ফরিদগঞ্জ’ বাজারে ঢুকতে দেয়নি।
বিগত সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন পরই আমি হেরে গিয়েও (সামান্য ভোটে) হারুন এমপিকে টেলিফোন করে তার বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানাই। এরপরও আমি নির্বাচনের ফল মেনে নিয়েছি, যদিও ঐ সময়কার ইউএনও এবং এসিল্যান্ড দু’জন ছিলেন শিবির এবং তারা দু’জন মিলে পোলিং ও প্রিসাইডিং অফিসারও বেছে বেছে শিবির বা ছাত্রদলপন্থীদের নিয়োগ দেন। আমার নির্বাচনী এজেন্ট মুক্তিযোদ্ধা খান মোহাম্মদ বেলায়েত রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানোর পরও কোন ফল বা প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ফলাফল ঘোষণার সময়ও দেখা গেছে প্রথম দিকে আমি ৫ হাজারের মতো ভোটে এগিয়ে, তারপরই আমার ভোট কমতে শুরু করে। এটিও একটি রহস্য। তারপরও আমি হারুনকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলাম, ফরিদগঞ্জ অনেক অবহেলিত। এখানে রাস্তাঘাট ভাঙ্গাচোরা, অন্ধকার, আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের অভাব এবং যার আশু সমাধান ডিপ-টিউবওয়েল, ৪ থানার কানেকটিভিটি উটতলা ব্রিজ হয়নি, ফরিদগঞ্জের পাশে পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজটি পাকা কংক্রিট ব্রিজ, এ কাজগুলোর আশু বাস্তবায়ন দরকার। নির্বাচনের দু’দিন আগে চাঁদপুর পৌরপার্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লাখো লোকের সামনে ভিডিও কনফারেন্সে আমি ঐ সব কাজ করার দাবি করলে নেত্রী বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন (যা চাঁদপুরবাসী শুনেছেন, দেখেছেন)। এরই ভিত্তিতে আমি হারুন সাহেবকে বলেছিলাম যেহেতু আমার দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় কাজগুলো বাস্তবায়নে আমি আপনাকে সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত, এলাকার পশ্চাৎপদ মানুষের স্বার্থে।
কিন্তু হারুন সাহেব একটি কাজের জন্যেও আমার সহযোগিতা চাননি। বরং সাড়ে ৪ বছর তিনি ও তাঁর দল সংসদে যাননি। সদস্যপদ বাঁচানোর জন্য কয়েকবার কিছু সময়ের জন্য গেছেন (কেননা ৯০ দিন অনুপস্থিত থাকলে সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়); তবে এবারের চলমান বাজেট অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন। তাতেও জনগণের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে না ধরে কেবল আওয়ামী লীগকে যাচ্ছে তা ভাষায় গালাগালি। মহিলা এমপি পাপিয়া, শাম্মী আখতার এবং আরো ২ জন যে ভাষায় গালাগাল করছেন তাই ‘নিষিদ্ধগলির’ ভাষা বলে আওয়ামী লীগের আ স ম ফিরোজ সংসদে মন্তব্য করেছেন। বিএনপি’র পুরুষ সদস্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনও এখনো খোকনই রয়ে গেছেন। তিনি যখন বক্তৃতা করেন তারও মাত্রাজ্ঞান লোপ পেয়ে যায়। সংসদীয় গণতন্ত্রে কোন এলাকার উন্নয়নের দাবি তোলার সর্বোচ্চ প্লাটফরম হলো সংসদের ফ্লোর। তাতে আমাদের এমপি হারুনও তার বক্তৃতার বেশিরভাগই ব্যয় করেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এবং মিথ্যা দিয়ে, যে কথা আমি ইতোমধ্যেই বর্ণনা করেছি। তবে হ্যাঁ, এমপি হারুনের জন্যে সব কাজ না হলেও অনেক বড় কাজ থেমে থাকেনি। যেমন ফরিদগঞ্জের পাশের ব্রিজের নির্মাণ কাজ চলছে ৫০% এর ওপরে, এ পর্যন্ত দুইবারে ২২৫টি ডিপটিউওয়েল, কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ, সংযোগ স্থাপন, উটতলা ব্রিজ টেন্ডারের পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছানো, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাকা দালান করার তালিকাভুক্ত করা, শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েদের (সংখ্যা অন্তত ১৫০ হবে), প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, পুলিশ, হেলথ এসিস্ট্যান্ট প্রভৃতি চাকরিতে নিয়োগ প্রাপ্তি সহায়তা প্রদান করেছি। সব