মোবিটাকা, আধুনিক টিকেট ব্যবস্থা ॥ আধুনিক রেল চাই by নিয়ামত হোসেন
একালে বিভিন্ন দেশে রেল সংল্লিষ্ট দেশের
মানুষকে যত রকম সুবিধা দেয়, আমাদের রেল এখনও সে পর্যায়ে যেতে পারেনি।
অত্যনত্ম তেতো হলেও কথাটা সত্যি।
দুনিয়ার বহু দেশে রেল
ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক দেশই রেলের যাবতীয় সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়েছে। অনেক
দেশেরই রেল ব্যবস্থা এমনই যে, বিমানে ভ্রমণের চাইতেও রেলে ভ্রমণ অনেক বেশি
আরামদায়ক এবং নিরাপদ। রেল বহু দেশেই দীর্ঘ দূরত্বে যেমন যায়, তেমনি অল্প
দূরত্বেও যায়। নিজের দেশ ছাড়িয়ে অন্যান্য বহু দেশে যায়। নিজের দেশের নানা
গনত্মব্যে যেমন যায় তেমনি শহরের ভেতরেও এক গনত্মব্য থেকে আরেক গনত্মব্যে
যাওয়া-আসা করে। রেল যখন প্রথম বসে মাটির উপরে সে ব্যবস্থাও যেমন রয়েছে
তেমনি মাটির নিচেও রেল চলে। মাথার উপর দিয়েও চলে। এসব নতুন ব্যাপার নয়।
ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে যে ট্রেন চলাচল করছে সেটাকে বিস্ময়কর বললে
কম বলা হবে।
রেল অর্থাৎ ট্রেনের যাত্রা শুরম্ন হয় কয়লা দিয়ে। এরপর আসে ডিজেল। এখন বহু দেশে ট্রেন চলে বিদু্যতে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যায় উন্নতির ছোঁয়া রেলও পেয়েছে। এখন অতি আধুনিক ধরনের ট্রেন, বগি, ইঞ্জিন তৈরি হচ্ছে। বুলেটের গতির ইঞ্জিন চালু হয়েছে। চালকবিহীন ট্রেনের কথাও শোনা যাচ্ছে। নিরনত্মর গবেষণা ও উন্নয়নের কাজ চলছে নানা দেশে। আমাদের বহু মানুষ দুনিয়ার বহু দেশে আছেন। বিদেশী ঐসব ট্রেনে চড়ার সুযোগ তাঁদের অনেকেরই হয়। সে চড়ার অভিজ্ঞতা তাঁদের মনে রাখার মতো।
কথা উঠতে পারে, ওসব দেশ শিল্পে উন্নত, অর্থনীতিতে শক্তিশালী। ওদের সঙ্গে আমাদের তুলনা হয় না। আমরা বহু পিছিয়ে। অর্থনীতির দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। এ সবই ঠিক। কিন্তু প্রশ্ন কি উঠবে না, কতকাল আমরা অনুন্নত থেকে যাব? কতকাল পিছিয়ে থাকব? স্বাধীনতার পর যে সময় পার হয়েছে সেটা কি খুব অল্প সময়? তাহলে ঐ সময়টাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়নি কেন? কে এই প্রশ্ন্নের উত্তর দেবে?
