জামায়াতী ‘মিনি’ তাণ্ডব
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরও বাদ পড়ল না জামায়াত-শিবির, জঙ্গী ও উগ্রধর্মীয় মৌলবাদীদের হামলা থেকে। হামলাকারীরা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের প্রটেকশন গাড়ি, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিবের গাড়িবহরেও হামলা করেছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের আগে খোদ রাজধানীতেই আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়েছিল। সোমবারের হামলায় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা দলে থাকা এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। হামলার ধরন ও ব্যাপকতা বিগত ৪ বছরের সব তা-বকেই হার মানিয়েছে। হামলাকারী জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা জয়বাংলা সেøাগান দিয়ে পালিয়ে গেছে।রাজধানী ঢাকা ছাড়াও রাজশাহী, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, দিনাজপুর, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় একই কায়দায় হামলা হয়েছে। মাত্র আধা ঘণ্টার তা-বে মতিঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত শতাধিক যানবাহন ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। যানবাহনে ভাংচুরের সময় বাদ যায়নি পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার স্টিকারবিহীন গাড়িও। হামলাকারীরা ৫০ থেকে ৬০টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে ঢাকায় পুলিশ, পথচারী ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীসহ অন্তত শতাধিক আহত হয়েছেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে অন্তত ২শ’ রাউন্ড রবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ছাড়াও অন্তত ৫০ রাউন্ড ফাঁকা বুলেট ছুড়তে হয়েছে। গুরুতর আহত ১০ পুলিশ সদস্যকে রাজারবাগ পুলিশলাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার, ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদসহ উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা আহতদের দেখে সুচিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন। ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ ঘোষণা দিয়েছেন, জামায়াত-শিবির হামলা চালালে পুলিশও গুলি চালাবে। পুলিশ জামায়াত-শিবিরের ৫৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সকাল ৯টা থেকেই জামায়াত-শিবির, জঙ্গী, উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সচিবালয়, বায়তুল মোকাররম, মতিঝিল, পুরানা পল্টন, তোপখানা রোড, বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কসহ প্রতিটি গলিতে অবস্থান নেয়। এরপর আচমকা মিছিল বের করে। মিছিল বের করেই তারা রাস্তায় নেমে পড়ে। প্রথমেই তারা মতিঝিল থানার সামনের সরু গলি থেকে মিছিল বের করে। মিছিলটি মতিঝিল থানা ঘেরাও করে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। পুলিশ হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় হামলাকারীরা অন্তত ২০টি শক্তিশালী হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। বোমার বিস্ফোরণে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। মানুষজন নিরাপদ জায়গার দিকে ছুটতে থাকে।
পুলিশের ধাওয়ার মুখে মিছিলকারীরা মতিঝিল জনতা ব্যাংকের সামনে রাস্তা অবরোধ করে। তারা গাড়ি ভাংচুর শুরু করে। মূলত জামায়াত-শিবির বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেয়। ১০ থেকে ১২ জনের একেকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে। এরপর চালায় চোরাগোপ্তা হামলা। মতিঝিল থানার সামনে দফায় দফায় সংঘর্ষ হওয়ার পর হামলাকারীরা অবস্থান নেয় আমিনকোর্ট ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের মাঝামাঝি জায়গায়। এ সময় তারা প্রথম যে গাড়িটিতে হামলা চালায় সেটি একটি সরকারী গাড়ি। জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদফতরের কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস। ঢাকা মেট্রো-চ-৫৩-২৯১০ নম্বরের মাইক্রোবাসটিতে হামলা চালায়। গাড়িতে থাকা কর্মকর্তা, চালক ও হেলপাররা প্রাণ বাঁচাতে গাড়ি ফেলেই অন্যত্র চলে যায়। এ সময় হামলাকারীরা নিজেরা বোতলে বহন করে আনা পেট্রোল ঢেলে দেয় মাইক্রোবাসটিতে। এরপর তাতে অন্তত ৫ হামলাকারী একত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পর পরই সেখান দিয়ে লিনতি টেকনোলজি নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পিকআপভ্যান যাচ্ছিল। এ অবস্থা দেখে গাড়ি ফেলে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায় গাড়ির চালক ও হেলপাররা। পরে হামলাকারীদের কাছে থাকা পেট্রোল গাড়িতে ঢেলে দিয়ে ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-১০৯৪ নম্বরের গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ পুরোপুরি এ্যাকশনে চলে যায়।
