বিনোদনের গড়পড়তার একটি বছর by গোলাম রাব্বানী
বছর শেষে হিসাব কষতে হয়। আর এ হিসাব কষার নাম সালতামামি। গেল এক বছরের একটি চিত্রের দেখা মেলে এ সালতামামিতে। কেমন কাটলো গত এক বছর? হুট করে এরকম একটি প্রশ্ন করলে এক কথায় উত্তর দেওয়া মুশকিল।
কিছুটা ভাবনা করার সময় নেন উত্তর দাতা। তাকে ফিরে দেখতে হয় গত একটা বছর। আমরা যদি একটু চিন্তা করি তাহলে গত এক বছরে আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনের সাফল্য ব্যর্থতার হিসাবটা খুব সহজেই পেয়ে যাবো।
এখন কথা হচ্ছে সেই সাফল্য আর ব্যর্থতার পরিমাপ নিয়ে। চলচ্চিত্র, সংগীত, টিভি নাটক, মঞ্চ, যাত্রা, আবৃত্তি, নৃত্য, মাইম এই হচ্ছে আমাদের বিনোদন নামক গাছের অন্যতম ডালপালা।
আমরা যদি আমাদের গত এক বছরের চলচ্চিত্র অঙ্গনের দিকে তাকাই তাহলে দীর্ঘশ্বাসই ফেলতে হয়! কারণ গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় কেটেছে এ বছরটিও। চলচ্চিত্রে এখন একটি নতুন শব্দ শোনা যায় ‘ডিজিটাল চলচ্চিত্র’। যার শুরুটা করেছিলেন মোরশেদুল ইসলাম, তারেক মাসুদ, নূরুল আলম আতিক সহ আরো অনেকেই। সেটাও বছর চারেক আগের কথা।
ফলে ডিজিটাল সিনেমাকেও আমরা এ বছরের অর্জন বলতে পারি না। তবে জাজ মাল্টিমিডিয়ার মালিক শীষ মনোয়ার পঞ্চাশটি সিনেমা হলে ডিজিটাল ছবি দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন। এটি একটি উদ্যোগ মাত্র। আর এতে করে এক ধরণের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে চলচ্চিত্রের। কিন্তু পঞ্চাশটি হল ডিজিটাল করলে হবে না। দেশের সবকটি সিনেমা হল ডিজিটাল হলেই কেবল এর সুফল ভোগ করা যাবে। একজন নিয়মিত সিনেমা দর্শককে প্রশ্ন করেছিলাম, বলেন তো গত এক বছরের হিট ছবি কোনটি? তিনি অনেক সময় নিয়ে ভাবলেন। তারপর কোন উত্তর দিতে পারেননি। হিট সিনেমা যদি হয় তাহলে মাথা চুলকিয়ে জবাব দিতে হয় না। ‘মনপুরা’ ছিল আমাদের সর্বশেষ হিট ছবি। যা মানুষের মুখে মুখে ছিল। যদিও প্রযোজক সমিতি, পরিচালক সমিতি দাবি করেন এ বছরও হিট ছবি ছিল। কিন্তু সেটা হয়তো গুটিকয়েক মানুষের কাছে হিট ছবি।
চলচ্চিত্রে অভিনয়শিল্পী সংকট। এটা কোন নতুন কথা না। তবে নতুন কথা হল গত এক বছরের বিভিন্ন প্রযোজক ও পরিচালক অনেককেই জোর করে নায়ক নায়িকা বানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দিন শেষে ব্যর্থ হয়েছেন। শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস জুটি বছরের শুরুর দিক পর্যন্ত ছিলেন আলোচনায়। কিন্তু এর পর থেকেই এ জুটি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। গত এক বছরের তাদের কোন আলোচিত কাজ ছিল না। যা নিয়ে কথা বলা যায়। এ দিকে অনন্ত আর বর্ষা সারা বছর আলোচনায় ছিলেন। যতটা না তাদের কাজ নিয়ে তারচেয়েও বেশি আলোচনায় ছিলেন নানা ধরণের আওয়াজ তুলে। ‘ইউ পম গানা’ শব্দ দিয়ে তো রিতি মত ঝড় তুলেছিলেন অনন্ত।
গেল বছরে আমরা অনন্ত জলিল আর শাকিব খানের আনাগোনায়ই দেখলাম ফিল্মপাড়ায়। ফেরদৌস, রিয়াজ, পূর্ণিমা, পপি, মৌসুমী ছিলেন টেলিভিশন অনুষ্ঠান, নাটক আর দু`একটা ছবি নিয়ে ব্যস্ত। শাবনূর নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন গত এক বছর।
বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সরকার অনুদান দিয়েছিল। কিন্তু সে ছবিগুলো এখন কি হালে আছে আমরা জানি না। যদিও কথা ছিল এ ২০১২ সালের মধ্যেই ছবিগুলোর নির্মাণ শেষ করার জন্য। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘টেলিভিশন’ চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক সুনাম এনে দিয়েছে আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গনে। যদিও ‘টেলিভিশন’ এ বছরের ছবি না। কারণ ছবিটি এখনো মুক্তি পায়নি।
আমাদের ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রি দাড়াতে না পাড়লেও চুপিসারে একটি বড় ইন্ড্রাস্ট্রি গড়ে উঠেছে টেলিভিশন চ্যানেলকে কেন্দ্র করে। কিন্তু ঘাড় ফিরালে এখানেও হতাশার ছাপ দেখা যায়। আমাদের প্রতিটি অনুষ্ঠান ভিত্তিক টিভি চ্যানেল ব্যর্থ হয়েছে দর্শক প্রত্যাশা পূরণে। আমাদের ভারতমুখী দর্শককে তারা ঘরে ফেরাতে পারেননি। যদিও কিছু ব্যর্থ চেষ্টা আমরা দেখেছি গেল এক বছরে। ভারতীয় চ্যানেলের কপি করে অনেক অনুষ্ঠান নির্মাণ করতে দেখেছি আমরা। ভারত-বাংলাদেশের শিল্পী ও নির্মাতা নিয়ে ধারাবাহিক নাটক নির্মাণও করতে দেখেছি। কিন্তু এসব নাটক দেখে লোকে কেবল হতাশ হয়েছেন।
২০১২ সালের আলোচিত নাটক বা অনুষ্ঠানের নাম টিভি দর্শকের জানা নেই। কারণ মনে রাখার মত কোন কাজ ছিল না। চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এ নূরুল আলম আতিকের ‘যাদুর শহর’ নাটকটি প্রচার হয়েছে। এ নাটকটির টাইটেল গানটা সবার মুখে মুখে ছিল। মাসুদ সেজানের ‘লংমার্চ’ সারা বছর দেখেছেন টিভি দর্শকরা। আলোচনায় ছিল নাটকটি। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ ছিল বিটিভির দর্শকের জন্য একমাত্র পাওয়া।
এছাড়া সরকারি এ চ্যানেলে বছরের কোন আলোচিত বা জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের নাম আমাদের জানা নেই। এবার অভিনয়শিল্পীদের কথা যদি বলি তাহলে সবাই গড়পড়তা কাজ করে গেছেন। ভালো আছেন, টাকা কামাচ্ছেন, প্রচুর কাজ করেছেন গত এক বছরের এরকম শিল্পীর তালিকা করলে সংখ্যা লম্বাই হবে। তবে গত এক বছরে চলচ্চিত্র, টিভি নাটক দিয়ে যে শিল্পী অনেক বেশি আলোচিত ছিলেন তিনি হচ্ছেন জয়া আহসান। আর অভিনেতাদের মধ্যে আলাদা করে কারো নাম বলার নেই। সকলই যেন একই রুপে নানা নাটকে নানা চ্যানেলের পর্দায় হাজির ছিলেন। তাদের কাজ নাটক করে টাকা কামানো সে কাজটাই যেন সকলে করে গেছেন। আর জীবন-যাপনের জন্য বোধহয় এটাই খুব জরুরি। এ কারণে সকলেই শিল্পী হতে পারেন না কেউ কেউ শিল্পী হন।
এবার একটু চোখ দেওয়া যাক আমাদের মঞ্চপাড়ার দিকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও বিরাট কোন সফলতা চোখে পড়ে না। বার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে মঞ্চ দলগুলো তাদের কাজ করে গেছেন। নাট্যোৎসব, সেমিনার, পদক প্রদান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন। এই ছিল আমাদের মঞ্চপাড়ার সারা বছরের অনুষ্ঠানের ধরন। তবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী দেশের ৬৪ জেলার ৬৪টি কলেজে ৬৪টি নতুন নাটক তৈরি করার জন্য অনুদান দিয়েছিল। কলেজ পর্যায়ে মঞ্চচর্চার নতুন ক্ষেত্র তৈরির ক্ষেত্রে শিল্পকলার এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।