বিভিন্ন সময়ে রেলের উন্নতির ব্যাপারে নানা কথা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকা নগরীতে রেল ব্যবস্থা চালু করার কথাও বলা হয়েছে। অর্থাৎ পাতাল রেল, মনোরেল ইত্যাদি। কিন্তু কিছুই হয়নি। শুধু রেলের ব্যাপারেই নয়, ঢাকা নগরীর ব্যাপারেও তেমন কিছুই করা হয়নি যাতে একটু হাঁপ ছেড়ে, স্বসত্মির সঙ্গে এখানে মানুষ বাস করতে পারে। স্বাধীনতার পর ঢাকা নগরীতে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা বেড়েছে। চারদিক থেকে, গ্রামাঞ্চল ও অন্যান্য শহর থেকে দলে দলে লোকজন এসে ঢাকায় উঠেছে। এই শহরে এখন শ্বাস বন্ধ হয়ে মরার উপক্রম! কলকাতায় এক সময় অখ- ভারত থেকে লোকজন যেত। কিন্তু সে শহরে যখন ট্রাম চালু হয় তখন ঐ শহরের লোকসংখ্যা এক কোটির ধারেকাছে আসেনি। সেই কলকাতায় ট্রাম চালু হয় প্রথম, যখন ঘোড়া দিয়ে ট্রাম টানা হতো। তারপর বসানো হয় বিদু্যতের লাইন। ঢাকায় এক কোটির বেশি লোকের বাস সে অনেক দিন ধরে। তবু এখানে ট্রামের ব্যাপারে চিনত্মা ভাবনাই হয়নি। ট্রামের কথা উঠলে কোন কোন মহল থেকে শোনা যেত, ট্রাম আজকাল আধুনিক নগরী থেকে উঠে যাচ্ছে। ওটা চলে না একালে। অথচ কলকাতায় ট্রাম এখনও দিব্যি চলছে এবং অগণিত মানুষের উপকার হচ্ছে ওতে। আমাদের ঢাকা লন্ডন, মস্কো, বার্লিন বা নিউইয়র্কের মতো আধুনিক কোন নগর নয়, যেখানে ট্রাম চললে মহাৰতির কারণ হয়ে যেতে পারে। বরং ট্রাম থাকলে শত শত মানুষের অনেক উপহার হতো। যাই হোক, ওদিকে না গিয়ে ব্যবস্থা করা হলো ট্যাক্সি এবং অটোরিক্সার। বলা হলো মিটারে চলবে। ডাকলেই আসবে। যে কোন জায়গায় বললেই যাবে। শুধু ঘোষণাই হলো, একটা নিয়মও কার্যকর হলো না। ডাকা দূরের কথা, হাতে-পায়ে ধরলেও অনেক সময় ওগুলো আসে না। যাত্রী যদি বলেন, উত্তরে যাব; বলা হয়, ওদিকে যাব না, দৰিণে যাব। যদি বলা হয় মিটার চালু করম্নন। অধিকাংশ ৰেত্রে বলা হয়, মিটার খারাপ, মিটারে যাব না। শুরম্নর সময় যে মিটারে যে টাকা ঠিক করা হয়েছিল, কয়েকদিন না যেতেই সেটা বদল করা হলো। এখন সেটাও চলে না। মিটারও চলে না। রাজধানী নগরীর বাসিন্দাদের কপালে না জুটলো ট্রাম, না সইলো মিটার ব্যবস্থা। এক সময় নগরবাসী শুনল এখানে মনোরেল হবে; চক্ররেল বা ঐ ধরনের রেল হবে, মেট্রো রেল হবে। একেকটা আমল আসে। পার হয়ে যায়। কিন্তু ওসব রেল-টেল হয় না। নতুন রেল তো হয়ই না, যে রেলটুকু আছে সেটার বিদু্যতায়নও হয় না। কবে হবে, আদৌ হবে কি-না সেসব কথাও কেউ উচ্চারণ করেন না। এর কারণ সম্ভবত এটাই_ এসব হতে গেলে সবার আগে যে জিনিসটা লাগে সেই বিদু্যতই নেই। যেটুকু আছে সেটুকু দিয়ে টেনেটুনে কোনমতে দিনরাত গুজরান হতে পারে এর বেশি এক ফোঁটাও নেই।