পুলিশ হামলাকারীদের ওপর চড়াও হয়। হামলাকারীরা দৌড়াতে দৌড়াতে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরের দিকে যায়। সেখানে যানবাহন ভাংচুর করে। এরপর জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনের দিকে যায়। সেখানেও অন্তত ৫টি যাত্রীবাহী বাসে ভাংচুর চালায়। হামলাকারীরা কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে একেকটি ভাগ একেকদিকে চলে যায়। একটি গ্রুপ সোনালী ব্যাংকের পেছন দিক দিয়ে স্টেডিয়ামের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এ গ্রুপটি বকচত্বরে ৩টি গাড়ি ভাংচুর করে। এদের সঙ্গে যোগ দেয় আরেকটি গ্রুপ। এই দুই গ্রুপ মিলে দৈনিক বাংলা মোড়ে ৫টি গাড়ি ভাংচুর করে। আর স্টেডিয়ামের সামনে ঢোকার রাস্তায় ভাংচুর করে মতিঝিল থেকে মোহাম্মদপুরগামী ২টি বাস। একটি গ্রুপ স্টেডিয়ামের ভেতর দিয়ে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণের গেটের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
মতিঝিল শাপলা চত্বরে হামলাকারীরা পার্কিং করা ঢাকা মেট্রো-চ-৫৩-২৯১০, ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-১০৯৩, ঢাকা মেট্রো-প-১৪-৩০২৯ ও ঢাকা মেট্রো-১৪৮/অ নম্বর পিকআপভ্যানসহ অন্তত ১৫টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া রাস্তার কাছে নির্দিষ্ট জায়গায় পার্কিং করা ঢাকা মেট্রো-গ-১৩-৫৬২৭, ঢাকা মেট্রো-গ-২১-৮৭৮৫, ঢাকা মেট্রো-গ-১৩-৯২৪৯ ও ঢাকা মেট্রো-গ-১৯-০৬৮৪ নম্বর গাড়িসহ অন্তত ২০টি প্রাইভেটকার ভাংচুর করে। অতিরিক্ত পুলিশও পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়। এ সময় পুলিশ বাধ্য হয়ে অন্তত ৮০ রাউন্ড রবার বুলেট ও শতাধিক রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
এদিকে বাধার মুখে হামলাকারীরা পুলিশকে দিকভ্রান্ত করতে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। হামলার পর পরই হামলাকারীরা জয়বাংলা সেøাগান দেয়। এতে সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ খানিকটা হতভম্ব হয়ে যায়। পুলিশ ধাওয়া দিলে হামলাকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা রাস্তার পাশে প্রতিটি ভবনের গায়ে ইটপাটকেল ও পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। মতিঝিল এলাকার অন্তত ৫০টি বহুতল ভবনের দরজা জানালার কাচ ভেঙ্গে গেছে হামলাকারীদের ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে।
বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে তাতে মনে হয়, দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে ফেলতেই এমন পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। অন্তত ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
দেশের অর্থনীতি পথে বসাতেই ব্যাংক বীমাসহ অন্যান্য আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রীতিমতো নাশকতা চালিয়েছে তারা। হামলার ধরন পুরোপুরি গেরিলা কায়দা। গেরিলা হামলায় অন্তত ২ ঘণ্টার জন্য স্থবির হয়ে পড়েছিল পুরো দেশের অর্থনীতির বড় প্রাণকেন্দ্র রাজধানীর মতিঝিল।
হামলাকারীদের তা-বে পুরো এলাকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, ব্যবসা বাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাঙ্গনে এক নৈরাজ্যকর বেসামাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে পড়ে মতিঝিলের বিআইডব্লিউটিএ, মতিঝিল থানার সামনের অংশ, জনতা ব্যাংকসহ প্রধান সড়কের আশপাশের পুরো এলাকা। শত শত মানুষ চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব লাঠিচার্জ, রবার বুলেট নিক্ষেপ, ফাঁকা টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করে।
হামলাকারীদের একটি গ্রুপ তোপখানা রোড, পুরানা পল্টন মোড়, বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট দিয়ে জিরো পয়েন্টের কাছে মতিঝিল থেকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট হয়ে আসা গ্রুপটির সঙ্গে মিলিত হয়। এখানে তারা সম্মিলিতভাবে ভয়াবহ তা-ব চালায়।
পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তারা আস্তে আস্তে সচিবালয়ের দিকে এগুতে থাকে। তারা আব্দুল গনি রোডে ঢুকে সচিবালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় হামলাকারীদের হামলার শিকার হয় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরও। হামলায় প্রধানমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের প্রটেকশন গাড়িও হামলার শিকার হয়। হামলায় ঢাকা মেট্রো-ই-৫৭-৪০৭৮ নম্বরের গাড়িটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাকে প্রটেকশন দেয়ার কাজে ব্যবহৃত পুলিশের বিশেষ শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার নুরুল ইসলামের ঢাকা মেট্রো-ঠ-১১-০৪৫৪ নম্বরের গাড়ির দরজা জানালা ভেঙ্গে দেয়া হয়। গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।
