ভালোমন্দে গেল আরেকটি বছর by আশীষ-উর-রহমান
দিনে দিনে বর্ষ হয়ে এল শেষ। আজ মধ্যরাতের পর ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ নথিবদ্ধ হবে ইতিহাসের পাতায়। একটি বছর যখন চলে যায়, তখন সেই পুরোনো সত্যটিই চকিতে মনে পড়ে—সময় আর নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। সময় এগিয়ে যায়। তার পেছনে ফেরার তাগিদ নেই।
সেই তাগিদ আছে মানুষের। মানুষের পেছনে থাকে অভিজ্ঞতা, সামনে অপার সম্ভাবনা। সম্ভাবনাকে বিকশিত করে তুলতে প্রয়োজন অভিজ্ঞতা। এগিয়ে চলতে চলতে পেছন ফিরে তাকাতে হয়।
বছর ফুরিয়ে এলে তাই সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাবে নজর বুলিয়ে নেওয়ার ইচ্ছে জাগে। দরকারও হয়। একই সময় কারও জন্য হয়ে ওঠে দারুণ সাফল্যে স্বর্ণময় উজ্জ্বল, কারও ক্ষেত্রে নিষ্ফলতায় নিমজ্জিত। এই নিরিখে ব্যক্তিজীবনে এই বিদায়ী বছরটিও প্রভূত সাফল্য বয়ে এনেছে অনেকের ক্ষেত্রে। যাঁরা সঠিক পরিকল্পনায় প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্তের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উদ্যমী হয়েছেন, তাঁরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছেন বা কাছাকাছি গিয়েছেন। জাতীয় জীবনেও নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেল বছরটি।
বছরের প্রথম মাসেই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয় কয়েকজন কর্মকর্তার সরকার উৎখাতের চেষ্টার কথা। পরের মাসেই খুন হলেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার-মেহেরুন রুনি। এপ্রিলে ঘুষ কেলেঙ্কারিতে রেল মন্ত্রণালয় ছাড়তে হয় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। মাঝরাতে বনানীর রাজপথ থেকে নিখোঁজ হলেন রাজনীতিক ইলিয়াস আলী। জুনে ফাঁস হলো ডেসটিনির অর্থ পাচারের ঘটনা। জুলাইতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে পদ ছাড়তে হলো যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে। অক্টোবরে বিবেকবর্জিত সন্ত্রাস সহ্য করতে হলো রামু-উখিয়ায় বৌদ্ধবিহারে। দেশে তোলপাড় হওয়া হল-মার্ক অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হলো। বিরোধীদলীয় নেতার আলোচিত ভারত সফরটিও ছিল এ মাসেই। নভেম্বরে ঘটে গেল মায়ের বুকে গুলি করে সন্তান পরাগকে অপহরণ করার ঘটনা। চট্টগ্রামে ধসে পড়ল উড়ালসড়কের গার্ডার। আর শোক প্রকাশের এমন কোনো ভাষাই যথেষ্ট নয়, আগুনে পুড়ে যেভাবে প্রাণ হারালেন আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসের কর্মীরা। ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে দেখতে হলো রাজপথে জ্বালাও-পোড়াও, বিশ্বজিতের মতো নিরীহ যুবকের লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড।
তবে এটিই চূড়ান্ত ছবি নয়। এই বছরটিতে সাফল্যও এসেছে অনেক ক্ষেত্রে। মার্চে জাতি পেয়েছিল ‘সমুদ্রজয়’-এর সংবাদ। মে মাসে বাংলাদেশের দুই নারী নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজরীন জয় করেন এভারেস্ট চূড়া। বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে দেশের বিজ্ঞানীরা ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন করেন। বিজয়ের মাসে ক্রিকেটেও বিজয় এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতে।
মৃত্যু প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম। সেই প্রাকৃতিক নিয়মেই এ বছরটিতে দেশ হারিয়েছে তার অনেক কৃতী সন্তানকে। তাঁদের মধ্যে আছেন: শিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি, কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ, চলচ্চিত্রনির্মাতা সুভাষ দত্ত, শিক্ষাবিদ খান সারওয়ার মুরশিদ, বছরের শেষ প্রান্তে চির প্রস্থানে গেলেন নজরুলসংগীতশিল্পী সোহরাব হোসেন।
‘বর্ষশেষ’ কবিতায় কবিগুরু বলেছিলেন, ‘শুধু দিনযাপনের শুধু প্রাণধারণের গ্লানি,/ শরমের ডালি,/ নিশি-নিশি রুদ্ধ ঘরে ক্ষুদ্রশিখা স্তিমিত দীপের/ ধূমাঙ্কিত কালি,/ লাভক্ষতি-টানাটানি, অতি সূক্ষ্ম ভগ্ন-অংশ-ভাগ,/ কলহ সংশয়—? সহে না সহে না আর জীবনের খণ্ড খণ্ড করি/ দণ্ডে দণ্ডে ক্ষয়/’ কিন্তু সয়ে যাচ্ছি আমরা। বিশ্বজিতের মৃত্যু, কারখানায় প্রতিকারহীন অগ্নিকাণ্ড, সাম্প্রদায়িকতার আস্ফাালন, দুর্নীতি, জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলার রাজনৈতিক কলহ-সংঘাত। এসব অনিষ্টকর প্রক্রিয়ার নিষ্পেষণে প্রতিনিয়ত ক্ষয় হচ্ছে আমাদের সীমিত জীবনের মূল্যবান সময়, অমিত প্রাণশক্তি, অনন্য সম্ভাবনা।
বছর ফুরিয়ে এলে তাই সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাবে নজর বুলিয়ে নেওয়ার ইচ্ছে জাগে। দরকারও হয়। একই সময় কারও জন্য হয়ে ওঠে দারুণ সাফল্যে স্বর্ণময় উজ্জ্বল, কারও ক্ষেত্রে নিষ্ফলতায় নিমজ্জিত। এই নিরিখে ব্যক্তিজীবনে এই বিদায়ী বছরটিও প্রভূত সাফল্য বয়ে এনেছে অনেকের ক্ষেত্রে। যাঁরা সঠিক পরিকল্পনায় প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্তের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উদ্যমী হয়েছেন, তাঁরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছেন বা কাছাকাছি গিয়েছেন। জাতীয় জীবনেও নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেল বছরটি।
বছরের প্রথম মাসেই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয় কয়েকজন কর্মকর্তার সরকার উৎখাতের চেষ্টার কথা। পরের মাসেই খুন হলেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার-মেহেরুন রুনি। এপ্রিলে ঘুষ কেলেঙ্কারিতে রেল মন্ত্রণালয় ছাড়তে হয় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। মাঝরাতে বনানীর রাজপথ থেকে নিখোঁজ হলেন রাজনীতিক ইলিয়াস আলী। জুনে ফাঁস হলো ডেসটিনির অর্থ পাচারের ঘটনা। জুলাইতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে পদ ছাড়তে হলো যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে। অক্টোবরে বিবেকবর্জিত সন্ত্রাস সহ্য করতে হলো রামু-উখিয়ায় বৌদ্ধবিহারে। দেশে তোলপাড় হওয়া হল-মার্ক অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হলো। বিরোধীদলীয় নেতার আলোচিত ভারত সফরটিও ছিল এ মাসেই। নভেম্বরে ঘটে গেল মায়ের বুকে গুলি করে সন্তান পরাগকে অপহরণ করার ঘটনা। চট্টগ্রামে ধসে পড়ল উড়ালসড়কের গার্ডার। আর শোক প্রকাশের এমন কোনো ভাষাই যথেষ্ট নয়, আগুনে পুড়ে যেভাবে প্রাণ হারালেন আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসের কর্মীরা। ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে দেখতে হলো রাজপথে জ্বালাও-পোড়াও, বিশ্বজিতের মতো নিরীহ যুবকের লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড।
তবে এটিই চূড়ান্ত ছবি নয়। এই বছরটিতে সাফল্যও এসেছে অনেক ক্ষেত্রে। মার্চে জাতি পেয়েছিল ‘সমুদ্রজয়’-এর সংবাদ। মে মাসে বাংলাদেশের দুই নারী নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজরীন জয় করেন এভারেস্ট চূড়া। বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে দেশের বিজ্ঞানীরা ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন করেন। বিজয়ের মাসে ক্রিকেটেও বিজয় এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতে।
মৃত্যু প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম। সেই প্রাকৃতিক নিয়মেই এ বছরটিতে দেশ হারিয়েছে তার অনেক কৃতী সন্তানকে। তাঁদের মধ্যে আছেন: শিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি, কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ, চলচ্চিত্রনির্মাতা সুভাষ দত্ত, শিক্ষাবিদ খান সারওয়ার মুরশিদ, বছরের শেষ প্রান্তে চির প্রস্থানে গেলেন নজরুলসংগীতশিল্পী সোহরাব হোসেন।
‘বর্ষশেষ’ কবিতায় কবিগুরু বলেছিলেন, ‘শুধু দিনযাপনের শুধু প্রাণধারণের গ্লানি,/ শরমের ডালি,/ নিশি-নিশি রুদ্ধ ঘরে ক্ষুদ্রশিখা স্তিমিত দীপের/ ধূমাঙ্কিত কালি,/ লাভক্ষতি-টানাটানি, অতি সূক্ষ্ম ভগ্ন-অংশ-ভাগ,/ কলহ সংশয়—? সহে না সহে না আর জীবনের খণ্ড খণ্ড করি/ দণ্ডে দণ্ডে ক্ষয়/’ কিন্তু সয়ে যাচ্ছি আমরা। বিশ্বজিতের মৃত্যু, কারখানায় প্রতিকারহীন অগ্নিকাণ্ড, সাম্প্রদায়িকতার আস্ফাালন, দুর্নীতি, জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলার রাজনৈতিক কলহ-সংঘাত। এসব অনিষ্টকর প্রক্রিয়ার নিষ্পেষণে প্রতিনিয়ত ক্ষয় হচ্ছে আমাদের সীমিত জীবনের মূল্যবান সময়, অমিত প্রাণশক্তি, অনন্য সম্ভাবনা।
No comments