প্রসঙ্গ ইসলাম- বেনগাযী সফর করে এলাম by অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম
পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ১২ রবিউল
আউয়াল তারিখে বিশ্ব পীর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় আফ্র্রিকার বিভিন্ন দেশে। এই
সম্মেলনের আয়োজক ইসলামিক কল সোসাইটি।
প্রথম সম্মেলনটি
অনুষ্ঠিত হয় ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে মালীর প্রাচীন নগরী তম্বাক্তুতে। এক সময়
তমবাক্তুনগরী জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছিল।
এখানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য পৃথিবীর নানা দেশ থেকে এসে শিক্ষার্থীরা ভিড়
জমাত। বিশ্ব পর্যটক ইবনে বতুতা এখানেই বিদ্যা অর্জন করেছিলেন। জানা যায়,
এখানে এক সময় বই বিক্রি হতো সোনার ওজনে, আরও জানা যায়, এক সময় এখানে
কাদিরীয়া তরীকার পীর সাহেবগণের রাজত্ব ছিল। এখনও এখানে কাদিরীয়া তরীকার
ব্যাপক চর্চা বিরাজ করছে।
২০০৭ খ্রিস্টাব্দে নাইজারের আগাদিশ নগরীতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয় উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা নগরীতে, ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয় ইসলামিক রিপাবলিক অব মৌরিতানিয়ার রাজধানী নওক্শুতে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ২৫ ফেব্রম্নয়ারি মুতাবিক ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী বেনগাযীতে। বেনগাযী লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলী বা তরাবুলুস থেকে পূর্বদিকে প্রায় ১২০০ মাইল দূরে অবস্থিত এক সমৃদ্ধ শহর।
প্রতি বছর রবিউল আউয়াল মাস এলে এই সম্মেলনের দাওয়াত আমি পাই এবং এবারও পেলাম। আমি দাওয়াত পাই বাংলাদেশের কাদিরীয়া তরীকার পীর হিসেবে। পীরকে ঐ অঞ্চলে বলা হয় শায়খ বা জাইম। আমার আইডি কার্ডে লেখা থাকে জাইম তরীকাতুল কাদিরীয়া। অবশ্য আমার আব্বা হুযূর কেবলা, যিনি ফুরফুরা শরীফের মুজাদ্দিদে যামান মওলানা শাহ সূফী আবু বকর সিদ্দিকী আল কুরায়শী রহমাতুলস্নাহি আলায়হির খলীফা ছিলেন। তিনি আমাকে ফুরফুরা শরীফে নিয়ে গিয়ে ফুরফুরা শরীফের মেজে হুযূর কিবলা মুফতীয়ে আজম হযরত আবু জাফর সিদ্দিকী (রহ)-এর হাত দিয়ে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর বাদ আছর কাদিরীয়া, চিশতীয়া, নকশবন্দীয়া, মুজাদ্দিদীয়া আওর মুহম্মদীয়া তরীকাসমূহের ইজাজত ও খিলাফত প্রদান করেন।
সে সব যাক। বেনগাযী যাবার দাওয়াত পেয়ে গোছগাছ করে নিলাম। জানতে পারলাম লিবিয়াতে এখনও একটু একটু শীত আছে এবং মাঝে মধ্যে সেখানে বৃষ্টি হয়। তাই কাপড় চোচড় সেইভাবে গুছিয়ে দিলেন আমার স্ত্রী মায়া। ভিসা, ইলেকট্রনিক টিকেট একদিন আগেই আমার হাতে এসে পেঁৗছেছিল। এজন্য ধন্যবাদ জানাতে হয় শামসুল হককে।