আমাদের সংগীত অঙ্গনে বা অডিও ব্যবসায় ধস নেমেছে বেশ কয়েক বছর আগেই। এখন আর লোকে অ্যালবাম কিনেন না । এ অভিযোগে অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো অডিও অ্যালবাম প্রকাশ কমিয়ে দিয়েছে। আর এ সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে সেল ফোন কোম্পানিগুলো। গত বছরে এ প্রবণতা ছিল চোখে পড়ার মত। এখন সেলফোন কোম্পানিগুলো শিল্পীদের অ্যালবাম কিনে নিচ্ছেন এবং তা শুধুমাত্র একটি কোম্পানির গ্রাহকদের জন্য তা বিক্রি করছেন। সর্বশেষ আইয়ুব বাচ্চু, হাবিব এর অ্যালবাম সেল ফোনে মুক্তি পেয়েছিল। শওকত আলী ইমন আর জিনাতের ঘটনাটা এবং আরেফিন রুমির বিয়ের ঘটনা ছিল সংগীত অঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। সারা বছর জুড়ে নানা কনসার্ট আর মিউজিক ভিডিও ও সংগীত বিষয়ক টিভি অনুষ্ঠান নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন শিল্পীরা। সেরা কণ্ঠ, ক্লোজআপ ওয়ান, পাওয়ার ভয়েস ও সেরা প্রতিভা নামে সংগীত বিষয়ক রিয়ালিটি শোগুলো ছিল এ বছেরর বাড়তি পাওয়া। সারা বছর জুড়েই বিদেশী সংগীতশিল্পীদের আনাগোনা ছিল। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসব ছিল বছরের অন্যতম একটি ঘটনা।
যাত্রাপালা নিয়ে নতুন কোন খবর নেই। সারা বছর জুড়ে যাত্রাদলগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাত্রা পরিবেশন করেছে। বলার মত কোন ঘটনা নেই যাত্রাঙ্গনে। এ বছরের শেষের দিকে শিল্পকলা একাডেমীতে একটি যাত্রা উৎসব হওয়ার কথা থাকলেও তা আর হয়নি। যাত্রা শিল্প উন্নয়ন পরিষদের নির্বাচনও এবছর হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তাও হয়নি শেষ পর্যন্ত।
আবৃত্তি, নৃত্য, মাইম শিল্পেও উল্লেখ করার মত কোন সাফল্য নেই। ব্যর্থতাও নেই! নিজেদের টিকিয়ে রাখাই যেন এদের মূল কাজ। রুটিন মাফিক কাজেই করে গেছে আবৃত্তি, নৃত্য ও মাইম সংগঠনগুলো।
তাহলে আমরা হিসাব কষে একটা কথা বলতেই পারি ২০১২ সাল বিনোদন জগতের জন্য একটি গড়পড়তার বছর ছিল।
আমরা যদি আমাদের গত এক বছরের চলচ্চিত্র অঙ্গনের দিকে তাকাই তাহলে দীর্ঘশ্বাসই ফেলতে হয়! কারণ গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় কেটেছে এ বছরটিও। চলচ্চিত্রে এখন একটি নতুন শব্দ শোনা যায় ‘ডিজিটাল চলচ্চিত্র’। যার শুরুটা করেছিলেন মোরশেদুল ইসলাম, তারেক মাসুদ, নূরুল আলম আতিক সহ আরো অনেকেই। সেটাও বছর চারেক আগের কথা।
ফলে ডিজিটাল সিনেমাকেও আমরা এ বছরের অর্জন বলতে পারি না। তবে জাজ মাল্টিমিডিয়ার মালিক শীষ মনোয়ার পঞ্চাশটি সিনেমা হলে ডিজিটাল ছবি দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন। এটি একটি উদ্যোগ মাত্র। আর এতে করে এক ধরণের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে চলচ্চিত্রের। কিন্তু পঞ্চাশটি হল ডিজিটাল করলে হবে না। দেশের সবকটি সিনেমা হল ডিজিটাল হলেই কেবল এর সুফল ভোগ করা যাবে। একজন নিয়মিত সিনেমা দর্শককে প্রশ্ন করেছিলাম, বলেন তো গত এক বছরের হিট ছবি কোনটি? তিনি অনেক সময় নিয়ে ভাবলেন। তারপর কোন উত্তর দিতে পারেননি। হিট সিনেমা যদি হয় তাহলে মাথা চুলকিয়ে জবাব দিতে হয় না। ‘মনপুরা’ ছিল আমাদের সর্বশেষ হিট ছবি। যা মানুষের মুখে মুখে ছিল। যদিও প্রযোজক সমিতি, পরিচালক সমিতি দাবি করেন এ বছরও হিট ছবি ছিল। কিন্তু সেটা হয়তো গুটিকয়েক মানুষের কাছে হিট ছবি।
