সম্পাদক সমীপে
গুল ধূমপায়ীদের জন্য অভিশাপ সম্প্রতি সরকারের নীতিগত অনুমোদন পাওয়া ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন), ২০১২-এর খসড়ায় তামাকজাতীয় দ্রব্যের’ সংজ্ঞায় তামাক ও তামাক জাতীয় গাছের শিকড়, ডাল বা অন্যান্য অংশসহ বিড়ি ও সিগারেট ছাড়াও গুল, জর্দা, খৈনি ও তামাকের সাদাপাতাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এটি নিঃসন্দেহে একটি ব্যাপক সংজ্ঞা (ব্রড ডেফিনেশন)। আগামী সংসদ অধিবেশনে এই খসড়া সংশোধনী বিলটি উত্থাপন এবং পাস করে আইনে পরিণত করার কথা রয়েছে। এখানে আমরা গুল সম্পর্কে কিছু প্রাসঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখতে চাই। কারণ গুল ধূমপানের তুলনায় অধিক ক্ষতিকর। এ প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সতর্কবাণীটি সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন ধূমপানের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যহানিকর। বলা বাহুল্য, গুল একটি ধোঁয়াবিহীন তামাকজাতীয় দ্রব্য যা মাঢ়ী ও দাঁতে ঘষে এবং ঠোঁটের নিচে গুঁজে সেবন করা হয়। স্বভাবতই এ অবস্থায় গুল লালার সঙ্গে দ্রবীভূত হয়ে লিভার ও পাকস্থলীতে গমন করে।মেশিনের সাহায্যে তামাকপাতা পাউডারের ন্যায় মিহি গুঁড়ো করে এর সঙ্গে চুন, ছাই ও কেমিক্যাল মিশিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলসম মোটা ও লম্বা প্লাস্টিকের কৌটায় ভরে পণ্যটি বাজারজাত করা হয়, যার প্রচলিত নাম গুল। এটি স্বাদে ও গন্ধে তীব্র ঝাঁঝালো হলেও ব্যবহারকারীরা এটিকে দাঁতের মাজন ও দাঁতের ব্যথা উপশমের ওষুধ হিসেবে জ্ঞান করে। অনেকে আবার সিগারেটের বিকল্প হিসেবে গুল ব্যবহার করে।
গুল তৈরির দুটি মুখ্য উপাদান হলো তামাকপাতা এবং চুন। তামাকপাতায় নিকোটিন থাকে। নিকোটিন হলো এক প্রকার বিষাক্ত তৈলাক্ত পদার্থবিশেষ। এটি এখন সর্বজনবিদিত যে, নিকোটিন থাকার কারণে তামাকজাতীয় যে কোন দ্রব্য সেবনে মানুষ ক্যান্সারসহ নানা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়। অপরদিকে চুনে আছে ‘প্যারা অ্যালোন ফেনল’ নামে এক প্রকার বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ যা মুখে ঘা সৃষ্টি করে, ক্যান্সার রোগের সূচনা করে। তাই এ দু’টি বিষাক্ত উপাদানের কারণে গুল অন্যান্য তামাকজাতীয় দ্রব্যের তুলনায় স্বল্প সময়ে মানবদেহে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের রোগ জন্মাতে সক্ষম বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভিজ্ঞ। শুধু তাই নয়, গুল সেবনের কয়েক বছরের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায় এবং ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কয়েক বছর পূর্বে পুরান ঢাকায় বিষাক্ত গুল লাগিয়ে দাঁতের ব্যথা কমাতে গিয়ে রাশিদা বেগম (৩০) নামে এক দরিদ্র গৃহবধূর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এত প্রাণঘাতী অপকারিতা সত্ত্বেও গুল আমাদের দেশে দ্রুত প্রসার লাভ করছে। এর মুখ্য কারণ, এটি দামে খুব সস্তা এবং সহজলভ্য। শহর-বন্দর-গ্রামের সব মুদি, পান-বিড়ি ও চায়ের দোকানে দেদার গুল পাওয়া যায়। স্বল্প মূল্যের একটি কৌটা দিনে কয়েকবার সেবন করলেও চলে বেশ কয়েকদিন। এভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেলে জীবদ্দশায় আর ছাড়া যায় না। কারণ নিকোটিনে মাদকের উপাদান থাকায় গুল সেবন নিয়মিত নেশায় রূপান্তরিত হয়। উল্লেখ্য, নিকোটিনের নেশার তীব্রতা মদ, গাঁজা ও হিরোইনের নেশার তীব্রতার চেয়েও অনেক বেশি।
