ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর অপপ্রচার মোকাবেলায় নেই কোন শক্ত অবস্থান by রাজন ভট্টাচার্য
এবার নজর গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন
নির্বাচনের দিকে। কী ফল অপেক্ষা করছে সেখানে? এমন আলোচনা যখন সরব তখন
কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলো আওয়ামী লীগ
সমর্থিত মেয়র প্রার্থী!
আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের
বলেছেন, আওয়ামী লীগের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সময়েই হয়ত বলে দেবে এমন
বক্তব্যের বাস্তবায়ন কতটুকু। তবে অন্য চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো
গাজীপুরেও শুরু হয়েছে হেফাজত-জামায়াতসহ মৌলবাদী গোষ্ঠীর অপপ্রচার। প্রশ্ন
হলো এবার অপপ্রচার মোকাবেলা করে ১৪ দল তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বিজয়
তাদের ঘরে আনতে পারবে তো?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৫ জুন অনুষ্ঠিত চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দল পরাজিত হয়নি। হেরেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। নির্বাচনের ফলের মধ্য দিয়ে প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষগুলো বড় ধরনের ধাক্কা পেল।
এজন্য ক্ষমতাসীন দল ও তাদের শরিকদেকেই দোষারোপ করছেন তারা। এর কারণ হিসেবে বলছেন, জাতীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে চার সিটি নির্বাচনের ফল হয়েছে। অপপ্রচারের মূল হাতিয়ার ছিলÑ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সাম্প্রদায়িক উস্কানি, ধর্মীয় উন্মাদনা, নাস্তিকবাদ ইত্যাদি। এসব অপপ্রচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল জামায়াত-শিবির-বিএনপি-হেফাজতসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী। তারা ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে সচেষ্ট হয়েছে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দল ইসলামবিরোধী। কিন্তু এসব অপপ্রচারের প্রতিবাদে কোন এলাকাতেই শক্ত কোন অবস্থান গড়ে তুলতে পারেনি ক্ষমতাসীন দল। এর নেপথ্যেও রয়েছে আওয়ামী লীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ১৪ দল তথা মহাজোটের মধ্যে বিরোধ।
পাশাপাশি ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে যারা বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জনসংযোগে গিয়েছিলেন তা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। আছে মতবিরোধ। এক সময়ের আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতাদের মধ্যে যারা মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইতে মাঠে নেমেছিলেন তাদের অনেকেই নিজ দলেই কোণঠাসা। নানা কারণে দলে তাদের মূল্যায়ন নেই। যেখানে দলের নীতিনির্ধারণী জায়গায় তাদের মূল্যায়ন নেই; সেখানে তাদের কথায় সাধারণ মানুষ কতটুকু আস্থা রাখবে কিংবা ভোট দেবে সে প্রশ্ন তো রয়েই গেছে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে অনেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ভোট চাইতে মাঠে নামেননি। এলাকাভিত্তিক কোন্দল নিরসনে এমন কয়েক নেতা উদ্যোগ নিলেও তা সফল হয়নি।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষে বর্তমানে একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, যিনি বেশি বেশি কথা বলেন অথচ মাঠ পর্যায়ে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কথিত আছে উড়ে এসে জুড়ে বসা এ নেতার নেতৃত্বে অনেকেই নাখোশ। তাছাড়া সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইতে এমন কাউকে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়নি, যিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগের ব্যাকগিয়ার কেন তা বোঝতে নতুন করে ব্যাখ্যা দেয়ার খুব একটা প্রয়োজন নেই।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর আস্ফালন প্রতিরোধসহ জঙ্গীবাদ রোধে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় প্রার্থীকে চার সিটি কর্পোরেশনে সমর্থন জানিয়েছিল প্রগতিশীল চেতনার সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। বলতে গেলে- বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আদর্শগত বিরোধ থাকলেও শান্তি ও নিরাপত্তার প্রশ্নে ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীকে তারা সমর্থন দেয়। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মলিত সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, খেলাঘরসহ প্রগতিশীল বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করতে প্রচারণা চালায়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাকের পার্টি, বাসদ ছাড়াও প্রগতিশীল কয়েকটি রাজনৈতিক দল সরাসরি সমর্থন দেয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রার্থীকে।