কাজই হয়েছে আমার ও আমাদের আওয়ামী লীগের সহকর্মীদের প্রচেষ্টায়। হারুন সাহেব আমার সহায়তা নিলে আরো অনেক কাজ হতো। তারপরও আমি বসে নেই। বাগাদি থেকে বালিথবা-মুন্সিরহাট-কামতা-গলাক-ফকিরহাট হয়ে রামগঞ্জ পর্যন্ত সিআইপি (চাঁদপুর সেচ প্রকল্প) বেড়িবাঁধের ওপর ভাঙ্গাচোরা রাস্তা মেরামতের জন্যে দরখাস্ত করলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এরই মধ্যে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা চাঁদপুরের আরএইচডাব্লিউ-এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিয়ে সরেজমিনে জরিপ করে এসেছেন, দু’চারদিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট (এন্টিমেট) দেবেন। তারপরই মেরামত কাজও শুরু হবে ইনশাল্লাহ। তারপরও বলব এমপি হারুন সাহেবের উদ্যোগহীনতা বা নেতিবাচক রাজনীতির কারণে অনেক কাজ করা সম্ভব হয়নি। কারণ কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি একটি কাজের জন্যে কতবার একজন মন্ত্রী বা সচিবের দ্বারে ধর্ণা দিতে হয়। মন্ত্রী বন্ধু বা সুহৃদ, তারপরও দেখা করতে ঘণ্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষা করতে করতে অনেক সময় নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনে হয়েছে, অপমানিত মনে হয়েছে। অথচ একজন এমপি, তিনি যে দলেরই হোন, সর্বত্র তার অবাধ যাতায়াত। তার ওপর তিনি যেমন বড় অঙ্কের বেতন-ভাতা, গাড়ি-বাড়ি, কর্মচারী পান। এরপরেও বছরে তিন কোটি করে ৫ বছরে ১৫ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ পান। হারুন সাহেব এ টাকা কোথায় খরচ করছেন কেউ জানে না। বরং তার সাঙ্গোপাঙ্গরা বলে বেড়ায় তিনি নিজ পকেটের টাকা দিয়ে উন্নয়ন করছেন। অবশ্য তাঁর নেত্রী খালেদা জিয়াও যেমন বক্তৃতা দিতে উঠলেই বলেন আওয়ামী লীগ কোন কাজ করেনি, যা কাজ হয়েছে সব বিএনপি আমলে হয়েছে কিন্তু কোথায় উন্নয়ন হয়েছে তা দেখাতে পারেন না। পারবেন কোত্থেকে, কাজ করলে তো? তিনি কি দেখাতে পারেন একটা হাতির ঝিল? দেখাতে পারবেন কি বকশীবাজার থেকে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী নিটে ফেলে শনিরআখড়া পর্যন্ত বা হযরত শাহজাহালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে শহরের দিকে আসতে হাত পা ছড়ানো দীর্ঘ ফ্লাইওভারগুলো? দেখাতে পারবেন কি একটা বেগম রোকেয়া সাকাওয়াত বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন বা গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার প্রতি ৬০০০ জনের জন্যে একটি কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক করেছেন? দেখাতে পারবেন কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় তার কোন অবদান আছে? বরং প্রথম থেকেই বিরোধিতা। দেখাতে পারবেন কি খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনের কৃতিত্ব বা সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট থেকে ৮০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে সহনশীলতা অর্জন? পারবেন না। কেবল মিথ্যে বলে যাবেন। অথচ শেখ হাসিনা তার মহাজোট সরকারকে নিয়ে পিলখানা হত্যাকা-, রানা প্লাজা ধ্বংসযজ্ঞ, তাজরীন গার্মেন্টসে আগুন, শেয়ার মার্কেট, ডেসটিনি, হলমার্ক, কিংবা বিএনপি-জামায়াত-শিবির ও হেফাজতদের ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবিলা করেই ঐসব সাহসী জনগুরুত্বসম্পন্ন কাজগুলো করেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছেন নিজেও স্বীকৃত হয়েছেন এশিয়ার অন্যতম সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। এখন এ অঞ্চলে শেখ হাসিনার তুলনা কেবল শেখ হাসিনাই। হারুন সাহেব যখন ফরিদগঞ্জের পশ্চাৎপদতার কথা বলেন তখন প্রশ্ন করতে হয়Ñ ’৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে আপনার এমপি, মন্ত্রীও হয়েছে, তবু ফরিদগঞ্জ এত পেছনে পড়ে আছে কেন? কি জবাব আছে?
