নিজামীর না, জাতির হঁযা ॥ বিশ্বমানবতার লজ্জা by ড. মোঃ হারুন-অর-রশীদ
লেখাটির একটি ছোট্ট গৌরচন্দ্রিকা দরকার।
১৯৯১ সালের শেষের দিকে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রভাষক
হিসেবে যোগদান করি। ওই বছরে কিংবা পরের বছরের প্রথম দিকে সম্ভবত শিবিরের
সঙ্গে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সহিংস সংঘর্ষ ঘটে।
সে দিন
যে সময় ঘটনাটি ব্যাপক সহিংসহায় রূপ নেয়, তখন আমি রবীন্দ্র বাণিজ্য ভবন থেকে
শহীদুল্লাহ কলাভবনে আমার বিভাগে ফিরছিলাম। আমার চোখের সম্মুখে প্রতিপৰের
ছাত্রদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালায় ছাত্রশিবির এবং সে গুলি একজনের বৰদেশ
বিদীর্ণ করে ঝাঁঝরা করে দেয় ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটকে পড়ে চার দিকে। তড়পাতে
থাকে হতভাগ্য ছাত্রের সদ্য গুলিবিদ্ধ শরীর। সে দিনকার হামলায় বেশ কয়েকজন
ছাত্র নিহত হয় এবং বহুসংখ্যক ছাত্রের হাত পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়
নির্মম-নিষ্ঠুরতার সঙ্গে। ক্যাম্পাসে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব।
ছাত্র-শিৰিক সবার মধ্যে ভীতিকর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায়
অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়।
সে দিনই সন্ধ্যায় একজন প্রাক্তন সহকর্মী আমার বাসায় বেড়াতে আসেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় সমর্থক ও সদস্য। প্রসঙ্গত বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা ওঠে। পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার নির্মেদ বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনা শুনে প্রত্যয়দীপ্ত বলিষ্ঠ কণ্ঠে বললেন, 'অসম্ভব ইসলামী ছাত্রশিবির একটি আদর্শবাদী ছাত্র সংগঠন, এরা এরকম গর্হিত অনৈতিক কাজ করতেই পারে না।' তার কথা শুনে আমার মনে হলো, 'চৰু কর্ণ দিব্যি সচল/হলেম কিনা কানা।' এরপরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম ঘটনা তারা বহুবার ঘটিয়েছে। ঢাকাগামী নৈশকোচ থেকে টেনে হেঁচড়ে নামিয়ে যাত্রীদের সম্মুখে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপৰের প্রতিবাদী ছাত্রকে। হত্যা করেছে মুক্তচিনত্মার অধিকারী, অসাম্প্রদায়িক, মানবতাবাদী বয়োজ্যেষ্ঠ প্রফেসর ইউনুসকে। অজাতশত্রম্ন প্রফেসর এস তাহেরকে হত্যা করে তার লাশ ঢুকিয়েছে ম্যানহোলে পৈশাচিক প্রক্রিয়ায়, অমানবিক হৃদয়হীনতার সঙ্গে। এরা শুধু হত্যাই করে না, লাশের প্রতিও প্রকাশ করে জানত্মব আক্রোশ, মানবেতর আচরণ। প্রক্রিয়া একই! সেই বীভৎসতা সেই জানত্মবতা! এবারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শেষবর্ষের মেধাবী ছাত্র ফারম্নক হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করে, রগ কেটে, হাত পা ভেঙ্গে ম্যানহোলে ঢুকিয়ে যে বীভৎসতার পরিচয় দিয়েছে তাও হিংস্রতাকে হার মানায়। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এরা সরাসরি শুধু বিরোধিতাই করেনি, অগণিত মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠন, অসংখ্য মানুষের প্রাণ হরণ, দেশের সর্বত্র জ্বালাও পোড়াও এবং অবর্ণনীয় নির্যাত-নিপীড়ন করেও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অদ্যাবধি তা অস্বীকার করা মতো ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে চলছেন একানত্ম নির্লজ্জের মতো। ৮ ফেব্রম্নয়ারি সোমবার মধ্যরাতে শিবিরকর্মীদের বর্বর আক্রমণে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শেষবর্ষের ছাত্র ফারম্নক হোসেনের নৃশংস হত্যাকা-ের প্রতিক্রিয়ায় ব্যক্ত জামায়াত-শিবিরের জ্বলজ্যানত্ম মিথ্যাচারের কথা। আক্রানত্ম, আহত, হাত পায়ের রগকাটা হতভাগ্য ভুক্তভোগী ও প্রত্যৰদর্শী সকল ছাত্রের বর্ণনায় যখন সম্যকভাবে অবগত হওয়া যাচ্ছে যে, মর্মানত্মিক এ ঘটনার হোতা ছাত্রশিবির, তখন টেলিভিশনের পর্দায় দেখা গেল, সুন্দর শ্মশ্রম্নম-িত সুদর্শন জনৈক শিবির নেতা সকলকে অবাক করে দিয়ে অকম্পিত কণ্ঠে বলছেন, 'আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি যে, হত্যা এবং হাত-পায়ের রগ কাটার মতো গর্হিত ও জঘন্য কাজ ছাত্রশিবিরের মতো আদর্শবাদী দলের কোন সদস্য করতেই পারে না।' তাজ্জবকি বাত! একই বলে ভূতের মুখে রাম নাম। চোরের মায়ের বড় গলা। শুধু শিবির নেতা বলে নয়; তাদের আধ্যাত্মিক গুরম্ন, রাজাকারকুল শিরোমণি মতিউর রহমান নিজামী এবং কুখ্যাত আলবদর ও যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদীরাও বলেন। মুজাহিদীর ভাষায়, 'ছাত্র হত্যায় কারা জড়িত এখনও পরিষ্কার নয়।' তার মতে, 'ইসলাম রগ কাটা সমর্থন করে না। এর সঙ্গে জামায়াত বা শিবিরের কেউ জড়িত নয়।' (কালের কণ্ঠ ১১ ফেব্রম্নয়ারি, ২০১০) নিজামী আরেক কাঠি এগিয়ে। তার মতে, ছাত্রলীগ পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। অথচ পরিসংখ্যান বলে, বিগত ১৫ বছরে ছাত্রশিবিরের হাতে ৫০ ছাত্র খুন হয়েছে। একই কায়দায়, একই কৌশলে; বীভৎস বর্বরতায়। এ সকল হত্যাকা- জামায়াতে ইসলামীর উর্ধতন নেতৃবর্গের নির্দেশেই সংঘটিত হয় এবং অধিকাংশ ৰেত্রে এর সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংশিস্নষ্টতা, নীরবতা, নিষ্ক্রিয়তা বা মৌন সম্মতির আভাস মেলে। এতে করে অনুমেয় হয়, এ রকম অপারেশন করার পূর্বে সংশিস্নষ্ট এলাকায় জামায়াত নেতৃবর্গ তাদের আদর্শে বিশ্বাসী পুলিশ কর্মকর্তা বদলি করে এনে ঘটনাস্থলে শিখ-িরূপে তাদের দাঁড় করিয়ে রেখে হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করেন। এবারের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যাকা-ও এরকম পূর্বপরিকল্পনারই ফল। সেদিন নবাব আব্দুল লতিফ হলে যে পুলিশরা কর্তব্য পালনে নিয়োজিত ছিলেন, তারা সকলেই প্রক্টোরিয়াল বডিকে আশ্বসত্ম করেছিলেন যে, আপনারা যান, আমরা যথেষ্ট সতর্ক অবস্থায় আছি; আমরা থাকতে ছাত্রদের নিরাপত্তা বিধানে কোন অসুবিধাই হবে না। অর্থাৎ শঙ্কার কোন কারণ নেই। অতঃপর পাঁচ মিনিট অতিক্রানত্ম হতে না হতেই হাওয়া হয়ে গেল কর্তব্যরত সকল পুলিশ; ঝরে গেল একটি তরতাজা মেধাবী ছাত্রের প্রাণ। এতে কি মনে হয় না যে, শিৰকদের আশ্বসত্ম করার নামে আসলে তাদের ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়েছিলেন পুলিশ? আক্রানত্ম ছাত্রদের বর্ণনাও তো সে রকমই।