ইসলাম রক্ষার নামে কথিত হেফাজতে ইসলাম নারী বিরোধী অবস্থান নেয়। তালেবানি রাষ্ট্র কায়েম করার উদ্দেশ্যে ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে সরকারের কাছে এবং তা বাস্তবায়নে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এ কারণে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রগতিশীল বিভিন্ন নারী সংগঠন, উন্নয়ন সংস্থা, গার্মেন্টসে কর্মরত নারীরাও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে জেগে ওঠে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কোন কিছুকেই পাত্তা দেয়নি।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হেফাজত, জামায়াত-শিবির, বিএনপিসহ তাদের সমমনা গোষ্ঠী একাট্টা হয়ে ২৪ ঘণ্টা নানা অপপ্রচারে লিপ্ত ছিল। নারীসহ শ্রমজীবী সাধারণ ভোটাদের ধর্মের নামে নিজেদের দলে আনার চেষ্টা করে। তাদের অপপ্রচারের ধরন ছিল ঠিক এরকম-‘ক’ প্রতীকে ভোট দিলে ইসলাম ধ্বংস হবে। ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন শাহাবাগী নাস্তিকরা নানাভাবে ইসলামকে অবমাননা করেছে। তাদের বিচার হয়নি। সরকারে তাদের ইসলামের বিরুদ্ধে মাঠে নামিয়েছে। নারীদের বেপর্দা করে ঘরের বাইরে পাঠাতে বাধ্য করা হচ্ছে। অন্যায়ভাবে বিশিষ্ট আলেম সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধী সাজিয়ে ফাঁসি দেয়ার চেষ্টা করছে। ইসলাম রক্ষার জন্য আমাদের বন্ধুরা ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে একত্রিত হয়েছিল। সরকারের নির্দেশে রাতের অন্ধকারের হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এসব কিসের আলামত। এসব কিছুই ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। তাই ‘আ’ মুসলমানদের প্রতীক। এই প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট না দিলে ইসলাম রক্ষা করা যাবে না। বাংলাদেশের পুরো অংশ ভারতে পরিণত হবে। তাছাড়া সাঈদীকেও বাঁচানো যাবে না। তাই সবাইকে একত্রিত হতে হবে।’ জামায়াতের নারী সদস্যদেরও এসব অপপ্রচারে লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে।
সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিহারী ক্যাম্পগুলোতে গিয়ে বলা হয়েছেÑ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের নামে আপনাদের ওপর কিভাবে অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে তা নিশ্চয় মনে আছে। এখনও আপনারা স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারেন না। নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন করা হচ্ছে। এজন্য দলবদ্ধ হয়ে আপনাদের বসবাস করতে হয়। আমরা ক্ষমতায় আসলে আপনারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। আপনাদের ওপর যারা অত্যাচার করেছিল এর প্রতিশোধ নেয়া হবে। তাই বাঁচতে হলেÑ জামায়াত-হেফাজত যাকে সমর্থন করবে তাকে ভোট দেবেন। চার সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রাত-দিন এসব অপপ্রচার চালানো হলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি ১৪ দল। ফল গেল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ঘরে। সকল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকা-ের চেয়ে ধর্মীয় ও জাতীয় ইস্যুগুলো ব্যাপকভাবে কাজ করেছে। এদিকে চার সিটি কর্পোরেশনে ১১৬ সাধারণ কাউন্সিলরের মধ্যে ৭৫ জনই ১৮ দলের।
সর্বশেষ গাজীপুর জেলার নবগঠিত কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী পেয়েছেন ১৬ হাজার পাঁচশ’ নয় ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত আমজাদ হোসেন স্বপন পেয়েছেন আট হাজার তিনশ’ ৮৪ ভোট। নির্বাচনে তিনটি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের মধ্যে দু’জন বিএনপি সমর্থিত এবং একজন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। তবে নয়জন সাধারণ কাউন্সিলরের মধ্যে সাতজন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও দু’জন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হন।
এবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পালা। এখানেও রয়েছে আওয়ামী লীগের মধ্যে গৃহদাহ। ছিল একাধিক প্রার্থী। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর হস্তক্ষেপে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও দলবিরোধী প্রচারনায় লিপ্ত রয়েছেন তিনি। বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটের পক্ষে একজন প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে এ নির্বাচনেও।