চলচ্চিত্রে অভিনয়শিল্পী সংকট। এটা কোন নতুন কথা না। তবে নতুন কথা হল গত এক বছরের বিভিন্ন প্রযোজক ও পরিচালক অনেককেই জোর করে নায়ক নায়িকা বানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দিন শেষে ব্যর্থ হয়েছেন। শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস জুটি বছরের শুরুর দিক পর্যন্ত ছিলেন আলোচনায়। কিন্তু এর পর থেকেই এ জুটি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। গত এক বছরের তাদের কোন আলোচিত কাজ ছিল না। যা নিয়ে কথা বলা যায়। এ দিকে অনন্ত আর বর্ষা সারা বছর আলোচনায় ছিলেন। যতটা না তাদের কাজ নিয়ে তারচেয়েও বেশি আলোচনায় ছিলেন নানা ধরণের আওয়াজ তুলে। ‘ইউ পম গানা’ শব্দ দিয়ে তো রিতি মত ঝড় তুলেছিলেন অনন্ত।
গেল বছরে আমরা অনন্ত জলিল আর শাকিব খানের আনাগোনায়ই দেখলাম ফিল্মপাড়ায়। ফেরদৌস, রিয়াজ, পূর্ণিমা, পপি, মৌসুমী ছিলেন টেলিভিশন অনুষ্ঠান, নাটক আর দু`একটা ছবি নিয়ে ব্যস্ত। শাবনূর নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন গত এক বছর।
বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সরকার অনুদান দিয়েছিল। কিন্তু সে ছবিগুলো এখন কি হালে আছে আমরা জানি না। যদিও কথা ছিল এ ২০১২ সালের মধ্যেই ছবিগুলোর নির্মাণ শেষ করার জন্য। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘টেলিভিশন’ চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক সুনাম এনে দিয়েছে আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গনে। যদিও ‘টেলিভিশন’ এ বছরের ছবি না। কারণ ছবিটি এখনো মুক্তি পায়নি।
আমাদের ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রি দাড়াতে না পাড়লেও চুপিসারে একটি বড় ইন্ড্রাস্ট্রি গড়ে উঠেছে টেলিভিশন চ্যানেলকে কেন্দ্র করে। কিন্তু ঘাড় ফিরালে এখানেও হতাশার ছাপ দেখা যায়। আমাদের প্রতিটি অনুষ্ঠান ভিত্তিক টিভি চ্যানেল ব্যর্থ হয়েছে দর্শক প্রত্যাশা পূরণে। আমাদের ভারতমুখী দর্শককে তারা ঘরে ফেরাতে পারেননি। যদিও কিছু ব্যর্থ চেষ্টা আমরা দেখেছি গেল এক বছরে। ভারতীয় চ্যানেলের কপি করে অনেক অনুষ্ঠান নির্মাণ করতে দেখেছি আমরা। ভারত-বাংলাদেশের শিল্পী ও নির্মাতা নিয়ে ধারাবাহিক নাটক নির্মাণও করতে দেখেছি। কিন্তু এসব নাটক দেখে লোকে কেবল হতাশ হয়েছেন।
২০১২ সালের আলোচিত নাটক বা অনুষ্ঠানের নাম টিভি দর্শকের জানা নেই। কারণ মনে রাখার মত কোন কাজ ছিল না। চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এ নূরুল আলম আতিকের ‘যাদুর শহর’ নাটকটি প্রচার হয়েছে। এ নাটকটির টাইটেল গানটা সবার মুখে মুখে ছিল। মাসুদ সেজানের ‘লংমার্চ’ সারা বছর দেখেছেন টিভি দর্শকরা। আলোচনায় ছিল নাটকটি। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ ছিল বিটিভির দর্শকের জন্য একমাত্র পাওয়া।