মহাজোট সরকার এখন দায়িত্বে। এ আমলে ঢাকা শহরে রেল ব্যবস্থার কথাও শোনা গেছে, বিদু্যতের কথাও শোনা গেছে। মানুষ এখন আশাভরা দৃষ্টিতে চেয়ে আছে_ অতীতে যেসব কাজ হয়নি, এবার সে কাজগুলো হবে। হওয়া যে খুব জরম্নরী তাতে কোন দ্বিমত নেই। ঢাকা শহরে পাতাল রেল বা স্কাই রেল বা এ ধরনের যে কোন পরিবহন ব্যবস্থা অর্থাৎ বিদু্যতে চলে, খরচ কম, সাধারণ মানুষের পকেট থেকে বেশি পয়সা যাতায়াতে খরচ হয় না_ এমন রেল, ট্রাম, মেট্রো যে কোন ব্যবস্থা চালু করার কাজ শুরম্ন হওয়া এখন খুব জরম্নরী। এখন এই শহরে রিকশায় সব এলাকায় যাওয়া যায় না। তাছাড়া রিকশার ভাড়া এমনভাবে বেড়েছে যার জন্য সাধারণ দরিদ্র মানুষের পৰে রিকশা করে কয়েক জায়গায় যাওয়ার খরচ বহন করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, অটোরিকশা বা ট্যাক্সির ভাড়াও অনেক। দিনে একবার উঠলে অনেকের পৰেই দ্বিতীয়বার উঠতে গেলে দশবার পকেটের কথা ভাবতে হয়। এজন্য অগণিত মানুষের প্রধান চেষ্টাই থাকে, কর্মস্থলে গিয়ে কাজটুকু সেরে কোনমতে বাড়ি ফিরে আসা। তারপরও বলতে হয়, অটোরিকশা বা রিকশাগুলো বসে থাকে না। একজন যাত্রী না পেলে তাদের কিছু যায়-আসে না, অন্য দশজন ভাড়া করার জন্য অপেৰা করে আছে। এই বিপুল জনঅধু্যষিত নগরে এই হচ্ছে অবস্থা। আর সত্যি কথাটা হচ্ছে এই যে, এই শহরে বিপুলসংখ্যক মানুষই দিনের পর দিন যানবাহনের সমস্যায় নানাভাবে ভুগে চলেছে, যেটা কোন আধুনিক শহরের জন্য কাম্য নয়।
এসব হতাশার মধ্যেও সেদিন রেলের ব্যাপারে একটা ভাল খবর পাওয়া গেল, যেটা সাধারণ মানুষের জন্য অনেকখানি সুবিধার হতে পারে। শুক্রবার জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেল, বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি উদ্ভাবনী সেবা ব্যবস্থা চালু করেছে যেখানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে গ্রামীণফোনের মোবি টাকা সার্ভিসের মাধ্যমে রেলের টিকিট দশ দিন আগেই সংগ্রহ করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা ২০১০-এ রেলওয়ের স্টলে নিজের জন্য একটি টিকিট কেনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মোবি টাকা টিকেটিং সার্ভিস উদ্বোধন করেছেন। খবরটি নিঃসন্দেহে খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। মোবাইল ফোন যে মানুষের কত কাজে লাগে_ এদেশের মানুষ তার অনেক কিছুই বুঝতে পারছে এবং এ থেকে বহু সুবিধাও পাচ্ছে। মোবাইল ফোন মানুষের জীবনে এসেছে আশীর্বাদের মতো। রেলের টিকিটও এর মাধ্যমে কিনতে পাওয়া গেলে সেটা অগণিত মানুষের জন্য মহাউপকার হবে এতে সন্দেহ নেই। রেল কর্তৃপৰ এবং গ্রামীণ ফোন কর্তৃপৰের নতুন এই উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এতে বহু মানুষের সময় বাঁচবে, শ্রম বাঁচবে। সবদিক থেকে উপকারই হবে বলা যায়। এ ব্যাপারে নিয়মগুলো যত সহজ হবে সবার জন্য ততই তা ভাল হবে। আমাদের ট্রেন সার্ভিসের অবস্থা যাই হোক, যখন ট্রেন যাত্রীদের চাপ বাড়ে, বিশেষ করে দুই ঈদের সময়, তখন টিকিটের জন্য মানুষকে কত দুর্ভোগ পোহাতে হয়; ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে লাইন দিতে হয়। অনেক টিকিট কালোবাজারে যায় বলেও অভিযোগ ওঠে। এসব দুর্ভোগ এখন কমবে, আশা করা যায়। এই উদ্যোগ আরও ব্যাপক তথা ব্যাপ্তি করা জরম্নরী, যাতে মানুষ নানা ধরনের সেবা এর মাধ্যমে পায়।
