রংপুরে চার লেন সড়ক- গোড়ার গলদ দূর করুন
দেশের নবীনতম নগর রংপুর সিটি করপোরেশন
'কার্যকর' করার বিষয়ে অনেক কথাবার্তাই হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবায়নের কী হাল,
তার একটি উদাহরণ হতে পারে চার লেন সড়ক প্রশস্তকরণের কাজটি।
একটি জেলা শহরকে নগরে রূপান্তর করতে হলে এর যানবাহন ও যাতায়াত ব্যবস্থার
দিকে নজর দিতে হয় সবার আগে। সেদিক থেকে নির্বাচিত নগরপিতা দায়িত্ব গ্রহণের
আগেই সড়ক উন্নয়নের কাজ সাধুবাদই পেতে পারত। কিন্তু কাজটি যে পরিকল্পিত ছিল
না, সড়কের মাঝখানে মূর্তিমান ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিদ্যুতের খুঁটিগুলো
তার সাক্ষী। শুক্রবার সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাচ্ছে,
রংপুরে চার লেন সড়ক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয়েছিল ২০১০ সালে। তারপর
ঢিমেতালে হলেও সে কাজ চলছে। অথচ দ্বিগুণ প্রশস্ত করা সড়কগুলোর মাঝখানে পড়ে
যাওয়া কমবেশি দুই হাজার বিদ্যুতের খুঁটি সরানো হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভাগ
বলছে, এই কাজে তাদের প্রায় ছয় কোটি টাকা প্রয়োজন। আবার সড়ক প্রশস্তকরণের
কাজ যারা করছে সেই সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, এই খাতে তাদের বরাদ্দ নেই।
আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, প্রশস্তকরণের পরিকল্পনা যখন গ্রহণ করা হয়েছিল
সংশ্লিষ্টরা কি বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর কথা ভাবেননি? কেবল পরিকল্পনার
দুর্বলতা নয়, এর মধ্য দিয়ে প্রকল্পটিতে অনিবার্যভাবে যুক্ত দুই সরকারি
প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও প্রকট। হতে পারে খুঁটিগুলো সরানোর
দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগের নয়। সেই কারিগরি দক্ষতাও হয়তো তাদের নেই। কাজটি
শেষ পর্যন্ত হয়তো বিদ্যুৎ বিভাগই সম্পন্ন করবে। কাজ দুটি একসঙ্গে সম্পন্ন
করা গেলে সময় ও অর্থ দুইয়েরই সাশ্রয় হতো। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান
সমন্বয়হীনভাবে কাজ করলে নাগরিকের কী দুর্ভোগ হয়, সেটা আমরা খোদ রাজধানীতে
দেখে আসছি। নবীন সিটি করপোরেশনটিতেও এর দুর্ভাগ্যজনক পুনরাবৃত্তি দেখতে হবে
কেন? অভিযোগ রয়েছে, সমন্বয়হীন কাজের নেপথ্যে আসলে থাকে ঠিকাদারি ও
বরাদ্দের ভাগবাটোয়ারার দুষ্টচক্র। রংপুরে চার লেন সড়ক নির্মাণ নিয়ে সেই
চক্র সক্রিয় কিনা অবিলম্বে খতিয়ে দেখা হোক। গোড়ার গলদগুলো দূর করেই তবে
প্রশস্তকরণের বাকি কাজ সম্পন্ন হোক। অবকাঠামোগত উন্নয়ন আমরাও চাই। কিন্তু
সেটা জনগণের অর্থ নয়ছয় করে নয়। এ জন্য যদি আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়,
তা-ও ভালো।
No comments