এছাড়া সরকারি এ চ্যানেলে বছরের কোন আলোচিত বা জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের নাম আমাদের জানা নেই। এবার অভিনয়শিল্পীদের কথা যদি বলি তাহলে সবাই গড়পড়তা কাজ করে গেছেন। ভালো আছেন, টাকা কামাচ্ছেন, প্রচুর কাজ করেছেন গত এক বছরের এরকম শিল্পীর তালিকা করলে সংখ্যা লম্বাই হবে। তবে গত এক বছরে চলচ্চিত্র, টিভি নাটক দিয়ে যে শিল্পী অনেক বেশি আলোচিত ছিলেন তিনি হচ্ছেন জয়া আহসান। আর অভিনেতাদের মধ্যে আলাদা করে কারো নাম বলার নেই। সকলই যেন একই রুপে নানা নাটকে নানা চ্যানেলের পর্দায় হাজির ছিলেন। তাদের কাজ নাটক করে টাকা কামানো সে কাজটাই যেন সকলে করে গেছেন। আর জীবন-যাপনের জন্য বোধহয় এটাই খুব জরুরি। এ কারণে সকলেই শিল্পী হতে পারেন না কেউ কেউ শিল্পী হন।
এবার একটু চোখ দেওয়া যাক আমাদের মঞ্চপাড়ার দিকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও বিরাট কোন সফলতা চোখে পড়ে না। বার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে মঞ্চ দলগুলো তাদের কাজ করে গেছেন। নাট্যোৎসব, সেমিনার, পদক প্রদান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন। এই ছিল আমাদের মঞ্চপাড়ার সারা বছরের অনুষ্ঠানের ধরন। তবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী দেশের ৬৪ জেলার ৬৪টি কলেজে ৬৪টি নতুন নাটক তৈরি করার জন্য অনুদান দিয়েছিল। কলেজ পর্যায়ে মঞ্চচর্চার নতুন ক্ষেত্র তৈরির ক্ষেত্রে শিল্পকলার এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।
আমাদের সংগীত অঙ্গনে বা অডিও ব্যবসায় ধস নেমেছে বেশ কয়েক বছর আগেই। এখন আর লোকে অ্যালবাম কিনেন না । এ অভিযোগে অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো অডিও অ্যালবাম প্রকাশ কমিয়ে দিয়েছে। আর এ সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে সেল ফোন কোম্পানিগুলো। গত বছরে এ প্রবণতা ছিল চোখে পড়ার মত। এখন সেলফোন কোম্পানিগুলো শিল্পীদের অ্যালবাম কিনে নিচ্ছেন এবং তা শুধুমাত্র একটি কোম্পানির গ্রাহকদের জন্য তা বিক্রি করছেন। সর্বশেষ আইয়ুব বাচ্চু, হাবিব এর অ্যালবাম সেল ফোনে মুক্তি পেয়েছিল। শওকত আলী ইমন আর জিনাতের ঘটনাটা এবং আরেফিন রুমির বিয়ের ঘটনা ছিল সংগীত অঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। সারা বছর জুড়ে নানা কনসার্ট আর মিউজিক ভিডিও ও সংগীত বিষয়ক টিভি অনুষ্ঠান নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন শিল্পীরা। সেরা কণ্ঠ, ক্লোজআপ ওয়ান, পাওয়ার ভয়েস ও সেরা প্রতিভা নামে সংগীত বিষয়ক রিয়ালিটি শোগুলো ছিল এ বছেরর বাড়তি পাওয়া। সারা বছর জুড়েই বিদেশী সংগীতশিল্পীদের আনাগোনা ছিল। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসব ছিল বছরের অন্যতম একটি ঘটনা।
যাত্রাপালা নিয়ে নতুন কোন খবর নেই। সারা বছর জুড়ে যাত্রাদলগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাত্রা পরিবেশন করেছে। বলার মত কোন ঘটনা নেই যাত্রাঙ্গনে। এ বছরের শেষের দিকে শিল্পকলা একাডেমীতে একটি যাত্রা উৎসব হওয়ার কথা থাকলেও তা আর হয়নি। যাত্রা শিল্প উন্নয়ন পরিষদের নির্বাচনও এবছর হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তাও হয়নি শেষ পর্যন্ত।
আবৃত্তি, নৃত্য, মাইম শিল্পেও উল্লেখ করার মত কোন সাফল্য নেই। ব্যর্থতাও নেই! নিজেদের টিকিয়ে রাখাই যেন এদের মূল কাজ। রুটিন মাফিক কাজেই করে গেছে আবৃত্তি, নৃত্য ও মাইম সংগঠনগুলো।
তাহলে আমরা হিসাব কষে একটা কথা বলতেই পারি ২০১২ সাল বিনোদন জগতের জন্য একটি গড়পড়তার বছর ছিল।
No comments