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভাসমান মানুষের ভোট বেশি। তাদের মধ্যে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাই অপপ্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে কব্জা করতে এবারও একই কায়দায় মাঠে নেমেছে হেফাজত-জামায়াতসহ মৌলবাদী গোষ্ঠী। জাতীয় ইস্যুসহ ৫ মে ঘটে যাওয়া শাপলা চত্বরের কল্পকাহিনী ভোটারদের মাঝে বিকৃতভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। এতে সাহায্য করতে সঙ্গী হয়েছে জামায়াত ও হেফাজত নেতাকর্মীরা। তারা ১৮ দলের প্রার্থীর সঙ্গে কোমর বেঁধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ১৮ দলের প্রার্থীরা মনে করছেন, চার সিটি নির্বাচনের মতো হেফাজত ইস্যু জিসিসি নির্বাচনেও কাজে লাগানো যাবে। গাজীপুর জেলা হেফাজত ইসলামের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুফতি নাসির উদ্দীন খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ৫ মে শাপলা চত্বরে সরকার ইসলামের ওপর কি নির্মম আচরণ করেছে তা কারও অজানা নয়। সেই বিষয়গুলোও আমরা ভোটারদের অবহিত করছি। গাজীপুরে সব হেফাজতকর্মী এক হয়ে মাঠে নেমেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৫ জুন অনুষ্ঠিত চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দল পরাজিত হয়নি। হেরেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। নির্বাচনের ফলের মধ্য দিয়ে প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষগুলো বড় ধরনের ধাক্কা পেল।
এজন্য ক্ষমতাসীন দল ও তাদের শরিকদেকেই দোষারোপ করছেন তারা। এর কারণ হিসেবে বলছেন, জাতীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে চার সিটি নির্বাচনের ফল হয়েছে। অপপ্রচারের মূল হাতিয়ার ছিলÑ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সাম্প্রদায়িক উস্কানি, ধর্মীয় উন্মাদনা, নাস্তিকবাদ ইত্যাদি। এসব অপপ্রচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল জামায়াত-শিবির-বিএনপি-হেফাজতসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী। তারা ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে সচেষ্ট হয়েছে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দল ইসলামবিরোধী। কিন্তু এসব অপপ্রচারের প্রতিবাদে কোন এলাকাতেই শক্ত কোন অবস্থান গড়ে তুলতে পারেনি ক্ষমতাসীন দল। এর নেপথ্যেও রয়েছে আওয়ামী লীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ১৪ দল তথা মহাজোটের মধ্যে বিরোধ।
পাশাপাশি ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে যারা বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জনসংযোগে গিয়েছিলেন তা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। আছে মতবিরোধ। এক সময়ের আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতাদের মধ্যে যারা মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইতে মাঠে নেমেছিলেন তাদের অনেকেই নিজ দলেই কোণঠাসা। নানা কারণে দলে তাদের মূল্যায়ন নেই। যেখানে দলের নীতিনির্ধারণী জায়গায় তাদের মূল্যায়ন নেই; সেখানে তাদের কথায় সাধারণ মানুষ কতটুকু আস্থা রাখবে কিংবা ভোট দেবে সে প্রশ্ন তো রয়েই গেছে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে অনেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ভোট চাইতে মাঠে নামেননি। এলাকাভিত্তিক কোন্দল নিরসনে এমন কয়েক নেতা উদ্যোগ নিলেও তা সফল হয়নি।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষে বর্তমানে একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, যিনি বেশি বেশি কথা বলেন অথচ মাঠ পর্যায়ে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কথিত আছে উড়ে এসে জুড়ে বসা এ নেতার নেতৃত্বে অনেকেই নাখোশ। তাছাড়া সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইতে এমন কাউকে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়নি, যিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগের ব্যাকগিয়ার কেন তা বোঝতে নতুন করে ব্যাখ্যা দেয়ার খুব একটা প্রয়োজন নেই।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর আস্ফালন প্রতিরোধসহ জঙ্গীবাদ রোধে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় প্রার্থীকে চার সিটি কর্পোরেশনে সমর্থন জানিয়েছিল প্রগতিশীল চেতনার সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। বলতে গেলে- বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আদর্শগত বিরোধ থাকলেও শান্তি ও নিরাপত্তার প্রশ্নে ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীকে তারা সমর্থন দেয়। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মলিত সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, খেলাঘরসহ প্রগতিশীল বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করতে প্রচারণা চালায়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাকের পার্টি, বাসদ ছাড়াও প্রগতিশীল কয়েকটি রাজনৈতিক দল সরাসরি সমর্থন দেয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রার্থীকে।