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রফেসর ড. আব্দুল খালেদ যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, তখনও একবার এবারের চেয়েও ভয়াবহ আকারে প্রতিপৰ ছাত্রদের ওপর হত্যালীলার তা-ব, অগি্নসংযোগের হোলিখেলা ও হাত-পায়ের রগ কাটার মচ্ছবে মেতে উঠেছিল ছাত্রশিবির এবং তখনও পুলিশ ছিল মীরজাফরের সেনাবাহিনীর মতো নিষ্ক্রিয় ও প্রায় কাঠের পুতুলের মতো দ-ায়মান। তারা শিবিরের ওপর এ্যাকশন দেখানোর নামে প্রহনে লিপ্ত ছিল। তখনকার রাজশাহী রেঞ্জের উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা সকলেই ছিলেন বিএনপি-জামায়াতের বশংবদ। অন্যকথায়, সর্ষের মধ্যে ভূত। ফলে কিছুতেই ছাত্রশিবিরের তা-ব বন্ধ করা যাচ্ছিল না। উপরন্তু তাদের অত্যাচার-নিপীড়ন এতদূর পর্যনত্ম বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, ছাত্র-শিৰক ভর্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলনত্ম পরিবহনের ভেতরে ককটেল ছুড়ে মেরেছিল তারা এবং এই ঘটনা দর্শনে ৰিপ্ত হয়ে আমজনতা তেড়ে মেরে গিয়ে দুর্বৃত্তদের একজনকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছিল।
জরম্নরী এ কারণে যে, ইতোমধ্যেই জাতি হাড়ে হাড়ে তথাকথিত ধর্মশীল ছাত্রশিবিরের কদর্য-কদাক্ত-বিকৃত কর্মকা- ও জাতিঘাতী মন মানসিকতা দর্শনে মর্মাহত, ভীতসন্ত্রসত্ম; লজ্জিত। যেমন লজ্জিত মানবতাবাদী বিশ্বের সকল মানুষ। এর মধ্যেই 'যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থার দৃষ্টিতে শিবির সন্ত্রাসী সংগঠন' রূপে ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু না শিবির, না জামায়াতে ইসলাম এই অপকর্মের জন্য এতটুকু লজ্জিত, মর্মাহত ও বিব্রত। অনুতপ্ত তো নয়-ই। বিবেক ও মনুষ্যত্ব বন্ধক রেখে হলেও তথাকথিত ধর্মের নামে এরা বিশ্বজয় করতে চায়। হাতে পেতে চায় রাষ্ট্রীয় আধিপত্য। কিন্তু একবারও ভেবে দেখে না যে, 'ফর হট ইজ ম্যান প্রফিটেড ইফ হি শ্যাল গেইন দ্য হোল ওয়ার্ল্ড এ্যান্ড লস হিস ওন সোল।'
'জাতিকে এই লজ্জাকর বিপর্যয় থেকে বাঁচানো অত্যনত্ম জরম্নরী। জামায়াত ও শিবিরের ৰেত্রে তো বটেই, জাতিঘাতী, মানবতাবিরোধী, মনুষ্যত্ব এবং বিবেকবিরোধী সকল দল ও গোষ্ঠীর বেলায়ও কথাটা সমানভাবে প্রযোজ্য।
লেখক : প্রফেসর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
সে দিনই সন্ধ্যায় একজন প্রাক্তন সহকর্মী আমার বাসায় বেড়াতে আসেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় সমর্থক ও সদস্য। প্রসঙ্গত বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা ওঠে। পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার নির্মেদ বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনা শুনে প্রত্যয়দীপ্ত বলিষ্ঠ কণ্ঠে বললেন, 'অসম্ভব ইসলামী ছাত্রশিবির একটি আদর্শবাদী ছাত্র সংগঠন, এরা এরকম গর্হিত অনৈতিক কাজ করতেই পারে না।' তার কথা শুনে আমার মনে হলো, 'চৰু কর্ণ দিব্যি সচল/হলেম কিনা কানা।' এরপরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম ঘটনা তারা বহুবার ঘটিয়েছে। ঢাকাগামী নৈশকোচ থেকে টেনে হেঁচড়ে নামিয়ে যাত্রীদের সম্মুখে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপৰের প্রতিবাদী ছাত্রকে। হত্যা করেছে মুক্তচিনত্মার