২২ ফেব্রম্নয়ারি রাত ১০টা ১০-এ এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে ০৫৮৫ উড়োজাহাজ ঢাকা থেকে ছাড়বে। তাই তিন ঘণ্টা আগেই জিয়া আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দরে এলাম। বিমানবন্দরের নিয়ম-নীতি পালন করে যথাসময় উড়োজাহাজে চাপলাম এবং যথাসময় উড়োজাহাজ উড়াল দিল দুবাইয়ের উদ্দেশে। প্রায় ৫ ঘণ্টা উড়ে এসে দুবাই বিমান বন্দরে এসে পেঁৗছলাম। ইতোমধ্যেই ঢাকা-দুবাইয়ের সময় দুই ঘণ্টার দূরত্বে এসে পৌঁছেছে। দুবাইয়ে তখন ১২-৩০ আর ঢাকায় তখন ২-৩০। বিমান বন্দরের বাইরে মিলিনিয়াম হোটেলে গিয়ে উঠলাম।
২৩ ফেব্রম্নয়ারি দুবাই টাইম সকাল নয়টায় ইকে ০৪৫ উড়োজাহাজে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলীর উদ্দেশে রওনা হলাম। ত্রিপলীতে পৌঁছলাম লিবিয়ার সময় দুপুর একটা চলিস্নশে। তখন দুবাইয়ের সময়ের দূরত্ব ২ ঘণ্টা আর লিবিয়া-বাংলাদেশের সময়ের দূরত্ব হয়ে গেছে চার ঘণ্টা।
সময়ের এই যে হেরফের এটাও তো আলস্নাহ্রই কুদ্রতের অপূর্ব নিদর্শন। দ্য বার্থ অব টাইম বইটি পড়লে আলস্নাহ্র কুদ্রতের বিরাটত্ব কিছুটা অনুধাবন করা যায়। আর ইল্মে তাসাওউফ চর্চার মাধ্যমে আলস্নাহ্র কুদ্রতের আলো অবলোকন করা যায়।
ত্রিপলীতে থাকার ব্যবস্থা ছিল। ১২ রবিউল আউয়াল রাত অর্থাৎ ২৪ ফেব্রম্নয়ারি দিবাগত রাতে সারা ত্রিপলী নগর এক আনন্দভরা আলোকোজ্জ্বল রাতে পরিণত হয়েছিল। ১২ রবিউল আউয়াল রাতের শেষ প্রহরের সরকারে দো আলম হযরত মুহাম্মদ সালস্নালস্নাহু আলায়হি ওয়া সালস্নাম পৃথিবীতে তশরীফ আনেন। তিনি এলেন বলেই আমরা এ দুই ঈদ পেলাম, তিনি এলেন বলেই হাজার মাস অপো শ্রেয় রাত লায়লাতুল কদর পেলাম, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পেলাম, রমাদানের সিয়াম পেলাম। তাই তাঁর আগমনের রাত সর্বশ্রেষ্ঠ রাত, সব রাতের সেরা রাত। সেই সুবিহ্ সাদিকের ণটির মরতবা সকল কিছুর উর্ধে।
২৫ ফেব্রম্নয়ারি অর্থাৎ লিবিয়ায় ১২ রবিউল আউয়াল সকালে আফ্রিকীয় উড়োজাহাজে এলাম বেনগাযী। সীদি গাযী নামের এক পীরের নামে বেনগাযীর নামকরণ করা হয়েছে। বিরাট ময়দানে বিকেলবেলা শুরম্ন হলো সেই মহাসম্মেলন। এখানে সমবেত হয়েছেন শতাধিক দেশের পীর সাহেবগণ। এছাড়াও এসেছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানগণ, ঐতিহ্যবাহী রাজন্যবর্গ, সুলতানগণ, শাহজাদাগণ, গোত্র প্রধানগণ এবং উপজাতীয় গোত্রপতিগণ। জমায়েত হয়েছে হাজার পুরম্নষ এবং উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক নারী, তরম্নণ-তরম্নণী। সবাই যার যার জাতীয় পোশাক পরিহিত। মূল অনুষ্ঠান শুরম্ন হলো তিলাওয়াতের কুরআনের মাধ্যমে। প্রথমে তিলাওয়াত করা হলো সূরা তওবার শেষ দুই আয়াত যার বাংলা তরজমা এইরূপ : নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন এক রসূল। তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তা তার জন্য কষ্টদায়ক, তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মু'মিনদের প্রতি তিনি দয়াদর্্র ও পরম দয়ালু। (হে রসূল!) অতঃপর ওরা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলবেন: আলস্নাহই আমার যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহান 'আরশের অধিপতি। সূরা তওবার এই দুইখানি আয়াতে কারীমা তিলাওয়াতের পর সূরা নসর তিলাওয়াত করা হয়। তারপর তিলাওয়াত করা হয় : ইন্নালস্নাহা ওয়া মালায়িকাতাহু