ঠিক একই সময়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের প্রটেকশনের জন্য ব্যবহৃত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-০৯৮৯ নম্বর গাড়িতে হামলা চালানো হয়। গাড়িটি জ্বালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয় । গাড়িটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ঢাকা মেট্রো-গ-১১-৪৩১৩ নম্বরের গাড়িতে ভাংচুর চালানো হয়। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৪১০৭ নম্বরের গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। কয়েকটি ইটপাটকেল ও পাথর প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরে ব্যবহৃত গাড়িতে লাগে। কিন্তু তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। হামলাকারীরা সচিবালয়ের সামনে অন্তত ১০টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।
কিন্তু এরপরই ঘটে সেই ভয়াবহ ঘটনা। হামলাকারীরা প্রধানমন্ত্রীর প্রটেকশন গাড়িতে হামলা চালায়। অল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে হামলা হয়নি। প্রটেকশনে থাকা নিরাপত্তা কর্মী কনস্টেবল দেলোয়ার হোসেন মাথায় মারাত্মক আঘাত পান। এ সময় প্রটেকশন বিভাগের তরফ থেকে বাধ্য হয়ে ৮ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়।
এছাড়াও রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন শনির আখড়া, ফার্মগেট বিমানের জনসংযোগ গলিতে ঝটিকা মিছিল বের করার চেষ্টা করে জামায়াত-শিবির, জঙ্গী ও ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কিন্তু পুলিশ ও স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে তারা পালিয়ে যায়।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও কয়েকটি শক্তিশালী ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জামায়াত-শিবির। অন্যদিকে কাঁটাবন, শাহবাগ, ঢাকা কলেজের সামনে ও মহাখালী টিভি গেটের সামনেসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করার চেষ্টা করেছে তারা। ছাত্রদল ও শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন, দোয়েল চত্বর, এনেক্সভবন, ভিসির বাসভবনের সামনে, রেজিস্ট্রার ভবনের সামনেসহ বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ১২টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, পুরনো ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও অন্তত ১০টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জামায়াত-শিবির। তারা অন্তত ১০টি যানবাহন ভাংচুর করেছে। তারা পুরো এলাকায় যানবাহন, দোকানপাট, সামাজিক, বাণিজ্যিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে রবার বুলেট, টিয়ারশেল, জলকামান থেকে পানি ছিটালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ সময় পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আসাদুজ্জামান এবং আহত মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে অন্তত ২শ’ রাউন্ড রবার বুলেট, টিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়তে হয়েছে। মতিঝিল থানা পুলিশ অন্তত ২৫ শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের উদ্ধৃতি দিয়ে সহকারী পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জনকণ্ঠকে আরও জানান, হামলা পূর্বপরিকল্পিত। যা গ্রেফতারকৃতরা নিজেরাই স্বীকার করেছে। তাদের কাছে ব্যাগ ছিল। ব্যাগে সুবিধাজনকভাবে পুলিশকে ঘায়েল বা আহত করতে পরিমাণ মতো ইট ও পাথরের টুকরো ছিল। সেসব দিয়েই হামলা হয়েছে। এছাড়া লাঠিসোটা তো ছিলই।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিসের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় ৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মতিঝিলে জামায়াত-শিবিবের সঙ্গে পুুলিশের সংঘর্ষে গুরুতর আহত ১০ পুলিশকে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত আছে।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন জানান, পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেকোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সব প্রস্তুতি রয়েছে।
এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জামায়াতের চোরাগোপ্তা হামলায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা থাকার যে অভিযোগ তুলেছেন সে বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর।
বাঁশখালী ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা বাঁশখালী থেকে জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বলবাজারে পুলিশের ওপর হামলা ও ব্যাপক তা-ব চালিয়েছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে মিছিল ও ব্যানার টাঙানোকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত আক্রমণের শিকার হন পুলিশ সদস্যরা। সোমবার বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ তা-ব চলে। এক পর্যায়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সমর্থকরা জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যোগ দিলে সংঘর্ষ আরও ব্যাপক হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে চার শতাধিক গুলি ও অর্ধশতাধিক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়। সংঘর্ষে আহত হয়েছে ১০ পুলিশসহ অন্তত ৬০ জন। পুলিশ এ ঘটনায় ১৬ জনকে আটক করেছে। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এদিকে, চট্টগ্রাম নগরীর বিআরটিসি এলাকায় ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা চালিয়েছে ছাত্রশিবির। তবে পুলিশের তাৎক্ষণিক তৎপরতায় শিবিরের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে জামায়াত আজ বাঁশখালীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে।