ইসলাম রক্ষার নামে কথিত হেফাজতে ইসলাম নারী বিরোধী অবস্থান নেয়। তালেবানি রাষ্ট্র কায়েম করার উদ্দেশ্যে ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে সরকারের কাছে এবং তা বাস্তবায়নে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এ কারণে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রগতিশীল বিভিন্ন নারী সংগঠন, উন্নয়ন সংস্থা, গার্মেন্টসে কর্মরত নারীরাও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে জেগে ওঠে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কোন কিছুকেই পাত্তা দেয়নি।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হেফাজত, জামায়াত-শিবির, বিএনপিসহ তাদের সমমনা গোষ্ঠী একাট্টা হয়ে ২৪ ঘণ্টা নানা অপপ্রচারে লিপ্ত ছিল। নারীসহ শ্রমজীবী সাধারণ ভোটাদের ধর্মের নামে নিজেদের দলে আনার চেষ্টা করে। তাদের অপপ্রচারের ধরন ছিল ঠিক এরকম-‘ক’ প্রতীকে ভোট দিলে ইসলাম ধ্বংস হবে। ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন শাহাবাগী নাস্তিকরা নানাভাবে ইসলামকে অবমাননা করেছে। তাদের বিচার হয়নি। সরকারে তাদের ইসলামের বিরুদ্ধে মাঠে নামিয়েছে। নারীদের বেপর্দা করে ঘরের বাইরে পাঠাতে বাধ্য করা হচ্ছে। অন্যায়ভাবে বিশিষ্ট আলেম সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধী সাজিয়ে ফাঁসি দেয়ার চেষ্টা করছে। ইসলাম রক্ষার জন্য আমাদের বন্ধুরা ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে একত্রিত হয়েছিল। সরকারের নির্দেশে রাতের অন্ধকারের হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এসব কিসের আলামত। এসব কিছুই ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। তাই ‘আ’ মুসলমানদের প্রতীক। এই প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট না দিলে ইসলাম রক্ষা করা যাবে না। বাংলাদেশের পুরো অংশ ভারতে পরিণত হবে। তাছাড়া সাঈদীকেও বাঁচানো যাবে না। তাই সবাইকে একত্রিত হতে হবে।’ জামায়াতের নারী সদস্যদেরও এসব অপপ্রচারে লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে।
সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিহারী ক্যাম্পগুলোতে গিয়ে বলা হয়েছেÑ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের নামে আপনাদের ওপর কিভাবে অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে তা নিশ্চয় মনে আছে। এখনও আপনারা স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারেন না। নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন করা হচ্ছে। এজন্য দলবদ্ধ হয়ে আপনাদের বসবাস করতে হয়। আমরা ক্ষমতায় আসলে আপনারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। আপনাদের ওপর যারা অত্যাচার করেছিল এর প্রতিশোধ নেয়া হবে। তাই বাঁচতে হলেÑ জামায়াত-হেফাজত যাকে সমর্থন করবে তাকে ভোট দেবেন। চার সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রাত-দিন এসব অপপ্রচার চালানো হলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি ১৪ দল। ফল গেল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ঘরে। সকল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকা-ের চেয়ে ধর্মীয় ও জাতীয় ইস্যুগুলো ব্যাপকভাবে কাজ করেছে। এদিকে চার সিটি কর্পোরেশনে ১১৬ সাধারণ কাউন্সিলরের মধ্যে ৭৫ জনই ১৮ দলের।
সর্বশেষ গাজীপুর জেলার নবগঠিত কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী পেয়েছেন ১৬ হাজার পাঁচশ’ নয় ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত আমজাদ হোসেন স্বপন পেয়েছেন আট হাজার তিনশ’ ৮৪ ভোট। নির্বাচনে তিনটি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের মধ্যে দু’জন বিএনপি সমর্থিত এবং একজন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। তবে নয়জন সাধারণ কাউন্সিলরের মধ্যে সাতজন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও দু’জন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হন।
এবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পালা। এখানেও রয়েছে আওয়ামী লীগের মধ্যে গৃহদাহ। ছিল একাধিক প্রার্থী। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর হস্তক্ষেপে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও দলবিরোধী প্রচারনায় লিপ্ত রয়েছেন তিনি। বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটের পক্ষে একজন প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে এ নির্বাচনেও।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভাসমান মানুষের ভোট বেশি। তাদের মধ্যে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাই অপপ্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে কব্জা করতে এবারও একই কায়দায় মাঠে নেমেছে হেফাজত-জামায়াতসহ মৌলবাদী গোষ্ঠী। জাতীয় ইস্যুসহ ৫ মে ঘটে যাওয়া শাপলা চত্বরের কল্পকাহিনী ভোটারদের মাঝে বিকৃতভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। এতে সাহায্য করতে সঙ্গী হয়েছে জামায়াত ও হেফাজত নেতাকর্মীরা। তারা ১৮ দলের প্রার্থীর সঙ্গে কোমর বেঁধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ১৮ দলের প্রার্থীরা মনে করছেন, চার সিটি নির্বাচনের মতো হেফাজত ইস্যু জিসিসি নির্বাচনেও কাজে লাগানো যাবে। গাজীপুর জেলা হেফাজত ইসলামের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুফতি নাসির উদ্দীন খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ৫ মে শাপলা চত্বরে সরকার ইসলামের ওপর কি নির্মম আচরণ করেছে তা কারও অজানা নয়। সেই বিষয়গুলোও আমরা ভোটারদের অবহিত করছি। গাজীপুরে সব হেফাজতকর্মী এক হয়ে মাঠে নেমেছে।
No comments