অধিকারী, অসাম্প্রদায়িক, মানবতাবাদী বয়োজ্যেষ্ঠ প্রফেসর ইউনুসকে। অজাতশত্রম্ন প্রফেসর এস তাহেরকে হত্যা করে তার লাশ ঢুকিয়েছে ম্যানহোলে পৈশাচিক প্রক্রিয়ায়, অমানবিক হৃদয়হীনতার সঙ্গে। এরা শুধু হত্যাই করে না, লাশের প্রতিও প্রকাশ করে জানত্মব আক্রোশ, মানবেতর আচরণ। প্রক্রিয়া একই! সেই বীভৎসতা সেই জানত্মবতা! এবারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শেষবর্ষের মেধাবী ছাত্র ফারম্নক হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করে, রগ কেটে, হাত পা ভেঙ্গে ম্যানহোলে ঢুকিয়ে যে বীভৎসতার পরিচয় দিয়েছে তাও হিংস্রতাকে হার মানায়। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এরা সরাসরি শুধু বিরোধিতাই করেনি, অগণিত মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠন, অসংখ্য মানুষের প্রাণ হরণ, দেশের সর্বত্র জ্বালাও পোড়াও এবং অবর্ণনীয় নির্যাত-নিপীড়ন করেও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অদ্যাবধি তা অস্বীকার করা মতো ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে চলছেন একানত্ম নির্লজ্জের মতো। ৮ ফেব্রম্নয়ারি সোমবার মধ্যরাতে শিবিরকর্মীদের বর্বর আক্রমণে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শেষবর্ষের ছাত্র ফারম্নক হোসেনের নৃশংস হত্যাকা-ের প্রতিক্রিয়ায় ব্যক্ত জামায়াত-শিবিরের জ্বলজ্যানত্ম মিথ্যাচারের কথা। আক্রানত্ম, আহত, হাত পায়ের রগকাটা হতভাগ্য ভুক্তভোগী ও প্রত্যৰদর্শী সকল ছাত্রের বর্ণনায় যখন সম্যকভাবে অবগত হওয়া যাচ্ছে যে, মর্মানত্মিক এ ঘটনার হোতা ছাত্রশিবির, তখন টেলিভিশনের পর্দায় দেখা গেল, সুন্দর শ্মশ্রম্নম-িত সুদর্শন জনৈক শিবির নেতা সকলকে অবাক করে দিয়ে অকম্পিত কণ্ঠে বলছেন, 'আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি যে, হত্যা এবং হাত-পায়ের রগ কাটার মতো গর্হিত ও জঘন্য কাজ ছাত্রশিবিরের মতো আদর্শবাদী দলের কোন সদস্য করতেই পারে না।' তাজ্জবকি বাত! একই বলে ভূতের মুখে রাম নাম। চোরের মায়ের বড় গলা। শুধু শিবির নেতা বলে নয়; তাদের আধ্যাত্মিক গুরম্ন, রাজাকারকুল শিরোমণি মতিউর রহমান নিজামী এবং কুখ্যাত আলবদর ও যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদীরাও বলেন। মুজাহিদীর ভাষায়, 'ছাত্র হত্যায় কারা জড়িত এখনও পরিষ্কার নয়।' তার মতে, 'ইসলাম রগ কাটা সমর্থন করে না। এর সঙ্গে জামায়াত বা শিবিরের কেউ জড়িত নয়।' (কালের কণ্ঠ ১১ ফেব্রম্নয়ারি, ২০১০) নিজামী আরেক কাঠি এগিয়ে। তার মতে, ছাত্রলীগ পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। অথচ পরিসংখ্যান বলে, বিগত ১৫ বছরে ছাত্রশিবিরের হাতে ৫০ ছাত্র খুন হয়েছে। একই কায়দায়, একই কৌশলে; বীভৎস বর্বরতায়। এ সকল হত্যাকা- জামায়াতে ইসলামীর উর্ধতন নেতৃবর্গের নির্দেশেই সংঘটিত হয় এবং অধিকাংশ ৰেত্রে এর সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংশিস্নষ্টতা, নীরবতা, নিষ্ক্রিয়তা বা মৌন সম্মতির আভাস মেলে। এতে করে অনুমেয় হয়, এ রকম অপারেশন করার পূর্বে সংশিস্নষ্ট এলাকায় জামায়াত নেতৃবর্গ তাদের আদর্শে বিশ্বাসী পুলিশ কর্মকর্তা বদলি করে এনে ঘটনাস্থলে শিখ-িরূপে তাদের