রাজশাহী ॥ স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানিয়েছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুর বাজার এলাকায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকাল ১০টার দিকে সংঘর্ষ চলাকালে প্রায় ১৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে শিবির ক্যাডাররা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ অন্তত ৫০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।
আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ছাত্রশিবিরের বের করা বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বাধা দিতে গেলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে পুলিশের তিন সদস্যসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।
দিনাজপুর ॥ স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক জামায়াত নেতাদের মুক্তি ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবিতে সোমবার সকালে দিনাজপুর শহরে তা-ব চালিয়েছে ছাত্রশিবির। শিবিরের ক্যাডাররা পুলিশের ২টি পিকআপ ভ্যান ভাংচুর করে। তাদের হামলায় গুরুতরভাবে আহত হন দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ২ জন এস.আইসহ ১২ পুলিশ সদস্য। এ সময় শহরের মুন্সিপাড়া বাণিজ্যিক এলাকায় একটি টিনের দোকানও ভাংচুর করা হয়। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। অপরদিকে শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ওই ঘটনায় আব্দুল মান্নান নামে একজন শিবির কর্মীও আহত হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
সাতক্ষীরা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা থেকে জানিয়েছেন, সাতক্ষীরার শিবির কর্মীদের ইট-পাটকেল ও লাঠিপেটায় পুলিশের এক এসআইসহ ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। সোমবার বিকেলে সাতক্ষীরা শহরের মিলবাজার এলাকায় জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে শিবিরের বের করা বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ শিবির কর্মীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এই ঘটনায় দুই শিবির কর্মীকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে।
আহত পুলিশ কনস্টেবল পবিত্র সরদার (২০) ও সুকেশ রায়কে (২৬) গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গাইবান্ধা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা থেকে জানান, শহরের খানকাহ শরীফ এলাকা থেকে সোমবার দুপুরে শিবির জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি জামায়াত নেতা ওবায়দুল ইসলামকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে খানকাহ শরীফ এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
কিশোরগঞ্জ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ থেকে জানিয়েছেন, জেলার করিমগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির আবদুল হাই (৪৫) ও সেক্রেটারি জেনারেল আতাউর রহমানসহ (৫০) ৬ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে করিমগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। গত বছরের ৯ ডিসেম্বরের অবরোধ কর্মসূচীতে পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
জয়পুরহাট ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, জয়পুরহাট থেকে জানিয়েছেন, কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ ও আটক জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতে ইসলামী ছাত্রশিবির সোমবার জয়পুরহাট শহরে লাঠিসোটাসহ ঝটিকা মিছিল বের করে। এ সময় শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ এ সময় দুই শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ওহায়েদুজ্জামানের বাড়ি কালাই থানার মুন্সিপাড়া ও কুতুব উদ্দিনের বাড়ি একই উপজেলার হাতিওর গ্রামে।
বরিশাল ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, গৌরনদী থেকে জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইব্যুনালকে অবৈধ দাবি করে তা বাতিল করে জামায়াতের কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে সোমবার সকালে বরিশাল নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা দেশকে অচল করে দেয়ারও হুমকি দিয়েছে।
সকাল সাড়ে ন’টায় নগরীর বগুড়া রোডের শ্রী চৈতন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সরকারী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে শিবির কর্মীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। মিছিল ও সমাবেশ শেষে শিবির কর্মীরা তাদের মিছিলে এরপর ‘মহানগর ছাত্রশিবির’ লেখা নিজেদের ব্যানারটি নিজেরাই পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়।
No comments