তবে এ প্রসঙ্গে একটি বিশেষ কথা বলতেই হয়। এখন সামগ্রিকভাবে রেলের দিকে তাকাতে হবে। রেলের দুর্দশা ঘোচাতে হবে। রেলকে জনপ্রিয় করতে হবে আরও ব্যাপকভাবে। শুধু আনত্মঃনগর বা ঐ ধরনের ট্রেন নয়, সব ট্রেনে যাত্রীর জন্য সেবা ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। কোন বগিতে আসনগুলো নোংরা, বাথরম্নম তথা টয়লেটে পানি নেই, ঢুকলেই বমি আসে; রাতে কোন বগিতে আলো নেই_ এই দুর্দশাগুলো ঘোচাতে হবে। রেলের ব্যাপারে নতুন উগ্যোগ নেয়া দরকার। এখনও রেল যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনে সবচেয়ে জনপ্রিয় বাহন_ সন্দেহ নেই, কিন্তু সেবা বাড়াতে হবে। রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ হলে ঢাকার জনসংখ্যাও কমতে পারে, অনেক লোক দূর-দূরানত্ম থেকে এসে ঢাকায় অফিস করে ঢাকা থেকে চলে যেতে পারবে। এমনি সব পরিকল্পনা নিয়ে রেলকে এগোতে হবে এবং বর্তমানে যেসব ট্রেন চলছে সেগুলো যাতে সুন্দরভাবে চলে, যাত্রীরা যাতে নানা ধরনের সুবিধা পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এককথায়, সামগ্রিকভাবে রেলের উন্নয়নের কথা বিশেষভাবে ভাবতে হবে।
রেল অর্থাৎ ট্রেনের যাত্রা শুরম্ন হয় কয়লা দিয়ে। এরপর আসে ডিজেল। এখন বহু দেশে ট্রেন চলে বিদু্যতে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যায় উন্নতির ছোঁয়া রেলও পেয়েছে। এখন অতি আধুনিক ধরনের ট্রেন, বগি, ইঞ্জিন তৈরি হচ্ছে। বুলেটের গতির ইঞ্জিন চালু হয়েছে। চালকবিহীন ট্রেনের কথাও শোনা যাচ্ছে। নিরনত্মর গবেষণা ও উন্নয়নের কাজ চলছে নানা দেশে। আমাদের বহু মানুষ দুনিয়ার বহু দেশে আছেন। বিদেশী ঐসব ট্রেনে চড়ার সুযোগ তাঁদের অনেকেরই হয়। সে চড়ার অভিজ্ঞতা তাঁদের মনে রাখার মতো।
কথা উঠতে পারে, ওসব দেশ শিল্পে উন্নত, অর্থনীতিতে শক্তিশালী। ওদের সঙ্গে আমাদের তুলনা হয় না। আমরা বহু পিছিয়ে। অর্থনীতির দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। এ সবই ঠিক। কিন্তু প্রশ্ন কি উঠবে না, কতকাল আমরা অনুন্নত থেকে যাব? কতকাল পিছিয়ে থাকব? স্বাধীনতার পর যে সময় পার হয়েছে সেটা কি খুব অল্প সময়? তাহলে ঐ সময়টাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়নি কেন? কে এই প্রশ্ন্নের উত্তর দেবে?
বিভিন্ন সময়ে রেলের উন্নতির ব্যাপারে নানা কথা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকা নগরীতে রেল ব্যবস্থা চালু করার কথাও বলা হয়েছে। অর্থাৎ পাতাল রেল, মনোরেল ইত্যাদি। কিন্তু কিছুই হয়নি। শুধু রেলের ব্যাপারেই নয়, ঢাকা নগরীর ব্যাপারেও তেমন কিছুই করা হয়নি যাতে একটু হাঁপ ছেড়ে, স্বসত্মির সঙ্গে এখানে মানুষ বাস করতে পারে। স্বাধীনতার পর ঢাকা নগরীতে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা বেড়েছে। চারদিক থেকে, গ্রামাঞ্চল ও অন্যান্য শহর থেকে দলে দলে লোকজন এসে ঢাকায় উঠেছে। এই শহরে এখন শ্বাস বন্ধ হয়ে মরার উপক্রম! কলকাতায় এক সময় অখ- ভারত থেকে লোকজন যেত। কিন্তু সে শহরে যখন ট্রাম চালু হয় তখন ঐ শহরের লোকসংখ্যা এক কোটির ধারেকাছে আসেনি। সেই কলকাতায় ট্রাম চালু হয় প্রথম, যখন ঘোড়া দিয়ে ট্রাম টানা হতো। তারপর বসানো হয় বিদু্যতের লাইন। ঢাকায় এক কোটির বেশি লোকের বাস সে অনেক দিন ধরে। তবু এখানে