জ্বালানি আগামী সরকারের ঘাড়ে ‘কয়লানীতি’ by মুশফিকুর রহমান
অর্থমন্ত্রী মহোদয় ৬ জুনের বাজেট বক্তৃতায়
জানিয়েছেন, সরকার কয়লানীতির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে এবং
সিদ্ধান্তের জন্য তারা সেটি পরবর্তী সরকারের জন্য রেখে যাবে।
সাম্প্রতিক কালে ‘কয়লানীতি’ নিয়ে যত কথা হয়েছে, দেশের অন্য কোনো নীতি
প্রণয়নে এত কথা হয়েছে বলে মনে হয় না। ২০০৫ সালের শেষ ভাগে জ্বালানি
মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রণীত প্রথম খসড়া ‘কয়লানীতি’ থেকে আজ অবধি অসংখ্য
কমিটি, বিশেষজ্ঞ কয়লানীতি নিয়ে কাজ করেছেন; সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের
কর্মকর্তারা দেশের অধিক খসড়া প্রণয়ন করেছেন। কিন্তু ‘খসড়া কয়লানীতি’ আজও
চূড়ান্ত হয়নি। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত বলা হয়ে আসছে যে ‘কয়লানীতি’
চূড়ান্ত না হওয়ায় দেশের কয়লা অনুসন্ধান, উন্নয়নকাজ এগোতে পারেনি।
দেশে যেহেতু খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, উত্তোলন ও ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট আইন ও বিধিমালা রয়েছে, প্রয়োজনে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেসব আইন ও বিধিমালা যুগোপযোগী করা, সংশোধন এবং পরিমার্জন করার সুযোগ সব সময় ছিল এবং আছে। এ বিষয়ে বুঝতে এবং দেশে-বিদেশে কয়লা উত্তোলন ও তার ব্যবহারের সঙ্গে পরিচিত হতে নিয়মিত সরকারি ব্যয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা সফরও করেছেন। এ সংক্রান্ত তথ্য, নীতিমালা বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহও করা হয়েছে বিস্তর। কিন্তু বিড়ম্বিত ভাগ্যের ‘কয়লানীতি’ আলোর মুখ দেখেনি।
ইতিমধ্যে সরকার দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার আমদানি কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করেছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আরও কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সমীক্ষা চলছে। কয়লা আমদানি এবং প্রাক্কলিত নির্মাণস্থলে সে কয়লা পরিবহন করে নেওয়া বেশ সমস্যাসংকুল ও ব্যয়বহুল। ফলে আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে ভবিষ্যতে বিদ্যুতের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে।
অর্থমন্ত্রী মহোদয় তাঁর সর্বশেষ বাজেট বক্তৃতায় আরও জানিয়েছেন, ‘আমরা নিজেদের কয়লা নিজেদের খনি থেকে তুলে সরবরাহ করতে পারলে আমদানির ওপর নির্ভরতা পর্যায়ক্রমে বিলুপ্ত হবে।’ তবে কয়লাখনির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মন্ত্রী সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য পুনর্বাসন, এলাকার পরিবেশ ও পানি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত ও করণীয় নির্ধারণ প্রয়োজন বলে মনে করেন।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় ইতিপূর্বে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংকে বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ী এলাকায় কয়লাখনি উন্নয়নের ফলে পানি ও পরিবেশের ওপর তার প্রভাব কী হতে পারে এবং এ সম্পর্কে করণীয় জানতে দায়িত্ব দিয়েছে। তবে জ্বালানি মন্ত্রণালয় সেই প্রতিবেদন তৈরির জন্য সময় দিয়েছে, যাতে ২০১৪ সালে তা প্রস্তুত হয়। স্পষ্ট, বাজেট বক্তৃতার অনেক আগেই জ্বালানি মন্ত্রণালয় বর্তমান সরকারের মেয়াদে দেশের কয়লাখনি উন্নয়ন প্রসঙ্গ পরবর্তী সরকারের জন্য রেখে দেওয়ার আয়োজন করেছে।
