আমলারা উৎসাহী নয় ব্যবসায়ীরাও উৎসাহী নয়_ তাহলে? by ড. আর এম. দেবনাথ
অর্থমন্ত্রী কোন সাধারণ মন্ত্রী নন। তিনি
যখন কথা বলেন সবাই তখন গুরুত্বের সঙ্গে তা বিবেচনা করে। এটা বরাবরই হয়ে
আসছে। বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান যখন কোন মন্তব্য করতেন তখন তা
গুরুত্ব সহকারে নেয়া হতো।
আওয়ামী লীগের অর্থমন্ত্রী শামস
কিবরিয়া যখন কথা বলতেন তখনও তা গুরুত্বসহকারে নেয়া হতো। তিনি ছিলেন
স্বল্পভাষী লোক। তাই তাঁর কথা আরও বেশি গুরুত্ব পেত। একই ঐতিহ্য ধরে এখনও
অর্থমন্ত্রী যখন কথা বলেন তখন তা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বর্তমান
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সজ্জন ব্যক্তি এবং জনপ্রিয়। এ কারণে তিনি
যখন বলেন 'বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে' নেই তখন মানুষ ভাবিত হয়ে পড়ে। দৃশ্যত
আমরা দেখছি বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে এই মুহূর্তে।
সরকারের স্টকে প্রচুর চাল রয়েছে। বিগত ফসলগুলো ভাল হয়েছে। বোরো ফসলের
আলামতও ভাল। চালের দামও মারাত্মকভাবে ওঠানামা করছে না, ভারতও চাল আমদানি
করছে না। এর মধ্যে সরকার চাল দিচ্ছে ওপেন মার্কেটে। সরকার অতি দরিদ্রদেরও
চাল দিচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, চালের বাজার উর্ধমুখী। এর ফলে
'পয়েন্ট টু পয়েন্ট' মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এ সব অবস্থা খারাপ কথাই
বলে। তবু যখন অর্থমন্ত্রী বলেন বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে তখন আমরা
দুশ্চিনত্মাগ্রসত্ম হয়ে পড়ি। তিনি বলছেন নির্জলা সত্যি কথা। যেমন কিছুদিন
আগে তিনি বললেন, 'তিনি বিব্রত।' বিব্রত হওয়ার কারণ কী? জাপানী সাহায্য
সংস্থা 'জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (জেআইসিএ) একজন কর্মকর্তা
ঢাকায় এসে বলেন বাংলাদেশ জাপানী সাহায্য ব্যবহারে অনেক পিছিয়ে আছে। বস্তুত
দণি এশিয়ায় সর্বনিম্ন। একথা বলার পর অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়। তিনি
সোজা উত্তর দিলেন, বললেন তিনি বিব্রত। বিব্রত হওয়ারই কথা। কারণ তথ্যই কথা
বলে। যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জাপানী কর্মকর্তা বাংলাদেশের সমতার বিষয়ে
প্রশ্ন তুললেন তা অকাট্য। অর্থমন্ত্রী তাই অভিযোগ স্বীকার করে নিলেন।
কিন্তু তিনি যে খবরটি দেশবাসীকে দিলেন তা খুবই লজ্জার। জাপানীরা সাহায্য
দেয়। আমরা সেই সাহায্যের টাকা ব্যবহার করতে পারি না। শুধু জাপানীরা কেন,
আমলাদের কারণে বিশ্বের সকল দেশের সাহায্য ব্যবহারেই আমরা অপারগ। এ কথা
মননীয় অর্থমন্ত্রী বার বার বলছেন। আমরা তা শুনছি। এবার আরও কিছু স্পষ্ট কথা
তিনি বলেছেন।
গত সপ্তাহে ঢাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বেশ কয়েকটি কথা বলেছেন ভদ্রভাবে। সাইফুর রহমান সাহেব হলে এসব কথা অনেক রূঢ়ভাবে বলতেন। তিনি তা করেননি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আমলাদের উৎসাহের অভাবে 'পিপিপি' বাসত্মবায়ন ধীরগতিতে চলছে। 'পিপিপি' বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ আগে ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। এখন তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে 'বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট'কে (বিওআই)। শুধু একথা বলেই তিনি ানত্ম হননি। তিনি আরও বলেছেন, দেশে অসংখ্য বিত্তশালী আছেন। তাঁদের রয়েছে অঢেল ধন-সম্পত্তি। কিন্তু তাঁরা 'পিপিপি'তে উৎসাহী নন। তাঁরা অর্থাৎ বেসরকারী খাতের ব্যবসায়ীরা সবসময় থাকে সরকারের মুখাপেী হয়ে। ব্যথা হলে সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে মালিশ করে দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা শুধু সুবিধা চায়। তারা রিটার্ন দেয় না সরকারকে। অর্থমন্ত্রী 'জেলা বাজেট' সম্পর্কেও কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। তিনি বলেন, জেলাওয়ারি বাজেটের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে উৎসাহী নয়। কারণ তারা নিজেরা ব্যয় করে এবং কর্মপরিকল্পনা করে। এছাড়া তিনি আরও একটি গুরম্নত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, উন্নয়ন বাজেট এবং রাজস্ব বাজেট একীভূত করার কাজে বিলম্ব ঘটবে। সবশেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বাজেটে আরও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করা হবে।
পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা 'পিপিপি'র ধারণাটি অর্থমন্ত্রীর। বলা যায় এটা তাঁর 'পেট সাবজেক্ট।' অর্থমন্ত্রী তাঁর ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এ ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি 'পিপিপি' বাজেটে ২,১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন। 'ভায়াবিলিটি ফান্ডিং' খাতে রেখেছেন ৩০০ কোটি টাকা। 'পিপিপি' কারিগরি সহায়তা খাতে রাখা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন তিন মাসের মধ্যে 'পিপিপি' ব্যবস্থাপনার বিষয়টি পাকাপাকি হবে। বাজেটের পর নয় মাস যেতে চলেছে। অর্থমন্ত্রী এখন বলছেন আরও সময় লাগবে। এ েেত্র আমলারা উৎসাহী নন। শুধু আমলারা উৎসাহী নন এটাই শেষ কথা নয়। বলছেন ব্যবসায়ীরাও উৎসাহী নন। আমলারা যদি উৎসাহী না হন এবং ব্যবসায়ীরাও যদি উৎসাহী না হন তাহলে 'পিপিপি'র ভবিষ্যৎ কী? যে ধারণারই ওপর অর্থমন্ত্রী যথেষ্ট গুরম্নত্ব দিলেন বাজেটে তার অবস্থাই যদি এমন হয় তাহলে বাকি থাকে কী? অর্থমন্ত্রীর কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে, দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভাল হওয়ার কোন কারণ নেই। দেশে প্রচুর ধনাঢ্য লোক আছে। তাদেরই বিনিয়োগ করার কথা। সে বিনিয়োগ 'পিপিপি'তেই হোক, আর অন্য েেত্রই হোক। অর্থমন্ত্রী যখন বলেন ধনাঢ্য ব্যক্তিরা বিনিয়োগে উৎসাহী নন, তাঁরা উৎসাহী সরকারের সাহায্যে তখন আমাদের ভরসার জায়গা কোথায়? অর্থমন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করলে বলতে হয়, আমাদের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের চামচ দিয়ে শিশুদের মতো খাওয়াতে হয়। তারা খালি লাভ চায়, সুযোগ-সুবিধা চায়। তারা দেশকে কিছু দিতে চায় না। 'জেলা ভিত্তিক' বাজেটও অর্থমন্ত্রীর আরেকটি প্রিয় বিষয়। তিনি তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন জেলাওয়ারি বাজেট সরকারী ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। তাঁর আশা ছিল জেলাওয়ারি বাজেটের প্রক্রিয়া শুরম্ন হলে জেলা সত্মর থেকে বাজেট ও পরিকল্পনার উপাদান পাওয়া যাবে। মতা হবে বিকেন্দ্রীভূত। এখন দেখা যাচ্ছে এই জেলাওয়ারি বাজেটের ভাগ্যও অনিশ্চিত। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী ও রাজস্ব বাজেট একীভূত করার অঙ্গীকারটিও ছিল অর্থমন্ত্রীর। বাজেট ঘোষণার প্রায় ৯ মাস পর তিনি জানাচ্ছেন এর ভাগ্যও অনিশ্চিত।
আমলাদের বিষয়টিই বিবেচনা করা যাক। আমলারা সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা করছেন এটা বোঝা যায়। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে একথা বার বার বলা হচ্ছে। ব্যাংকাররাও অসহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আমলাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব ব্যয়ের বোঝা যথেষ্ট বেড়েছে। বর্তমান সরকার মতায় এসে দফায় দফায় তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থাও করেছে। খরচ করতে গেলে আমলাদের জেলে যেতে হবে এমন ধরনের একটা অমূলক আশঙ্কা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। যার ফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর টাকা খরচে দেখা দেয় শস্নথগতি। সরকার সে দুশ্চিনত্মা থেকেও তাদের ইতোমধ্যেই মুক্ত করেছে। আমলাদের বিরম্নদ্ধে দুনর্ীতির বিচার করতে হলে এখন থেকে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। 'দুদক' স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের কোন বিচার করতে পারবে না যদিও 'দুনর্ীতি দমন কমিশন' সবলের বিচার করতে পারবে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ঘন ঘন তাদের সঙ্গে বসছেন। আমলাদের আস্বসত্ম করছেন। এতদসত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে আমলারা অনড়। 'বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী' বাসত্মবায়িত হচ্ছে না আশাব্যঞ্জক গতিতে। 'পিপিপি' বাজেট বাসত্মবায়ন করছে না তারা। বিপরীতে রাজস্ব ব্যয় ঠিকই তারা করে যাচ্ছে। এ খবর দ্বারা কী বোঝা যাচ্ছে? এটা কী হতাশাব্যঞ্জক খবর নয়?