ট্রামের ব্যাপারে চিনত্মা ভাবনাই হয়নি। ট্রামের কথা উঠলে কোন কোন মহল থেকে শোনা যেত, ট্রাম আজকাল আধুনিক নগরী থেকে উঠে যাচ্ছে। ওটা চলে না একালে। অথচ কলকাতায় ট্রাম এখনও দিব্যি চলছে এবং অগণিত মানুষের উপকার হচ্ছে ওতে। আমাদের ঢাকা লন্ডন, মস্কো, বার্লিন বা নিউইয়র্কের মতো আধুনিক কোন নগর নয়, যেখানে ট্রাম চললে মহাৰতির কারণ হয়ে যেতে পারে। বরং ট্রাম থাকলে শত শত মানুষের অনেক উপহার হতো। যাই হোক, ওদিকে না গিয়ে ব্যবস্থা করা হলো ট্যাক্সি এবং অটোরিক্সার। বলা হলো মিটারে চলবে। ডাকলেই আসবে। যে কোন জায়গায় বললেই যাবে। শুধু ঘোষণাই হলো, একটা নিয়মও কার্যকর হলো না। ডাকা দূরের কথা, হাতে-পায়ে ধরলেও অনেক সময় ওগুলো আসে না। যাত্রী যদি বলেন, উত্তরে যাব; বলা হয়, ওদিকে যাব না, দৰিণে যাব। যদি বলা হয় মিটার চালু করম্নন। অধিকাংশ ৰেত্রে বলা হয়, মিটার খারাপ, মিটারে যাব না। শুরম্নর সময় যে মিটারে যে টাকা ঠিক করা হয়েছিল, কয়েকদিন না যেতেই সেটা বদল করা হলো। এখন সেটাও চলে না। মিটারও চলে না। রাজধানী নগরীর বাসিন্দাদের কপালে না জুটলো ট্রাম, না সইলো মিটার ব্যবস্থা। এক সময় নগরবাসী শুনল এখানে মনোরেল হবে; চক্ররেল বা ঐ ধরনের রেল হবে, মেট্রো রেল হবে। একেকটা আমল আসে। পার হয়ে যায়। কিন্তু ওসব রেল-টেল হয় না। নতুন রেল তো হয়ই না, যে রেলটুকু আছে সেটার বিদু্যতায়নও হয় না। কবে হবে, আদৌ হবে কি-না সেসব কথাও কেউ উচ্চারণ করেন না। এর কারণ সম্ভবত এটাই_ এসব হতে গেলে সবার আগে যে জিনিসটা লাগে সেই বিদু্যতই নেই। যেটুকু আছে সেটুকু দিয়ে টেনেটুনে কোনমতে দিনরাত গুজরান হতে পারে এর বেশি এক ফোঁটাও নেই।
মহাজোট সরকার এখন দায়িত্বে। এ আমলে ঢাকা শহরে রেল ব্যবস্থার কথাও শোনা গেছে, বিদু্যতের কথাও শোনা গেছে। মানুষ এখন আশাভরা দৃষ্টিতে চেয়ে আছে_ অতীতে যেসব কাজ হয়নি, এবার সে কাজগুলো হবে। হওয়া যে খুব জরম্নরী তাতে কোন দ্বিমত নেই। ঢাকা শহরে পাতাল রেল বা স্কাই রেল বা এ ধরনের যে কোন পরিবহন ব্যবস্থা অর্থাৎ বিদু্যতে চলে, খরচ কম, সাধারণ মানুষের পকেট থেকে বেশি পয়সা যাতায়াতে খরচ হয় না_ এমন রেল, ট্রাম, মেট্রো যে কোন ব্যবস্থা চালু করার কাজ শুরম্ন হওয়া এখন খুব জরম্নরী। এখন এই শহরে রিকশায় সব এলাকায় যাওয়া যায় না। তাছাড়া রিকশার ভাড়া এমনভাবে বেড়েছে যার জন্য সাধারণ দরিদ্র মানুষের পৰে রিকশা করে কয়েক জায়গায় যাওয়ার খরচ বহন করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, অটোরিকশা বা ট্যাক্সির ভাড়াও অনেক। দিনে একবার উঠলে অনেকের পৰেই দ্বিতীয়বার উঠতে গেলে দশবার পকেটের কথা ভাবতে হয়। এজন্য অগণিত মানুষের প্রধান চেষ্টাই থাকে, কর্মস্থলে গিয়ে কাজটুকু সেরে কোনমতে বাড়ি ফিরে আসা। তারপরও বলতে হয়, অটোরিকশা বা রিকশাগুলো বসে থাকে না। একজন যাত্রী না পেলে তাদের কিছু যায়-আসে না, অন্য দশজন ভাড়া করার জন্য অপেৰা করে আছে। এই বিপুল জনঅধু্যষিত নগরে এই হচ্ছে অবস্থা। আর সত্যি কথাটা হচ্ছে এই যে, এই শহরে বিপুলসংখ্যক মানুষই দিনের পর দিন যানবাহনের সমস্যায় নানাভাবে ভুগে চলেছে, যেটা কোন আধুনিক শহরের জন্য কাম্য নয়।
এসব হতাশার মধ্যেও সেদিন রেলের ব্যাপারে একটা ভাল খবর পাওয়া গেল, যেটা সাধারণ মানুষের জন্য অনেকখানি সুবিধার হতে পারে। শুক্রবার জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেল, বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি উদ্ভাবনী সেবা ব্যবস্থা চালু করেছে যেখানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে গ্রামীণফোনের মোবি টাকা সার্ভিসের মাধ্যমে রেলের টিকিট দশ দিন আগেই সংগ্রহ করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা ২০১০-এ রেলওয়ের স্টলে নিজের জন্য একটি টিকিট কেনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মোবি টাকা টিকেটিং সার্ভিস উদ্বোধন করেছেন। খবরটি নিঃসন্দেহে খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। মোবাইল ফোন যে মানুষের কত কাজে লাগে_ এদেশের মানুষ তার অনেক কিছুই বুঝতে পারছে এবং এ থেকে বহু সুবিধাও পাচ্ছে। মোবাইল ফোন মানুষের জীবনে এসেছে আশীর্বাদের মতো। রেলের টিকিটও এর মাধ্যমে কিনতে পাওয়া গেলে সেটা অগণিত মানুষের জন্য মহাউপকার হবে এতে সন্দেহ নেই। রেল কর্তৃপৰ এবং গ্রামীণ ফোন কর্তৃপৰের নতুন এই উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এতে বহু মানুষের সময় বাঁচবে, শ্রম বাঁচবে। সবদিক থেকে উপকারই হবে বলা যায়। এ ব্যাপারে নিয়মগুলো যত সহজ হবে সবার জন্য ততই তা ভাল হবে। আমাদের ট্রেন সার্ভিসের অবস্থা যাই হোক, যখন ট্রেন যাত্রীদের চাপ বাড়ে, বিশেষ করে দুই ঈদের সময়, তখন টিকিটের জন্য মানুষকে কত দুর্ভোগ পোহাতে হয়; ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে লাইন দিতে হয়। অনেক টিকিট কালোবাজারে যায় বলেও অভিযোগ ওঠে। এসব দুর্ভোগ এখন কমবে, আশা করা যায়। এই উদ্যোগ আরও ব্যাপক তথা ব্যাপ্তি করা জরম্নরী, যাতে মানুষ নানা ধরনের সেবা এর মাধ্যমে পায়।
তবে এ প্রসঙ্গে একটি বিশেষ কথা বলতেই হয়। এখন সামগ্রিকভাবে রেলের দিকে তাকাতে হবে। রেলের দুর্দশা ঘোচাতে হবে। রেলকে জনপ্রিয় করতে হবে আরও ব্যাপকভাবে। শুধু আনত্মঃনগর বা ঐ ধরনের ট্রেন নয়, সব ট্রেনে যাত্রীর জন্য সেবা ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। কোন বগিতে আসনগুলো নোংরা, বাথরম্নম তথা টয়লেটে পানি নেই, ঢুকলেই বমি আসে; রাতে কোন বগিতে আলো নেই_ এই দুর্দশাগুলো ঘোচাতে হবে। রেলের ব্যাপারে নতুন উগ্যোগ নেয়া দরকার। এখনও রেল যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনে সবচেয়ে জনপ্রিয় বাহন_ সন্দেহ নেই, কিন্তু সেবা বাড়াতে হবে। রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ হলে ঢাকার জনসংখ্যাও কমতে পারে, অনেক লোক দূর-দূরানত্ম থেকে এসে ঢাকায় অফিস করে ঢাকা থেকে চলে যেতে পারবে। এমনি সব পরিকল্পনা নিয়ে রেলকে এগোতে হবে এবং বর্তমানে যেসব ট্রেন চলছে সেগুলো যাতে সুন্দরভাবে চলে, যাত্রীরা যাতে নানা ধরনের সুবিধা পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এককথায়, সামগ্রিকভাবে রেলের উন্নয়নের কথা বিশেষভাবে ভাবতে হবে।
No comments