সরকারের ‘পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্ল্যান’ অনুযায়ী, ২০৩০ সালে প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট পরিমাণ বিদ্যুৎ কয়লা থেকে উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে, প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেশে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে উৎপাদনের কথা। ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে বাংলাদেশে উত্তোলন করতে হবে বছরে প্রায় ৩৩ মিলিয়ন টন কয়লা। দেশের একমাত্র বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির বার্ষিক উৎপাদন সামর্থ্য বছরে এক মিলিয়ন টন কয়লা। তা ছাড়া কয়লা উত্তোলনের জন্য আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদন, বিনিয়োগ সমাবেশ এবং খনি নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ন্যূনতম কয়েক বছর সময় দরকার। আগামী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর উল্লিখিত উদ্যোগগুলো যদি গ্রহণও করে, তবু কয়লা উত্তোলনের স্বপ্ন সে সরকারের আমলে বাস্তবায়ন অধরাই রয়ে যাবে। আসলে সরকারি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পাঁচ বছর মেয়াদের ভেতরে করতে চাইলে খনি উন্নয়নের মতো ‘বড় প্রকল্প’ নিয়মিত অগ্রাধিকার হারাবে।
এদিকে, প্রধানত প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহনির্ভর আমাদের জ্বালানি-ব্যবস্থা কতটা নাজুক, তা বুঝতে সরকারি সিদ্ধান্তে গত কয়েক বছর নতুন গ্যাসের সংযোগ স্থগিত রাখার উদাহরণই যথেষ্ট। ইতিমধ্যে পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, ২০১৫ নাগাদ প্রতিষ্ঠানটি যে পরিমাণ গ্যাস উৎপাদিত হবে বলে আশা করেছিল, তাদের সে পরিকল্পনা পূরণ হবে না। পেট্রোবাংলা ইতিমধ্যে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন করার সংশোধিত পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। কেউ কেউ আশায় বুক বাঁধতে চান এই ভেবে যে বিশ্ববাজারে জ্বালানি কয়লার দাম এখন স্থিতিশীল এবং গত কয়েক বছরের তুলনায় তা কম। ইতিমধ্যে, কম মূল্যের কারণে প্রধান রপ্তানিকারক ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক কয়লাখনি বন্ধ হয়ে গেছে। নব্বইয়ের দশকে প্রায় একই ঘটনা ঘটেছিল। ফলে বিশ্ববাজারে কয়লার সরবরাহে বড় ঘাটতি সৃষ্টি হয় এবং গত দশকে কয়লার মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে তা টনপ্রতি ১৩০-১৫০ ডলারে (এফওবি) পৌঁছে গিয়েছিল। আমদানি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যাঁরা চালান, তাঁদের এই ঝুঁকি বিবেচনায় রাখতে হবে। বড় আমদানিকারক দেশগুলো সে কারণে দীর্ঘদিন আগে কয়েক বছরের আগাম কয়লা কেনার চুক্তি করতে উৎসাহী হয়। আমাদের নানা ধরনের সমস্যায় সে সুযোগও কার্যত নেই। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবর অনুযায়ী, ভারতের সরকারি কয়লা কোম্পানি ‘কোল ইন্ডিয়া লি.’ এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়লাখনির মালিকানা কেনার জন্য এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। ভারত তার ক্রমবর্ধমান কয়লার চাহিদা মেটাতে ‘সরবরাহ চেইন’ বাধাহীন রাখতে তৎপর। ইতিমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক, অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বিভিন্ন কয়লাখনিতে ভারতীয় বিনিয়োগ রয়েছে। ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২ সালে জ্বালানি হিসেবে কয়লার প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে কয়লার অবস্থান শীর্ষে।