দ্বিতীয় ইসু্য হচ্ছে বিনিয়োগ। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে না। এ খবর তো রীতিমতো উদ্বেগজনক। আমলারা কাজ করছেন না, ব্যবসায়ীরা সরকারের বিশেষ বিনিয়োগে উৎসাহী নয়। বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। দ্রব্যমূল্য বাড়ছেই। মাছের বাজার ভীষণ চড়া। যেনতেন মাছের কেজি তিন শত টাকা। সবজির দামও উর্ধমুখী। যাতায়াত খরচ উর্ধমুখী। বাড়ি ভাড়া উর্ধমুখী। এ সমসত্ম খবরই তো হতাশাব্যঞ্জক। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রীর স্বীকারোক্তিতে বাসত্মবতাটাই ফুটে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন, করণীয় কী? ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাকি আর মাত্র তিন মাস। এর মধ্যে অবস্থার উন্নতি হওয়ার কোন লণ দেখা যাচ্ছে না। সরকার এতদিন স্বসত্মিতে ছিল। একথা আজ আর সত্য নয়। অতএব সরকার জরম্নরীভিত্তিতে কী করে তা দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে রইলাম।
লেখক : অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকার
ঊ-সধরষ : ৎধহধফবনহধঃয@সংহ.পড়স
গত সপ্তাহে ঢাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বেশ কয়েকটি কথা বলেছেন ভদ্রভাবে। সাইফুর রহমান সাহেব হলে এসব কথা অনেক রূঢ়ভাবে বলতেন। তিনি তা করেননি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আমলাদের উৎসাহের অভাবে 'পিপিপি' বাসত্মবায়ন ধীরগতিতে চলছে। 'পিপিপি' বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ আগে ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। এখন তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে 'বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট'কে (বিওআই)। শুধু একথা বলেই তিনি ানত্ম হননি। তিনি আরও বলেছেন, দেশে অসংখ্য বিত্তশালী আছেন। তাঁদের রয়েছে অঢেল ধন-সম্পত্তি। কিন্তু তাঁরা 'পিপিপি'তে উৎসাহী নন। তাঁরা অর্থাৎ বেসরকারী খাতের ব্যবসায়ীরা সবসময় থাকে সরকারের মুখাপেী হয়ে। ব্যথা হলে সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে মালিশ করে দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা শুধু সুবিধা চায়। তারা রিটার্ন দেয় না সরকারকে। অর্থমন্ত্রী 'জেলা বাজেট' সম্পর্কেও কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। তিনি বলেন, জেলাওয়ারি বাজেটের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে উৎসাহী নয়। কারণ তারা নিজেরা ব্যয় করে এবং কর্মপরিকল্পনা করে। এছাড়া তিনি আরও একটি গুরম্নত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, উন্নয়ন বাজেট এবং রাজস্ব বাজেট একীভূত করার কাজে বিলম্ব ঘটবে। সবশেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বাজেটে আরও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করা হবে।
পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা 'পিপিপি'র ধারণাটি অর্থমন্ত্রীর। বলা যায় এটা তাঁর 'পেট সাবজেক্ট।' অর্থমন্ত্রী তাঁর ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এ ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি 'পিপিপি' বাজেটে ২,১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন। 'ভায়াবিলিটি ফান্ডিং' খাতে রেখেছেন ৩০০ কোটি টাকা। 'পিপিপি' কারিগরি সহায়তা খাতে রাখা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন তিন মাসের মধ্যে 'পিপিপি' ব্যবস্থাপনার বিষয়টি পাকাপাকি হবে। বাজেটের পর নয় মাস যেতে চলেছে। অর্থমন্ত্রী এখন বলছেন আরও সময় লাগবে। এ েেত্র আমলারা উৎসাহী নন। শুধু আমলারা উৎসাহী নন এটাই শেষ কথা নয়। বলছেন ব্যবসায়ীরাও উৎসাহী নন। আমলারা যদি উৎসাহী না হন এবং ব্যবসায়ীরাও যদি উৎসাহী না হন তাহলে 'পিপিপি'র ভবিষ্যৎ কী? যে ধারণারই ওপর অর্থমন্ত্রী যথেষ্ট গুরম্নত্ব দিলেন বাজেটে তার অবস্থাই যদি এমন হয় তাহলে বাকি থাকে কী? অর্থমন্ত্রীর কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে, দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভাল হওয়ার কোন কারণ নেই। দেশে প্রচুর ধনাঢ্য লোক আছে। তাদেরই বিনিয়োগ করার কথা। সে বিনিয়োগ 'পিপিপি'তেই হোক, আর অন্য েেত্রই হোক। অর্থমন্ত্রী যখন বলেন ধনাঢ্য ব্যক্তিরা বিনিয়োগে উৎসাহী নন, তাঁরা উৎসাহী সরকারের সাহায্যে তখন আমাদের ভরসার জায়গা কোথায়? অর্থমন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করলে বলতে হয়, আমাদের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের চামচ দিয়ে শিশুদের মতো খাওয়াতে হয়। তারা খালি লাভ চায়, সুযোগ-সুবিধা চায়। তারা দেশকে কিছু দিতে চায় না। 