সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ-নারীর নিরাপত্তা দিতেই হবে by জেএস ভার্মা
সবসময় এমন সব বিভীষিকাময় ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হই, যেগুলো প্রধানত মনুষ্যসৃষ্ট। এসব অনায়াসে সুশাসনের মাধ্যমে রোধ করা সম্ভব হতো। আর এসব ঘটনা ক্ষমতার ভিত্তিতে কম্পন ধরিয়ে দেয়। ফলে একই ধরনের ট্র্যাজেডি যেন আর না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের আবশ্যকতা দেখা দেয়।
সন্দেহ নেই যে, এ ধরনের জঘন্য অপরাধ যারা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা জরুরি। তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এ ধরনের অপরাধ যেন আর সংঘটিত হতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। নিরাময়ের চেয়ে প্রতিষেধক অধিকতর ভালো_ এই পুরনো আপ্তবাক্যটি আমরা ভুলতেই বসেছি।
নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের হার বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। একটি ঘটনার স্মৃতি মানুষের মন থেকে মুছে যেতে না যেতেই আরেকটি ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। ফলে পুরনো ঘটনা মানুষের মানসপটে ফিকে হয়ে যায়। তাই এসব ঘটনা বারবার মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কী ধরনের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে_ সেটাও মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া দরকার।
আধুনিকতা নারীকে ব্যাপকভাবে কর্মজীবনে টেনে নিচ্ছে। এ জন্য তাদের গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করার প্রয়োজন পড়ে। এটা অনেক নারীর পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্যই। তাই কর্মজীবী মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা দরকার। সাধারণভাবে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। আধুনিক সমাজের দাবিও তাই।
এসব ঘটনার জন্য সাধারণত খোঁড়া যুক্তি হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অদক্ষতা বা অবহেলাকে দায়ী করা হয়। আসলে এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হচ্ছে সুশাসনের অনুপস্থিতি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা দিতেই তো সময় চলে যায়। আর এ ধরনের বিশিষ্ট ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
ভিভিআইপিদের চলাচলের রাস্তাগুলো বন্ধ করে দিয়েও ক্ষান্তি নেই। আশপাশের রাস্তাগুলোতে সাধারণের গাড়ি চলাচলের ওপর পর্যন্ত বজ্র আঁটুনি নেমে আসে। জনগণের যাতায়াত ওই সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও তাতে কিছু আসে যায় না। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা, ট্রেন বা বিমান ধরা অথবা জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত এ সময় চলতে মানা।
সাধারণ মানুষের চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করা এ ধরনের ব্যবস্থা জনগণের জন্য এক ধরনের অভিশাপ। যেখানে পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা স্বল্পতার দোহাই পাড়া হচ্ছে, সেখানে সংঘটিত অপরাধ দমনের জন্য তাদের কাজে না লাগিয়ে ভিভিআইপি প্রটোকলের জন্য ব্যবহার করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
পুলিশ বাহিনী সদস্য সংখ্যা হিসাব করে যারা ক্ষমতা বা দায়িত্বে রয়েছেন, তারা যদি ভিআইপি, ভিভিআইপি ডিউটি কমিয়ে এদের সাধারণের নিরাপত্তার কাজে লাগানো হতো, তাহলে দিলি্ল কি নারীদের জন্য অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হতো না?