দাঁড় করিয়ে রেখে হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করেন। এবারের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যাকা-ও এরকম পূর্বপরিকল্পনারই ফল। সেদিন নবাব আব্দুল লতিফ হলে যে পুলিশরা কর্তব্য পালনে নিয়োজিত ছিলেন, তারা সকলেই প্রক্টোরিয়াল বডিকে আশ্বসত্ম করেছিলেন যে, আপনারা যান, আমরা যথেষ্ট সতর্ক অবস্থায় আছি; আমরা থাকতে ছাত্রদের নিরাপত্তা বিধানে কোন অসুবিধাই হবে না। অর্থাৎ শঙ্কার কোন কারণ নেই। অতঃপর পাঁচ মিনিট অতিক্রানত্ম হতে না হতেই হাওয়া হয়ে গেল কর্তব্যরত সকল পুলিশ; ঝরে গেল একটি তরতাজা মেধাবী ছাত্রের প্রাণ। এতে কি মনে হয় না যে, শিৰকদের আশ্বসত্ম করার নামে আসলে তাদের ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়েছিলেন পুলিশ? আক্রানত্ম ছাত্রদের বর্ণনাও তো সে রকমই।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রফেসর ড. আব্দুল খালেদ যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, তখনও একবার এবারের চেয়েও ভয়াবহ আকারে প্রতিপৰ ছাত্রদের ওপর হত্যালীলার তা-ব, অগি্নসংযোগের হোলিখেলা ও হাত-পায়ের রগ কাটার মচ্ছবে মেতে উঠেছিল ছাত্রশিবির এবং তখনও পুলিশ ছিল মীরজাফরের সেনাবাহিনীর মতো নিষ্ক্রিয় ও প্রায় কাঠের পুতুলের মতো দ-ায়মান। তারা শিবিরের ওপর এ্যাকশন দেখানোর নামে প্রহনে লিপ্ত ছিল। তখনকার রাজশাহী রেঞ্জের উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা সকলেই ছিলেন বিএনপি-জামায়াতের বশংবদ। অন্যকথায়, সর্ষের মধ্যে ভূত। ফলে কিছুতেই ছাত্রশিবিরের তা-ব বন্ধ করা যাচ্ছিল না। উপরন্তু তাদের অত্যাচার-নিপীড়ন এতদূর পর্যনত্ম বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, ছাত্র-শিৰক ভর্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলনত্ম পরিবহনের ভেতরে ককটেল ছুড়ে মেরেছিল তারা এবং এই ঘটনা দর্শনে ৰিপ্ত হয়ে আমজনতা তেড়ে মেরে গিয়ে দুর্বৃত্তদের একজনকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছিল।
জরম্নরী এ কারণে যে, ইতোমধ্যেই জাতি হাড়ে হাড়ে তথাকথিত ধর্মশীল ছাত্রশিবিরের কদর্য-কদাক্ত-বিকৃত কর্মকা- ও জাতিঘাতী মন মানসিকতা দর্শনে মর্মাহত, ভীতসন্ত্রসত্ম; লজ্জিত। যেমন লজ্জিত মানবতাবাদী বিশ্বের সকল মানুষ। এর মধ্যেই 'যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থার দৃষ্টিতে শিবির সন্ত্রাসী সংগঠন' রূপে ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু না শিবির, না জামায়াতে ইসলাম এই অপকর্মের জন্য এতটুকু লজ্জিত, মর্মাহত ও বিব্রত। অনুতপ্ত তো নয়-ই। বিবেক ও মনুষ্যত্ব বন্ধক রেখে হলেও তথাকথিত ধর্মের নামে এরা বিশ্বজয় করতে চায়। হাতে পেতে চায় রাষ্ট্রীয় আধিপত্য। কিন্তু একবারও ভেবে দেখে না যে, 'ফর হট ইজ ম্যান প্রফিটেড ইফ হি শ্যাল গেইন দ্য হোল ওয়ার্ল্ড এ্যান্ড লস হিস ওন সোল।'
'জাতিকে এই লজ্জাকর বিপর্যয় থেকে বাঁচানো অত্যনত্ম জরম্নরী। জামায়াত ও শিবিরের ৰেত্রে তো বটেই, জাতিঘাতী, মানবতাবিরোধী, মনুষ্যত্ব এবং বিবেকবিরোধী সকল দল ও গোষ্ঠীর বেলায়ও কথাটা সমানভাবে প্রযোজ্য।
লেখক : প্রফেসর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments