কৃষি-খামারের আয়তন ছোট হলেও বাড়ছে উৎপাদন by মাহবুব হোসেন

স্বাধীনতার চার দশকে কৃষি খাতের অগ্রগতি বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। এ সময়ে জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। তাদের খাদ্যের জোগান মূলত আসছে এ খাত থেকেই_ নিঃসন্দেহে এটা বড় অর্জন।
এখন চেষ্টা চালাতে হবে কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট খাতগুলো থেকে পুষ্টি চাহিদা পূরণে সুষম খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য। অন্যথায় খাদ্য গ্রহণে বৈষম্য বাড়বে, যা কোনোভাবেই
কাম্য নয়


স্বাধীনতা-পরবর্তী চার দশকে কৃষিতে লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা মূলত তিনটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে পারি। এক. খামার মালিকানা ও ব্যবহার; দুই. কৃষিপণ্য ও উপকরণের বাজার। তিন. কৃষির সম্ভাবনা ও করণীয়।
প্রথমেই দেখব খামারের মালিকানা। বিভিন্ন দেশে দেখা যায়, ছোট ছোট জোত আর থাকছে না এবং সেগুলো ভেঙে বড় খামার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে উৎপাদনশীলতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু গত চার দশকে বাংলাদেশে দেখা যায় এর বিপরীত চিত্র। এখানে ছোট ছোট খামার মিলে বৃহদায়তন খামার গড়ে উঠছে না, বরং বড় খামার ভাঙছে। আমাদের জনসংখ্যাগত যে পরিবর্তন সেটা লক্ষণীয় হয়ে উঠছে এ ক্ষেত্রে। গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর হচ্ছে প্রচুর লোক। ফলে গ্রাম ও শহরবাসীর সংখ্যাগত অনুপাত পরিবর্তন হচ্ছে। তারা শহরে জমি নিয়ে আসছে না। এ অবস্থায় তত্ত্বগতভাবে খামারের আয়তন বড় হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা তথ্য-পরিসংখ্যানে পাই ভিন্ন চিত্র। ১৯৬০ সালের কৃষিশুমারি অনুযায়ী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কৃষিকাজে জড়িতদের পারিবারিক খামারের গড় আয়তন ছিল ১ দশমিক ৪৭ হেক্টর বা প্রায় ১১ বিঘা। ২০০৫ সালে এ ধরনের আরেকটি নমুনা জরিপে দেখা যায়, খামারের গড় আয়তন কমে হয়েছে চার বিঘার মতো। কৃষিতে নিয়োজিত পরিবার সংখ্যা এ সময়ে ৫০ লাখ থেকে বেড়ে হয়েছে এক কোটি ৫০ লাখ। গ্রাম থেকে বিপুলসংখ্যক লোক স্থানান্তর হওয়ার পরও কৃষিকাজে নিয়োজিত পরিবার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। কৃষি জমির মালিকানায় পরিবর্তনের একটি কারণ হচ্ছে, বড় জোতের মালিক কৃষিতে থাকছে না। তারা আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি ব্যবস্থাপনার পথে না গিয়ে অকৃষি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে মনোযোগী হয়েছে। প্রথমদিকে তারা গ্রামকেই বিনিয়োগের জন্য বেছে নেয়। ক্রমে স্থানান্তর ঘটে শহরে। অন্য দেশের তুলনায় এটা ব্যতিক্রম। ভারতের পাঞ্জাবে দেখা যায়, অনেক পরিবার নিজেদের খামারের আয়তন বাড়ানোর জন্য জমি ভাড়া নেয়। এর ফলে চাষাবাদের জন্য যন্ত্র ও আধুনিক কৃষি উপকরণের ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হয় এবং উৎপাদন বাড়ে। বাংলাদেশেও এটা হওয়ার কথা। কিন্তু সচ্ছল কৃষকরা কেন খামারের আয়তন বাড়ানোর পথে না গিয়ে অকৃষি কাজে মনোযোগ দিচ্ছে? সাধারণত ৫০ বিঘার মতো জমির মালিকানা থাকলে বড় খামার ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ পরিমাণ জমি কম পরিবারেই রয়েছে। আরও একটি তথ্য আমাদের হিসাবে রাখা দরকার। বাংলাদেশে ১৫ বিঘার বেশি জমি রয়েছে এমন পরিবার কৃষিকাজে নিয়োজিত মোট পরিবারের মাত্র ৪ শতাংশ। খামার বড় করার জন্য তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। কিন্তু বড় খামার গড়ে তুলতে হলে তাদের প্রত্যেককে অনেক জমি হয় কিনতে হবে নতুবা ভাড়া নিতে হবে। কিন্তু এত জমি কোথায় মিলবে? অতীতে আমরা অভাবে পড়ে জমি বিক্রি করতে দেখেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রবণতা কমছে। তবে বিদেশে চাকরি করার জন্য জমি বিক্রির ঘটনা রয়েছে। দ্বিতীয় যে বিবেচনা করা হয় সেটা হচ্ছে কোনো খাত থেকে বেশি আয় বাড়ানোর সুযোগ। অভিজ্ঞতাই জানিয়ে দিচ্ছে যে, কৃষি থেকে আয় বাড়ানোর সুযোগ তুলনামূলক কম। এর পরিবর্তে তাদের দেখা যায় ছোটখাটো দোকানে পুঁজি খাটাতে। তারা দ্রুতই বুঝতে পারে, এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার সীমা অসীম। কিন্তু কৃষি খামার বাড়াতে হলে প্রথমেই দরকার কেনা বা ভাড়া নেওয়ার মতো জমি, যা মেলা কঠিন। অকৃষিতে ব্যবসা-বিনিয়োগ স্থানান্তরের মূল কারণ এখানেই নিহিত।
শহরে যারা চলে আসে কিংবা গ্রামে থেকেই অকৃষি কাজে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে তারা কিন্তু সাধারণত নিজস্ব জমি বিক্রি করছে না, বরং ক্ষেতমজুরদের কাছে তা বর্গা দিচ্ছে কিংবা আত্মীয়-স্বজনকে ব্যবহার করতে দিচ্ছে। এভাবে এক সময়ে দিনমজুর-ক্ষেতমজুর বর্গাচাষিতে পরিণত হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক ও ছোট খামার সংখ্যা বাড়ছে। সাম্প্রতিক হিসাবে দেখা যায়, মোট কৃষি পরিবারের ৯০ শতাংশের রয়েছে এক হেক্টর বা ৭ বিঘার মতো জমি। আর মোট কৃষি পরিবারের দুই-তৃতীয়াংশ তিন বিঘার কম জমির মালিক।
অর্থনীতির তত্ত্ব বলে, ক্ষুদ্র আকারের খামার লাভজনক হয় না। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখছি, এসব খামার টিকে থাকছে এবং লাভ এনে দিচ্ছে। এর অন্যতম কারণ কৃষি প্রযুক্তির প্রসার। উন্নত মানের বীজ, রাসায়নিক সার ব্যবহারে এসব জমির মালিকরা সচ্ছলদের তুলনায় পিছিয়ে থাকে না। ফলে খামারের আয়তন ছোট হলেও উৎপাদনশীলতায় প্রভাব পড়ছে না। এ ধরনের খামারের মালিকরা ঘরের খাবার পাচ্ছে নিজের জমি থেকে, কিন্তু জমির উদ্বৃত্ত থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংস্থান কঠিন। তারা সার কেনে, সেচের পানির জন্য ব্যয় করে। এজন্য কৃষি ঋণের চাহিদা বাড়ছে। বর্তমান সরকার এ ঋণের জোগান দিতে কিছু ভালো পদক্ষেপও গ্রহণ করছে। যেভাবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিকচাষি বাড়ছে তাদের সমর্থন দরকার। বর্গাচাষিদেরও ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতের বিপরীতে কৃষকরা যেতে পারে মহাজনের কাছে। কিন্তু তা তো সর্বনাশা পথ। অনেক পরিবার এনজিও সূত্র থেকে ক্ষুদ্রঋণ পাচ্ছে এবং তা কাজে লাগে কৃষিতে।
চার দশকে কৃষির উন্নয়নে সরকারের ভূমিকায় পরিবর্তন ঘটেছে। ষাটের দশকে কৃষকরা রাসায়নিক সার কী সেটা জানত না। কিন্তু স্বাধীনতার প্রাক্কালে কুমিল্লা একাডেমী ফিলিপাইন থেকে ইরি-৮ জাতের ধানবীজ নিয়ে আসে। সে সময়ে 'অধিক খাদ্য ফলাও' স্লোগান জনপ্রিয় হচ্ছিল। জমি কম, কিন্তু উৎপাদন বাড়াতে হবে_ এ কারণে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর জোর পড়ে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন বা বিএডিসি এভাবে আধুনিক কৃষির ভিত গড়ায় সহায়ক প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। তারা অগভীর নলকূপ আমদানি করে বিতরণ করে। সরকার সেচ ব্যবস্থার জন্যও বিনিয়োগ করে। সার্বিকভাবে কৃষির উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তির জোগান গুরুত্ব পেতে থাকে।
আশির দশকের শুরুতে আমরা নীতিগত পরিবর্তন লক্ষ্য করি। মূলত সরকারি ভর্তুকি কমানোর তাগিদ থেকেই এর উদ্ভব। উপকরণের জোগান সরকারি খাতে থাকায় নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। সরকারি খাতের এ সুবিধা মাঝারি ও বড় খামারের মালিকরা বেশি ভোগ করে। উন্নয়ন সহযোগী তথা বৈদেশিক সাহায্যদাতারাও এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের উল্লেখযোগ্য অংশের মত ছিল যে, এ ব্যবস্থার ফলে বড় খামারিরা উপকরণ ব্যবহার করতে পারবে কিন্তু ক্ষুদ্র আয়তনের জমির মালিকরা পিছিয়ে পড়বে এবং জমি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হবে। পানির ব্যবসাও জমজমাট হবে বলে আশঙ্কা করা হয়। কেউ কেউ বলেন, কৃষকরা ওয়াটার লর্ডদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়বে। আমলাতন্ত্রের তরফেও এ উদ্যোগে বাধা আসতে শুরু করে। ফলে শুরুর দিকে বেসরকারিকরণের গতি ছিল ধীর। এ দশকের শেষদিকে কৃষি উপকরণ সরবরাহ ব্যবস্থা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ডিজেল ইঞ্জিন আমদানি চলে যায় ব্যক্তি খাতে এবং সরকার শুল্ক কমিয়ে দেওয়ায় দামও কমে আসে। ছোট-বড় সেচযন্ত্র এভাবে মধ্য আয়ের কৃষকদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসে। এখন বাংলাদেশের ৮০ শতাংশের বেশি জমি সেচের আওতায় এসেছে। এর নেতিবাচক দিক হচ্ছে ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তে মাটির নিচের পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এবং তাতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু পানি সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ায় বিশেষ করে বোরো ধানের উৎপাদন বিপুলভাবে বেড়েছে এবং এ মৌসুম থেকেই বেশিরভাগ খাদ্যের জোগান হচ্ছে। সারের বিতরণ ব্যবস্থাও গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সার বিতরণে সরকারি ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৯৪ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে চাহিদা ও জোগানে সমস্যা দেখা দেয় এবং ব্যবসায়ীরা এ সুযোগে বেশি লাভের চেষ্টা করে। এর প্রতিক্রিয়ায় অনেক স্থানে কৃষকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে রাজপথে নামে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার নিপীড়নের পথ গ্রহণ করে এবং কয়েকজন কৃষক মারা যান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে সারের ওপর ভর্তুকি বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে আধুনিক জাতের বীজ উৎপাদনের জন্য গবেষণাকাজে জোর পড়ে। সাধারণত দেখা যায়, নতুন জাতের বীজ এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণ নিয়ে বড় জোতের মালিকরা পরীক্ষা করে এবং অন্যরা তা অনুসরণ করে। ছোট জোতের মালিকদের তেমন লেখাপড়ার সুযোগ ঘটে না, কিন্তু তারা নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে কখনও পিছিয়ে থাকে না।
তৃতীয়ত যে বিষয়টি আমি বলব সেটা হচ্ছে, ধান ও গম উৎপাদনে জোর পড়ছে এবং অন্যান্য ফসলে পরনির্ভরতা প্রকট। সরকারের নীতিগত সমর্থনও এসব ক্ষেত্রে তেমন জোরালো নয়। মাছ, শাকসবজি প্রভৃতির কথা আমি বলতে পারি। দুধ, ডিম, মাংসের উৎপাদনও গুরুত্ব পেতে হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যত বাড়বে, এসব পণ্যের চাহিদাও তত বেশি হতে থাকবে। যদি চাহিদার সঙ্গে জোগানের সামঞ্জস্য রাখা না যায় তাহলে বাজারে দাম বাড়বে এবং তা গরিব ও নিম্নবিত্ত জনগণের আওতার বাইরে থেকে যাবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মসলাজাতীয় আমদানি বিকল্প ফসল উৎপাদনে মাত্র ২ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণের জোগান দিচ্ছে এবং এজন্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
স্বাধীনতার পরবর্তী দুই দশকে দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় মন্থর। কৃষি উৎপাদন বেড়েছে বছরে ২ শতাংশ হারে। নব্বই দশকে প্রবৃদ্ধি হয় ৩ শতাংশ হারে। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে কৃষিতে প্রবৃদ্ধি ঘটে সাড়ে তিন থেকে চার শতাংশ হারে। কৃষিতে প্রবৃদ্ধি ঘটলেও এ খাতে যুক্তদের আয় কিন্তু উল্লেখযোগ্য বাড়েনি। এর একটি কারণ খাদ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য নানা মহলের আগ্রহ। শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা চেয়েছে চাল-আটার দাম যেন কম থাকে। অন্যথায় শিল্প শ্রমিকরা মজুরি বাড়ানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করবে। তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতার অন্যতম প্রধান কারণ কিন্তু খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূলবৃদ্ধি। কলকারখানার মালিকরা মনে করে, তাদের এ খাতের বিকাশের জন্য খাদ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা দরকার। নইলে তাদের লাভ থেকে মজুরি বাড়াতে হবে। কৃষির উন্নয়নের জন্য কিন্তু এ খাতে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য আরও বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। আমাদের জিডিপি ৮-১০ শতাংশ হারে বাড়ানোর যে লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জন করতে হলে কৃষিতে চার শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি রাখতে হবে। আর এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য কৃষকদের চাই ইনসেনটিভ। আমাদের কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করে নিয়েছে দ্রুত, সেটা আগেই বলেছি। আশির দশকে সেচ সুবিধা ছিল ২০ শতাংশ চাষের জমিতে, এখন তা ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। সারের ব্যবহার ভারতের তুলনায় বেশি। ফলন বাড়ছে। শুষ্ক মৌসুমে ধানের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে এ প্রযুক্তির কারণেই। একসময় বর্ষায় আউশ ধানের চাষ হতো। এখন তার স্থান গ্রহণ করেছে বোরো এবং বর্ষার আগেই ঘরে ফসল উঠে আসছে। এখন এক বিঘা জমি থাকলেই আমন-বোরো মৌসুম থেকে একটি পরিবারের খাদ্যের জোগান নিশ্চিত হয়। এ কারণে বাড়তি জমি যাদের রয়েছে তারা অন্য ফসলের জন্য ব্যবহার করতে পারে। সম্প্রতি আলু, সবজি, ভুট্টার চাষ বেড়েছে। হাঁস-মুরগির খামার বাড়ার কারণে ভুট্টার চাহিদা বাড়ছে। তবে সবকিছুর পরও প্রধান খাদ্যশস্য হওয়ায় কৃষকদের ধান উৎপাদনে আগ্রহ থেকে যায়। এ পণ্যের দাম ভালো পেলে তারা অন্য ফসল কমিয়েও এর চাষ করে। বলা যায় ধান এখনও 'বড় পণ্য'। এর ফলে সরিষা, ডাল ইত্যাদি ফসল উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাড়ছে বিদেশি বাজারের ওপর নির্ভরতা। আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের মূল্যে ওঠানামা রয়েছে। এ কারণে দেশের বাজারেও পড়ে বিরূপ প্রভাব।
স্বাধীনতার চার দশকে কৃষি খাতের অগ্রগতি বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। এ সময়ে জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। তাদের খাদ্যের জোগান মূলত আসছে এ খাত থেকেই_ নিঃসন্দেহে এটা বড় অর্জন। এখন চেষ্টা চালাতে হবে কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট খাতগুলো থেকে পুষ্টি চাহিদা পূরণে সুষম খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য। অন্যথায় খাদ্য গ্রহণে বৈষম্য বাড়বে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ড. মাহবুব হোসেন : অর্থনীতিবিদ এবং প্রধান নির্বাহী, ব্র্যাক
 

No comments

Powered by Blogger.