মহাজোট সরকার : ভালো-মন্দের ৪ বছর-পরিবর্তন ও চমকে ঠাসা শিক্ষাঙ্গন by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নেওয়া, ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ, বছরের প্রথম দিনে পাঠ্য বই বিতরণ, শিক্ষানীতি প্রণয়ন এবং রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ।
এসব বিষয়কে শিক্ষাক্ষেত্রের জাগরণ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগে শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনার জন্য কোনো নীতি কিংবা দিকনির্দেশনা ছিল না। প্রাথমিকের ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন পাঠ্য বই পৌঁছাত মার্চ-এপ্রিলের দিকে। অন্যরা পেত পুরনো বই। মাধ্যমিকের সব বই কিনতে হতো বাইরে থেকে। শিশু-কিশোরদের পড়ানো হতো অনেক ভুলে ভরা বিকৃত ইতিহাস। এসব ইতিহাস এখন সংশোধন করা হয়েছে। অতীতে এমনও দেখা গেছে, বছরের প্রথম দিনের পরিবর্তে ক্লাস শুরু হতো দু-তিন মাস পর। এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ ছিল না। ফলাফল বের হতো পরীক্ষা শেষ হওয়ার তিন থেকে সাড়ে তিন মাস পর। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ছিল অবহেলার শিকার। ভর্তি-বাণিজ্য, কোচিং-বাণিজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির কালো থাবায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিল পুরো শিক্ষাব্যবস্থা।
শিক্ষানীতি : বর্তমান সরকারের শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ছয়টি শিক্ষানীতি বা রিপোর্ট প্রণীত হলেও গত চার দশকে তার কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমান সরকার দলমত নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মতামত নিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে তার বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ : দেশের ইতিহাসে শিক্ষা খাতে সবচেয়ে দুঃসাহসিক, যুগান্তকারী ও আশা জাগানিয়া কর্মযজ্ঞ হলো বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ। প্রতিবছর ১ জানুয়ারি প্রাথমিক, ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক, দাখিল ও কারিগরি স্তরের সব শিক্ষার্থীর নতুন বই প্রাপ্তি আজ বাস্তবতা। পরপর চার বছর শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রথম দিনেই সারা দেশে সব ছাত্রছাত্রীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া বর্তমান সরকারের সফলতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এই চার বছরে প্রায় ৯২ কোটি টাকার বিনা মূল্যের বই বিতরণ করা হয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ঝরে পড়া রোধে এটি একটি বড় অধ্যায়। প্রথম ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি ১৯ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছিল। পরের দুই বছর তা আরো বেড়ে ২৩ কোটিতে পৌঁছায়। আর ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি প্রায় ২৭ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে কখনোই ১ জানুয়ারি ছাত্রছাত্রীদের হাতে বই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বরং আগে বই কিনতে মার্চ-এপ্রিল মাস গড়িয়ে যেত। তখন শুধু প্রাথমিকের ৪০ শতাংশ বই নতুন ছাপিয়ে বিনা মূল্যে বিতরণ করা হতো। অন্যরা পেত পুরনো বই। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের আমলে ই-বুক তৈরি করা হয়েছে। 'ভিশন-২০২১ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার জন্য এনসিটিবির ওয়েবসাইট (www.nctb.gov.bd) তৈরি করে সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব পাঠ্যপুস্তকের পিডিএফ ভার্সন আপলোড করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এটুআই প্রোগ্রামের সহযোগিতায় প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব পাঠ্যপুস্তক আকর্ষণীয় ও সহজে ব্যবহারযোগ্য ই-বুকে কনভার্ট করে www.ebook.gov.bd আপলোড করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৭ বছর আগে প্রণয়ন করা কারিকুলাম এ বছর পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০১৩ সালে নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিকের ৩৩টি, ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণীর ৫১টি এবং ৯ম-১০ম শ্রেণীর ২৭টি বই হয়েছে নতুন কারিকুলামে।
শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়া : বিনা মূল্যে বই দেওয়া এবং অন্যান্য পদক্ষেপের সুবাদে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২০১০ সালের দুই কোটি ৭৬ লাখ ৬২ হাজার ৫২৯ জন থেকে বেড়ে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দাঁড়াচ্ছে তিন কোটি ৬৮ লাখ ৮৬ হাজার ১৭২ জন। অর্থাৎ প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী বেড়েছে।
শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ : যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে হাজারো সমস্যার মধ্যে ৩৭ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক স্কুলকে জাতীয়করণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২০১২ সালে এসে প্রায় ২২ হাজার রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে বর্তমান সরকার। ফলে প্রায় ৮০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণ হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮০ হাজারের বেশি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরো ৫০ হাজার শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া চলছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি স্কুলে প্রায় দুই হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণীর। বেসরকারি পর্যায়ে গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশের নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি ২০০৪ সাল থেকে বন্ধ রেখেছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে সারা দেশে এক হাজার ৬২৪টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি) এমপিওভুক্ত করেছে।