কখনও কখনও মনে হয় কোন কাজ করবও না, কেবল মিথ্যে বলব, এ পাড়ায় গিয়ে বলব ও পাড়ায় রাস্তা বানিয়েছি, বিদ্যুৎÑ ডিপ টিউবওয়েল এনে দিয়েছি, আবার ও পাড়ায় গিয়ে বলব ওইতো ও পাড়ায় ৫টা স্কুল কলেজ পাকা করে দিয়েছি, আপনি তদন্ত করে দেখবেন সবই মিথ্যে, ফাঁকা বুলি। কিন্তু যেহেতু এ পাড়ার মানুষ ও পাড়ায় তদন্ত করতে যাবে না সেহেতু তারা অনেক বিশ্বাস করবে এবং বিভ্রান্ত হয়ে ভুল জায়গায় ভোটটা দিয়ে দেবে, দেশের ক্ষতি হয়ে যাবে। খালেদা জিয়া এবং তার দলীয় হারুন সাহেবও তার নেত্রীর পথে শুরু মিথ্যে দিয়ে শেষও মিথ্যে দিয়ে।
কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো এসব মিথ্যে কখনো কখনো অবাঞ্ছিত ভোটের বাক্সের ভরিয়ে দেয়। যার ট্রেলার আমরা দেখলাম চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। বিএনপি-জামাত জোট প্রার্থী জেতার সঙ্গে সঙ্গে শিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহড়া দিতে শুরু করেছে। এরও কারণ হলো ওদের মিথ্যে ধরিয়ে দেয়ার মতো যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা বা সাংগঠনিক শক্তির মাধ্যমে পাল্টা প্রোপাগান্ডা করার কেউ কি আছে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে দুইবারের দেড় ডজন টিভি চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছেন এবং সেগুলো রীতিমতো তাদের প্রচার প্রচারণা করে চলেছে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় ঐ সব চ্যানেলে শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা দূরে থাক, তিনি এখনো প্রধানমন্ত্রী, তারপরও ২/১টি বাদে প্রায় প্রতিটি চ্যানেলে দিনরাত শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ এবং মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার নামে সত্য-মিথ্যা দিয়ে বিষোদগার করে যাচ্ছে। টকশোর নামে রাজাকার, হাফ-রাজাকারদের এনে বিচারধীন যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ওকালতি করানো হচ্ছে। নাম একাত্তর টিভি, টক শোতে আনা হচ্ছে পিয়াস করিম, মাহফুজুল্লাহ, শওকত মাহমুদ, আসিফ নজরুল, ফরহাদ মাযহার, রুহুল আমিন গাজীর মতো লোকদের, যারা যুদ্ধাপরাধী তথা রাজাকার-আলবদর-আলশামস তথা জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকা-কে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। জাতীয় প্রেসক্লাব এখন বিএনপি-জামায়াতের আখড়া, দিনে রাতে ৪/৫টা করে ওদের আওয়ামী লীগকে গালাগাল করার অনুষ্ঠান আয়োজন হয় এবং তা যথারীতি চ্যানেলে প্রচার করা হয় এবং সে সব অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতানেত্রীরা নোংরা ভাষায় যা যা বলে সবই অধিকাংশ টিভি চ্যানেলে ফলাও করে প্রচার করা হয়। একুশে টিভির একজন ‘জনতার কথা’ নামের অনুষ্ঠানে যত লোকের সামনে মাইক ধরে সবই সরকারের বিরুদ্ধে, বিএনপি-জামায়াতের পক্ষের। মনে হয় বাংলাদেশের কোথাও একজন আওয়ামী লীগ সমর্থকও নেই। এই যেমন শাপলা চত্বরে “২/৩ হাজার হেফাজতিকে মেরে ফেলা হয়েছে (?)” এমন ডাহা মিথ্যাটি প্রচার করছে বা শাহবাগ চত্বরের প্রজন্ম যোদ্ধারা “নষ্ট এবং নাস্তিক” এমন ভিত্তিহীন কথা দিনরাত প্রচার করে করে বেশসংখ্যক মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ওরা সক্ষম হচ্ছে। যার প্রতিক্রিয়া বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দেখা গেছে। এখানে তালুকদার আবদুল খালেক, খায়রুজ্জামান লিটন, শওকত হোসেন হিরণ বা বদরুদ্দিন আহমদ কামরানের উন্নয়ন বা নাগরিক সেবা কোন কাজে লাগেনি, বরং মিথ্যে জয়ী হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আমার এলাকার জনৈক আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে ব্যর্থ নমিনেশন প্রার্থী কাফনের কাপড় পরিধানকারীরা