জানা যায়, বাংলাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে আনুমানিক ২৫/৩০টি গুল তৈরির ফ্যাক্টরি চালু আছে। এগুলোর দৈনিক মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২০/২৫ হাজার গ্রোস গুলোর কৌটা। এ হিসেবে দেশে বর্তমানে প্রতিবছর ১০০ কোটি গুলের কৌটা উৎপাদিত হচ্ছে। গুলাসক্ত একজন লোক বছরে ৫০টি গুলের কৌটা ব্যবহার করে। সে হিসেবে বাংলাদেশে দু’কোটি লোক যার মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুও অন্তর্ভুক্ত নিয়মিত গুল সেবন করে। তবে এখানে নারীর সংখ্যাই বেশি। এ প্রসঙ্গে গ্লোবাল হেলথ প্রফেশনাল সার্ভে-২০০৪-এর পরিসংখ্যান উল্লেখ করা যেতে পারে। এ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে সাধারণ জনগণের মধ্যে ৫০ ভাগ পুরুষ এবং ৩ ভাগ মহিলা ধূমপান করে, গুল, জর্দা ও সাদাপাতা সেবন করে ১৬ ভাগ পুরুষ এবং ২১ শতাংশ মহিলা। বলাবাহুল্য, গুল, জর্দা এবং সাদাপাতা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাতীয় দ্রব্য। উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে, এ সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হবে। জানা যায়, গুল সেবনকারীরা অশিক্ষিত ও দরিদ্রশ্রেণীর লোক। তবে কিছু শিক্ষিত ও সচেতন লোকের মধ্যেও গুল সেবনের অভ্যাস পরিলক্ষিত হয়।
এমতাবস্থায় সরকার অনুমোদিত ধূমপান ও তামাকজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন), ২০১২ সংসদে পাস হলে এর আলোকে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক হুমকি গুলের উৎপাদন, বিতরণ ও বিক্রয় নিñিদ্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এর ক্রমবর্ধমান ব্যবহার রোধে সরকারকেই কার্যকর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং পাশাপাশি এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে তামাকবিরোধী সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
মাহবুব আলী
আবদুল হাদী লেন, ঢাকা
পোশাক শিল্পে কালো ছায়া!
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির একমাত্র ভরসা হলো তৈরি পোশাক শিল্প বা গার্মেন্টস শিল্প। যে পোশাক শিল্পের কারণে বাংলাদেশ প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করছে। সম্প্রতি এই পোশাক শিল্পের ওপর নেমে এসেছে অস্থিরতার কালো মেঘ। দেশের অর্ধেকেরও বেশি শ্রমিক এই গার্মেন্টস শিল্পের সঙ্গে জড়িত। মানছি আর্থিক অনটন রয়েছে। বর্তমান বাজারে ঐ বেতনে চলা মুশকিল। তাই বলে কি গার্মেন্টস ভাংচুর করাই সমাধান? তা উল্টো নিজের পেটে লাথি মারার সমতুল্য। তাহলে কেন এত অরাজকতা।
পত্র-পত্রিকায় ছবিগুলো দেখলে খুব জানতে ইচ্ছে হয়, এরা কি আসলেই শ্রমিক? না মুখে কাপড়ের পেছনে লুকিয়ে আছে শ্রমিক নামধারী অন্য চেহারা? তরুণরা হলো দেশের ভবিষ্যত। দেশের আগামী প্রজন্মের হাল ধরবে এই তরুণরাই। কিন্তু আমাদের দেশের তরুণদের উম্মাদনার পরিমাণটা একটু বেশি। রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাংচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পিকেটিং করা কোন্ ধরনের উন্মাদনা তা আমার জানা নেই। তবে একটি কথা মনে রাখা ভাল, তারুণ্যের উন্মাদনা ভাল, তবে অতিরিক্ত উন্মাদনা ভাল নয়।
গার্মেন্টস মালিকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব পোশাক শিল্প কারখানা বন্ধ করে দেবে। এমনিতে একদিন এ শিল্প বন্ধ থাকলে হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয় দেশের। যদি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয় তবে দেশের অর্থনীতির কি অবস্থা হবে? এখন কথা হলো পোশাক শিল্পের লাগাতার অসন্তোষ কি মূলত শ্রমিকরাই সৃষ্টি করেছে না এর পেছনে অন্যকোন অপশক্তি কাজ করছে? কারণ এ শিল্পের সঙ্গে দেশের অর্থনীতি, দেশের ভবিষ্যত জড়িত রয়েছে। সুতরাং সে শিল্প নিয়ে কথা বলার অধিকার সবার রয়েছে।
সনেট দেব
চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম
টাকা পাচার বন্ধ হোক