কারিকুলাম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলানো হয়েছে সনাতন ধারার পাঠ ব্যবস্থাপনা। মুখস্থ করে এখন আর পরীক্ষায় পাস করা যায় না। প্রায় সব বিষয়ে যুক্ত হয়েছে সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি। ফলে পরীক্ষায় পাস করতে হলে এখন পড়তে হবে, বুঝতে হবে এবং প্রয়োগ করতে হবে। আর পারলেই নম্বর। সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান ও পরীক্ষার ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। আগে কখনো মার্চ-এপ্রিলের আগে নিয়মিত ক্লাস শুরু হতো না। এখন প্রতিবছর মাধ্যমিক স্তরে ১ জানুয়ারি এবং কলেজে ১ জুলাই ক্লাস চালু করা সম্ভব হয়েছে। এতে ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণীঘণ্টা বেড়েছে।
সারা দেশে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে ২০০৯ সাল থেকে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা এবং ২০১০ সাল থেকে অষ্টম শ্রেণী শেষে স্কুলে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও মাদ্রাসায় জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। এ পরীক্ষার কারণে এখন শিক্ষক-অভিভাবকরা ক্লাসের প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর মানোন্নয়নের চেষ্টা করেন। এ ছাড়া প্রতিবছর ১ নভেম্বর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হয়। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয় ১ ফেব্রুয়ারি। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু করা হয় ১ এপ্রিল। এসব পরীক্ষার ফল পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে প্রকাশ নিশ্চিত হয়েছে। পরীক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশ, ক্লাস শুরু একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হয়েছে।
শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নও করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে দেশের নির্বাচিত ৩০৬টি মডেল স্কুল স্থাপন (যেসব উপজেলায় সরকারি হাই স্কুল নেই এমন সব উপজেলায়) এবং ২৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য জেলা সদরে অবস্থিত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে এ উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের অধীনে দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে মোট ৭১টি কলেজের নির্মাণকাজ হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে শিশুর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরুর আগে শিক্ষা ও বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়েছে। সেখানে ভর্তি হবে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগে শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনার জন্য কোনো নীতি কিংবা দিকনির্দেশনা ছিল না। প্রাথমিকের ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন পাঠ্য বই পৌঁছাত মার্চ-এপ্রিলের দিকে। অন্যরা পেত পুরনো বই। মাধ্যমিকের সব বই কিনতে হতো বাইরে থেকে। শিশু-কিশোরদের পড়ানো হতো অনেক ভুলে ভরা বিকৃত ইতিহাস। এসব ইতিহাস এখন সংশোধন করা হয়েছে। অতীতে এমনও দেখা গেছে, বছরের প্রথম দিনের পরিবর্তে ক্লাস শুরু হতো দু-তিন মাস পর। এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ ছিল না। ফলাফল বের হতো পরীক্ষা শেষ হওয়ার তিন থেকে সাড়ে তিন মাস পর। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ছিল অবহেলার শিকার। ভর্তি-বাণিজ্য, কোচিং-বাণিজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির কালো থাবায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিল পুরো শিক্ষাব্যবস্থা।
শিক্ষানীতি : বর্তমান সরকারের শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ছয়টি শিক্ষানীতি বা রিপোর্ট প্রণীত হলেও গত চার দশকে তার কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমান সরকার দলমত নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মতামত নিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে তার বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ : দেশের ইতিহাসে শিক্ষা খাতে সবচেয়ে দুঃসাহসিক, যুগান্তকারী ও আশা জাগানিয়া কর্মযজ্ঞ হলো বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ। প্রতিবছর ১ জানুয়ারি প্রাথমিক, ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক, দাখিল ও কারিগরি স্তরের সব শিক্ষার্থীর নতুন বই প্রাপ্তি আজ বাস্তবতা। পরপর চার বছর শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রথম দিনেই সারা দেশে সব ছাত্রছাত্রীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া বর্তমান সরকারের সফলতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এই চার বছরে প্রায় ৯২ কোটি টাকার বিনা মূল্যের বই বিতরণ করা হয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ঝরে পড়া রোধে এটি একটি বড় অধ্যায়। প্রথম ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি ১৯ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছিল। পরের দুই বছর তা আরো বেড়ে ২৩ কোটিতে পৌঁছায়। আর ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি প্রায় ২৭ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে কখনোই ১ জানুয়ারি ছাত্রছাত্রীদের হাতে বই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বরং আগে বই কিনতে মার্চ-এপ্রিল মাস গড়িয়ে যেত। তখন শুধু প্রাথমিকের ৪০ শতাংশ বই নতুন ছাপিয়ে বিনা মূল্যে বিতরণ করা হতো। অন্যরা পেত পুরনো বই। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের আমলে ই-বুক তৈরি করা হয়েছে। 'ভিশন-২০২১ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার জন্য এনসিটিবির ওয়েবসাইট (www.nctb.gov.bd) তৈরি করে সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব পাঠ্যপুস্তকের পিডিএফ ভার্সন আপলোড করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এটুআই প্রোগ্রামের সহযোগিতায় প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব পাঠ্যপুস্তক আকর্ষণীয় ও সহজে ব্যবহারযোগ্য ই-বুকে কনভার্ট করে www.ebook.gov.bd আপলোড করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৭ বছর আগে প্রণয়ন করা কারিকুলাম এ বছর পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০১৩ সালে নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিকের ৩৩টি, ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণীর ৫১টি এবং ৯ম-১০ম শ্রেণীর ২৭টি বই হয়েছে নতুন কারিকুলামে।
শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়া : বিনা মূল্যে বই দেওয়া এবং অন্যান্য পদক্ষেপের সুবাদে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২০১০ সালের দুই কোটি ৭৬ লাখ ৬২ হাজার ৫২৯ জন থেকে বেড়ে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দাঁড়াচ্ছে তিন কোটি ৬৮ লাখ ৮৬ হাজার ১৭২ জন। অর্থাৎ প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী বেড়েছে।
শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ : যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে হাজারো সমস্যার মধ্যে ৩৭ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক স্কুলকে জাতীয়করণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২০১২ সালে এসে প্রায় ২২ হাজার রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে বর্তমান সরকার। ফলে প্রায় ৮০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণ হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮০ হাজারের বেশি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরো ৫০ হাজার শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া চলছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি স্কুলে প্রায় দুই হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণীর। বেসরকারি পর্যায়ে গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশের নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি ২০০৪ সাল থেকে বন্ধ রেখেছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে সারা দেশে এক হাজার ৬২৪টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি) এমপিওভুক্ত করেছে।
কারিকুলাম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলানো হয়েছে সনাতন ধারার পাঠ ব্যবস্থাপনা। মুখস্থ করে এখন আর পরীক্ষায় পাস করা যায় না। প্রায় সব বিষয়ে যুক্ত হয়েছে সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি। ফলে পরীক্ষায় পাস করতে হলে এখন পড়তে হবে, বুঝতে হবে এবং প্রয়োগ করতে হবে। আর পারলেই নম্বর। সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান ও পরীক্ষার ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। আগে কখনো মার্চ-এপ্রিলের আগে নিয়মিত ক্লাস শুরু হতো না। এখন প্রতিবছর মাধ্যমিক স্তরে ১ জানুয়ারি এবং কলেজে ১ জুলাই ক্লাস চালু করা সম্ভব হয়েছে। এতে ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণীঘণ্টা বেড়েছে।
সারা দেশে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে ২০০৯ সাল থেকে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা এবং ২০১০ সাল থেকে অষ্টম শ্রেণী শেষে স্কুলে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও মাদ্রাসায় জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। এ পরীক্ষার কারণে এখন শিক্ষক-অভিভাবকরা ক্লাসের প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর মানোন্নয়নের চেষ্টা করেন। এ ছাড়া প্রতিবছর ১ নভেম্বর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হয়। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয় ১ ফেব্রুয়ারি। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু করা হয় ১ এপ্রিল। এসব পরীক্ষার ফল পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে প্রকাশ নিশ্চিত হয়েছে। পরীক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশ, ক্লাস শুরু একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হয়েছে।
শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নও করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে দেশের নির্বাচিত ৩০৬টি মডেল স্কুল স্থাপন (যেসব উপজেলায় সরকারি হাই স্কুল নেই এমন সব উপজেলায়) এবং ২৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য জেলা সদরে অবস্থিত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে এ উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের অধীনে দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে মোট ৭১টি কলেজের নির্মাণকাজ হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে শিশুর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরুর আগে শিক্ষা ও বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়েছে। সেখানে ভর্তি হবে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা।
No comments