যেভাবে আমার বিজয়ে কাফনের কাপড় পঠিয়েছেন ঠিক একইভাবে লিটন হিরণদের বিজয়েও কাফনের কাপড় পরিয়েছে দলের কেউ কেউ বলে কথা উঠেছে। তৃতীয় কারণটি বললে কেউ কেউ রাগ করতে পারে, তবু আমাকে বলতে হবে, মাননীয় নেত্রীর গোচরে বিষয়টি আনতে হবে। না আনলেই বরং সঠিক দায়িত্ব পালন হবে না, যা নেত্রীর প্রতি আনুগত্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তা হচ্ছে যে সাংগঠনিক শক্তিতে খালেদা-নিজামীদের মিথ্যাচারের জবাব দেয়ার কথা সে সাংগঠনিক শক্তিই বহু জায়গায় দুর্বল। যেমন আমাদের চাঁদপুরে আওয়ামী লীগ তিনভাগে বিভক্ত। একদিকে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে আশ্রয় করে শামসুল হক-দুলাল পাটোয়ারী গং, ডা. দীপু মনিকে আশ্রয় করে ওসমান হাজি গং, ইউসুফ গাজী এবং নাসির ভূঞার অবস্থা হচ্ছে “আমি কার খালুরে’- অতএব কেবল কাজ করে যাও। আমাদের ফরিদগঞ্জে তো আওয়ামী লীগের কমিটিই নেই দীর্ঘ ৮ বছর ধরে। আমি বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের দৃষ্টিগোচরে আনলে কয়েকবার কাউন্সিল অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেয়া হলেও জেলা আওয়ামী লীগ নানান টালবাহানায় হতে দেয়নি। তার টার্গেট ফরিদগঞ্জ থেকে নির্বাচন করবেন। এমনি অবস্থায় মাননীয় নেত্রী সাবেক এমপি শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ, রাজা মিয়া পাটোয়ারী সা’বের পুত্র প্রকৌশলী আমীর আযম রেজাকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ঘোষণা করার পরও কোন বৈধ কমিটি করা যায়নি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসারই ‘ওয়েক-আপ কল’ সাম্প্রতিক সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন।
ঢাকা- ২০ মে ২০১৩
লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
ঢাকায় ফিরে শুনলাম ৪টি সিটি কর্পোরেশনেই আমাদের প্রার্থী হেরে গেছেন। ভোটের ব্যবধানও কম নয়। যদিও ৪ জনের একজনও হারার কথা ছিল না। গত ৫ বছরে তাঁরা যত কাজ করেছেন, বিএনপির কোন মেয়র তাঁদের কাছেও দাঁড়াতে পারবেন না। এর যথাযথ মূল্যায়ন হলে তাঁরা হারতেন না। তবু তাঁরা হেরেছেন এটাই সত্যি, এটাই বাস্তবতা এবং এই বাস্তবতা আওয়ামী লীগের জন্যে ‘ওয়েক-আপ কল’ অর্থাৎ ঘুম থেকে জাগানিয়া ঘণ্টাধ্বনি বলে আমি মনে করি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার ‘ওয়েক-আপ কল’। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথমেই যে কাজগুলো করতে হবে তা হলো: যেখানে-যেখানে ঝিমানো সংগঠন রয়েছে সেখানে-সেখানে ধাক্কা মেরে জাগাতে হবে। যে যে জায়গা ভাঙ্গাচোরা সেখানে মেরামত করতে হবে। কোমর ভাঙ্গা হলে অস্ত্রোপচার করে সারিয়ে তুলতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা এবং পবিত্র ধর্মের অপব্যবহারের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশপ্রেম, গণতন্ত্র হারতে পারে না। একাত্তরের পরাজিত সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে আমরা পরাজিত হতে পারি না।
এমপি হারুন ফরিদগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্পর্কে যে অভিযোগ তুলেছেন তা নির্জলা মিথ্যা, যা বিএনপি রাজনীতির মৌলিক চরিত্র। এই দলের মাথা থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত যত নেতা-কর্মী-সমর্থক সবই অবলীলায় মিথ্যে বলতে অভ্যস্ত। এরা যখন ক্ষমতায় যায় তখন আওয়ামী লীগ, সমর্থক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা চালাবে; তাদের দোকানপাট, পুকুর-জলা, গোয়াল-ক্ষেত-খামার লুট করবে, আবার তারাই থানায় গিয়ে মামলা করবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। তবে হ্যাঁ, বিগত নির্বাচনে ফরিদগঞ্জে বিএনপি জিতলেও বা হারুন এমপি হলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট থাকায় এবং আমাদের সজাগ থাকার কারণে এমপির সন্ত্রাসী বাহিনী আওয়ামী লীগ ও হিন্দুদের ওপর হামলা, নির্যাতন করার সাহস পায়নি। তবে তার দলীয় প্রতিপক্ষের ওপরও হামলা কম চালায়নি। একবার তো হারুনের সন্ত্রাসী বাহিনী ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মঞ্জিল হোসেনকে লাঠি দিয়ে, রড দিয়ে পেটাতে পেটাতে তার অফিসে আত্মরক্ষার জন্যে গেলে সেখানেও পেটাতে থাকে। মেয়র মঞ্জিল প্রাণ বাঁচাতে অফিসের ছাদে উঠলে সেখান থেকে তাকে নিচে ফেলে দেয়া হয়। মেয়রের দুই পা-ই টুকরো টুকরো হয়ে যায়। প্রায় এক বছর চিকিৎসার পর তিনি এখন চলাফেরা করতে পারেন।
এমপি হারুন তো এলাকায় যানই না, কালে কস্মিনে কখনো গেলে আগে-পিছে পুলিশ নিয়ে তবেই পথে বেরোন। এর পেছনের কাহিনী হলো বিগত নির্বাচনের আগে ফরিদগঞ্জে বিএনপি মনোনয়ন প্রার্থী ছিলেন তিনজনÑ হারুনুর রশীদ, আবদুল হান্নান ও মোতাহার হোসেন পাটোয়ারী। তিনজনই ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য। চাঁদপুর ডিসি অফিসে মনোনয়ন বাছাইয়ের সময় হারুনের মনোনয়ন ত্রুটির কারণে রিটার্নিং অফিসার (ডিসি) বাতিল করে দেন। সবাই ভেবেছে অপর সিরিয়াস প্রার্থী আবদুল হান্নানের মানোনয়নপত্র টিকে যাবে, কিন্তু দলীয় নমিনেশনের চিঠি হারুনুর রশীদের নামে দেয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অফিস থেকে হারুনকে বিএনপির বৈধ নমিনি ঘোষণা করা হয়, এটি একটি রহস্য। মোতাহার প্রথম থেকে সরে দাঁড়ায় এবং হান্নানের পক্ষে নেয়। সেই থেকে একদিকে হারুন এমপি অপরদিকে হান্নান-মোতাহার-মঞ্জিল এই দুইভাগে বিভক্ত-বিএনপি নিজেদের মধ্যে কোন্দল অব্যাহত রাখে। মেয়র মঞ্জিলও মার খাওয়ার আগে হারুনকে বহুদিন ‘ফরিদগঞ্জ’ বাজারে ঢুকতে দেয়নি।
বিগত সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন পরই আমি হেরে গিয়েও (সামান্য ভোটে) হারুন এমপিকে টেলিফোন করে তার বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানাই। এরপরও আমি নির্বাচনের ফল মেনে নিয়েছি, যদিও ঐ সময়কার ইউএনও এবং এসিল্যান্ড দু’জন ছিলেন শিবির এবং তারা দু’জন মিলে পোলিং ও প্রিসাইডিং অফিসারও বেছে বেছে শিবির বা ছাত্রদলপন্থীদের নিয়োগ দেন। আমার নির্বাচনী এজেন্ট মুক্তিযোদ্ধা খান মোহাম্মদ বেলায়েত রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানোর পরও কোন ফল বা প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ফলাফল ঘোষণার সময়ও দেখা গেছে প্রথম দিকে আমি ৫ হাজারের মতো ভোটে এগিয়ে, তারপরই আমার ভোট কমতে শুরু করে। এটিও একটি রহস্য। তারপরও আমি হারুনকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলাম, ফরিদগঞ্জ অনেক অবহেলিত। এখানে রাস্তাঘাট ভাঙ্গাচোরা, অন্ধকার, আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের অভাব এবং যার আশু সমাধান ডিপ-টিউবওয়েল, ৪ থানার কানেকটিভিটি উটতলা ব্রিজ হয়নি, ফরিদগঞ্জের পাশে পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজটি পাকা কংক্রিট ব্রিজ, এ কাজগুলোর আশু বাস্তবায়ন দরকার। নির্বাচনের দু’দিন আগে চাঁদপুর পৌরপার্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লাখো লোকের সামনে ভিডিও কনফারেন্সে আমি ঐ সব কাজ করার দাবি করলে নেত্রী বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন (যা চাঁদপুরবাসী শুনেছেন, দেখেছেন)। এরই ভিত্তিতে আমি হারুন সাহেবকে বলেছিলাম যেহেতু আমার দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় কাজগুলো বাস্তবায়নে আমি আপনাকে সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত, এলাকার পশ্চাৎপদ মানুষের স্বার্থে।