ইউসলস্নুনা 'আলাননাবী, ইয়া আইউহালস্নাযীনা আমানু সলস্নু আলায়হি ওয়া সালেস্নমা তাসলিমা। সঙ্গে সঙ্গে বিশাল ময়দান জুড়ে দরূদ শরীফের আওয়াজ উঠে। চলতে থাকে বিপস্নবী স্বরে কলেমা পাঠ ও তকবীর ধ্বনি। অতঃপর আফ্রিকা ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট লিবিয়ার মহান নেতা মু'আম্মার গাদ্দাফী প্রায় আধাঘণ্টার ভাষণের এক পর্যায়ে সুইজারল্যান্ড, ইহুদীবাদ ও ভিনদেশী আগ্রাসন রম্নখতে বিশ্ব মুসলিমকে মজবুত ঐক্য ও সংহতি গড়ে তুলতে আহ্বান জানান। তিনি ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে একে ইয়াওমুল আজীম বা বড়দিন বলেন। অতঃপর বারবার সালাত সালাত কিয়াম শেষে মাগরিবের সালাতে তিনি ইমামতি করেন।
২৫ ফেব্রম্নয়ারি রাতেই ফিরে আসি ত্রিপলীতে। ২৮ তারিখে দেশে ফিরব। হাতে পাওয়া দিনগুলোতে ঐতিহাসিক স্থান দেখলাম। ২৭ তারিখ রাতে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর মুহম্মদ আবু আবদুলস্নাহর দাওয়াতে তাঁর বাসায় গেলাম। তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া পারভীন যশোর শহরের মেয়ে। তিনি শিকতা করেন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলের নাম ফাহাদ আবদুলস্নাহ, কাস টুতে পড়ে আর মেয়ের নাম সুমাইয়া, পড়ে কাস সেভেনে। আমাকে পেয়ে তারা দারম্নণ খুশি। শাহাদাত নামের এখানকার ছাত্র আমাকে ঐ বাসায় নিয়ে গিয়েছিল। যতণ সেখানে ছিলাম ততণ বাংলাদেশী পরিবেশে ছিলাম, সুরাইয়া পারভীনের বাঙালিয়ানা রান্নার খাবার আসুদা করে খেলাম।
২৮ ফেব্রম্নয়ারি দুপুর ১-৪০ এ এমিরেটসে উড়াল দিয়ে দুবাই এলাম। এখানে আড়াই ঘণ্টার মতো থাকা যাবে। তড়িঘড়ি করে কিছু জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে ৬০০ ডলার হারিয়ে ফেললাম। সম্ভাব্য সব স্থান খুঁজে শেষমেশ তা পেলাম বিস্ময়করভাবে। তখন হাতে বেশি সময় নেই। সময়ের অভাবে মনের মতো কেনা কাটা হলো না। উড়োজাহাজে উঠে বসলাম। ১ মার্চ সকাল পৌনে নয়টায় দেশে ফিরলাম মেলা স্মৃতি ধারণ করে।
লেখক : পীরসাহেব দারিয়াপুর শরীফ
২০০৭ খ্রিস্টাব্দে নাইজারের আগাদিশ নগরীতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয় উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা নগরীতে, ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয় ইসলামিক রিপাবলিক অব মৌরিতানিয়ার রাজধানী নওক্শুতে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ২৫ ফেব্রম্নয়ারি মুতাবিক ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী বেনগাযীতে। বেনগাযী লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলী বা তরাবুলুস থেকে পূর্বদিকে প্রায় ১২০০ মাইল দূরে অবস্থিত এক সমৃদ্ধ শহর।