'জেলা ভিত্তিক' বাজেটও অর্থমন্ত্রীর আরেকটি প্রিয় বিষয়। তিনি তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন জেলাওয়ারি বাজেট সরকারী ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। তাঁর আশা ছিল জেলাওয়ারি বাজেটের প্রক্রিয়া শুরম্ন হলে জেলা সত্মর থেকে বাজেট ও পরিকল্পনার উপাদান পাওয়া যাবে। মতা হবে বিকেন্দ্রীভূত। এখন দেখা যাচ্ছে এই জেলাওয়ারি বাজেটের ভাগ্যও অনিশ্চিত। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী ও রাজস্ব বাজেট একীভূত করার অঙ্গীকারটিও ছিল অর্থমন্ত্রীর। বাজেট ঘোষণার প্রায় ৯ মাস পর তিনি জানাচ্ছেন এর ভাগ্যও অনিশ্চিত।
আমলাদের বিষয়টিই বিবেচনা করা যাক। আমলারা সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা করছেন এটা বোঝা যায়। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে একথা বার বার বলা হচ্ছে। ব্যাংকাররাও অসহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আমলাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব ব্যয়ের বোঝা যথেষ্ট বেড়েছে। বর্তমান সরকার মতায় এসে দফায় দফায় তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থাও করেছে। খরচ করতে গেলে আমলাদের জেলে যেতে হবে এমন ধরনের একটা অমূলক আশঙ্কা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। যার ফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর টাকা খরচে দেখা দেয় শস্নথগতি। সরকার সে দুশ্চিনত্মা থেকেও তাদের ইতোমধ্যেই মুক্ত করেছে। আমলাদের বিরম্নদ্ধে দুনর্ীতির বিচার করতে হলে এখন থেকে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। 'দুদক' স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের কোন বিচার করতে পারবে না যদিও 'দুনর্ীতি দমন কমিশন' সবলের বিচার করতে পারবে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ঘন ঘন তাদের সঙ্গে বসছেন। আমলাদের আস্বসত্ম করছেন। এতদসত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে আমলারা অনড়। 'বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী' বাসত্মবায়িত হচ্ছে না আশাব্যঞ্জক গতিতে। 'পিপিপি' বাজেট বাসত্মবায়ন করছে না তারা। বিপরীতে রাজস্ব ব্যয় ঠিকই তারা করে যাচ্ছে। এ খবর দ্বারা কী বোঝা যাচ্ছে? এটা কী হতাশাব্যঞ্জক খবর নয়?
দ্বিতীয় ইসু্য হচ্ছে বিনিয়োগ। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে না। এ খবর তো রীতিমতো উদ্বেগজনক। আমলারা কাজ করছেন না, ব্যবসায়ীরা সরকারের বিশেষ বিনিয়োগে উৎসাহী নয়। বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। দ্রব্যমূল্য বাড়ছেই। মাছের বাজার ভীষণ চড়া। যেনতেন মাছের কেজি তিন শত টাকা। সবজির দামও উর্ধমুখী। যাতায়াত খরচ উর্ধমুখী। বাড়ি ভাড়া উর্ধমুখী। এ সমসত্ম খবরই তো হতাশাব্যঞ্জক। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রীর স্বীকারোক্তিতে বাসত্মবতাটাই ফুটে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন, করণীয় কী? ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাকি আর মাত্র তিন মাস। এর মধ্যে অবস্থার উন্নতি হওয়ার কোন লণ দেখা যাচ্ছে না। সরকার এতদিন স্বসত্মিতে ছিল। একথা আজ আর সত্য নয়। অতএব সরকার জরম্নরীভিত্তিতে কী করে তা দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে রইলাম।
লেখক : অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকার
ঊ-সধরষ : ৎধহধফবনহধঃয@সংহ.পড়স
No comments