কিন্তু হারুন সাহেব একটি কাজের জন্যেও আমার সহযোগিতা চাননি। বরং সাড়ে ৪ বছর তিনি ও তাঁর দল সংসদে যাননি। সদস্যপদ বাঁচানোর জন্য কয়েকবার কিছু সময়ের জন্য গেছেন (কেননা ৯০ দিন অনুপস্থিত থাকলে সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়); তবে এবারের চলমান বাজেট অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন। তাতেও জনগণের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে না ধরে কেবল আওয়ামী লীগকে যাচ্ছে তা ভাষায় গালাগালি। মহিলা এমপি পাপিয়া, শাম্মী আখতার এবং আরো ২ জন যে ভাষায় গালাগাল করছেন তাই ‘নিষিদ্ধগলির’ ভাষা বলে আওয়ামী লীগের আ স ম ফিরোজ সংসদে মন্তব্য করেছেন। বিএনপি’র পুরুষ সদস্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনও এখনো খোকনই রয়ে গেছেন। তিনি যখন বক্তৃতা করেন তারও মাত্রাজ্ঞান লোপ পেয়ে যায়। সংসদীয় গণতন্ত্রে কোন এলাকার উন্নয়নের দাবি তোলার সর্বোচ্চ প্লাটফরম হলো সংসদের ফ্লোর। তাতে আমাদের এমপি হারুনও তার বক্তৃতার বেশিরভাগই ব্যয় করেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এবং মিথ্যা দিয়ে, যে কথা আমি ইতোমধ্যেই বর্ণনা করেছি। তবে হ্যাঁ, এমপি হারুনের জন্যে সব কাজ না হলেও অনেক বড় কাজ থেমে থাকেনি। যেমন ফরিদগঞ্জের পাশের ব্রিজের নির্মাণ কাজ চলছে ৫০% এর ওপরে, এ পর্যন্ত দুইবারে ২২৫টি ডিপটিউওয়েল, কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ, সংযোগ স্থাপন, উটতলা ব্রিজ টেন্ডারের পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছানো, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাকা দালান করার তালিকাভুক্ত করা, শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েদের (সংখ্যা অন্তত ১৫০ হবে), প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, পুলিশ, হেলথ এসিস্ট্যান্ট প্রভৃতি চাকরিতে নিয়োগ প্রাপ্তি সহায়তা প্রদান করেছি। সব কাজই হয়েছে আমার ও আমাদের আওয়ামী লীগের সহকর্মীদের প্রচেষ্টায়। হারুন সাহেব আমার সহায়তা নিলে আরো অনেক কাজ হতো। তারপরও আমি বসে নেই। বাগাদি থেকে বালিথবা-মুন্সিরহাট-কামতা-গলাক-ফকিরহাট হয়ে রামগঞ্জ পর্যন্ত সিআইপি (চাঁদপুর সেচ প্রকল্প) বেড়িবাঁধের ওপর ভাঙ্গাচোরা রাস্তা মেরামতের জন্যে দরখাস্ত করলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এরই মধ্যে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা চাঁদপুরের আরএইচডাব্লিউ-এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিয়ে সরেজমিনে জরিপ করে এসেছেন, দু’চারদিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট (এন্টিমেট) দেবেন। তারপরই মেরামত কাজও শুরু হবে ইনশাল্লাহ। তারপরও বলব এমপি হারুন সাহেবের উদ্যোগহীনতা বা নেতিবাচক রাজনীতির কারণে অনেক কাজ করা সম্ভব হয়নি। কারণ কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি একটি কাজের জন্যে কতবার একজন মন্ত্রী বা সচিবের দ্বারে ধর্ণা দিতে হয়। মন্ত্রী বন্ধু বা সুহৃদ, তারপরও দেখা করতে ঘণ্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষা করতে করতে অনেক সময় নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনে হয়েছে, অপমানিত মনে হয়েছে। অথচ একজন এমপি, তিনি যে দলেরই হোন, সর্বত্র তার অবাধ যাতায়াত। তার ওপর তিনি যেমন বড় অঙ্কের বেতন-ভাতা, গাড়ি-বাড়ি, কর্মচারী পান। এরপরেও বছরে তিন কোটি করে ৫ বছরে ১৫ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ পান। হারুন সাহেব এ টাকা কোথায় খরচ করছেন কেউ জানে না। বরং তার সাঙ্গোপাঙ্গরা বলে বেড়ায় তিনি নিজ পকেটের টাকা দিয়ে উন্নয়ন করছেন। অবশ্য তাঁর নেত্রী খালেদা জিয়াও যেমন বক্তৃতা দিতে উঠলেই বলেন আওয়ামী লীগ কোন কাজ করেনি, যা কাজ হয়েছে সব বিএনপি আমলে হয়েছে কিন্তু কোথায় উন্নয়ন হয়েছে তা দেখাতে পারেন না। পারবেন