আমার মতো সুখী কে আছে? by সেলিমা তাসনীম ছন্দা

 পৃথিবীর সুখী মানুষের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দেখে আমার প্রাণ ভরে যায়। 'আহা! আমার মতো সুখী কে আছে!' দুর্নীতির প্রথম সারিতে 'বসবাসের অযোগ্য'তেও প্রথম সারিতে, 'সুখে'ও প্রথম সারিতে। বাহ, কী বৈপরীত্যময় সমন্বয়।
একদিন হয়তো সবচেয়ে বেশি ধৈর্যশীল জাতির পুরস্কার আমাদের দেওয়া হবে। সেখানে বাংলাদেশ যে শীর্ষ অবস্থান পাবে এমন কথা ভাবতে আমার এতটুকুও বেগ পেতে হয় না। মাঝে মধ্যে টেলিভিশনে দেশের সার্বিক অবস্থা আর অস্থিরতা দেখে মনে হয়, এখনই বোধহয় দেশবাসী রাস্তায় নেমে আসবে। ঘটিবাটি খুন্তি কলম যার যা আছে নিয়ে রাস্তায় নেবে আসবে। কোথায় কি! নির্বিকার সুখী সব মানুষ চারদিকে। ট্রাফিক জ্যামে বন্দি হয়ে লেখে কবিতা, বাঁধে গান, শক্ত ও মজবুত করে বন্ধুত্ব, করে মোবাইল ফোনের সদ্ব্যবহার। খুব বেশি হলে পালিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। কীভাবে সমস্যা থেকে বের হওয়া যায় তা নিয়ে ভেবে সুখ নষ্ট করার সময় কই?
আমরা যে অসাধারণ কল্পনাশক্তির অধিকারী তা এবার পহেলা ফাল্গুনে আবারও টের পেলাম। ইট-কংক্রিট আর ধুলো-বালির স্বর্গে কেমন বসন্ত নেমে এসেছে । 'ফাগুন লেগেছে মনে মনে।' 'বনে বন' নয় কেন? বন কি আছে কোথাও? ছোট্ট একটি পাতাও কি কোথাও আছে অবশিষ্ট? নেমেছে বসন্ত, বইমেলায়, বাংলা একাডেমীর চত্বরে_ শুধুই ইট বালু কাদা মাটি আর গর্ত, সামান্য ঘাসও নেই সেখানে। ঘাসের চাষ কি এতই ব্যয়বহুল ?
তবুও বসন্ত । সত্যিই এসেছে। সবাই খুশি। সেজেছে বসন্তের সাজে। খটখটে শুকনো ইট-বালুর ওপর পা দিয়েও আমরা অনুভব করছি শস্য-শ্যামল সবুজ বাংলার প্রকৃতি। ভাবছি গাছে গাছে ডাকছে কোকিল। গাছ নেই তো কী হয়েছে? মনে মনে তো গাইছে কল্পনার কোকিল! এমন মন থাকলে সুখী না হয়ে উপায় আছে?
কিন্তু এমন তো কথা ছিল না। শস্য-শ্যামল বাংলাদেশ কি কেবল কবির কল্পনাতেই? এককালে গাছগাছালি, ফল-ফুল-পাখি সবই ছিল, সে অনেক অনেক দিন আগেকার কথা, এখন প্রবাসে যে দেশে থাকি সে দেশেও আছে গাছ, আছে কাঠ। নেই শুধু আমাদের সোনার বাংলায়। কোথায় হারিয়ে গেছে সব। রাজার ভাণ্ডারও নাকি বসে বসে খেলে একদিন ফুরিয়ে যায়। আর বেচারা বনের কী দোষ! পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই একটি গাছ কাটলে আর একটি লাগাতে হয়। আমাদের দেশের কি এমন কোনো আইন আছে? নাগরিকদেরও তো দায়িত্ব আছে। নিজেরই তো দেশ নিজেরই তো ভূমি। যে যার অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করলেই সবকিছু সহজ হয়ে যায়।
দেশে গিয়ে দেখলাম, একটি দিয়াশলাইয়ের কাঠি খরচের কথা ভেবে গ্যাসের চুলাটি জ্বালানো আছে কোনো কোনো রান্নাঘরে, মনে মনে শুধু বললাম_ 'এত কিছুর পরেও আমরা উন্নতি করছি কীভাবে?'
'বাংলাদেশে সম্ভব নয়' বলে গা বাঁচিয়ে যাওয়া যাবে না। দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এত সীমাবদ্ধতার ভেতরও যে জাতি সুখী জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে তার সম্ভাবনা অনেক। সারা পৃথিবী হাতের মুঠোয় নিয়েও সুখ খুঁজে পায় না মানুষ, সেখানে শূন্য হাতে আমরা ধরতে পেরেছি সুখের মতো দুর্লভ অনুভূতিকে। মানব জীবনের সব চাওয়া-পাওয়ার শেষ কথাই তো সুখী হওয়া। আমরা কি এখনও আমাদের ক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান? না। তবে আর ঘুম ঘুম চোখে নয়। জেগে জেগে সুখী হতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে, পেঁৗছাতে হবে গন্তব্যে।
 

No comments

Powered by Blogger.