আমরা এটা যখন শুনি যে, সরকার বা দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিরা নারীদের অধিক রাতে কার্যব্যপদেশে রাস্তায় বের না হওয়ার জন্য নসিহত করছেন এবং খোলামেলা কাপড় না পরার পরামর্শ দিচ্ছেন, তখন এসব শুনে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। সবসময়ই একটা না একটা মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ সময় মিডিয়া এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। সে সময় ওয়াজিরাবাদে মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে সুপ্রিম কোর্ট সে ব্যাপারে অবজারভেশন দিয়েছিলেন। কিন্তু সবাই ওই নির্দেশনা ভুলে যায়, যতক্ষণ আরেকটি মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনা না ঘটে।
এ ধরনের জঘন্য অপরাধ কেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী প্রতিরোধ করতে পারছে না, সে জন্য তাদের জবাবদিহিতারও প্রয়োজন রয়েছে। অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে অবশ্যই কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া দেখানোই যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে কোনো উন্নতি করলাম না; প্রতিক্রিয়া দেখালাম আর ভুলে গেলাম_ এমন হলে চলবে না।
জেএস ভার্মা :ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতি ও মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান; হিন্দুস্তান টাইমস থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা
নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের হার বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। একটি ঘটনার স্মৃতি মানুষের মন থেকে মুছে যেতে না যেতেই আরেকটি ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। ফলে পুরনো ঘটনা মানুষের মানসপটে ফিকে হয়ে যায়। তাই এসব ঘটনা বারবার মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কী ধরনের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে_ সেটাও মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া দরকার।
আধুনিকতা নারীকে ব্যাপকভাবে কর্মজীবনে টেনে নিচ্ছে। এ জন্য তাদের গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করার প্রয়োজন পড়ে। এটা অনেক নারীর পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্যই। তাই কর্মজীবী মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা দরকার। সাধারণভাবে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। আধুনিক সমাজের দাবিও তাই।
এসব ঘটনার জন্য সাধারণত খোঁড়া যুক্তি হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অদক্ষতা বা অবহেলাকে দায়ী করা হয়। আসলে এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হচ্ছে সুশাসনের অনুপস্থিতি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা দিতেই তো সময় চলে যায়। আর এ ধরনের বিশিষ্ট ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
ভিভিআইপিদের চলাচলের রাস্তাগুলো বন্ধ করে দিয়েও ক্ষান্তি নেই। আশপাশের রাস্তাগুলোতে সাধারণের গাড়ি চলাচলের ওপর পর্যন্ত বজ্র আঁটুনি নেমে আসে। জনগণের যাতায়াত ওই সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও তাতে কিছু আসে যায় না। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা, ট্রেন বা বিমান ধরা অথবা জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত এ সময় চলতে মানা।
সাধারণ মানুষের চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করা এ ধরনের ব্যবস্থা জনগণের জন্য এক ধরনের অভিশাপ। যেখানে পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা স্বল্পতার দোহাই পাড়া হচ্ছে, সেখানে সংঘটিত অপরাধ দমনের জন্য তাদের কাজে না লাগিয়ে ভিভিআইপি প্রটোকলের জন্য ব্যবহার করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
পুলিশ বাহিনী সদস্য সংখ্যা হিসাব করে যারা ক্ষমতা বা দায়িত্বে রয়েছেন, তারা যদি ভিআইপি, ভিভিআইপি ডিউটি কমিয়ে এদের সাধারণের নিরাপত্তার কাজে লাগানো হতো, তাহলে দিলি্ল কি নারীদের জন্য অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হতো না?
আমরা এটা যখন শুনি যে, সরকার বা দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিরা নারীদের অধিক রাতে কার্যব্যপদেশে রাস্তায় বের না হওয়ার জন্য নসিহত করছেন এবং খোলামেলা কাপড় না পরার পরামর্শ দিচ্ছেন, তখন এসব শুনে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। সবসময়ই একটা না একটা মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ সময় মিডিয়া এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। সে সময় ওয়াজিরাবাদে মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে সুপ্রিম কোর্ট সে ব্যাপারে অবজারভেশন দিয়েছিলেন। কিন্তু সবাই ওই নির্দেশনা ভুলে যায়, যতক্ষণ আরেকটি মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনা না ঘটে।
এ ধরনের জঘন্য অপরাধ কেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী প্রতিরোধ করতে পারছে না, সে জন্য তাদের জবাবদিহিতারও প্রয়োজন রয়েছে। অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে অবশ্যই কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া দেখানোই যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে কোনো উন্নতি করলাম না; প্রতিক্রিয়া দেখালাম আর ভুলে গেলাম_ এমন হলে চলবে না।
জেএস ভার্মা :ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতি ও মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান; হিন্দুস্তান টাইমস থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা
No comments