দেশের টাকা অবৈধভাবে কম-বেশি বিদেশে পাচার হয়, তা আমরা সবাই জানি। তবে এর অবিশ্বাস্য পরিমাণ আমাদের বিস্মিত করে। শুধু ২০১০ সালেই পাচার করা হয়েছে ২৩৯৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আমাদের বহুল প্রতীক্ষিত যে পদ্মা সেতু নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা, সেই পদ্মা সেতু কেবল ২০০৯-১০ সালে বিদেশে পাচার করা টাকা দিয়েই নির্মাণ করা যেত। এ দেশের দুরবস্থার একটি কারণ কিছু অসাধু লোকের অবৈধ টাকা পাচার। সত্যিকার অর্থে এসব পাচারকারীর বিরুদ্ধে কোন যথাযথ ব্যবস্থাও নেয়া হয় না। তাই তারা এমন অপতৎপরতায় সহজেই শামিল হয়। রাষ্ট্রের বড় বড় কেলেঙ্কারির হোতারা দোষী সাব্যস্ত হলেও রাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয় না। অবিলম্বে টাকা পাচারের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া মানি লন্ডারিং বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর নজর দেয়া দরকার। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার স্বার্থেই উন্নত দেশগুলোর অর্থ পাচার বন্ধে সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হবে।
জাহেদুর রহমান ইকবাল
পুরানাপল্টন, ঢাকা
চরাঞ্চলে মাধ্যমিক শিক্ষা
বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে। আমরা এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে আমরা যখন ডিজিটাল দেশের দিকে ধাবিত হচ্ছি, তখন দেশের কোথাও কোথাও মানুষ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ৪০৭টি চরাঞ্চলে কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। এটি আমাদের জন্য দুঃসংবাদ বটে।
এক সময় মঙ্গার কবলে বিপন্ন ছিল এ অঞ্চলের মানুষ। এখন মঙ্গার প্রকোপ কমলেও সে এলাকার মানুষ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই বৃহৎ চরাঞ্চলে ২৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রতিবছর প্রাথমিকের পড়া শেষ করে। তখন তাদের প্রশ্ন এখন কোথায় পড়ব? মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ার সুযোগ না পেয়ে ছেলেরা বাবার সাথে কৃষিকাজে আর মেয়েরা মায়ের সাথে ঘরকন্নার কাজ করতে বাধ্য হয়। এভাবে অকালে তাদের শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে যায়। তাই কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের অবিলম্বে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। এরা যাতে মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ালেখার সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। পাশাপাশি বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোও এগিয়ে আসতে পারে।
ছালামত প্রধান
মহাখালী, ডিওএইচএস, ঢাকা
রহস্যের অন্তরালে
বেশি দিনের কথা নয়। মোবাইল ফোন ছিল এ দেশের সাধারণ মানুষের স্বপ্ন। তখনকার সময়ে বিত্তবানরাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করত। বর্তমানে মোবাইলের ব্যবহার সর্বত্র। সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে। মোবাইল ফোন গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। শহর, বন্দর, পল্লীগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার আনাচে-কানাচে, কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, ছোট ব্যবসায়ী, সকল প্রকার পরিবহন চালক, সর্বস্তরের সকল নারী-পুরুষ, এক বা একাধিক মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। হাতে হাতে নানান রকম মোবাইল ফোন শোভা পাচ্ছে। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অভাব না থাকলেও একশ্রেণীর চতুর ব্যবসায়ী গণসিন্ডিকেট করে পণ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। অপরদিকে বিদেশী পণ্য মোবাইল কোম্পানির মালিক গণসিন্ডিকেট করে মোবাইল সামগ্রী ও কলচার্জের মূল্যবৃদ্ধি না করে গ্রাহক তথা জনগণের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। মোবাইল কোম্পানিগুলোর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মূল্য বৃদ্ধি না করে যদি মুনাফা করে টিকে থাকতে পারে; তাহলে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যদ্রব্যের মালিক বিনা কারণে দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধি করার রহস্য কী? বিষয়টি দেশের নীতিনির্ধারকদের ভেবে দেখা প্রয়োজন।
মুর্শেদ উদ্দিন বাদশা মিয়া
চকবাজার, ঢাকা
No comments