প্রতি বছর রবিউল আউয়াল মাস এলে এই সম্মেলনের দাওয়াত আমি পাই এবং এবারও পেলাম। আমি দাওয়াত পাই বাংলাদেশের কাদিরীয়া তরীকার পীর হিসেবে। পীরকে ঐ অঞ্চলে বলা হয় শায়খ বা জাইম। আমার আইডি কার্ডে লেখা থাকে জাইম তরীকাতুল কাদিরীয়া। অবশ্য আমার আব্বা হুযূর কেবলা, যিনি ফুরফুরা শরীফের মুজাদ্দিদে যামান মওলানা শাহ সূফী আবু বকর সিদ্দিকী আল কুরায়শী রহমাতুলস্নাহি আলায়হির খলীফা ছিলেন। তিনি আমাকে ফুরফুরা শরীফে নিয়ে গিয়ে ফুরফুরা শরীফের মেজে হুযূর কিবলা মুফতীয়ে আজম হযরত আবু জাফর সিদ্দিকী (রহ)-এর হাত দিয়ে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর বাদ আছর কাদিরীয়া, চিশতীয়া, নকশবন্দীয়া, মুজাদ্দিদীয়া আওর মুহম্মদীয়া তরীকাসমূহের ইজাজত ও খিলাফত প্রদান করেন।
সে সব যাক। বেনগাযী যাবার দাওয়াত পেয়ে গোছগাছ করে নিলাম। জানতে পারলাম লিবিয়াতে এখনও একটু একটু শীত আছে এবং মাঝে মধ্যে সেখানে বৃষ্টি হয়। তাই কাপড় চোচড় সেইভাবে গুছিয়ে দিলেন আমার স্ত্রী মায়া। ভিসা, ইলেকট্রনিক টিকেট একদিন আগেই আমার হাতে এসে পেঁৗছেছিল। এজন্য ধন্যবাদ জানাতে হয় শামসুল হককে।
২২ ফেব্রম্নয়ারি রাত ১০টা ১০-এ এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে ০৫৮৫ উড়োজাহাজ ঢাকা থেকে ছাড়বে। তাই তিন ঘণ্টা আগেই জিয়া আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দরে এলাম। বিমানবন্দরের নিয়ম-নীতি পালন করে যথাসময় উড়োজাহাজে চাপলাম এবং যথাসময় উড়োজাহাজ উড়াল দিল দুবাইয়ের উদ্দেশে। প্রায় ৫ ঘণ্টা উড়ে এসে দুবাই বিমান বন্দরে এসে পেঁৗছলাম। ইতোমধ্যেই ঢাকা-দুবাইয়ের সময় দুই ঘণ্টার দূরত্বে এসে পৌঁছেছে। দুবাইয়ে তখন ১২-৩০ আর ঢাকায় তখন ২-৩০। বিমান বন্দরের বাইরে মিলিনিয়াম হোটেলে গিয়ে উঠলাম।
২৩ ফেব্রম্নয়ারি দুবাই টাইম সকাল নয়টায় ইকে ০৪৫ উড়োজাহাজে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলীর উদ্দেশে রওনা হলাম। ত্রিপলীতে পৌঁছলাম লিবিয়ার সময় দুপুর একটা চলিস্নশে। তখন দুবাইয়ের সময়ের দূরত্ব ২ ঘণ্টা আর লিবিয়া-বাংলাদেশের সময়ের দূরত্ব হয়ে গেছে চার ঘণ্টা।
সময়ের এই যে হেরফের এটাও তো আলস্নাহ্রই কুদ্রতের অপূর্ব নিদর্শন। দ্য বার্থ অব টাইম বইটি পড়লে আলস্নাহ্র কুদ্রতের বিরাটত্ব কিছুটা অনুধাবন করা যায়। আর ইল্মে তাসাওউফ চর্চার মাধ্যমে আলস্নাহ্র কুদ্রতের আলো অবলোকন করা যায়।
ত্রিপলীতে থাকার ব্যবস্থা ছিল। ১২ রবিউল আউয়াল রাত অর্থাৎ ২৪ ফেব্রম্নয়ারি দিবাগত রাতে সারা ত্রিপলী নগর এক আনন্দভরা আলোকোজ্জ্বল রাতে পরিণত হয়েছিল। ১২ রবিউল আউয়াল রাতের শেষ প্রহরের সরকারে দো আলম হযরত মুহাম্মদ সালস্নালস্নাহু আলায়হি ওয়া সালস্নাম পৃথিবীতে তশরীফ আনেন। তিনি এলেন বলেই আমরা এ দুই ঈদ পেলাম, তিনি এলেন বলেই হাজার মাস অপো শ্রেয় রাত লায়লাতুল কদর পেলাম, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পেলাম, রমাদানের সিয়াম পেলাম। তাই তাঁর আগমনের রাত সর্বশ্রেষ্ঠ রাত, সব রাতের সেরা রাত। সেই সুবিহ্ সাদিকের ণটির মরতবা সকল কিছুর উর্ধে।