এ পটভূমিতে, বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী মহোদয় দেশে প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহ বৃদ্ধি এবং তার অতিপ্রয়োজনীয় বহুমুখীকরণের জন্য সরকারের বাস্তবায়িত পদক্ষেপের সীমাবদ্ধতা আরও স্পষ্ট করেছেন। পরবর্তী সরকারের ঘাড়ে ‘কয়লানীতি’ ঠেলে দিয়ে সরকার ‘পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্ল্যান’-এর লক্ষ্য পূরণও অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিল। এখন আমাদের সম্ভবত বারবার বাজেটে জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জনের স্বপ্ন দেখার মধ্যেই নিজেদের পরিতৃপ্ত হতে শিখতে হবে।
ড. মুশফিকুর রহমান: খনি প্রকৌশলী, জ্বালানি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক।
দেশে যেহেতু খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, উত্তোলন ও ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট আইন ও বিধিমালা রয়েছে, প্রয়োজনে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেসব আইন ও বিধিমালা যুগোপযোগী করা, সংশোধন এবং পরিমার্জন করার সুযোগ সব সময় ছিল এবং আছে। এ বিষয়ে বুঝতে এবং দেশে-বিদেশে কয়লা উত্তোলন ও তার ব্যবহারের সঙ্গে পরিচিত হতে নিয়মিত সরকারি ব্যয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা সফরও করেছেন। এ সংক্রান্ত তথ্য, নীতিমালা বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহও করা হয়েছে বিস্তর। কিন্তু বিড়ম্বিত ভাগ্যের ‘কয়লানীতি’ আলোর মুখ দেখেনি।
ইতিমধ্যে সরকার দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার আমদানি কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করেছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আরও কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সমীক্ষা চলছে। কয়লা আমদানি এবং প্রাক্কলিত নির্মাণস্থলে সে কয়লা পরিবহন করে নেওয়া বেশ সমস্যাসংকুল ও ব্যয়বহুল। ফলে আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে ভবিষ্যতে বিদ্যুতের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে।
অর্থমন্ত্রী মহোদয় তাঁর সর্বশেষ বাজেট বক্তৃতায় আরও জানিয়েছেন, ‘আমরা নিজেদের কয়লা নিজেদের খনি থেকে তুলে সরবরাহ করতে পারলে আমদানির ওপর নির্ভরতা পর্যায়ক্রমে বিলুপ্ত হবে।’ তবে কয়লাখনির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মন্ত্রী সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য পুনর্বাসন, এলাকার পরিবেশ ও পানি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত ও করণীয় নির্ধারণ প্রয়োজন বলে মনে করেন।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় ইতিপূর্বে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংকে বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ী এলাকায় কয়লাখনি উন্নয়নের ফলে পানি ও পরিবেশের ওপর তার প্রভাব কী হতে পারে এবং এ সম্পর্কে করণীয় জানতে দায়িত্ব দিয়েছে। তবে জ্বালানি মন্ত্রণালয় সেই প্রতিবেদন তৈরির জন্য সময় দিয়েছে, যাতে ২০১৪ সালে তা প্রস্তুত হয়। স্পষ্ট, বাজেট বক্তৃতার অনেক আগেই জ্বালানি মন্ত্রণালয় বর্তমান সরকারের মেয়াদে দেশের কয়লাখনি উন্নয়ন প্রসঙ্গ পরবর্তী সরকারের জন্য রেখে দেওয়ার আয়োজন করেছে।
সরকারের ‘পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্ল্যান’ অনুযায়ী, ২০৩০ সালে প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট পরিমাণ বিদ্যুৎ কয়লা থেকে উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে, প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেশে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে উৎপাদনের কথা। ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে বাংলাদেশে উত্তোলন করতে হবে বছরে প্রায় ৩৩ মিলিয়ন টন কয়লা। দেশের একমাত্র বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির বার্ষিক উৎপাদন সামর্থ্য বছরে এক মিলিয়ন টন কয়লা। তা ছাড়া কয়লা উত্তোলনের জন্য আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদন, বিনিয়োগ সমাবেশ এবং খনি নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ন্যূনতম কয়েক বছর সময় দরকার। আগামী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর উল্লিখিত উদ্যোগগুলো যদি গ্রহণও করে, তবু কয়লা উত্তোলনের স্বপ্ন সে সরকারের আমলে বাস্তবায়ন অধরাই রয়ে যাবে। আসলে সরকারি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পাঁচ বছর মেয়াদের ভেতরে করতে চাইলে খনি উন্নয়নের মতো ‘বড় প্রকল্প’ নিয়মিত অগ্রাধিকার হারাবে।
এদিকে, প্রধানত প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহনির্ভর আমাদের জ্বালানি-ব্যবস্থা কতটা নাজুক, তা বুঝতে সরকারি সিদ্ধান্তে গত কয়েক বছর নতুন গ্যাসের সংযোগ স্থগিত রাখার উদাহরণই যথেষ্ট। ইতিমধ্যে পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, ২০১৫ নাগাদ প্রতিষ্ঠানটি যে পরিমাণ গ্যাস উৎপাদিত হবে বলে আশা করেছিল, তাদের সে পরিকল্পনা পূরণ হবে না। পেট্রোবাংলা ইতিমধ্যে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন করার সংশোধিত পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। কেউ কেউ আশায় বুক বাঁধতে চান এই ভেবে যে বিশ্ববাজারে জ্বালানি কয়লার দাম এখন স্থিতিশীল এবং গত কয়েক বছরের তুলনায় তা কম। ইতিমধ্যে, কম মূল্যের কারণে প্রধান রপ্তানিকারক ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক কয়লাখনি বন্ধ হয়ে গেছে। নব্বইয়ের দশকে প্রায় একই ঘটনা ঘটেছিল। ফলে বিশ্ববাজারে কয়লার সরবরাহে বড় ঘাটতি সৃষ্টি হয় এবং গত দশকে কয়লার মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে তা টনপ্রতি ১৩০-১৫০ ডলারে (এফওবি) পৌঁছে গিয়েছিল। আমদানি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যাঁরা চালান, তাঁদের এই ঝুঁকি বিবেচনায় রাখতে হবে। বড় আমদানিকারক দেশগুলো সে কারণে দীর্ঘদিন আগে কয়েক বছরের আগাম কয়লা কেনার চুক্তি করতে উৎসাহী হয়। আমাদের নানা ধরনের সমস্যায় সে সুযোগও কার্যত নেই। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবর অনুযায়ী, ভারতের সরকারি কয়লা কোম্পানি ‘কোল ইন্ডিয়া লি.’ এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়লাখনির মালিকানা কেনার জন্য এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। ভারত তার ক্রমবর্ধমান কয়লার চাহিদা মেটাতে ‘সরবরাহ চেইন’ বাধাহীন রাখতে তৎপর। ইতিমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক, অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বিভিন্ন কয়লাখনিতে ভারতীয় বিনিয়োগ রয়েছে। ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২ সালে জ্বালানি হিসেবে কয়লার প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে কয়লার অবস্থান শীর্ষে।
এ পটভূমিতে, বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী মহোদয় দেশে প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহ বৃদ্ধি এবং তার অতিপ্রয়োজনীয় বহুমুখীকরণের জন্য সরকারের বাস্তবায়িত পদক্ষেপের সীমাবদ্ধতা আরও স্পষ্ট করেছেন। পরবর্তী সরকারের ঘাড়ে ‘কয়লানীতি’ ঠেলে দিয়ে সরকার ‘পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্ল্যান’-এর লক্ষ্য পূরণও অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিল। এখন আমাদের সম্ভবত বারবার বাজেটে জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জনের স্বপ্ন দেখার মধ্যেই নিজেদের পরিতৃপ্ত হতে শিখতে হবে।
ড. মুশফিকুর রহমান: খনি প্রকৌশলী, জ্বালানি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক।
No comments