কোত্থেকে, কাজ করলে তো? তিনি কি দেখাতে পারেন একটা হাতির ঝিল? দেখাতে পারবেন কি বকশীবাজার থেকে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী নিটে ফেলে শনিরআখড়া পর্যন্ত বা হযরত শাহজাহালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে শহরের দিকে আসতে হাত পা ছড়ানো দীর্ঘ ফ্লাইওভারগুলো? দেখাতে পারবেন কি একটা বেগম রোকেয়া সাকাওয়াত বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন বা গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার প্রতি ৬০০০ জনের জন্যে একটি কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক করেছেন? দেখাতে পারবেন কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় তার কোন অবদান আছে? বরং প্রথম থেকেই বিরোধিতা। দেখাতে পারবেন কি খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনের কৃতিত্ব বা সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট থেকে ৮০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে সহনশীলতা অর্জন? পারবেন না। কেবল মিথ্যে বলে যাবেন। অথচ শেখ হাসিনা তার মহাজোট সরকারকে নিয়ে পিলখানা হত্যাকা-, রানা প্লাজা ধ্বংসযজ্ঞ, তাজরীন গার্মেন্টসে আগুন, শেয়ার মার্কেট, ডেসটিনি, হলমার্ক, কিংবা বিএনপি-জামায়াত-শিবির ও হেফাজতদের ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবিলা করেই ঐসব সাহসী জনগুরুত্বসম্পন্ন কাজগুলো করেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছেন নিজেও স্বীকৃত হয়েছেন এশিয়ার অন্যতম সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। এখন এ অঞ্চলে শেখ হাসিনার তুলনা কেবল শেখ হাসিনাই। হারুন সাহেব যখন ফরিদগঞ্জের পশ্চাৎপদতার কথা বলেন তখন প্রশ্ন করতে হয়Ñ ’৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে আপনার এমপি, মন্ত্রীও হয়েছে, তবু ফরিদগঞ্জ এত পেছনে পড়ে আছে কেন? কি জবাব আছে?
কখনও কখনও মনে হয় কোন কাজ করবও না, কেবল মিথ্যে বলব, এ পাড়ায় গিয়ে বলব ও পাড়ায় রাস্তা বানিয়েছি, বিদ্যুৎÑ ডিপ টিউবওয়েল এনে দিয়েছি, আবার ও পাড়ায় গিয়ে বলব ওইতো ও পাড়ায় ৫টা স্কুল কলেজ পাকা করে দিয়েছি, আপনি তদন্ত করে দেখবেন সবই মিথ্যে, ফাঁকা বুলি। কিন্তু যেহেতু এ পাড়ার মানুষ ও পাড়ায় তদন্ত করতে যাবে না সেহেতু তারা অনেক বিশ্বাস করবে এবং বিভ্রান্ত হয়ে ভুল জায়গায় ভোটটা দিয়ে দেবে, দেশের ক্ষতি হয়ে যাবে। খালেদা জিয়া এবং তার দলীয় হারুন সাহেবও তার নেত্রীর পথে শুরু মিথ্যে দিয়ে শেষও মিথ্যে দিয়ে।
কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো এসব মিথ্যে কখনো কখনো অবাঞ্ছিত ভোটের বাক্সের ভরিয়ে দেয়। যার ট্রেলার আমরা দেখলাম চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। বিএনপি-জামাত জোট প্রার্থী জেতার সঙ্গে সঙ্গে শিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহড়া দিতে শুরু করেছে। এরও কারণ হলো ওদের মিথ্যে ধরিয়ে দেয়ার মতো যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা বা সাংগঠনিক শক্তির মাধ্যমে পাল্টা প্রোপাগান্ডা করার কেউ কি আছে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে দুইবারের দেড় ডজন টিভি চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছেন এবং সেগুলো রীতিমতো তাদের প্রচার প্রচারণা করে চলেছে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় ঐ সব চ্যানেলে শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা দূরে থাক, তিনি এখনো প্রধানমন্ত্রী, তারপরও ২/১টি বাদে প্রায় প্রতিটি চ্যানেলে দিনরাত শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ এবং মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার নামে সত্য-মিথ্যা