২৫ ফেব্রম্নয়ারি অর্থাৎ লিবিয়ায় ১২ রবিউল আউয়াল সকালে আফ্রিকীয় উড়োজাহাজে এলাম বেনগাযী। সীদি গাযী নামের এক পীরের নামে বেনগাযীর নামকরণ করা হয়েছে। বিরাট ময়দানে বিকেলবেলা শুরম্ন হলো সেই মহাসম্মেলন। এখানে সমবেত হয়েছেন শতাধিক দেশের পীর সাহেবগণ। এছাড়াও এসেছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানগণ, ঐতিহ্যবাহী রাজন্যবর্গ, সুলতানগণ, শাহজাদাগণ, গোত্র প্রধানগণ এবং উপজাতীয় গোত্রপতিগণ। জমায়েত হয়েছে হাজার পুরম্নষ এবং উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক নারী, তরম্নণ-তরম্নণী। সবাই যার যার জাতীয় পোশাক পরিহিত। মূল অনুষ্ঠান শুরম্ন হলো তিলাওয়াতের কুরআনের মাধ্যমে। প্রথমে তিলাওয়াত করা হলো সূরা তওবার শেষ দুই আয়াত যার বাংলা তরজমা এইরূপ : নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন এক রসূল। তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তা তার জন্য কষ্টদায়ক, তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মু'মিনদের প্রতি তিনি দয়াদর্্র ও পরম দয়ালু। (হে রসূল!) অতঃপর ওরা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলবেন: আলস্নাহই আমার যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহান 'আরশের অধিপতি। সূরা তওবার এই দুইখানি আয়াতে কারীমা তিলাওয়াতের পর সূরা নসর তিলাওয়াত করা হয়। তারপর তিলাওয়াত করা হয় : ইন্নালস্নাহা ওয়া মালায়িকাতাহু ইউসলস্নুনা 'আলাননাবী, ইয়া আইউহালস্নাযীনা আমানু সলস্নু আলায়হি ওয়া সালেস্নমা তাসলিমা। সঙ্গে সঙ্গে বিশাল ময়দান জুড়ে দরূদ শরীফের আওয়াজ উঠে। চলতে থাকে বিপস্নবী স্বরে কলেমা পাঠ ও তকবীর ধ্বনি। অতঃপর আফ্রিকা ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট লিবিয়ার মহান নেতা মু'আম্মার গাদ্দাফী প্রায় আধাঘণ্টার ভাষণের এক পর্যায়ে সুইজারল্যান্ড, ইহুদীবাদ ও ভিনদেশী আগ্রাসন রম্নখতে বিশ্ব মুসলিমকে মজবুত ঐক্য ও সংহতি গড়ে তুলতে আহ্বান জানান। তিনি ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে একে ইয়াওমুল আজীম বা বড়দিন বলেন। অতঃপর বারবার সালাত সালাত কিয়াম শেষে মাগরিবের সালাতে তিনি ইমামতি করেন।
২৫ ফেব্রম্নয়ারি রাতেই ফিরে আসি ত্রিপলীতে। ২৮ তারিখে দেশে ফিরব। হাতে পাওয়া দিনগুলোতে ঐতিহাসিক স্থান দেখলাম। ২৭ তারিখ রাতে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর মুহম্মদ আবু আবদুলস্নাহর দাওয়াতে তাঁর বাসায় গেলাম। তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া পারভীন যশোর শহরের মেয়ে। তিনি শিকতা করেন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলের নাম ফাহাদ আবদুলস্নাহ, কাস টুতে পড়ে আর মেয়ের নাম সুমাইয়া, পড়ে কাস সেভেনে। আমাকে পেয়ে তারা দারম্নণ খুশি। শাহাদাত নামের এখানকার ছাত্র আমাকে ঐ বাসায় নিয়ে গিয়েছিল। যতণ সেখানে ছিলাম ততণ বাংলাদেশী পরিবেশে ছিলাম, সুরাইয়া পারভীনের বাঙালিয়ানা রান্নার খাবার আসুদা করে খেলাম।
২৮ ফেব্রম্নয়ারি দুপুর ১-৪০ এ এমিরেটসে উড়াল দিয়ে দুবাই এলাম। এখানে আড়াই ঘণ্টার মতো থাকা যাবে। তড়িঘড়ি করে কিছু জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে ৬০০ ডলার হারিয়ে ফেললাম। সম্ভাব্য সব স্থান খুঁজে শেষমেশ তা পেলাম বিস্ময়করভাবে। তখন হাতে বেশি সময় নেই। সময়ের অভাবে মনের মতো কেনা কাটা হলো না। উড়োজাহাজে উঠে বসলাম। ১ মার্চ সকাল পৌনে নয়টায় দেশে ফিরলাম মেলা স্মৃতি ধারণ করে।
লেখক : পীরসাহেব দারিয়াপুর শরীফ
No comments