দিয়ে বিষোদগার করে যাচ্ছে। টকশোর নামে রাজাকার, হাফ-রাজাকারদের এনে বিচারধীন যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ওকালতি করানো হচ্ছে। নাম একাত্তর টিভি, টক শোতে আনা হচ্ছে পিয়াস করিম, মাহফুজুল্লাহ, শওকত মাহমুদ, আসিফ নজরুল, ফরহাদ মাযহার, রুহুল আমিন গাজীর মতো লোকদের, যারা যুদ্ধাপরাধী তথা রাজাকার-আলবদর-আলশামস তথা জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকা-কে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। জাতীয় প্রেসক্লাব এখন বিএনপি-জামায়াতের আখড়া, দিনে রাতে ৪/৫টা করে ওদের আওয়ামী লীগকে গালাগাল করার অনুষ্ঠান আয়োজন হয় এবং তা যথারীতি চ্যানেলে প্রচার করা হয় এবং সে সব অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতানেত্রীরা নোংরা ভাষায় যা যা বলে সবই অধিকাংশ টিভি চ্যানেলে ফলাও করে প্রচার করা হয়। একুশে টিভির একজন ‘জনতার কথা’ নামের অনুষ্ঠানে যত লোকের সামনে মাইক ধরে সবই সরকারের বিরুদ্ধে, বিএনপি-জামায়াতের পক্ষের। মনে হয় বাংলাদেশের কোথাও একজন আওয়ামী লীগ সমর্থকও নেই। এই যেমন শাপলা চত্বরে “২/৩ হাজার হেফাজতিকে মেরে ফেলা হয়েছে (?)” এমন ডাহা মিথ্যাটি প্রচার করছে বা শাহবাগ চত্বরের প্রজন্ম যোদ্ধারা “নষ্ট এবং নাস্তিক” এমন ভিত্তিহীন কথা দিনরাত প্রচার করে করে বেশসংখ্যক মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ওরা সক্ষম হচ্ছে। যার প্রতিক্রিয়া বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দেখা গেছে। এখানে তালুকদার আবদুল খালেক, খায়রুজ্জামান লিটন, শওকত হোসেন হিরণ বা বদরুদ্দিন আহমদ কামরানের উন্নয়ন বা নাগরিক সেবা কোন কাজে লাগেনি, বরং মিথ্যে জয়ী হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আমার এলাকার জনৈক আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে ব্যর্থ নমিনেশন প্রার্থী কাফনের কাপড় পরিধানকারীরা যেভাবে আমার বিজয়ে কাফনের কাপড় পঠিয়েছেন ঠিক একইভাবে লিটন হিরণদের বিজয়েও কাফনের কাপড় পরিয়েছে দলের কেউ কেউ বলে কথা উঠেছে। তৃতীয় কারণটি বললে কেউ কেউ রাগ করতে পারে, তবু আমাকে বলতে হবে, মাননীয় নেত্রীর গোচরে বিষয়টি আনতে হবে। না আনলেই বরং সঠিক দায়িত্ব পালন হবে না, যা নেত্রীর প্রতি আনুগত্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তা হচ্ছে যে সাংগঠনিক শক্তিতে খালেদা-নিজামীদের মিথ্যাচারের জবাব দেয়ার কথা সে সাংগঠনিক শক্তিই বহু জায়গায় দুর্বল। যেমন আমাদের চাঁদপুরে আওয়ামী লীগ তিনভাগে বিভক্ত। একদিকে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে আশ্রয় করে শামসুল হক-দুলাল পাটোয়ারী গং, ডা. দীপু মনিকে আশ্রয় করে ওসমান হাজি গং, ইউসুফ গাজী এবং নাসির ভূঞার অবস্থা হচ্ছে “আমি কার খালুরে’- অতএব কেবল কাজ করে যাও। আমাদের ফরিদগঞ্জে তো আওয়ামী লীগের কমিটিই নেই দীর্ঘ ৮ বছর ধরে। আমি বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের দৃষ্টিগোচরে আনলে কয়েকবার কাউন্সিল অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেয়া হলেও জেলা আওয়ামী লীগ নানান টালবাহানায় হতে দেয়নি। তার টার্গেট ফরিদগঞ্জ থেকে নির্বাচন করবেন। এমনি অবস্থায় মাননীয় নেত্রী সাবেক এমপি শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ, রাজা মিয়া পাটোয়ারী সা’বের পুত্র প্রকৌশলী আমীর আযম রেজাকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ঘোষণা করার পরও কোন বৈধ কমিটি করা যায়নি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসারই ‘ওয়েক-আপ কল’ সাম্প্রতিক সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন।
ঢাকা- ২০ মে ২০১৩
লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
No comments